বিজ্ঞানের পাঠশালা
15% OFF * FREE SHIPPING
বিজ্ঞানের পাঠশালা
তেরোটা বক্সের চারদিকে সবুজ বর্ডার, বাকি সতেরোটার হলুদ। না, ভুল বললাম, চোদ্দতম বক্সের হলুদ বর্ডার কমে সবুজ হয়ে উঠছে। বাকিগুলোর বর্ডার সম্পূর্ণ হলুদ। এই খোপের বাঁদিকের কোনায় লেখা charging… বিন্দুগুলো টিপটিপ করছে।
কিশোর ঘোষাল
কলেজের লাস্ট ক্লাশটা শেষ করেই তাড়াহুড়ো করে আমরা তিন বন্ধু গিয়েছিলাম সিনেমা দেখতে। কিন্তু টিকিট পেলাম না, হাউসফুল। কী আর করা? আগামী পরশুর টিকিট কেটে নিয়ে আমরা তিন বন্ধু হলের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম এইবারে কী করব। একপেট ফুচকা খেয়ে, নাকি দুটো মোগলাই তিনজনে ভাগ করে খেয়ে যে-যার বাড়ি যাব? ওদিকে পশ্চিমের আকাশে দেখলাম ঘন কালো মেঘ জমেছে। চারপাশে গুমোট ভাব, এতটুকু হাওয়া নেই, গাছের পাতাগুলো ছবিতে আঁকা গাছের মতো স্থির।
সুশু, মানে সুশান্ত শান্তশিষ্ট ধরনের ছেলে, সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, “খাওয়া-টাওয়ার রিস্ক নিস না, ওই দ্যাখ তুমুল ঝড় আসছে। তার আগেই বরং বাড়ি কেটে পড়ি চ’।”
কিন্তু দেবু, মানে দেবস্মিত একদম উলটো। সে বলল, “ছাড় তো! এ-সময় অমন ঝড়-বৃষ্টি হয়েই থাকে। একটু না-হয় ভিজেই গেলাম। নুনের পুঁটলি নাকি, যে গলে যাব?”
আমি উত্তর দেওয়ার আগেই আমার পকেটের ফোনটা বেজে উঠল। বের করে দেখলাম বাচ্চুদা ফোন করেছে। রিসিভ করতেই বাচ্চুদা বলল, “কোথায় আছিস?”
বললাম, “মিলন সিনেমার সামনে।”
“গুড। এক্ষুনি চলে আয়।”
“এখন কী করে যাব? সঙ্গে বন্ধুরা আছে। তার ওপর তুমুল ঝড়-বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে।”
“সেই জন্যেই তো বলছি রে উজবুক। বজ্রগর্ভ মেঘ আসছে, ঝড়-বৃষ্টি শিওর হবে। যত তাড়াতাড়ি পারিস চলে আয়। অদ্ভুত একটা জিনিস দেখাব যা আগে কেউ দেখেনি। যত শিগগির আসতে পারবি, ততই ভালো।”
ফোনটা কেটে দিল বাচ্চুদা। মনে একটু দ্বিধা থাকলেও, আমি ঠিক করলাম বাচ্চুদার বাড়িতেই যাব। বাচ্চুদা বিনা কারণে এভাবে ডাকার লোক নয়, নিশ্চয়ই নতুন কিছু আবিষ্কার করেছে। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বন্ধুদের বললাম, “সুশু ঠিকই বলেছে, আজকে আর রিস্ক নেওয়ার মানে হয় না। পরশু তো আসবই সিনেমা দেখতে, তখন দেখা যাবে। আমাকে এখনই একবার বাচ্চুদার বাড়ি যেতে হবে, জরুরি তলব।”
দেবু বলল, “বাচ্চুদা মানে কমলাক্ষদা? সেই শখের বৈজ্ঞানিক?”
আমি হাত বাড়িয়ে বাচ্চুদার বাড়ির দিকের একটা টোটো থামিয়ে উঠতে উঠতে বললাম, “হ্যাঁ রে, সেই বাচ্চুদা। চলি।”
বাচ্চুদার বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে ঘন কালো মেঘটা দেখলাম হু হু করে উঠে আসছে মাথার ওপর। দমকা একটা শীতল বাতাস এসে লাগল গায়ে। দূরে কোথাও বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেছে, বাতাসে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ। বাচ্চুদার ঘরে ঢুকতেই দেখলাম, বাচ্চুদা তার টেবিলে বসে একমনে ল্যাপটপের পর্দায় চোখ রেখে বসে আছে। কাঁধের ব্যাগটা বাচ্চুদার বিছানায় নামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কী হয়েছে বাচ্চুদা?”
বাচ্চুদা এতক্ষণ আমাকে লক্ষই করেনি। আমার কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক তাকিয়েই বলল, “এসে গেছিস? চট করে চেয়ারটা টেনে পাশে বস।”
তাই করলাম। তারপর চোখ রাখলাম ল্যাপটপের পর্দায়। কাছে এসে দেখলাম, ওটা ল্যাপটপ নয়, তবে ল্যাপটপের মতোই দেখতে। কি-বোর্ডের জায়গাটা দু-ভাগে ভাগ করা—একদিকে কম্যান্ড মার্কিং করা ছোট্ট ছোট্ট নব, অন্যদিকটা সাধারণ কি-বোর্ডের মতোই। মনিটরটা অনেকটা সিসিটিভির স্ক্রিনের মতো। চারটে পার্টিশন করা আছে। বাঁদিকের ওপরের খোপে স্ট্যাটাস চার্ট। বাঁদিকের কলামে উপর থেকে নীচে উচ্চতা, হাওয়ার গতিবেগ, তাপমাত্রা, ঘনত্ব, আয়ন কনটেন্ট, চার্জ কনটেন্ট এইসব লেখা। তাদের পাশাপাশি খোপগুলোতে ডেটা ভেসে উঠছে এবং খুব দ্রুত বদলে চলেছে। যেমন উচ্চতার পাশে প্রথম দেখেছিলাম ১৬৫৩ মি. এখন ১৬৭৫ মিটারের কাছাকাছি ওঠানামা করছে। একই সঙ্গে খুব দ্রুত ওঠানামা করছে তাপমাত্রা। মাইনাস আঠারো থেকে মাইনাস বাইশ-তেইশের মধ্যে। একইভাবে বদলে চলেছে অন্যান্য ডেটাগুলোও।
আমার মাথায় তেমন কিছুই ঢুকছিল না। আর ব্যাপারটা কী ঘটছে, সেটা বাচ্চুদাকে জিজ্ঞেস করতেও ভরসা পাচ্ছিলাম না। ও এত মনোযোগ দিয়ে পর্দার দিকে তাকিয়ে দু-হাতে অতি দ্রুত কি-বোর্ড আর সুইচগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করছিল, আমার মনে হচ্ছিল কথা বললেই ওর মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ওদিকে বাইরে তখন প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে, সঙ্গে দমকা ঝড়ো হাওয়া আর তেমনি বিদ্যুতের চমক আর মেঘের গর্জন। আমি একটু বোর হচ্ছিলাম ঠিকই, তাও সুবোধ বালকের মতো খুব মন দিয়ে পর্দার দিকে দেখতে লাগলাম। যদি কিছু ঢুকে পড়ে আমার নিরেট মাথায়!
পর্দায় চারটে খোপ বলেছিলাম, তার একটায় তো ওই নানান ডেটা দৌড়ে চলেছে। তার ডানদিকের খোপে মনে হল একটা ফানুসের মতো গোল কিছু, নড়ছে-চড়ছে। তার চারপাশে খুব ঘন ঘন আলোর ঝলক চোখে পড়ছে। খুব স্পষ্ট নয়, একটু ঝাপসামতো।
নীচের বাঁদিকের কোণে বেশ বড়ো একটা ঘর দেখা যাচ্ছে, এটা নিশ্চয়ই সিসি ক্যামেরার ছবি। উজ্জ্বল আলোর সেই ঘরে কেউ নেই। মাটির মেঝেয় লম্বা গর্ত করে সার সার অনেকগুলো বাক্স বসানো। কীসের বাক্স বুঝতে পারলাম না। তবে সবক’টা বাক্সই—একটার সঙ্গে আর একটা, পরপর তার দিয়ে জোড়া। অনেকটা ব্যাটারির মতো মনে হল। যেন চার্জে বসানো আছে। গাড়ির ব্যাটারি যেমন হয় আর কী! বাচ্চুদা বাড়িতে ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার ব্যাবসা শুরু করেছে নাকি? তাই হতে পারে? কে জানে! নীচের ডানদিকের কোনায় তিন রোতে দশটা করে তিরিশটা বক্সের ছবি। তেরোটা বক্সের চারদিকে সবুজ বর্ডার, বাকি সতেরোটার হলুদ। না, ভুল বললাম, চোদ্দতম বক্সের হলুদ বর্ডার কমে সবুজ হয়ে উঠছে। বাকিগুলোর বর্ডার সম্পূর্ণ হলুদ। এই খোপের বাঁদিকের কোনায় লেখা charging… বিন্দুগুলো টিপটিপ করছে।
গোটা ব্যাপারটা না বুঝলেও আমি মোদ্দা জিনিসটা মনে হয় ঠিকই বুঝেছি, বাচ্চুদা ব্যাটারিগুলোতে চার্জ ভরছে। কীসের ব্যাটারি, এত মন দিয়ে কেনই-বা বাচ্চুদা ব্যাটারিগুলোতে চার্জ ভরছে, সেটা অবিশ্যি আমার বোধগম্য হচ্ছিল না। আর পর্দার দিকে চোখ রেখে এইসব যখন চিন্তা করছি, সেই সময় টেবিলে বিশাল এক থাপ্পড় মেরে বাচ্চুদা হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল—“ইয়া-য়া-য়া-হু!”
আচমকা ওই চিৎকারে আমি চমকে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠতে গিয়ে চেয়ারসুদ্ধু উলটে পড়লাম মেঝেয়। তাতে আবার একটা বিকট আওয়াজ হল, তাতে ভেতরের ঘর থেকে দৌড়ে এলেন কাকিমা—বাচ্চুদার মা। বাচ্চুদাও কয়েক মুহূর্ত হকচকিয়ে গিয়েছিল, তারপর আমাকে মেঝে থেকে টেনে ওঠাল।
কাকিমা আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে রে বাচ্চু, তুই অমন শেয়ালের মতো চেঁচিয়ে উঠলি কেন? গজু ওভাবে পড়ে গেল কী করে? আর ও এলই-বা কখন? আমাকে কই কিছু বলিসনি তো!”
আমি উঠে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললাম, “চেয়ারটা সরাতে গিয়ে পড়ে গেছিলাম, তেমন কিছু নয় কাকিমা।”
কাকিমা আরও আতঙ্কিত হয়ে বললেন, “তেমন কিছু নয় তো মাথায় হাত বুলোচ্ছিস কেন, মাথায় চোট পাসনি তো?”
“না গো কাকিমা, তেমন কিছু নয়। ঠিক আছি, কিচ্ছু হয়নি।”
কাকিমা কড়া চোখে আমাদের দুজনকে দেখতে দেখতে বললেন, “কতক্ষণ এসেছিস, তুই? বৃষ্টির আগেই মনে হচ্ছে, তা নইলে তো জামা-প্যান্ট ভেজা থাকত।”
আমি মিনমিন করে বললাম, “হুঁ, আগেই।”
তাতে রেগে গিয়ে কাকিমা বললেন, “এতক্ষণ বলিসনি কেন?”
বাচ্চুদার অবস্থা সঙ্গিন। আমি পরিস্থিতি সামাল দিতে চট করে বলে উঠলাম, “আমি এসেই বাচ্চুদার সঙ্গে কলেজের গল্পে মেতে উঠেছিলাম তো, তাই বাচ্চুদা মনে হয়...”
“থাক, তোকে আর বাচ্চুর হয়ে ওকালতি করতে হবে না। তোরা দুটোই সমান শয়তান হচ্ছিস দিন-কে-দিন।”
কাকিমা কটমট করে আমাদের দুজনকেই দেখে ভেতরে চলে গেলেন।
কাকিমা চলে যেতে বাচ্চুদা স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল, “হ্যাঁ রে, ঠিক বলছিস তো? মাথায় সত্যি-সত্যিই লাগেনি তো?”
“না গো বাচ্চুদা, সত্যিই কিচ্ছু হয়নি।”
“সরি রে। ভেরি সরি। আজকের এই এক্সপেরিমেন্টটা নিয়ে খুব টেনশনে ছিলাম।”
“কীসের এক্সপেরিমেন্ট, ব্যাটারিতে চার্জ ভরার?”
বাচ্চুদা খুশিতে উজ্জ্বল মুখে বলল, “আরিব্বাস! তুই বুঝে ফেলেছিস?”
“না বোঝার কী আছে? আমাদের গলির মুখে ধরণীদার ব্যাটারি চার্জের দোকান। যত গাড়ির, টোটোর ব্যাটারিতে দু-বেলাই চার্জ ভরতে দেখি যাওয়া-আসার পথে।”
“তার মানে? আমার এই কাজটা তোর ধরণীদার কাজ বলে মনে হল হতভাগা! জানিস আজকে এতক্ষণ যা হল, সেটা আমার মনে হয় বিশ্বে প্রথম?”
বাচ্চুদার কেরামতির পরিচয় আমি আগেও পেয়েছি। এর আগে সাধারণ সাইকেল রিকশাকে বুলেট-রিকশা বানিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল। বাচ্চুদা যে বাড়িয়ে বলছে না, সে-বিষয়ে আমি নিশ্চিত। কিন্তু তাই বলে... আমি বলেই ফেললাম, “বিশ-শ্বে!”
বাচ্চুদা বেশ জোরের সঙ্গেই বলল, “আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার, বিশ্বে প্রথম।”
এই সময়েই কাকিমা দু-হাতে জলখাবারের প্লেট হাতে ঘরে এলেন। আমাদের হাতে দিয়ে বললেন, “বাজে বকবক থামিয়ে গরম গরম খেয়ে নে।”
কাকিমাকে রাগালে কপালে অনেক দুঃখ, কাজেই কথা না বাড়িয়ে আমরা চুপচাপ আহারে মন দিলাম।
২
খাওয়াদাওয়ার পর চা খেতে খেতে বাচ্চুদা বলল, “মেঘের মধ্যে বিদ্যুৎ তৈরি হওয়ার এই ব্যাপারটা খুব আশ্চর্য একটা ব্যাপার। খুব জটিল এই ব্যাপারটা চট করে বুঝে ওঠা শক্ত হলেও, তোকে খুব সহজ করে বলছি। আকাশে আমরা যে মেঘ দেখি সেটা আসলে অত্যন্ত ছোট্ট ছোট্ট বরফকণার বিশাল এক-একটা স্তূপ, হাওয়ায় ভেসে চলেছে। এই মেঘের মাঝামাঝি জায়গায় তাপমাত্রা থাকে (-)১৫ থেকে (-)২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে এই বরফকণাগুলো মেঘের নীচের স্তর থেকে ওপরের দিকে এবং ওপর থেকে নীচের দিকে ওঠানামা করে। জিজ্ঞেস করবি, খামোখা ওরা ওঠানামা করে কেন। ওঠানামা করে, কারণ মেঘের নীচের স্তরে এবং ওপরের স্তরের তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্যে।
“সসপ্যানে গরম হতে থাকা জলে চা-পাতা দিলে দেখবি চা-পাতাগুলো ওপরে নিচে ওঠানামা করছে, দেখেছিস কোনোদিন? চা-পাতাগুলো ওঠানামা করে কেন? কারণ হল, সসপ্যানের তলার দিকে আগুনের সংস্পর্শে থাকা জলের তাপমাত্রা যখন বাড়তে থাকে, সে-সময় ওপরের দিকের জল তুলনামূলক ঠান্ডা থাকে। ফলে নীচের তপ্ত জলকণা ওপরের দিকে উঠে আসে, আর ওপরের শীতল জলকণা নীচের দিকে নেমে যায়। জলকণার এই ওঠানামার সঙ্গে ওঠানামা করে চায়ের ওই পাতাগুলোও। মেঘের মধ্যে ভাসতে থাকা কোটি কোটি ওই বরফ-বিন্দুগুলোও চায়ের পাতার মতো মেঘের স্তূপের মধ্যে ওঠানামা করতে থাকে। ব্যাপারটা বোঝা গেল কিছুটা?”
আমি ঘাড় নাড়লাম।
“পৃথিবী থেকে আমরা মেঘের যে নীচের দিকটা দেখতে পাই, সেখানেই তাপমাত্রা থাকে বেশি, আর যত ওপরের দিকে যাবি তত সেটা কমতে থাকে। ওই বরফকণাগুলো ওপর-নীচ দৌড়োদৌড়ি করার সময় নিজেদের মধ্যে ঘষা খায়, ধাক্কা খায় বার বার—যার ফলে বরফকণাগুলোর মধ্যে স্থির বিদ্যুৎ জমে উঠতে থাকে। বিদ্যুতের দুরকম আধান হয় জানিস নিশ্চয়ই—পজিটিভ আর নেগেটিভ। খুব হালকা বরফকণাগুলো ওপরের ওঠার সময় পজিটিভ হয়ে যায়, আর বেশ কিছু বরফবিন্দু জমে একটু বড়ো বরফকণা হয়ে মেঘের নীচের দিকে নামার সময় হয়ে ওঠে নেগেটিভ। এই নেগেটিভ আধানের বরফ-বিন্দুগুলোই একটু পরে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে নেমে আসে।”
“বরফকণার ঘষাঘষিতে বিদ্যুৎ তৈরি হয়?” আমার ঠিক বিশ্বাস হল না।
“উঁহু। প্রথম কথা, দুটো জিনিসের ঘষাঘষিতে দুটোর মধ্যেই বিদ্যুতের বিপরীত আয়ন তৈরি হয়, বিদ্যুৎ তৈরি হয় না। বিদ্যুৎ তৈরি হওয়া মানে বিপরীত দুই আধানের মধ্যে বিদ্যুতের প্রবাহ তৈরি হওয়া। এমন তো হামেশাই হয়, আমরা তেমন লক্ষ করি না। তুই তো চুলে তেল দিস না। প্লাস্টিকের চিরুনি দিয়ে শুকনো চুল আঁচড়ালে দুটোতেই, মানে চিরুনিতে এবং চুলে বিদ্যুতের আয়ন তৈরি হয়।”
“বলো কী?”
“হ্যাঁ। এটা বেশি হয় শীতকালে, যখন বাতাসে আর্দ্রতা কমে আসে। আরও আছে। তুই সিন্থেটিক কাপড়ের—টেরিকট বা টেরিলিনের জামা-প্যান্ট পরিস কি? কলেজ থেকে ফিরে তাড়াহুড়ো করে জামা-প্যান্ট খোলার সময় দেখবি হাতে-পায়ের লোমগুলো কেমন খাড়া হয়ে ওঠে, আর খুব মৃদু চিটচিট একটা শব্দ হয়।”
“তাই নাকি? কীসব বলছ? ভয় ভয় করছে যে!”
“ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তবে এমনটাই হয়। চিরুনির ঘষায় আমাদের চুলে এবং জামা-প্যান্টের ঘষায় আমাদের লোম এবং চামড়ায় বিদ্যুতের আধান তৈরি হয়ে ওঠে। সে যাক, মেঘের মধ্যে এই দুই বিপরীত আধানের মধ্যে যখন বিদ্যুতের প্রবাহ হয়ে ওঠে তখনই আমরা বিদ্যুতের ঝলক দেখতে পাই। বিদ্যুতের প্রবাহ হওয়া মানে দুই বিপরীত আয়নের মধ্যে সাম্যতা আনা।”
“বিদ্যুতের এই প্রবাহেরও রকমফের আছে। কিছু কিছু ঘটে একটি মেঘের স্তূপের মধ্যে, কিছু হয় কাছাকাছি দুই বা তার থেকেও বেশি মেঘের স্তূপগুলির মধ্যে। পরের বিদ্যুতগুলো খুব জোরালো হয়। এই বিদ্যুত প্রবাহের সময় যেমন আলোর ঝলকানি ঘটে, তেমনি বেশ কড়কড় আওয়াজ ওঠে। সেটাকেই আমরা বলি মেঘের গর্জন। আর একটা প্রবাহ আছে—সেটাই খুব ভয়ংকর, সেটাকে আমরা আর বিদ্যুৎ চমকানো বলি না, বলি বজ্রপাত।”
“মেঘের নীচের স্তরে নেগেটিভ আধান জমে উঠতে থাকে আগেই বলেছি। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে জমে ওঠা প্রচুর মেঘরাশি ঘুরতে ঘুরতে তাদের নীচের স্তরে যখন প্রচুর নেগেটিভ আধান জমা হতে থাকে তখনই মেঘের বিদ্যুৎ মাটিতে আছড়ে পড়ে। প্রচুর বললাম, এর পরিমাণ যে কত সেটা বললে আবার চেয়ার থেকে উলটে পড়ে গিয়ে কেলেঙ্কারি বাধাবি। সেটা পরে বলব। আমাদের এই পৃথিবীর মাটি সর্বদাই পজিটিভ আধানের ভাণ্ডার। আর তার ওপরের বায়ুমণ্ডল হল বিদ্যুতের পক্ষে দুর্দান্ত কুপরিবাহী। কুপরিবাহী মানে যার মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ সহজে বইতে পারে না। যেমন শুকনো কাঠ, কাচ বা প্লাস্টিকও কুপরিবাহী—এরা সবাই তড়িতের প্রবাহকে বাধা দেয়। মাটির ওপরের বায়ুস্তরও এ-ব্যাপারে ভীষণ দায়িত্বশীল, সহজে বিদ্যুৎপ্রবাহ ঘটতে দেয় না।
“কিন্তু ঝড়ের সঙ্গে বয়ে আসা বিশাল মেঘপুঞ্জ এবং তার তলার দিকে জমে উঠতে থাকা বিপুল নেগেটিভ আধান যখনই মাটি থেকে এক-দেড় কিলোমিটারের কাছাকাছি চলে আসে, তখনই বাজ পড়ার মতো ভয়ানক ব্যাপারটা ঘটে যায়। এতটা নেগেটিভ আধানের চাপ আমাদের বায়ুস্তরও সামলাতে পারে না। মেঘের নেগেটিভ আধান ও পৃথিবীর পজিটিভ আধানের মধ্যে প্রবাহ তৈরি করে ফেলে। তার ফলেই ঘটে যায় তীব্র আলোর ঝলকানি, বীভৎস আওয়াজ এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতি। যেহেতু বায়ুস্তর হল বিদ্যুতের চিরশত্রু, অতএব মাটির ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা বহুতল বাড়ি, লম্বা গাছ কিংবা ইলেকট্রিকের পোল পেয়ে গেলে বিদ্যুৎ তার সহজ প্রবাহের পথ খুঁজে নেয়। বাড়িঘরের ক্ষতি হয়, বড়ো বড়ো গাছও ঝলসে মারা পড়ে। ঠিকমতো ব্যবস্থা না করলে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে দেখা গেছে কারখানার চিমনিও।
“এবারে এই বিদ্যুতের পরিমাণটা একটু হিসেব করা যাক। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, মাঝারি সাইজের, তার মানে খুব মারাত্মক নয়, বাজ থেকে ১ গিগাজুল (J) তড়িৎশক্তি পাওয়া যায়। এক গিগা মানে ১০৯, অর্থাৎ একের পিঠে ন’খানা শূন্য জুড়লে যা হয়, তত জুল। মাঝামাঝি ধরনের একটা বজ্রপাতে তড়িৎপ্রবাহের পরিমাণ দেখা গেছে ৩০,০০০ অ্যাম্পিয়ার (I)। যে পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তার হিসেব মোটামুটি ১৫ কুলম্ব (Q)। এবার খুব সরল একটা অঙ্ক কষা যাক।
“মেঘ আর পৃথিবীর তড়িতের আধানের পার্থক্য = ভোল্ট (V) = তড়িৎ শক্তি (J)/ তড়িৎ প্রবাহ (Q)
= ১০৯ J/১৫ Q = ৬,৬৬,৬৬,৬৬৭ V
“তাহলে মোট যে তড়িতশক্তি উৎপন্ন হল, সেটাকে P ধরলে, P = V X I = ৬,৬৬,৬৬,৬৬৭ X ৩০,০০০ = ২০,০০,০০০ মেগাওয়াট।
“ওয়াট শব্দটা নিশ্চয়ই শোনা শোনা লাগছে? আমরা আগে ঘরে ষাট বা একশো ওয়াটের বাল্ব জ্বালতাম, এখন এল.ই.ডি হয়ে সেটা নেমে এসেছে ১০ বা ১১ ওয়াটে। এই ওয়াট হল আমরা একঘণ্টায় কতটা বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করলাম তার পরিমাপ। এই হিসেবেই আমাদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেরও ক্ষমতা বর্ণনা করা হয়, যেমন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র মানে ওই কেন্দ্র থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎশক্তি উৎপন্ন করা যায়। এক মেগাওয়াট মানে একের পিঠে ছ’টি শূন্য, তার মানে ১০,০০,০০০ ওয়াট।
“আর একবার একটু অঙ্ক কষি—আমাদের ৫০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১ ঘণ্টায় বিদ্যুৎশক্তি দেয় ৫০০ মেগাওয়াট। তাহলে একদিন মানে ২৪ ঘণ্টায় দেবে = ২৪ x ৫০০ = ১২০০০ মেগাওয়াট।
“সেক্ষেত্রে ২০,০০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করতে সময় লাগবে = ২০,০০,০০০ / ১২০০০ = ১৬৬.৬৬৭ দিন। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস!
“অতএব খুব সাধারণ একটা বজ্রপাতের সমান তড়িৎশক্তি সৃষ্টি করতে এরকম একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের লাগবে প্রায় মাস ছয়েক।”
৩
এতক্ষণ বাচ্চুদার বিজ্ঞানের এই বক্তৃতা শুনতে শুনতে খুব বোর হচ্ছিলাম। তাই বাচ্চুদা থামতে একটু ঠাট্টা করেই জিজ্ঞেস করলাম, “তাতে হলটা কী? তুমি কি বাজ ধরে ধরে দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বন্ধ করে দিতে চাও?”
বাচ্চুদা বলল, “বাহ্, ভেরি গুড! তোর মগজে তার মানে ব্যাপারটা মোটামুটি ঢুকেছে। কিন্তু আমি ওই বাজ ধরতে চাই না। কিংবা সত্যি কথা বলতে, আমাদের পক্ষে বাজকে ধরে ফেলার ক্ষমতা সম্ভব বলেও মনে হয় না। বরং বাজ তৈরি হওয়ার আগেই মেঘের মধ্যে জমতে থাকা কিছু নেগেটিভ আয়নকে আমি ধরতে চাই এবং অলরেডি তাদের ধরেও ফেলেছি। তবে সবটা নয়, অতি সামান্য কিছু অংশ। প্রথম চেষ্টায় যেটুকু ধরতে পেরেছি, তাতে আমাদের বাড়ির অন্তত ছ’মাসের যাবতীয় বিদ্যুতের খরচ চলে যাবে।”
বাচ্চুদা পাগল-টাগল হয়ে যায়নি তো? নাকি আমিই ভুলভাল কিছু শুনলাম? অবাক হয়ে আমি বললাম, “তার মানে তুমি ওই বিদ্যুৎ ধরে ফেলেছ? এ কি বনের পাখি, নাকি জঙ্গলের পশু—ধরে এনে খাঁচায় ভরে ফেললে?”
মুচকি মুচকি হেসে বাচ্চুদা বলল, “ওই যে তখন বললি, ধরণীদার মতো আমি ব্যাটারি চার্জের দোকান খুলেছি। আকাশের মেঘ থেকে ওই ব্যাটারিতেই ভরে ফেলেছি ছ’মাসের বিদ্যুৎ।”
বাচ্চুদার এ-কথায় এবার আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এরকম সত্যিই করা যায়? আমার জানাশোনার গণ্ডি খুবই সীমিত, তবু মনে হল এরকম করা সম্ভব বলে আমার ধারণা ছিল না। তবে সত্যি হলে বাচ্চুদার প্রতিভাকে মেনে নিতেই হবে। আমি খুব আশ্চর্য হয়েই বললাম, “কী করে করলে বলো তো?”
বাচ্চুদা তৃপ্তির হাসি হেসে বলল, “গত ছ’মাস ধরে এর জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছি বাছাধন। অত সহজে সব কথা বলা যায়, নাকি বললেই তুই সব বুঝে ফেলবি? খুব সহজ করে বলছি শোন। আমার একটা বেলুন বল কিংবা ফানুস আকাশে এখন উড়ছে, মাটি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উঁচুতে।”
“দেড় কিলোমিটার?”
“আজ্ঞে হ্যাঁ। সেটা যে বাচ্চাদের সাধারণ গ্যাস বেলুন বা দেওয়ালির সাধারণ ফানুস নয় সেটা নিশ্চয়ই বুঝছিস? এর পেছনে যেসব টেকনলজি আছে সেটা তুই ভালো বুঝবি না। খুব সহজ করে বললে, ওই ফানুসটা বাঁধা আছে দেড় কিলোমিটার লম্বা একটা রশিতে, আমাদের বাড়ির পেছন দিকের বিশাল একটা ঘরে। কোনও এক সময় ওটা আমাদের গোয়াল ঘর ছিল, সেটাকে আমি আমার দরকারমতো পালটে এখন ব্যাটারি ঘর করে ফেলেছি। ওই রশিটা সাধারণ কোনও দড়ি নয়, বরং বলা উচিত উচ্চ ক্ষমতাশালী কপার ক্যাবল, বিশেষভাবে বানানো।
“আমার ফানুসটা মেঘের যেখানে নেগেটিভ আধানের কণাগুলো ছুটোছুটি করছে, তার মধ্যে ঢুকে পড়া মাত্র বিদ্যুতের আধান ক্যাবলের মধ্যে দিয়ে চোঁ চোঁ করে টেনে নামিয়ে নিয়েছে। বোতলের ঠান্ডা পানীয় আমরা যেমন স্ট্র দিয়ে নীচ থেকে ওপরে মুখের মধ্যে টানি, সেরকমই, তবে এক্ষেত্রে সেটা ওপর থেকে নীচে নেমেছে। আমার ওই ক্যাবলটা আমার ওই ব্যাটারি ঘরের এক কোনায় মাটির অনেকটা নীচে পর্যন্ত চলে গেছে, যাকে আমাদের টেকনিকয়াল ভাষায় বলে ‘আর্থিং’। কিন্তু তার আগে ওই ক্যাবল তিন সারিতে মোট তিরিশটা ব্যাটারির ভেতর দিয়ে চলে গেছে। তার মানে আমার ফানুস মেঘের নেগেটিভ বিদ্যুৎ আধান ধরে পৃথিবীর মাটির পজিটিভ আধানের সঙ্গেই জুড়ে দিল, কিন্তু তার আগে আমার ব্যাটারিগুলোর মধ্যে জমা করে রাখল বেশ কিছুটা বিদ্যুৎশক্তি। আমি মাত্র তিরিশটা ব্যাটারি বানানোর মতো খরচ বা তাদের রাখার মতো জায়গা করতে পেরেছি। ক্ষমতা থাকলে হাজারটা বা তার অনেক বেশিও করা যেত। তবে প্রথমবার পরীক্ষার পক্ষে তিরিশটাই-বা মন্দ কী?”
আমার মুখে কোনও কথা নেই। আর বলবই-বা কী? আমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলাম বাচ্চুদার মুখের দিকে। বাচ্চুদা আবার বলল, “এতে যে শুধু প্রকৃতির বিপুল শক্তি অপচয়ের সামান্য সাশ্রয় হল তাই নয়। মেঘের তড়িৎ আধান মাটিতে চালান হয়ে যাওয়াতে অতিরিক্ত আধান সঞ্চয় হয়ে বজ্রপাতের সম্ভাবনা কমে গেল। আমাদের এই পাড়ায় অন্তত হাফ কিলোমিটারের মধ্যে বাজ পড়ার বিপদ অনেকটাই এড়ানো গেল।”
একটু থেমে বাচ্চুদা আবার বলল, “ভাবছি দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন আয়ন-ধরা ছোটো ছোটো কেন্দ্র যদি বানিয়ে তোলা যায়। আমাদের বাড়িঘর এবং রাস্তাঘাটের দৈনন্দিন প্রয়োজনের অনেকটাই যদি এভাবে পূরণ করা যায়, তাহলে আমাদের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বানানোর চাপটা অনেকটাই কমবে। কমবে কয়লা পোড়ানো আর দূষণ। কমবে বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি আর প্রাণহানির ঘটনা। কী মনে হচ্ছে, আকাশকুসুম কল্পনা?”
“বাচ্চুদা, কী বলব, এখনও যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। কী করে তোমার মাথায় আসে?”
এই সময়ই কাকিমা ঘরে এলেন আমাদের প্লেটগুলো তুলে নিতে। আমাকে বললেন, “হ্যাঁ রে গজু, মাকে ফোন করেছিস? সাড়ে আটটা বাজল, তোর মা চিন্তা করবে না?”
“হ্যাঁ কাকিমা, আসার পথে মাকে ফোনে বলেছিলাম, বাচ্চুদার বাড়ি যাচ্ছি।”
বাচ্চুদা জিজ্ঞেস করল, “বৃষ্টি ধরেছে, মা?”
কাকিমা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন, “সে তো অনেকক্ষণ, আকাশ দিব্যি পরিষ্কার হয়ে গেছে। ঘরে সারাক্ষণ কম্পিউটার আর যন্ত্রপাতির মধ্যে মুখ গুঁজে বসে না থেকে বাইরেও বের হ, তবে তো বুঝবি।”
কাকিমা বেরিয়ে যেতেই বাচ্চুদা বলল, “চ’ তাহলে একবার ব্যাটারি ঘরটা থেকে ঘুরে আসি। কীরকম কী হল দেখে নিই। আর বেলুনটাকেও সাবধানে নামিয়ে আনি।”
লেখকের অন্যান্য লেখা
প্রলয় সেন ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ রম্যাণী গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ তাপস মৌলিক ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ প্রদীপ কুমার দাস ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ দীপক দাস ▪ অমিয় আদক ▪ কল্যাণ সেনগুপ্ত
বদ্রীনাথ পাল ▪ দীনেশ সরকার ▪ রূপসা ব্যানার্জী ▪ শঙ্খশুভ্র পাত্র ▪ সৌরভ চাকী ▪ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪ শিবানী কুণ্ডু খাঁ ▪ সুব্রত দাস ▪ বসন্ত পরামানিক ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ তাপস বাগ ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ টুম্পা মিত্র সরকার
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ যূথিকা আচার্য ▪ মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ কেয়া চ্যাটার্জী ▪ ইন্দ্রজিৎ ঘোষ ▪ সুদীপ ঘোষাল ▪ অনিন্দ্য পাল ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অরিন্দম ঘোষ ▪ সৌম্যপ্রতীক মুখোপাধ্যায় ▪ রাজীবকুমার সাহা
সনৎ কুমার ব্যানার্জ্জী ▪ মলয় সরকার
অলংকরণ
প্রদীপ গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ অঙ্কিতা মণ্ডল ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ সুকান্ত মণ্ডল ▪ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪ প্রবাহনীল দাস ▪ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী ▪ রাজন্যা ব্যানার্জী ▪ সমৃদ্ধি ব্যানার্জী ▪ ঐশিক মণ্ডল ▪ বিজয় বোস ▪ দীপক কুণ্ডু