ভ্রমণকাহিনি
15% OFF * FREE SHIPPING
ভ্রমণকাহিনি
সামনেই একটি রেস্তোরাঁ। তার দ্বিতলে গিয়ে দেখি বিশাল লাইন পড়েছে সেই কালো ডিম কেনার জন্য। অনেকেই একাধিক ডিম কিনছে। এখানে শুধু এই ডিম নয়, অনেক জিনিসই আছে যা লোকে স্মারক হিসাবে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কিছু খাবারদাবারও আছে। ওরা বলছে এবং লেখাও আছে এখানে যে, এই ডিম যে খাবে তার সাত বছর করে আয়ু বেড়ে যাবে। আমরা তো এত সহজে আয়ু বেড়ে যাওয়ার লোভ ছাড়তে পারি না, লাইন দিলাম।
মলয় সরকার
গল্পের নাম শুনেই নিশ্চয়ই তোমাদের অবিশ্বাসের ভুরু কোঁচকাচ্ছে অনেকেরই, যে একটা আষাঢ়ে গল্প আরম্ভ হচ্ছে। ডিম আবার কালো হয় নাকি! সাদা হয়, লালচে হয়, হয়তো সবুজের আভা বা হলুদের আভা, হলুদ বা ছিট ছিট রঙের, ছোটো-বড়ো নানাধরনের বিভিন্ন আকৃতির ডিম হতে পারে, তাই বলে কালো—কুচকুচে কালো! একটু অবিশ্বাস্য তো লাগবেই। কিন্তু আমি যখন গল্পটা শোনাতেই এসেছি, বিশ্বাস করো, কথাটা একশো ভাগ সত্যি।
গিয়েছিলাম উদীয়মান সূর্যের দেশ জাপানে। জাপানের সঙ্গে ভারতের একটা অন্য সম্পর্ক আছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও জাপান গিয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এছাড়া স্বামী বিবেকানন্দ, বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল, নেতাজি, রাসবিহারী বসুর তো ভালো সম্পর্কই ছিল জাপানের সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘জাপান যাত্রী’ যারা পড়নি, তারা অবশ্যই এটি পড়ে নিও। কবিগুরুর ও স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে জাপানি শিল্প সমালোচক ওকাকুরার তো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। দেখে নিও জাপানিরা কত গুণে সমৃদ্ধ। কবিগুরু পর্যন্ত তাঁদের দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন এদের কয়েকটি গুণের জন্য, যা পৃথিবীর অন্যান্য খুব কম দেশেই বা জাতির মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। চেষ্টা করে দেখতে পারো আমরা ওদের মতো হতে পারি কি না।
সমস্ত গুণের মধ্যে প্রধান হল এদের পরিচ্ছন্নতা। এটা একশো বছর আগে কবিগুরু যা দেখেছিলেন, আমিও এতদিন পরে গিয়ে তাই দেখলাম। ওরা আসলে ভীষণ নিয়মনিষ্ঠ—সে কেবল আইন বা পুলিশ দিয়ে নয়, ভিতর থেকে। এই বোধগুলো এদের মজ্জায় মজ্জায়। সারা পৃথিবী যারা ঘোরে, তাদের চোখে এদের পরিচ্ছন্নতা চোখে লাগবেই। আমি নিজে যখন আমেরিকা যাই, ভাবলাম, আমরা কত নোংরা আর ওরা কত পরিচ্ছন্ন। যখন চিনদেশে গেলাম, তখন বহু জায়গাই দেখে মনে হল, এরা বোধ হয় আমেরিকার থেকেও পরিচ্ছন্ন বা তাদের ব্যবস্থা ওদের থেকেও ভালো। আর জাপান যখন গেলাম, তখন ভাবলাম, কোথায় লাগে আমেরিকা-চিন, জাপান সবাইকেই হারিয়ে দেবে। সত্যিই তাই। এ-কথা রবীন্দ্রনাথও বলেছেন বা দেখেছেন।
আরও আশ্চর্যের কথা, ওদের দেশে কিন্তু তা বলে আমেরিকার মতো এত ডাস্টবিনও নেই, যে সবাই নোংরা সেখানে ফেলবে। শুধু কাগজ বা প্লাস্টিকই নয়, কোনও ধরনের ধুলো নোংরাও ওদের দেশের যতটুকু ঘুরেছি, বিশেষ পাইনি। আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এটা কী করে হয়? ওরা বলল, ওদের দেশে নিয়ম হচ্ছে, কেউ কোথাও কিছু ফেলবে না। খাবার বা কোনও কিছুর র্যাপার তারা পকেটে বা ব্যাগে করে এনে নিজের বাড়ির ডাস্টবিনে ফেলবে। পরদিন সেগুলো গাড়ি এসে নিয়ে যাবে। আবর্জনার ধরন অনুযায়ী আলাদা করে আলাদা ডাস্টবিনে ফেলার ব্যবস্থাও আছে। আর এই জন্যই জাপান আজ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন দেশ। এটা কেবল সরকারি চেষ্টা নয়, মানুষেরাও এর জন্য জন্ম-সচেতন। ভাবতে পারি আমরা? অথচ আমরাও এটা করতে পারি একটু চেষ্টা করলেই।
এছাড়া যা লোকের চোখে পড়বে, দেশটার আশ্চর্য শব্দহীনতা। লোকে অহেতুক চিৎকার করে না, জোরে কথা বলে না, রাস্তায় হর্ন দেয় না, এমনকি জোরে ঝগড়াও করে না। কলকারখানাও আশ্চর্যরকম শব্দহীন। লোকে এখানে ওখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারে না। সবাই সবসময় আশ্চর্যরকম ব্যস্ত ও সচল। মনে করার কারণ নেই যে ওদের লোকসংখ্যা কম। এদের টোকিও শহরের শিনজুকু স্টেশন দিয়ে পৃথিবীর সবথেকে বেশি লোক যাতায়াত করে, যার কাছে আমাদের শিয়ালদহও হার মানে। কত জানো? প্রতিদিন এই স্টেশনে ৩৫ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করে। এটাই পৃথিবীর ব্যস্ততম রেলস্টেশন। কিন্তু তবু এই জায়গা আশ্চর্যরকমের পরিচ্ছন্ন, শান্ত, নিয়মমাফিক চলার দৃষ্টান্ত হতে পারে। আমি নিজে গিয়ে দেখে আশ্চর্য হয়েছি।
ওদের সৌন্দর্যপ্রীতি, ফুল সাজানো, ব্যবহার অদ্ভুত সুন্দর। নাহ্, এখানে এত কথা আর বলব না। তোমরা ভাবছ, কোথায় কালো ডিমের গল্প শুনব, তার জায়গায় অন্য কথা হচ্ছে। তবে একটা কথা কী জানো, আমরা বিয়েবাড়িতে যখন যাই—শুধু গেলাম, খেলাম আর চলে এলাম তা তো নয়। যাব, বর-কনেকে দেখব, কেমন সাজানো হয়েছে দেখব, লোকজনের সঙ্গে আলাপ করব, সবার জামাকাপড়, ব্যবস্থাপনা দেখব, তারপর সবশেষে খাওয়া। তাই তো? সেইরকম, যে-দেশের গল্প শুনছ, সেই দেশটার সম্বন্ধে একটুও না জানলে চলে? লোকে বলে ‘ধান ভানতে শিবের গীত’। যে যাই বলুক, এতে সুবিধাও আছে—ধান ভানাও হল আর সঙ্গে ফাউ হিসাবে শিবের গান শোনাটাও হল। তাই নয় কি?
এরপর আরও ওদের দেশের কথা বলব অন্য জায়গায়।
এবার কালো ডিমের পথে পথ চলতে যা দেখেছি তাই বলব। গিয়েছিলাম জাপানের একটি পাহাড়ি গ্রাম হাকোনেতে। হাকোনে একটি ছবির মতো জায়গা। তিরতির করে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে হায়া নদী। কাছেই পাহাড়ের গায়ে ছবির মতো সেঁটে আছে হাকোনে স্টেশন। আসলে জায়গাটির নাম হাকোনে ইউমোটো। নিরিবিলি আর উঁচুনীচু পাহাড়ি গ্রাম। এখানেও রাস্তাঘাট ভীষণ পরিচ্ছন্ন।
জাপানের আর ক’টি কথাও জানিয়ে দিই। সে হল এখানকার বাথরুম। প্রায়শই স্নানের জায়গা আর পায়খানা একসঙ্গে এক ঘরে নয়। দুটি আলাদা। এছাড়া যা দারুণ ব্যাপার, তা হল এদের কমোডের ব্যবস্থা। এদের কমোডে মলত্যাগের পর শৌচ করার জন্য নানা ইলেক্ট্রনিক সুইচ আছে। সেগুলো একের পর এক টিপলেই সুন্দরভাবে তারা জল দিয়ে ধুইয়ে দেয়। এরপর উঠে দাঁড়ালেই নিজে-নিজেই কমোডে ফ্লাশ হয়ে যায়। এছাড়া অনেক জায়গাতেই কমোডে বসার সিটটা আপনা থেকেই গরম হয়ে যায়, যাতে শীতে বসার সময় আরাম হয়। এরকমও কোথাও দেখিনি। জলে হাত লাগাবার কোনও দরকারই নেই।
যাক, বড়ো অন্য কথায় চলে যাচ্ছি। এবার ঠিক আসল কথা বলব।
হাকোনে স্টেশন থেকে ট্রেনে গেলাম ওডাওয়ারা (Odawara)। এখান থেকে সুন্দর ছোট্ট তিন কামরার ট্রেন চেপে পাহাড়ি পথে। কখনও এগোলাম, কখনও পিছনে গিয়ে জঙ্গল, পাহাড়ের পাশ দিয়ে এসে পৌঁছলাম গোরা স্টেশনে। এটি ৩৫ মিনিটের রাস্তা। ট্রেনও যেমন ছোট্ট, চলছেও সেরকম সুন্দর রাস্তায়; তার প্ল্যাটফর্মও তেমনই ছোট্ট, পরিষ্কার—যেন টয় ট্রেনের স্টেশন।
সেখান থেকে ট্রেন ছাড়ছে; আসলে ট্রেন নয়, ‘ক্যাবল কার’। ক্যাবল কার কী জানো তো? এগুলো হল ট্রেন বা ট্রামের মতো। চলে খুব কম দূরত্বে। তবে আসল উদ্দেশ্য, কোনও উঁচু পাহাড়ে বা বেশ খাড়াই কোনও রাস্তায় ওঠানামার জন্য এর ব্যবহার। কামরার নীচে বাঁধা শক্ত তারের সাহায্যে এটি বড়ো মোটর দিয়ে টেনে তোলা বা নামানো হয়, যেখানে সাধারণ গাড়ির বা ইঞ্জিনের ক্ষমতা হবে না এই উচ্চতায় ওঠা। কামরাগুলি সাধারণ ট্রামের কামরার মতোই। বড়ো বড়ো জানালা রয়েছে দেখার সুবিধার জন্য। এটি চালায় Hakone Trozan Railway। এটি জাপানের সবচেয়ে প্রাচীন পাহাড়ি রেলপথ। আর এই গাড়িটিকে বলে Hakone Trozan Cable Car। চলে মাত্র ১.২ কিমি; কিন্তু এই পথে সে উচ্চতায় পাড়ি দেয় ২০৯ মিটার।
লাল টুকটুকে ট্রেনটিতে চড়ার আনন্দই আলাদা। এটি চলে গোরা থেকে শৌঞ্জান (Sounzan) পর্যন্ত। এখান থেকে রোপওয়ে চলে ওয়াকুদানি (Owakudani) পর্যন্ত। এই ওয়াকুদানি পর্যন্ত মাত্র ১৫ মিনিটের রাস্তা। অবশ্য এই রোপওয়ে আরও অন্য রাস্তাতেও যায়, সেটি হল তোগেন্দাই (Togendai) পর্যন্ত। এ-সম্বন্ধে পরে সময় হলে বলব। এই সময়ের মধ্যে রোপওয়ের গণ্ডোলা থেকে দেখা যায় দূরে মাথায় অর্ধেক বরফঢাকা, নীল আকাশের বুকে ছবির মতো মাউন্ট ফুজি, যা ওয়ার্ল্ড কালচারাল হেরিটেজ বলে আখ্যা পেয়েছে। পরিষ্কার আকাশে ভীষণ সুন্দর দৃশ্য। এছাড়া আরও একটা জিনিস দেখা যায়। তা হল বেশ নীচে হেল ভ্যালিতে (Hell Valley) মাটি থেকে সবসময় বেরিয়ে চলেছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। এছাড়া পাহাড়, জঙ্গল, ছোটো নদী তো রয়েছেই যার উপর দিয়ে স্বর্গের পথে ভেসে চলেছি।
আসলে এই হেল ভ্যালি একটি আগ্নেয়পাহাড় ঘেরা জায়গা। এই ওয়াকুদানি আসলে একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। এখানে রয়েছে গন্ধক ও অন্যান্য নানা দাহ্য পদার্থ। ফলে এখানে তৈরি হয়েছে গরম জলের ফোয়ারা। আশেপাশের সমস্ত পাহাড় জুড়ে সবসময় বেরিয়ে চলেছে বাষ্প ও গরম ধোঁয়া। জায়গাটির আসল নাম Noboribetsu Jigokudani। অনেকেই এখানে হেঁটে যায়। কাছেই, তবে আমাদের যাওয়া হয়নি। এখানে একটি গন্ধক মেশানো জলের পুকুর আছে, যেটির তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য অদ্ভুত সুন্দর।
মাউন্ট ফুজি হল জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত (৩৭৭৬ মি.)। আমাদের কৈলাস পর্বতের মতো ওদের কাছেও এটির ধর্মীয় আবেদন আছে। এটি জাপানের টোকিও শহর থেকে মাত্র ১০০ কিমি দূরে। এতে শেষবারের মতো অগ্ন্যুৎপাত করেছে গত ১৭০৭ সালে এবং এটি একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। মাউন্ট ফুজিকে দেখতে এতই সুন্দর যে, অনেকেই এটির ছবি তাদের আইকন হিসাবে গ্রহণ করেছে।
যাই হোক, এখানের রোপওয়ের রাস্তায় শুধু নয়, হাকোনে থেকে এই অঞ্চলে আসতে গোটা রাস্তাতেই নানা ফুলের বাহার, গাছপালা সবমিলিয়ে মনকে পাগল করে দেবে। বিশেষ করে এ-অঞ্চলে হাইড্রাঞ্জিয়া ফুল খুব ফোটে।
ওয়াকুদানিতে নেমেই দেখি ঠান্ডা হাওয়ার যেন ঝড় চলছে, যদিও রোদ একেবারে ঝকঝক করছে। গণ্ডোলাতে আসতে আসতে তো পিছন ফিরে দেখতেই পেয়েছি মাউন্ট ফুজিকে। এবার এখানে নেমে, সামনেই, গণ্ডোলা স্টেশনের বাইরে এসে দেখি খোলা চত্বর, আর চতুর্দিকে আগ্নেয় পাহাড়ের মাথাগুলো। বাসও আসছে এখানে, তবে আমরা যে-পথে এসেছি, তাই সবচেয়ে মনোহর। এখানে দাঁড়িয়ে সামনেই দেখি একটা গোল বেদির উপর পাথর বা কংক্রিটের একটি বিশাল ডিমের আকৃতি করা আছে যার রঙ কুচকুচে কালো। ডিমের উপর উঠে অনেকেই ছবি তুলছে। কালো ডিমের কথা শুনে আমার তো খুব আশ্চর্যই লাগছিল। কীসের ডিম রে বাবা! কালো ডিমের কথা তো শুনিনি।
যাই হোক, সেটা রঙ করা কিছু কি? পরে দেখে নিতে হবে। আপাতত পাথুরে ডিমের পিছনে দেখি দাঁড়িয়ে আছে নীল আকাশের ক্যানভাসে সুন্দর মাউন্ট ফুজি। মাথাটি বরফে ঢাকা। সব মিলিয়ে সুন্দর দৃশ্য।
সামনেই একটি রেস্তোরাঁ। তার দ্বিতলে গিয়ে দেখি বিশাল লাইন পড়েছে সেই কালো ডিম কেনার জন্য। অনেকেই একাধিক ডিম কিনছে। এখানে শুধু এই ডিম নয়, অনেক জিনিসই আছে যা লোকে স্মারক হিসাবে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কিছু খাবারদাবারও আছে। ওরা বলছে এবং লেখাও আছে এখানে যে, এই ডিম যে খাবে তার সাত বছর করে আয়ু বেড়ে যাবে। আমরা তো এত সহজে আয়ু বেড়ে যাওয়ার লোভ ছাড়তে পারি না, লাইন দিলাম। ভাবছিলাম আয়ু বাড়ার বদলে যদি বয়স কমে যেত, কেমন মজা হত! কিংবা একটা ডিমে যদি সাত বছর আয়ু বাড়ে, পাঁচ-ছ’টা খেলে কি পঁয়ত্রিশ-চল্লিশ বছর বাড়বে? এটা কেউ নিশ্চিত করতে পারল না।
নিলাম আমরা প্রত্যেকের জন্যই একটা করে। কেউই আর তার বেশি আয়ু বাড়াতে রাজি হল না। ডিমগুলো দেখি সাইজে মুরগির ডিমের মতোই প্রায়। তবে রঙটা কুচকুচে কালো। সাবধানে ডিমের খোসা ভেঙে দেখি তার ভিতরে ডিমের কুসুম বা সাদা অংশটায় কোনও বিশেষত্ব নেই। আমাদের চেনা মুরগির ডিমের মতোই। খেয়ে দেখি অবিকল মুরগির সিদ্ধ ডিম। তখন আস্তে আস্তে খোলাটা হাতে ঘষতে দেখলাম, গুঁড়ো গুঁড়ো কালো রঙ উঠে আসছে। তবে কি ওরা কালো রঙ করা মুরগির ডিম দিয়ে ঠকাচ্ছে? তাহলে লোকে কিছু বলে না কেন?
আসল সত্যিটা জানলাম পরে। তা হল, ওখানে যে পাহাড়ে গন্ধক মিশ্রিত গরম জল বেরোচ্ছে পাহাড়ের ভিতর থেকে, সেই জলে মুরগির ডিম ৮০ ডিগ্রি উষ্ণতায় প্রায় এক-দেড় ঘণ্টা সিদ্ধ করলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এরকম কালো বর্ণের হয়ে যায় খোলাটা। কিন্তু ডিমের ভিতরে স্বাদের তফাত হয় না। তবে আয়ু বাড়ার ঘটনা প্রমাণসাপেক্ষ। স্থানীয় মানুষ একে বলে Kuro-Tamago।
এই ওয়াকুদানি জায়গাটি তৈরি হয়েছিল প্রায় ৩০০০ বছর আগে যখন এই মাউন্ট হাকোনে, যার উপর এটি রয়েছে, সেটিতে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল।
এই কালো ডিমের সম্বন্ধে ধারণা বা বিশ্বাস কিন্তু আজকের নয়। সেই প্রায় এক হাজার দুশো বছর আগে যখন বৌদ্ধ সাধু Kukai Kobo Daishi এখানে এসেছিলেন। তিনি এখানকার বাসিন্দাদের দুঃখী মুখগুলো দেখে তাদের একটি প্রার্থনাসহ এই গন্ধক মেশানো জলে ডিম সিদ্ধ করে খেতে বলেছিলেন। এতে তাদের স্বাস্থ্য ভালো হবে, মুখে হাসি ফিরে আসবে এটাই তিনি বলেছিলেন। আজও ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রার্থনা সহযোগেই এই ডিম খায়। তবে একটা ডিম খেলে শরীরের ভালো কাজই দেবে। কিন্তু অনেকেই বলেন, দুটো বা তার অধিক ডিম খাওয়া উচিত নয়।
এখানে তিনি একটি মূর্তি তৈরি করান যাকে বলা হয় Jizo। সেটি এখনও রয়েছে একটি ছোটো মন্দিরে। সকলে তাঁকে আজও শ্রদ্ধা জানায়। তিনি আয়ু ও শিশুদের স্বাস্থ্যের দেবতা।
আগে এই জায়গাকে Great Hell বা বিশাল নরক বলা হত। পরে ১৮৭৩ সালে রাজা ও রানি এখানে বেড়াতে এসে এর নাম বদল করে ফুটন্ত উপত্যকা বা Boiling Valley রাখেন।
যাই হোক, আশা করব যারা ওখানে যাওনি, তারা অবশ্যই একবার অন্তত সুযোগ হলে জাপানে ঘুরে যেও। দেখে এসো দেশটাকে, শিখে এসো কীভাবে ওরা এত উন্নতি করছে।
এই সেই কালো ডিম
মাউন্ট ফুজি
প্রলয় সেন ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ রম্যাণী গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ তাপস মৌলিক ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ প্রদীপ কুমার দাস ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ দীপক দাস ▪ অমিয় আদক ▪ কল্যাণ সেনগুপ্ত
বদ্রীনাথ পাল ▪ দীনেশ সরকার ▪ রূপসা ব্যানার্জী ▪ শঙ্খশুভ্র পাত্র ▪ সৌরভ চাকী ▪ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪ শিবানী কুণ্ডু খাঁ ▪ সুব্রত দাস ▪ বসন্ত পরামানিক ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ তাপস বাগ ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ টুম্পা মিত্র সরকার
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ যূথিকা আচার্য ▪ মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ কেয়া চ্যাটার্জী ▪ ইন্দ্রজিৎ ঘোষ ▪ সুদীপ ঘোষাল ▪ অনিন্দ্য পাল ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অরিন্দম ঘোষ ▪ সৌম্যপ্রতীক মুখোপাধ্যায় ▪ রাজীবকুমার সাহা
সনৎ কুমার ব্যানার্জ্জী ▪ মলয় সরকার
অলংকরণ
প্রদীপ গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ অঙ্কিতা মণ্ডল ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ সুকান্ত মণ্ডল ▪ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪ প্রবাহনীল দাস ▪ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী ▪ রাজন্যা ব্যানার্জী ▪ সমৃদ্ধি ব্যানার্জী ▪ ঐশিক মণ্ডল ▪ বিজয় বোস ▪ দীপক কুণ্ডু