ছোটো গল্প
15% OFF * FREE SHIPPING
ছোটো গল্প
দু-পাশে পড়ে থাকা লাশের ঢিবি টপকে যোহান সাবধানে এগোচ্ছে। পিছন পিছন অনুসরণ করছে টোটো। প্রখর রোদে চোখে ধাঁধা লেগে যাচ্ছে ওদের। ও-পাশ থেকে ধাঁই ধাঁই ছুটে আসছে শত্রু ঘাঁটির গুলির ঝাঁক। আর কিছুটা গেলেই তৃতীয় লেভেল পার করবে ওরা। দুজনেরই জামা ভিজে গিয়েছে ঘামে। লাবডুব শব্দে তেজি ঘোড়ার মতো লাফাচ্ছে হার্টবিট। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। অখণ্ড মনোযোগ। জগৎ-সংসার ভুলে দুজনে একবগগার মতো এগোচ্ছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
রম্যাণী গোস্বামী
ঘরটি একসময় ছিল আয়তনে বড়ো এবং আয়তাকার। মাঝামাঝি পার্টিশন তুলে দিয়ে এখন ঠিক যেন পাশাপাশি দুখানা কিউব। দুটো কিউবেই কোথাও কোনও দরজা কিংবা জানালা দেখা যাচ্ছে না। মাথার কাছে লো পাওয়ারের বাল্বগুলো ভিতরটা নরম আলোয় ভরিয়ে রেখেছে। আসবাব বলতে শুধুই গদিওয়ালা সোফা। বাঁদিকের কিউবে শরীর টানটান করে সেই সোফায় বসে আছে ভীম ও অর্জুন। ওদের দৃষ্টি স্থির সামনের শূন্য দেওয়ালের দিকে। একটু আগেই জুনিয়র ডেটা সায়েন্টিস্ট ডেল্টা এসে দেওয়ালের কয়েকটা অদৃশ্য বোতামে দ্রুত হাতে চাপ দিয়ে কিছু একটা ইনস্টল করে দিয়েছে। তার ফলে এখন সেখানে ধীরে ধীরে নীলচে আলোয় ফুটে উঠছে ‘লোডিং’ লেখা শব্দটা। ওদিকেই তাকিয়ে ভীম ও অর্জুন অপেক্ষা করছে তীব্র আগ্রহে।
অন্যদিকে ডানের কিউবের ভিতরে সোফাতে হেলান দেওয়া ছেলে দুটোর বয়স মেরেকেটে বারো থেকে পনেরো। সদ্য ঘুমভাঙা চোখে ওরা তাকিয়ে আছে পরস্পরের দিকে। কিন্তু কেউ আগ বাড়িয়ে কথাবার্তা আরম্ভ করেনি। আসলে আলাপ করার ইচ্ছেটাই জাগেনি। ওদের এখনও মনে পড়ছে না কীভাবে এবং কখন ওরা এই অদ্ভুত জায়গায় এসে পৌঁছল। একটা ঘোলাটে ভাব কাজ করছে মগজে। এখনও। ওদের চেতনার স্তরে স্তরে পাহাড়ি রাস্তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখা ঘন কুয়াশার মতো আচ্ছন্নতা।
কিছুক্ষণ ওভাবে বসে থাকার পর নড়েচড়ে উঠল নীল টি-শার্ট আর ফেডেড জিন্স পরা ছেলেটা। তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের জামা-প্যান্টের পকেট হাতড়াল। কী যেন খুঁজে চলেছে তন্নতন্ন করে। না পেয়ে অন্যজনের দিকে তাকাল সন্দেহের চোখে।
যার দিকে তাকাল, তারও মনে হয় ঘোরলাগা ভাবটা কেটেছে এতক্ষণে। রঙ উঠে যাওয়া মলিন হাফ প্যান্টের পকেটে প্রাণের চাইতেও প্রিয় বস্তুটার চিরুনি তল্লাশ চালাল সে কিছুক্ষণ। না পেয়ে কাঁদো-কাঁদোভাবে লালচে চোখের কোণে আক্রোশ ফুটিয়ে তাকাল নীল শার্টের দিকে।
“অ্যাই, কী দেখছিস এভাবে? মেরে মুখ ফাটিয়ে দেব। কী নাম তোর?” ধমকের সুরে ছোকরার উদ্দেশে বলে উঠল নীল শার্ট। চেহারায় সে-ই অপেক্ষাকৃত বড়োসড়ো। আর শুধু চেহারায় কেন, পোশাকের জেল্লায়, ত্বকের চেকনাইতে, কবজির দামি ডিজিটাল ঘড়িটায়—সবেতেই তার বৈভবের ছোঁয়া।
“আ-আমার নাম? যোহান। যোহান টপ্পো।” ভয়ে ভয়ে নড়ে উঠল রোগাটে শরীরের কুঁকড়ে থাকা ঠোঁট।—“আপনার... ইয়ে, তোমার নাম কী?”
ও-পাশ থেকে উত্তর এল না কোনও। দেখে মনে হল যেন নীল টি-শার্ট ভুরু কুঁচকে নিজের নাম উদ্ধারের চেষ্টা করছে। যোহানের মনের ভিতর ঘূর্ণির মতো ঘুরপাক খাচ্ছে সাধের জিনিসটা খুঁজে না পাওয়ার ঘোরতর দুর্ভাবনা। আর সেই দুর্ভাবনা ছাপিয়ে জেগে উঠছে বিশ্রী এক আশঙ্কা। নাম জেনে কী করবে দাদাটা? ওকে পুলিশে ধরিয়ে দেবে না তো?
(২)
সেদিনটা ছিল রবিবার। ছুটির দিন। লোহার রেলিং দিয়ে ঘেরা রাজবাড়ি দিঘির বাইরে বিকেল থেকেই জমেছে সাইকেলের পাহাড়। অনেকক্ষণ ধরেই দিঘির আশেপাশে ঘুরঘুর করছিল যোহান। ফুচকাওয়ালা, চুরমুরওয়ালা, বেলুন নিয়ে বসা কানাইদা—সকলের চোখ এড়িয়ে মোক্ষম একটা সুযোগের অপেক্ষায় নিশপিশ করছিল ওর সমস্ত শরীর।
আরও একটু অন্ধকার ঘনাল। ভিড় বেড়েছে। ছেলেরা টিউশন পড়ে দলে দলে ফিরছে। হাসিখুশি মা-বাবা বাচ্চাদের হাতে বেলুন কিনে দিয়ে গেট ঠেলে ঢুকে যাচ্ছে ভিতরে। যোহান তক্কেতক্কেই ছিল। খদ্দেরের ভিড়ে হিমশিম খাওয়া স্টলগুলোর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে পায়ে পায়ে সে ঢুকে পড়ল সাইকেল স্ট্যান্ডের ভিতরে। চিলের মতো ছোঁ মেরে একটা ছোটোদের সাইকেল তুলে নিয়ে ছুট লাগাতেই কার যেন চোখ পড়ে গেছে যোহানের দিকে। উফ্, কী মার মারল ওরা তখন! ভাগ্যিস কানাইদা ওকে চেনে। সে সোজা দৌড়ে গিয়ে মায়ের কানে খবরটা দিয়েছে। মা তখন দিঘির উলটোদিকে গোলাপি রঙের দোতলা বাড়িটায় পাঁজা পাঁজা বাসন মাজতে ব্যস্ত। ছুটে এসে সবার হাতেপায়ে ধরে তখন আকুল কান্না মায়ের। তারপর যখন বাবুরা শুনল যে ও ভদ্র ঘরের ছেলে, অবস্থার ফেরে এখন বস্তিতে থাকে, চা বাগানের স্কুলে পড়ে, নেহাত অভাবের দায়ে কাজটা করে ফেলেছে, তখন ছাড়ল।
ততক্ষণে হাত-পা ব্যথায় অবশ যোহানের। ঠোঁট ফুলে গেছে মার খেয়ে। কপাল থেকে রক্ত বেরিয়ে জমেছে ডান চোখে। সেভাবেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জেলা হাসপাতালে গেল ওরা। মা রিকশাটুকুও করল না। সেখানে সুঁই দিল ডাক্তার। যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠল যোহান আর পাষাণের মতো তাকিয়ে থাকল মা। বস্তিতে ফিরেই সবার আগে মা ওর জামার কলার ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল ঘরের ভিতর। সজোরে দেওয়ালের সঙ্গে যোহানের মাথা ঠুকে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করল, “কেন করলি তুই এটা? বল! না বললে আজ রাতে খাওয়া জুটবে না।”
এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিল যোহান। ভ্যাপসা প্রায়ান্ধকার ঘরের জানালা দিয়ে তাকাল বাইরের দিকে। টাউন থেকে ষোলো কিলোমিটার দূরের এই টি-বেল্ট এলাকায় সন্ধ্যার এই সময়টায় নিয়ম করে এক ঘণ্টা কারেন্ট থাকে না। যোহানদের ঘুপচি ঘরের কুলুঙ্গিতে রাখা কুপির আলোটা ছোটো হয়ে দপদপ করছে। তেল নেই। এখনই নিভে যাবে সেটা। বাইরে টগরগাছের ঝোপে জোনাকির আলো নড়াচড়া করছে। সেদিকে তাকিয়ে অস্ফুটে যোহান জানাল চুরি করতে যাওয়ার কারণটা। এর আগেও ও দু-বার মায়ের ছোট্ট হাতবাক্স থেকে টাকা সরিয়েছে। কিন্তু মা সাবধানী হয়ে যাওয়ায় বাক্স সমেতই ঠিকা কাজের বাড়ি যায়। সেজন্যই ওকে বাধ্য হয়ে আজ এমন কাজ করতে হল। দোষ তো তার নয়, সম্পূর্ণ দোষ তার মায়ের।
যোহানের বক্তব্য শোনার পর ওর মা বাস্তবিকই পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকল কিছুক্ষণ। আবার সেই একই বায়না করছে ছেলেটা! কারখানা লক-আউট হয়ে যাওয়ার পর অকালেই বুড়ো হয়ে মরে যাওয়া যোহানের বাবার রেখে যাওয়া ওই পুরোনো মডেলের ফোনটায় নাকি আর কিচ্ছু হয় না। ওর চাই ক্লাস টুয়েলভের বিবেক ভাইয়ার ফোনের মতোই একটা ঝকঝকে স্মার্ট ফোন। কিন্তু এসব জিনিস কি আমাদের মতো গরিব ঘরে রাখা সম্ভব? মাসে মাসে হাতি পোষার খরচা যে রে এর পিছনে!
কত বোঝানো হল ছেলেকে—নরমে-গরমে, কোনও লাভই হল না! অল্প আলোয় মায়ের মুখে খেলা করতে লাগল বিস্ময়, রাগ আর অসহায়তা। যদিও সে-সব যোহানকে একটুও স্পর্শ করল না। সে তখনও নির্বিকারভাবে জানালার লোহার শিকে কপাল ঠেকিয়ে একদৃষ্টে জোনাকিদের গতিবিধি দেখছে। খিদে-তেষ্টা, শরীরের ব্যথা-বেদনা এসব কিছুই ওকে কিছুমাত্র ভাবাচ্ছিল না।
অনেকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার পর একসময় যোহানের মা লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলল, “ঠিক আছে। বিপদ-আপদের জন্য কিছু টাকা জমিয়েছিলাম পোস্ট অফিসে। উঠিয়ে নেব। কিনে নিস ওই সর্বনাশা জিনিসটা। কিন্তু কথা দে আর কখনও এরকম ভয়ংকর কাজ করবি না। কথা দে আমাকে!”
দু-চোখে আলোর স্ফুলিঙ্গ নিয়ে যোহান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। ভাঙাচোরা একটা স্তূপের মতো দেওয়ালে ভর দিয়ে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে ওর রোগাসোগা মা। ওর আনন্দে ইচ্ছে করছিল এখনই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে মাকে। কিন্তু যোহানের নড়ে ওঠার আগেই কুপির আলোটা দপ করে নিভে গেল।
(৩)
ধীরে ধীরে মৃদু আলো ফুটে উঠেছে সামনের মসৃণ সাদা দেওয়ালে। যেটাকে ওরা এতক্ষণ দেওয়াল ভেবেছে তা আসলে একটা জায়ান্ট স্ক্রিন। স্ক্রিনের ও-পাশে রোদ ঝলমলে খামার বাড়ি। খড়ের স্তূপ। ইটের গাদা। ওরা এতটাই অবাক হয়ে গেল যে মুহূর্তের জন্য শ্বাস নিতেও ভুলে গেল। দূরে ফটফট শব্দে কালীপুজোর পটকা ফাটার মতো একটা আওয়াজ হল যা স্পষ্ট শুনল দুজনে। আওয়াজটা ক্রমে এগিয়ে আসছে। সামনের দৃশ্যটার মতো শব্দটাও ওদের খুব পরিচিত। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় ছেলে দুটির চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। মুঠোবদ্ধ হাতে ওরা তাকাল নিজেদের দিকে।
চোখে বিদ্যুতের ঝিলিক তুলে হিংস্র উত্তেজিত স্বরে হিসহিসিয়ে উঠে বলল নীল টি-শার্ট, “বুঝেছি। এটা কোনও লেটেস্ট ভার্চুয়াল ডুয়ো গেম। সো ইটস আ নিউ গেম পার্লার! গ্রেট! লেটস প্লে। ওরা আসছে। শোন, কী যেন নামটা? ইয়েস, যোহান। তুই এগিয়ে যা। আমি বরং তোকে কভার করব। ডুয়ো খেলেছিস তো এর আগে?”
যোহান ঝটপট হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়তেই স্ক্রিনটা বড়ো হতে হতে এগিয়ে এসে ওদের গিলে নিল হাঁ করে। চারপাশের দৃশ্যাবলিও বদলে গেল আচমকা। ওরা নিজেদের আবিষ্কার করল সেই পরিত্যক্ত খামার বাড়ির ভিতরে খড়ের স্তূপের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়। ওদের সামনেই পড়ে আছে ভেস্ট, হেলমেট আর আধুনিক মেশিন গান। চট করে তৈরি হয়ে নিল ওরা। আর সঙ্গে-সঙ্গেই বাতাসে মিশে থাকা কটু বারুদের গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা দিল ওদের। মিলিটারি পোশাক পরা কয়েকজন মানুষ অস্ত্র হাতে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল ঘরটায়। যোহান সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার করল। ধুপ ধুপ আওয়াজ করে লোকগুলো ছিটকে পড়ল মাটিতে।
যোহানের দিকে তাকিয়ে অস্ফুটে হেসে বলল ছেলেটা, “গুড জব।”
কিন্তু তারপরই ফ্যাকাসে হয়ে এল ওর মুখ। লোকগুলোর বুকের ক্ষত থেকে চুইয়ে পড়া রক্তের স্রোত দ্রুত টেনে নিচ্ছে রুখু মাটি। একদম আসলের মতন! রক্তের তাজা গন্ধে উথালপাতাল করছে ওর বুকের ভিতরটা। কার শরীর থেকে যেন অনেকটা রক্ত ঝরেছিল এভাবেই? কে ছিল খুব কাছের সেই মানুষটা?
ভাবতে গিয়ে হঠাৎই ওর মনে পড়ে গেল নিজের নাম। সান্ধ্য রায়চৌধুরী, ওরফে টোটো। শুধু নাম নয়, মনে পড়েছে সবকিছুই। মনে পড়েছে সাউথ কলকাতার এক নামি কমপ্লেক্সের তিন নম্বর টাওয়ারের বারো তলাটা। বিখ্যাত ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলটা। ওদের আড়াই হাজার স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাটটা। তাতে রয়েছে ওর নিজের আস্ত একখানা স্টাডি-রুম। ল্যাপটপ। মিউজিক প্লেয়ার। গিটার। গানবাজনার শখও ছিল এককালে। গতবছর বিশ্রী রোড অ্যাকসিডেন্টে বাবা অগাধ পয়সা রেখে চোখ বুজল। পড়াশোনা করতে ভালো লাগত না। বাড়ির শাসনেই এতদিন যা একটু মেপেজুপে চলত। বাবা চলে যাওয়ার পর শাসনের রাশ একটু আলগা হতেই মনমর্জি চলতে লাগল ও।
ওর মা প্রাথমিক শোক কিছুটা সামলে উঠে প্রথমে তো স্পিচলেস।—”কতটা বদলে গেছিস তুই টোটো! পড়াশোনার কী হাল! গানের চর্চাটাও গেছে। সবকিছু ছেড়েছুড়ে ঘরের মধ্যেই বন্দি থাকিস। সময়মতো স্নান নেই, খাওয়া নেই, টিউটর পড়াতে এসে ফিরে যাচ্ছে রোজ, গিটারের একটা টিউন সুরে লাগছে না।”
লাগবে কী করে? ছেলে তো দু-হাতের মুঠোয় ছোট্ট একটা যন্ত্র আঁকড়ে ওতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকে দিবারাত্র। নেশাগ্রস্তের মতো লালচে রাতজাগা চোখ। হাতের আঙুলগুলো তীব্র গতিতে চলাফেরা করছে স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে। ফুলে উঠছে নাকের পাটা। উলটোদিক থেকে আগুয়ান ঝাঁকে ঝাঁকে শত্রু। তাদেরকে ছিন্নভিন্ন করছে, রক্তের হোলি খেলায় মেতেছে। এমনভাবে রি-অ্যাক্ট করছে যেন ওটাই রিয়াল ওয়ার্ল্ড। কিছুতেই ওকে ফেরানো যাচ্ছে না। ভয় দেখিয়ে নয়, বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তো নয়ই। আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গেছে একদম।
চোখে চশমা, সৌম্য চেহারা, ভারী গলায় বলছেন স্কুলের প্রিন্সিপাল, “ভালো সাইকিয়াট্রিক কনসাল্ট করুন মিসেস রায়চৌধুরী। হি ইজ ইন ডিপ অ্যাডিকশন উইথ হিজ স্মার্ট ফোন। অ্যান্ড উইথ দিজ ডেডলি গেমস।”
গেম! হ্যাঁ, এই খেলাই ছিল ওর নেশা। লেভেলের পর লেভেলে উঠে যাচ্ছে, নিকেশ করছে শত্রুদের, জমছে স্কোরের পাহাড়। এর জন্য ও কী না করেছে। আলমারির চাবি সরিয়ে টাকা চুরি করেছে লকার থেকে। বেশ করেছে। মা কেন টিউটরের কথায় নেচে উঠে গায়েব করে দিল ওর ফোনটা? চুরির টাকায় অনলাইনে আরও বেটার স্মার্ট ফোন কিনেছিল টোটো। বাড়িতে নিজের ঘরে বসে খেলছিল, কাউকে তো বিরক্ত করেনি। তবে? যেদিন ধরা পড়ে গেল সেদিন বাড়ি-ভরতি লোকের মধ্যে মা কেন ওর গায়ে হাত তুলল? আবার ওরই বার্থডের দিন? হাউ ডেয়ার শি! তখনই ঠিক করেছিল যে এর শোধ নেবে সে। শেষ পর্যন্ত নিয়েওছিল। রিভেঞ্জ!
(৪)
পায়ের শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে বৃদ্ধ প্রফেসর তাকালেন জুনিয়র ডেটা সায়েন্টিস্ট ডেল্টার লম্বা কিন্তু কুঁজো শরীর আর ঈষৎ চৌকো মুখের দিকে। তার মুখের ভাষা যথারীতি পড়তে না পেরে উনি জিজ্ঞেস করলেন, “কী? এখন কী অবস্থা ছেলে দুটোর? প্রেশার-টেশার সব নর্মাল তো?”
কোনও কথা না বলে ডেল্টা ভাবলেশহীন মুখে অন করে দিল অদৃশ্য ডিসপ্লে স্ক্রিনটা।
প্রফেসর সেন আলগোছে চোখ বোলালেন শূন্যে ভেসে থাকা রিপোর্টগুলোয়। ঠোঁটের কোনায় মৃদু হাসি ফুটিয়ে চেয়ারটাকে দুলিয়ে গদগদ স্বরে বললেন তিনি, “বাহ্, ফাইন! পুরোনো দিনের ধ্যানধারণা অনুযায়ী চললে ছেলে দুটোকে মেরে ধরে অথবা আগেকার মতো কোনও বস্তাপচা রিহ্যাবে দিনের পর দিন বন্দি করে রেখে ওদের শোধরানোর নামে গুচ্ছের সময় নষ্ট করা হত। তাতে কাজের কাজ হত না কিছুই। দুজনেই তো পাক্কা অপরাধী। শুনেছি একজন নাকি তর্কাতর্কির সময় নিজের মায়ের মাথায় ভারি ফুলদানি ছুড়ে মেরেছিল। অন্যজন আরও সরেস। স্কুল চলাকালীন ভূগোল-স্যার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেওয়ায় কোথা থেকে একটা ধারালো পাথর কুড়িয়ে এনে স্যারের উপরেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।”
একটু থেমে আবার চেয়ার দুলিয়ে বললেন প্রফেসর সেন, “সুতরাং এদের শোধরাতে অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্য নেওয়াই ভালো নয় কি? এই জন্যই তো দেশবিদেশ থেকে বাছাইকরা সব স্যাম্পল পাঠানো হয় আমাদের কাছে। নিখরচায় ওদের শুধরে দেওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রচুর ফান্ডও পাই আমরা।”
জুনিয়র সায়েন্টিস্ট সেই একইরকম পাথুরে মুখে যান্ত্রিকভাবে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। আজ অবধি ল্যাবে ডেল্টাকে কেউ কখনও হাসতে দেখেনি। শুধু ডেল্টাই নয়, প্রফেসর সেনের এই অত্যাধুনিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের কোনও এমপ্লয়িই কখনও হাসে না।
“আর ওরা? আমাদের দুই ভেরি সিগনিফিকান্ট পাণ্ডবস? ভীম আর অর্জুন? ওরা কেমন উপভোগ করছে খেলাটা?” উচ্ছ্বসিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন প্রফেসর।
“দে আর রিয়ালি এনজয়েড দ্য গেম স্যার।” একটুও না হেসে জবাব দিল ডেল্টা।
সময়টা এগিয়ে গিয়েছে অনেকখানিই। প্রযুক্তি কবেই যেন নিজের পদতলে বিজ্ঞানের মানবিক ধ্যানধারণাগুলোকে নির্দয়ভাবে পিষে দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। বদলেছে সমাজ সংশোধনের ভাষাও। কিন্তু কোনও বদল ঘটেনি আর্থ-সামাজিক অবস্থার। বড়োলোকেরা আরও ধনী হয়েছে। গরিবেরা আরও দরিদ্র। মানুষ আগের মতো প্রাণ খুলে হাসতে ভুলে গেছে।
(৫)
দু-পাশে পড়ে থাকা লাশের ঢিবি টপকে যোহান সাবধানে এগোচ্ছে। পিছন পিছন অনুসরণ করছে টোটো। প্রখর রোদে চোখে ধাঁধা লেগে যাচ্ছে ওদের। ও-পাশ থেকে ধাঁই ধাঁই ছুটে আসছে শত্রু ঘাঁটির গুলির ঝাঁক। আর কিছুটা গেলেই তৃতীয় লেভেল পার করবে ওরা। দুজনেরই জামা ভিজে গিয়েছে ঘামে। লাবডুব শব্দে তেজি ঘোড়ার মতো লাফাচ্ছে হার্টবিট। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। অখণ্ড মনোযোগ। জগৎ-সংসার ভুলে দুজনে একবগগার মতো এগোচ্ছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
প্রথম গুলিটা এসে লাগল যোহানের বাঁ পায়ে। দ্বিতীয়টা তলপেটের ধারে। ফুটো হয়ে গেল ভেস্ট। সঙ্গে সঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল ও। অশেষ ক্ষিপ্রতায় মাটিতে শুয়ে পড়ে টোটো গুলি চালাল সামনের দিকে। ধপ ধপ আওয়াজে ও-পাশের দুটো শত্রু খতম।
“কী রে, খুব লেগেছে? ওয়েট, আমাদের কাছে ফার্স্ট এইড বক্স আছে।”
যোহানের ঠোঁট কাঁপছে। অস্ফুটে বলল ও, “মা, মা আমাকে বারণ করত। বলত খেলিস না। এই খেলা একদিন তোর সর্বনাশ করবে। আমি শুনিনি... উফ্, ভীষণ ব্যথা করছে। এ যে দেখছি সত্যিকারের রক্ত পড়ছে! ওহ্, মাগো। তুমি কোথায়?”
সামনে আরও শত্রুরা ধেয়ে আসছে। স্টুপিড ছেলেটা এখন হাবিজাবি কথা বলে টাইম কিল করছে। টোটো এক ধমকে চুপ করাল যোহানকে। তারপর টেনে-হিঁচড়ে ওকে নিয়ে চলল বাঁদিকের ওই গ্রিন জোনের নিরাপদ আশ্রয়ের আওতায়।
“আহ্, বলছি তো সঙ্গে ফার্স্ট এইড আছে! দিয়ে দিচ্ছি। দেন ইউ উইল ডেফিনিটলি ফিল বেটার। আমার নামটা বলা হয়নি। আমি টোটো। গেমটা বুঝলি যোহান, যতটা ভেবেছিলাম তার চাইতেও বেশি রিয়ালিস্টিক। একটু সহ্য কর ভাই।” টোটো বলল দাঁতে দাঁত চেপে।
ভরসা পেয়েও যোহানের কোনও ভাবান্তর নেই। তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল দু-ফোঁটা। বলল, “আমরা তো আসলে স্বপ্ন দেখছি। তাই না টোটোদাদা? এগুলো কোনোটাই সত্যি হচ্ছে না।”
“আই ডোন্ট নো।” টোটো অন্যমনস্ক স্বরে বলল, “এটা হয়তো নতুন কোনও এ.আই বেসড মেটাভার্স প্ল্যাটফর্ম। আমাদের একটা জটিল প্রোগ্রামের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেভাবেই হোক একে একে সমস্ত লেভেলগুলো পেরোতে হবে। আই মাস্ট অ্যাডমিট, দিজ গেম ইজ ইউনিক। তবে একটা ব্যাপারে অদ্ভুত লাগছে। এটা কিন্তু আমরা নিজেরা খেলছি না। কেউ যেন আমাদের দিয়ে খেলাচ্ছে।” বলতে বলতে গলাটা একটু কেঁপে গেল টোটোর।
ফার্স্ট এইড পর্ব মিটেছে। যোহান এখনও শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে পড়ে আছে মাটিতে। ওর পাশেই বাতাসে ভাসছে অদৃশ্য কোনও স্ক্রিনে ফুটে ওঠা টাইমার। ঠিক তেরো মিনিট চল্লিশ সেকেন্ড সময় লাগার কথা ওর পুরোপুরি সেরে উঠতে। ততক্ষণ শত্রুপক্ষকে ঠেকানোর দায় টোটোর। টোটোর তেষ্টা পেয়েছে খুব। সে আনমনে জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটতেই শূন্যের অদৃশ্য ভাঁজ থেকে নেমে এল এনার্জি ড্রিঙ্কের বোতল। হাত বাড়িয়ে পুরো পানীয় গলায় ঢেলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে গেল খালি বোতলটা। স্ট্রেঞ্জ!
ওদিকে গুলির আওয়াজ এগিয়ে আসছে ক্রমশ। যোহানকে একা রেখে সেফ জোন থেকে বেরোল টোটো। বাজপাখির মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল এদিক ওদিক। হাতে উঁচিয়ে ধরা আগ্নেয়াস্ত্র। যোহান ওকে কিছুতেই ছাড়তে চায়নি। হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরেছিল টোটোর কবজির কাছটা। জোর করেই নিজেকে ছাড়িয়ে এনেছে টোটো। সামনেই জ্বলজ্বল করছে রেড জোনের বিষাক্ত সংকেত।
ওই খোলা প্রান্তর থেকে রোদে ঝলসে যাওয়া ঘাসের আর বারুদের সঙ্গে রক্তের মিলিত গন্ধে টোটোর শরীরটা গেম খেলার উত্তেজনায় নয়, আচমকাই শিউরে উঠল ভয়ে। না চাইতেও এগিয়ে গেল ও তিন-চার কদম। বুঝতে পারছে যে ওর অনুভব করার ক্ষমতা ছাড়া মস্তিষ্ক আর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপরে নিজের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।
অদ্ভুত শক্তিশালী কোনও সুপার কম্পিউটার চালিত ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির এই প্রোগ্রামগুলো সত্যিই জবরদস্ত। কিন্তু কারা পরিচালনা করছে ওদের? কারা? আসল প্লেয়াররাই-বা কোথায়?
(৬)
রেড জোনে ঢুকে পড়ার মুহূর্তে একটা গুলি সাঁ করে ছুটে এসে উড়ে গেল টোটোর কান ঘেঁষে। একটুর জন্য খুলিটা ফুটো হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেল। বুকের ছ্যাঁত করে ওঠাটা মিলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধাঁ করে টোটোর মনে পড়ে গেল ওর ঘরের আয়েসি বিছানাটার কথা। ক্লাস-রুম, স্কুলের সবুজ মাঠ, প্রিয় বন্ধুদের কথা মনের ভিতরে বুড়বুড়িয়ে উঠল। মায়ের নরম হাতটা কপালে ছোঁয়ানোর আরাম, ধুলো পড়ে যাওয়া গিটারটার চেনা টিউনগুলোও কিছু কিছু মনে পড়ে গেল। মনে পড়ল কাচের জানালার ও-পাশে বৃষ্টিস্নাত রাতের কলকাতাকে দেখতে দেখতে মায়ের হাতে তৈরি মুগডালের খিচুড়ি আর স্পাইসি পাঁপড় ভাজার স্বাদ।
এই প্রথমবার মরিয়ার মতো টোটো বেরিয়ে যেতে চাইল এই মারকুটে গেম থেকে। ফিরতে চাইল। কিন্তু না। পারছে না। পারল না।
ওদিকে উঠে দাঁড়িয়েছে যোহান। চরম ত্রাস, মৃত্যুভয়, আর প্রবল অনিচ্ছাকে সঙ্গী করেও আবার সে এদিকে এগিয়ে আসছে টলতে টলতে।
“গেম থেকে এসকেপ করার সুইচটা কোথায় রে? কোথায় সেটা?” উদগ্রীব কণ্ঠে পিছন ফিরে যোহানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল টোটো।
একটা নড়বড়ে ভগ্নস্তূপের মতন দেখাচ্ছে যোহানকে। উন্নত অস্ত্রসাজে জবড়জং ছোট্ট শরীর। আর ওর নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে এখন? আহ্, কতদিন ভালো করে আয়নায় নিজের মুখখানা দেখা হয়নি। একবার হাতটা আলতোভাবে বুলিয়ে নিল চিবুকের খাঁজে। অনেকটা আদর করার ভঙ্গিতে।
ব্লটিং পেপারের মতো সাদাটে মুখে অদ্ভুত হেসে বলল যোহান, “পালানোর পথ নেই, টোটোদাদা। আর খেলেই-বা কী হবে বলো? আমাদের গেম এমনিতেই ওভার হয়ে গেছে।”
ওদের দিকে ক্রমাগত ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসছিল অদৃশ্য শত্রুদের আওতা থেকে। নেহাতই প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় পালটা আক্রমণ করতে-করতেও ভিতরে কোনও অজ্ঞাত বোধ থেকে ওরা ছটফট করছিল খেলাটা থামানোর জন্য। ছেলে দুটো আপ্রাণ ফিরে যেতে চাইছিল অতি পরিচিত সেই পুরোনো পৃথিবীতে যখন যন্ত্র মানুষকে নয়, মানুষই যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করত। কিন্তু তার বদলে নিজেদের অজান্তে শরীর দুটো টেনে নিয়ে যেতে যেতে ধীরে ধীরে বোধশূন্য দুটো যন্ত্রমানবে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছিল ওরা।
(৭)
ওই জায়ান্ট স্ক্রিনটার ঠিক বাইরেই তখন একগুচ্ছ সেন্সর, ম্যানিপুলেটর, কন্ট্রোলার আর লক্ষ লক্ষ স্কিলড প্রোগ্রামিংয়ে ঠাসা দু-জোড়া যান্ত্রিক হাত প্রাণপণে রিমোটের বাটন টিপে চলছিল। সোফায় বসা যন্ত্র দুটোর শ্বাসপ্রশ্বাস চলছিল পাগলের মতো। গেমের উত্তেজনায় ওদের মসৃণ ধাতব কপাল বেয়ে ঘামও ঝরছিল ফোঁটায় ফোঁটায়! যেন ওরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবদান ভীম ও অর্জুন নামের দুটো অত্যাধুনিক রোবট নয়, মন্থর গতিতে পরিবর্তিত দুটো মানবদেহ! বয়স কত হবে ওদের—মেরেকেটে বারো থেকে পনেরো।
ছবি: সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
প্রলয় সেন ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ রম্যাণী গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ তাপস মৌলিক ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ প্রদীপ কুমার দাস ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ দীপক দাস ▪ অমিয় আদক ▪ কল্যাণ সেনগুপ্ত
বদ্রীনাথ পাল ▪ দীনেশ সরকার ▪ রূপসা ব্যানার্জী ▪ শঙ্খশুভ্র পাত্র ▪ সৌরভ চাকী ▪ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪ শিবানী কুণ্ডু খাঁ ▪ সুব্রত দাস ▪ বসন্ত পরামানিক ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ তাপস বাগ ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ টুম্পা মিত্র সরকার
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ যূথিকা আচার্য ▪ মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ কেয়া চ্যাটার্জী ▪ ইন্দ্রজিৎ ঘোষ ▪ সুদীপ ঘোষাল ▪ অনিন্দ্য পাল ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অরিন্দম ঘোষ ▪ সৌম্যপ্রতীক মুখোপাধ্যায় ▪ রাজীবকুমার সাহা
সনৎ কুমার ব্যানার্জ্জী ▪ মলয় সরকার
অলংকরণ
প্রদীপ গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ অঙ্কিতা মণ্ডল ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ সুকান্ত মণ্ডল ▪ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪ প্রবাহনীল দাস ▪ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী ▪ রাজন্যা ব্যানার্জী ▪ সমৃদ্ধি ব্যানার্জী ▪ ঐশিক মণ্ডল ▪ বিজয় বোস ▪ দীপক কুণ্ডু