নিবন্ধ
15% OFF * FREE SHIPPING
নিবন্ধ
২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ১৫ জন অ্যাস্ট্রোনট এবং চারজন কসমোনট পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁদের মধ্যে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটে কারম্যান লাইন অর্থাৎ মহাকাশের প্রান্ত সীমায়। দুর্ঘটনায় নিহত বীর মহাকাশচারীদের স্মৃতি রক্ষার্থে নাসা কেনেডি স্পেস সেন্টারের ভিজিটর কমপ্লেক্সে তাঁদের নাম খোদাই করে রাখে। সোভিয়েত ইউনিয়নে এই মহান দুঃসাহসিক বীরদের সমাহিত করা হয় মস্কোর ক্রেমলিন প্রাচীরের কাছে নেক্রপলিসে।
ড. উৎপল অধিকারী
আমরা স্থলপথ, জলপথ ও আকাশ পথে—নানান দুর্ঘটনার কথা জানি। আমরা এই দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করে আতঙ্কিত হয়ে উঠি। কিন্তু মহাকাশে দুর্ঘটনা, এও কি সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। মহাকাশ গবেষণা শুরু হওয়ার পর থেকে আজ অবধি অগণিত দুর্ঘটনা ঘটে গেছে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে। কখনও সে-দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে অথবা যন্ত্রহানি অথবা মানুষের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে যে-কোনো ধরনের দুর্ঘটনাই আমাদের কাছে অনভিপ্রেত। সবসময় এই দুর্ঘটনাগুলি যে মহাশূন্যে, মহাকাশে ঘটেছে তা নয়, মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলাকালিনও এইগুলি ঘটেছে।
এইসব ঘটনাগুলি যে ইতিহাসে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিখিত আছে তাও নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালিন সোভিয়েত রাশিয়ায় এবং জার্মানে রকেট-চালিত বিমানে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল তার কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমেরিকান গবেষকদের মতে, সমুদ্র স্তর থেকে ৫০ মাইল ওপর থেকে মহাকাশ শুরু হয়।
১৯৬৭ সালে জানুয়ারি মাসে অ্যাপেলো-১ মিশনে লঞ্চ-প্যাডে একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়, সেখানে তিনজন মহাকাশচারী মৃত্যুবরণ করেন। তাঁরা হলেন রজার চ্যাফি, গাস গ্যারিসম এবং ইড হোয়াইট। এঁদের মধ্যে আমেরিকান মহাকাশচারী হোয়াইট ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম মহাকাশে পদচারণা করেন এবং মহাকাশচারী গাস গ্যারিসন দ্বিতীয় মহাকাশচারী হিসাবে মহাকাশে পদচারণা করেন। সুতরাং এই দুর্ঘটনা মহাকাশ বিজ্ঞানে এক অপূরণীয় ক্ষতির সৃষ্টি করে। অ্যাপেলো-১ মিশনটি স্তব্ধ হয়ে যায়। এর কারণ হিসাবে দেখানো হয় শর্ট সার্কিট। এর ফলে উৎপন্ন আগুন অতি দাহ্য বস্তুকে পুরোপুরি জ্বালিয়ে দেয় এবং পরিবেশটি অক্সিজেন পূর্ণ থাকার জন্য এই দুর্ঘটনা ত্বরান্বিত হয়।
১৯৬৭ সালের ২৪ এপ্রিল রাশিয়ান মহাকাশচারী ভ্লাদিমির কোমারভ সয়ুজ-১ মিশন চলাকালিন যখন মহাকাশযান ল্যান্ড করছিল, সেই সময় প্যারাশুটটি ঠিকমতো উন্মুক্ত না হওয়ার জন্য তিনি মারা যান। এটি ছিল অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এক ঘটনা। মহাকাশযানটির কোনও সমস্যা ছিল না। এই মহাকাশযানের মাধ্যমে আজও ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে বিভিন্ন গবেষক এবং বিজ্ঞানীদের পাঠানো হয়ে থাকে তাঁদের গবেষণা কার্যের জন্য।
১৯৬৭ সালের নভেম্বর মাসে X-১৫ নং ৩ ধ্বংস হয়।
১৯৭০ সালে অ্যাপেলো-১৩ ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছিল।
পরে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সুয়াজ-১১ মিশনের তিনজন ক্রু মারা যান। এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল স্পেস স্টেশন, স্যালইয়াট-১-এ মানুষের প্রথম বসতি স্থাপন। মহাকাশযানের ক্যাপসুলকে যখন চাপশূন্য করা হচ্ছিল তখনই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
১৯৮৬ সালে ২৮ জানুয়ারি চ্যালেঞ্জার মহাকাশযান সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মহাকাশযানটি টেক-অফ করার ৭৩ সেকেন্ডের মধ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এই সময় সিল্যান্ট রিং থেকে প্রচুর পরিমাণে গরম গ্যাস বের হতে থাকে। যেটা বাইরে থাকা হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন বহনকারী জ্বালানিকে সম্পূর্ণরূপে জ্বালিয়ে দেয়। যার ফলে সমস্ত যানটি ভস্মীভূত হয় এবং তাতে থাকা সকল মহাকাশচারীর প্রাণ যায়। সেখানে মহাকাশচারীর সংখ্যা ছিল ৭ জন। তার মধ্যে একজন ছিলেন ম্যাকঅলিফি। তিনি নিউ হ্যাম্পসায়র বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল দেশের সাধারণ মানুষকেও মহাকাশ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত করা। এই প্রোগ্রামটি বিদ্যালয়ে লাইভ দেখানো হচ্ছিল। তার ফলে বিদ্যালয়ের সকল সুকুমারবৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের মনে একটি কুপ্রভাব পড়েছিল।
২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কলম্বিয়া মহাকাশযান ভয়াবহ দুর্ঘটনায় সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এটি আমেরিকার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে ল্যান্ড করার আগে ধ্বংস হয়ে যায়। এই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, মহাকাশযানের বাইরে যে প্রোপেলেন্ট ট্রাংক ছিল, সেখানে একটি তাপ নিরোধক ফোম ভেঙে যায়। যখন কলম্বিয়া পৃথিবীপৃষ্ঠে ল্যান্ড করার জন্য দ্রুত নামছিল তখন অত্যন্ত উত্তপ্ত গ্যাসীয় পদার্থ মহাকাশযানের বাইরের অংশকে গলিয়ে দিয়েছিল। তার ফলে কিছুক্ষণের মধ্যে এটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। এই অভিযানের একজন গুরুত্বপূর্ণ অভিযাত্রী ছিলেন একজন প্রবাসী ভারতীয়, তাঁর নাম কল্পনা চাওলা। নাসার এই অভিযান প্রায় সফল হয়েই ফিরছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। নাসার ইতিহাসে ১ ফেব্রুয়ারি একটি কালো দিন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে সারাজীবন।
২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ১৫ জন অ্যাস্ট্রোনট এবং চারজন কসমোনট পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁদের মধ্যে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটে কারম্যান লাইন অর্থাৎ মহাকাশের প্রান্ত সীমায়।
দুর্ঘটনায় নিহত বীর মহাকাশচারীদের স্মৃতি রক্ষার্থে নাসা কেনেডি স্পেস সেন্টারের ভিজিটর কমপ্লেক্সে তাঁদের নাম খোদাই করে রাখে। সোভিয়েত ইউনিয়নে এই মহান দুঃসাহসিক বীরদের সমাহিত করা হয় মস্কোর ক্রেমলিন প্রাচীরের কাছে নেক্রপলিসে।
আনন্দের কথা হল, ১৯৭১ সালের পর থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে মহাকাশ অভিযানের ফলে কোনও মহাকাশচারীর মৃত্যু হয়নি।
এইসব দুঃসাহসিক বীরদের কোনও মৃত্যু, কোনও দুর্ঘটনাই তাঁদের আটকে রাখতে পারেনি। প্রতিনিয়তই মানুষ তার নিজের জীবনকে বাজি রেখে বিজ্ঞানের উন্নতিকল্পে অথবা কেবল নিছকই অভিযানের নেশায় ঘরছাড়া হয়েছে। এইভাবেই বিজ্ঞানের ধীরে ধীরে উন্নতি সাধিত হয়েছে। মানবসভ্যতা যতদিন থাকবে, তাঁদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
লেখকের অন্যান্য লেখা
প্রলয় সেন ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ রম্যাণী গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ তাপস মৌলিক ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ প্রদীপ কুমার দাস ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ দীপক দাস ▪ অমিয় আদক ▪ কল্যাণ সেনগুপ্ত
বদ্রীনাথ পাল ▪ দীনেশ সরকার ▪ রূপসা ব্যানার্জী ▪ শঙ্খশুভ্র পাত্র ▪ সৌরভ চাকী ▪ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪ শিবানী কুণ্ডু খাঁ ▪ সুব্রত দাস ▪ বসন্ত পরামানিক ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ তাপস বাগ ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ টুম্পা মিত্র সরকার
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ যূথিকা আচার্য ▪ মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ কেয়া চ্যাটার্জী ▪ ইন্দ্রজিৎ ঘোষ ▪ সুদীপ ঘোষাল ▪ অনিন্দ্য পাল ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অরিন্দম ঘোষ ▪ সৌম্যপ্রতীক মুখোপাধ্যায় ▪ রাজীবকুমার সাহা
সনৎ কুমার ব্যানার্জ্জী ▪ মলয় সরকার
অলংকরণ
প্রদীপ গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ অঙ্কিতা মণ্ডল ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ সুকান্ত মণ্ডল ▪ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪ প্রবাহনীল দাস ▪ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী ▪ রাজন্যা ব্যানার্জী ▪ সমৃদ্ধি ব্যানার্জী ▪ ঐশিক মণ্ডল ▪ বিজয় বোস ▪ দীপক কুণ্ডু