প্রবন্ধ
15% OFF * FREE SHIPPING
প্রবন্ধ
হ্যামারফেস্ট শহরের উত্তরদিকে, ইনগোয়া দ্বীপ থেকে একটু দূরে। নরওয়ে সাগরে পৌঁছতেই সেই জেলেদের দল চমকে ওঠে। সেখানে সমুদ্রের জলে সাঁতার কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছিল একটি বেশ গোলগাল নাদুসনুদুস সাদা ফুটফুটে বেলুগা তিমি। ওদেশে সমুদ্রের জলে বেলুগা তিমি দেখতে পাওয়া একটা দারুণ কিছু ব্যাপার নয়। আমাদের গঙ্গার জলে যেমন শুশুক দেখতে পাওয়া যায়, ওখানে জলে তেমনি বেলুগা ঘোরে। কিন্তু চমক লাগানো ব্যাপারটি ছিল অন্য জায়গায়।
যূথিকা আচার্য
আমেরিকার মবি ডিক বা নিউজিল্যান্ডের পেলোরাস জ্যাকের নাম পৃথিবীর সবাই জানে। মবি ডিক নামের বিশালাকায় তিমি মাছটি ছিল মার্কিন লেখক হারমান মেলভিলের কল্পনা। ওদিকে পেলোরাস জ্যাকমশাই ছিলেন পৃথিবী-বিখ্যাত এক ডলফিন যিনি সমুদ্রের ডুবোপাহাড়ের অংশগুলিতে জাহাজ পারাপার করতে সাহায্য করতেন।
তবে আমি পাক্কা জানি যে তিমি বংশের কুলতিলক নরওয়ের বেলুগানন্দন শ্রীমান ভ্যালদিমির জেমস বেলুগার নাম তোমরা এখনও শোনোনি। অথচ দেখো, ভ্যালদিমিরের কাণ্ডকারখানাও কিন্তু কম রোমাঞ্চকর নয়। সে-বেচারা ক’দিন আগেই মারা গেছে বটে, কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি যে তেমন কোনও লেখক বা ফিল্ম মেকারের চোখে পড়লে আমাদের প্রিয় বেলুগাটিকে নিয়েও চমৎকার একটি নভেল বা সিনেমা কিন্তু দিব্যি তৈরি করা যেত।
যাক গে ওসব কথা। আজকে চলো সেই ভ্যালদিমিরের গল্প শোনাই তোমাদের।
সেই দিনটা ছিল ২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল। শুক্রবার সকাল। সুন্দর মিঠে রোদ উঠেছে। রুটি, মাখন আর সসেজ দিয়ে চমৎকার ব্রেকফাস্ট সেরে নরওয়ের হ্যামারফেস্ট শহরের কয়েকজন জেলে তাদের মাছ ধরার নৌকো নিয়ে পাড়ি দিল সমুদ্রের বুকে।
হ্যামারফেস্ট শহরের উত্তরদিকে, ইনগোয়া দ্বীপ থেকে একটু দূরে। নরওয়ে সাগরে পৌঁছতেই সেই জেলেদের দল চমকে ওঠে। সেখানে সমুদ্রের জলে সাঁতার কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছিল একটি বেশ গোলগাল নাদুসনুদুস সাদা ফুটফুটে বেলুগা তিমি। ওদেশে সমুদ্রের জলে বেলুগা তিমি দেখতে পাওয়া একটা দারুণ কিছু ব্যাপার নয়। আমাদের গঙ্গার জলে যেমন শুশুক দেখতে পাওয়া যায়, ওখানে জলে তেমনি বেলুগা ঘোরে। কিন্তু চমক লাগানো ব্যাপারটি ছিল অন্য জায়গায়। জেলেরা সাতসকালে যে তিমিটিকে দেখেছিল, তার পিঠে লাগানো ছিল চামড়ার তৈরি জিন। ইংরিজিতে যাকে বলে হার্নেস। বেলুগা বেচারা আশেপাশের জেলে নৌকোর গায়ে ঘষে সেই হার্নেসটাকে খুলে ফেলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছিল। কিন্তু কিছুতেই সুবিধে না করতে পেরে শেষটায় সে জেলেদের থেকে সাহায্য চেয়ে নৌকোর পাশাপাশি সাঁতার কাটতে থাকে।
নৌকোর পাশে সন্তরণরত ভ্যালদিমির
জেলেরা পড়ল ফাঁপরে। তিমি বেচারা সাহায্য চাইছে সে ভালো কথা, কিন্তু বুনো প্রাণীদের সঙ্গে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা সবাই জানেন যে এমন ধরনের কাজে বিপদ হতে পারে যখন-তখন। স্থল হোক বা জল, বুনো প্রাণীদের মন বুঝে ওঠা ভারি কঠিন কাজ। কখন যে তাদের মেজাজ বিগড়ে যায় সে-কথা শুধু ঈশ্বরই বলতে পারেন। ডাঙায় তাও ছুটে পালানো যায়। কিন্তু জলের বিপদ আরও বেশি। প্রথমত, জলে নেমে জলের প্রাণীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাওয়াটাই বোকামো। জোরে সাঁতার কাটতে গেলেও বুকে হাঁফ ধরে যায়। তার ওপর যদি প্রতিপক্ষ নয়-দশ ফুট লম্বা একজন তিমি মাছ হন তাহলে তো আরও মুশকিল। এদিকে অ্যানিম্যাল রেসকিউ সেন্টারের ভরসায় বসে থাকাটাও কিছু কাজের কথা নয়। কারণ, কাছেই রাশিয়া। সে-দেশের সেনাবাহিনী সিল, ডলফিন, বেলুগা জাতীয় প্রাণীদের শিখিয়ে পড়িয়ে, পাখনায় ক্যামেরা বেঁধে তাদের সামুদ্রিক স্পাই বানিয়ে তোলে। রাশিয়ান মিলিটারির এই কর্মকাণ্ডের নাম মিলিটারি সিটেশিয়ান ট্রেনিং প্রোগ্রাম (Military Cetacean Training Programs)। বেলুগাটির পিঠেও ঠিক একইরকম জিন বাঁধা ছিল।
বেলুগা তিমির পিঠে বাঁধা স্পাই ক্যামেরা
স্বাভাবিকভাবেই জেলেরা ভাবল যে এখানেও যদি তেমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে বেলুগাটি পালিয়ে গেলে তাদের দেশের বিপদ হতে পারে। নিজেদের মধ্যে কথা বলে শেষ পর্যন্ত তারা স্থির করল যে জলে নেমে দেখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এমনিতে বেলুগা তিমি যথেষ্ট শান্ত স্বভাবের হয়। তাছাড়া এই তিমিটির ভাবভঙ্গি দেখে তারা নিশ্চিত হয়ে গেল যে মানুষ দেখে ভয় পেয়ে, ঘাবড়ে গিয়ে ছটফট করার বান্দা সে মোটেই নয়। জেলেদের মধ্যে একজন, জোয়ার হেস্টেন অক্সিজেন ট্যাংক আর জলের নীচে ঘোরার মতো সাজসরঞ্জাম পরে নেমে পড়লেন ব্যাপারখানা দেখতে।
তা হেস্টেন সাহেব জলে নামার পর দেখলেন যে জিনখানা তিমিটির গায়ের ওপর প্রায় এঁটে বসে গেছিল। স্বাভাবিকভাবেই সে-বেচারা ছটফট করছিল ব্যথায়। একজন মানুষকে জলে নামতে দেখে সে ভয় তো পেলই না, উলটে চটপট সে সাহেবের কাছে এসে তাঁর পাশাপাশি সাঁতার কাটতে লাগল। জোয়ার সাবধানে তার পিঠ থেকে হার্নেসটি খুলে তাড়াতাড়ি আবার নৌকোয় ফিরে গেলেন। নৌকোয় ফিরে সেই হার্নেসটিকে ভালো করে দেখতেই বোঝা গেল যে সেটি সত্যিই রাশিয়ায় তৈরি। হার্নেসের গায়ে খুদে খুদে অক্ষরে স্পষ্ট লেখা আছে ‘Equipment St. Petersburg’ অর্থাৎ সেইন্ট পিটারসবুর্গের সামগ্রী।
বিপদে পড়ে জেলেদের কাছে সাহায্য চাইতে আসে এজেন্ট বেলুগা
বুঝতেই পারছ যে, সেই জিনটা দেখে জেলেদের অবস্থা কী হল। তাঁরা স্থানীয় পশুরক্ষাকর্মীদের আর পুলিশ স্টেশনে ব্যাপারটা জানাতেই স্থানীয় লোকজনও নড়েচড়ে বসল।
এদিকে যাকে নিয়ে এত হইচই, সেই বেলুগা বাবাজি কিন্তু আছেন দিব্যি মজায়। তিনি মহানন্দে খাচ্ছেন-দাচ্ছেন আর জলে সাঁতার কেটে, ডিগবাজি খেয়ে বেড়াচ্ছেন। দিন কয়েকের মধ্যেই কাছাকাছি সব জেলেদের সঙ্গে চমৎকার ভাব করে ফেললেন তিনি। জেলেরা তাঁর কাণ্ডকারখানা দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়, আর সে-সব নাচনকোঁদনের বদলে বেলুগামশাই পেটটি পুরে খেতে পান। আবার খেলার জন্য বল আর খেলনা রবারের রিংও জুটে যায় তার কপালে।
ব্যাপার-স্যাপার চলছিল বেশ ভালোই। কিন্তু ক’দিনের মধ্যেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বুঝলেন যে এই ব্যবস্থায় উপকারের থেকে অপকার হচ্ছে অনেক বেশি। আপাতদৃষ্টিতে সমস্যা কিছু নেই, কিন্তু বুনো প্রাণী যদি খাদ্যের জন্য মানুষের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে যায় তাহলে তারা নিজেরা খাবার খুঁজতে ভুলে যায়। তাছাড়া সবসময় সবরকম মানুষের ওপর বিশ্বাস করা যায় এমনটাও তো নয়। মানুষ যে তাকে তাদের উপযোগী খাবারই খেতে দেবে সবসময় এমনটাও হয় না। কাজেই মানে মানে কর্তৃপক্ষ এবার সবাইকে কড়া সুরে বললেন, ‘বাপু হে, অনেক হয়েছে। তিমিটাকে এবার শান্তিতে বাঁচতে দাও তো দেখি।’
তা বকুনি-টকুনি খেয়ে লোকজন বেলুগাটিকে খাওয়ানো বন্ধ করল ঠিকই, কিন্তু ততদিনে পুরো হ্যামারফেস্ট শহরে সবাই তার ব্যাপারে জেনে গেছে। লোকজন নরওয়ের ভাষায় ভ্যাল (Hval) অর্থাৎ তিমি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম একসঙ্গে জুড়ে তাদের প্রিয় বেলুগাটির নাম দিয়েছে ভ্যালদিমির (Hvaldimir)। আবার আর একদল মানুষ বলল, রাশিয়ার স্পাই বলে কথা, তাই এজেন্ট জেমস বেলুগা নামটা দিলে আরও জুতসই হয়।
এমনি করে দিন কেটে যাচ্ছিল বেশ ভালোই। মাস কয়েকের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভ্যালদিমির বেশ বিখ্যাত হয়ে যায়। নরওয়ের অন্যান্য শহর থেকে তো বটেই, পৃথিবীর অন্য দেশ থেকেও মানুষ নরওয়ে আসতে শুরু করে শুধুমাত্র আমাদের বেলুগাটিকে দেখার জন্যই। পৃথিবী জুড়ে বহু প্রাণীবিজ্ঞানী, পশু-ডাক্তার এবং সমাজসেবীরা মিলে গড়ে তোলেন একটি গ্রুপ যার নাম দেওয়া হয় ‘ভ্যালদিমিরের বন্ধুরা’। এই দলের লোকেরা সবাই মিলে একসঙ্গে তাদের বন্ধু বেলুগাটিকে যাতে মানুষের হাত থেকে বাঁচিয়ে আবার সাবধানে সমুদ্রে ফিরিয়ে দেওয়া যায় সেই চেষ্টাই করছিলেন। কিন্তু তাতেও সমস্যা কমল কোথায়? কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, একা হয়ে গেলেই ভ্যালদিমিরের মনখারাপ হয়ে যাচ্ছে। সে-বেচারা মানুষের সঙ্গ বড়ো ভালোবাসে। বেশিদিন লোকজনের সঙ্গে না মিশলে সে মন-টন খারাপ করে বসে থাকে আর অমনি তার খাওয়াদাওয়া সব মাথায় ওঠে।
বিজ্ঞানীরা কী আর করবেন? তাঁদের ইচ্ছে যাই হোক না কেন, তাঁদের বেলুগা বন্ধুটির ভালো থাকার থেকে দরকারি আর কিছুই হতে পারে না, এ-কথা তাঁরা দিব্যি বুঝতে পারছিলেন। বাধ্য হয়েই তাঁরা ভ্যালদিমিরের ব্যাপারে জানার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা ভ্যালদিমিরের স্পাইগিরির কথা শুনে তো হেসেই খুন। তারপর তার পিঠের জিনটির ছবি দেখে তাঁরা বললেন, স্পাই নয়, ভ্যালদিমির হল আসলে থেরাপি অ্যানিম্যাল। রাশিয়া আর নরওয়ের বর্ডারে একটি প্রতিবন্ধী শিশুদের আশ্রমে বাচ্চাদের সঙ্গে খেলার জন্য তাকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। তখন জলের মতো ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল সবার কাছে। এতক্ষণে বোঝা গেল এজেন্ট বেলুগার এমন মনুষ্যপ্রীতির কারণখানা কী। সে-বেচারা পুঁচকে বয়স থেকে বড়ো হয়েছে মানুষের ছানাদের সঙ্গে হেসেখেলে। মানুষকে সে দেখে বন্ধু বা ভাইবোনের মতো। তাদের থেকে হঠাৎ দূরে পাঠানোর ব্যবস্থা করলে তার মনখারাপ তো হবেই। তবে রাশিয়ার সঙ্গে নরওয়ের কথা হয়ে একদিক থেকে ভালো হল। মিছিমিছি দুটো দেশের মধ্যে মন কষাকষি মিটে গেলে তারা বুঝল যে ভ্যালদিমির আসলে তাদের সবার বন্ধু। তার সাদা মনে একটুও কাদা নেই।
এমনি করে আরও কয়েক বছর ভালোয় ভালোয় কেটে যাওয়ার পর এই বছর অর্থাৎ দু-হাজার চব্বিশ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিনটিতে পুরো পৃথিবীর মানুষ খুব দুঃখের সঙ্গে তাদের বন্ধু এজেন্ট জেমস বেলুগাকে চিরবিদায় জানায়। গলায় একটি কাঠের টুকরো আটকে গিয়ে মৃত্যু হয় আমাদের বন্ধু বেলুগাটির। আলোর মতো ফুটফুটে সুন্দর ভ্যালদিমির আবার ফিরে যায় আলোর দেশেই। ছোটোদের সে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসত। তাই আমার মনে হয় পৃথিবীর মায়া কাটালেও এজেন্ট বেলুগা বাচ্চাদের সঙ্গ ছাড়া এখনও থাকতে পারে না। আমি নিশ্চিত, যে স্বর্গোদ্যানে গিয়ে সে এখন খুদে এঞ্জেলদের সঙ্গে খেলা করে।
ভালো থেকো ভ্যালদিমির। We will miss you.
ছবি: আন্তর্জাল
লেখিকার অন্যান্য লেখা
প্রলয় সেন ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ রম্যাণী গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ তাপস মৌলিক ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ প্রদীপ কুমার দাস ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ দীপক দাস ▪ অমিয় আদক ▪ কল্যাণ সেনগুপ্ত
বদ্রীনাথ পাল ▪ দীনেশ সরকার ▪ রূপসা ব্যানার্জী ▪ শঙ্খশুভ্র পাত্র ▪ সৌরভ চাকী ▪ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪ শিবানী কুণ্ডু খাঁ ▪ সুব্রত দাস ▪ বসন্ত পরামানিক ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ তাপস বাগ ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ টুম্পা মিত্র সরকার
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ যূথিকা আচার্য ▪ মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ কেয়া চ্যাটার্জী ▪ ইন্দ্রজিৎ ঘোষ ▪ সুদীপ ঘোষাল ▪ অনিন্দ্য পাল ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অরিন্দম ঘোষ ▪ সৌম্যপ্রতীক মুখোপাধ্যায় ▪ রাজীবকুমার সাহা
সনৎ কুমার ব্যানার্জ্জী ▪ মলয় সরকার
অলংকরণ
প্রদীপ গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ অঙ্কিতা মণ্ডল ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ সুকান্ত মণ্ডল ▪ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪ প্রবাহনীল দাস ▪ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী ▪ রাজন্যা ব্যানার্জী ▪ সমৃদ্ধি ব্যানার্জী ▪ ঐশিক মণ্ডল ▪ বিজয় বোস ▪ দীপক কুণ্ডু
আমরা ভারতবাসী কাব্য-মহাকাব্য লিখেছি। লিখেছি পুরাণের নামে কিছু অলীক গল্পকথা। কিন্তু ইতিহাস লিখতে শিখিনি। তার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করিনি। তাই ঐশ্বর্যময় গরিমা সত্ত্বেও আমরা আমাদের উত্তরসূরিদের জন্য কিছুই রেখে যাইনি। গিরিব্রজসিংহ এমনই এক অকথিত ঐতিহাসিক উপাখ্যান।
হেরম্বপুর থানার দোর্দণ্ডপ্রতাপ দারোগা দিগম্বর দিকপতি। রগচটা, বদমেজাজি, কিন্তু কর্মনিষ্ঠ। যাঁর দাপটে অপরাধ-জগৎ কম্পমান! সেই দিকপতিকে তিষ্ঠোতে দেয় না ধুরন্ধর চোর সনাতন। নানান ভাবে, নানান ফিকিরে নাস্তানাবুদ করে তোলে দাপুটে এই বড়োবাবকে। অকুতোভয় বড়োবাবু বাইরে প্রকাশ না করলেও মনে মনে সনাতনকে খুবই ভয় পান। কী জানি কখন কী করে ব্যাটাচ্ছেলে তাঁর মানসম্মান সব ধুলোয় মেশায়! সবসময়ই বাছাধনের মাথায় শুধু বুদ্ধির মারপ্যাঁচ! তাই সর্বদাই তাকে সমঝে চলতে হয়। অপরদিকে সনাতনেরও দারোগাবাবুর ভয়ংকর বদমেজাজি রাগটাকে ভয়। কে জানে কবে তাকে মিথ্যে কেসে ফাঁসিয়ে যাবজ্জীবন সাজায় না জেলে পাঠান! সমস্ত বই জুড়ে শুধু এই দুই মহারথীর দ্বৈরথ।
কখনও সনাতন শেষ হাসি হাসলে কখনও দিকপতিও জয়ী হন। শুরু থেকে শেষ অবধি এই সংকলনের কুড়িটি গল্পে শুধু অত্যন্ত মজাদার এই দুই চরিত্রের অদম্য লড়াই। পাঠক হাসিতে লুটিয়ে পড়বেন কাহিনির বিন্যাসে। সঙ্গে সনাতনী সংলাপ আর দিগম্বরী প্রত্যাঘাত।