প্রবন্ধ
15% OFF * FREE SHIPPING
প্রবন্ধ
অক্সিজেনের জন্ম কবে হয়েছিল জানতে হলে পাথরের কাছে যেতে হবে। বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের তলায় জমে ওঠা মাটির স্তর এবং পাথর পরীক্ষা করে ৩৫০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর প্রথম প্রাণের অস্তিত্ব পেয়েছেন। তখন সমুদ্রে এবং বায়ুমণ্ডলে মুক্ত অক্সিজেন একেবারে ছিল না বললেই চলে। থাকলেও আজকের অক্সিজেনের পরিমাণের এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ ছিল। পাথরের স্তরে অক্সিজেনের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে ২৫০ কোটি বছর আগে। পাথরের স্তরে কীভাবে পাওয়া গেল অক্সিজেন?
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
ভাবা যাক কয়েক মিনিটের জন্য অক্সিজেন হঠাৎ ফুরিয়ে গেল পৃথিবীতে। মানুষ নিশ্বাস নেবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের দম ক্রমশ ফুরিয়ে যাচ্ছে, ক্লান্ত হয়ে পড়ছে শরীর। শরীরের পেশিতে পেশিতে টান ধরছে, হৃদপিণ্ড জোরে জোরে চলছে। বুকের ভিতর যেন হাতুড়ি পেটার শব্দ। শক্তি হারিয়ে মানুষ পড়ে গেল মাটিতে, ধড়ফড় করতে লাগল তাদের শরীর। ভয়ংকর সেই দৃশ্য দেখার জন্য পৃথিবীর অন্য কোনও প্রাণীরও সময় হবে না, কারণ তারাও মানুষের মতোই অক্সিজেনের অভাবে নিজেদের প্রাণ বাঁচাবার চেষ্টায় তখন ব্যস্ত থাকবে।
কিন্তু না, হঠাৎ করে অক্সিজেন বন্ধ হয়ে এমন মারত্মক ঘটনা ঘটার কোনও সম্ভাবনা নেই বাস্তবে। সেই অবাস্তব কল্পনা শুধু কল্পবিজ্ঞানের গল্পে থাকতে পারে। কিন্তু প্রকৃতিতে অক্সিজেনের অভাব হলে প্রাণীদের এমন অবস্থা হওয়া থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। তবে অক্সিজেন যেমন পৃথিবীতে জীবন বাঁচিয়ে রাখে, তেমনি আর একদিকে সে হয়ে ওঠে ঘাতক। জীবন ও মরণের চক্রে অক্সিজেনের ভূমিকা কী, তা আলোচনা করার আগে দেখে নেওয়া যাক অক্সিজেনের জন্ম হল কীভাবে।
আজ থেকে সাড়ে চারশো কোটি বছর আগে পৃথিবীতে অক্সিজেনের ছিটেফোঁটা পর্যন্ত ছিল না। কে দিল আমাদের প্রাণদায়ী সেই অক্সিজেন? তখন পৃথিবী ছিল এক বিরাট গ্যাসের পিণ্ড। হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসই ছিল প্রধানত। পৃথিবীর আকারটা ছিল বিশাল এক চাকতির মতো। বনবন করে সে নিজের অক্ষে এবং সূর্যের চারদিকে ঘুরতে থাকত। পৃথিবীর সেই গ্যাসের পিণ্ডের ভিতরে হতে থাকে পারমাণবিক বিক্রিয়া, যাকে বলা হয় ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন রি-অ্যাকশন’। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই বিক্রিয়ার ফলে অপেক্ষাকৃত ভারী মৌলের অণু ও পরমাণু সৃষ্টি হতে থাকে পৃথিবীতে। গ্যাস থেকে তরল পদার্থের সৃষ্টি হয়। সেই তরল ছিল গলন্ত লাভার স্রোতের মতো। মহাকাশ তখন আরও অশান্ত ছিল। পৃথিবীর বুকে চলতে থাকত ক্রমাগত উল্কাপাত। সেই সময়ে যদি-বা কোনও মহাজাগতিক বস্তু থেকে জল এসেও থাকে, প্রবল উত্তাপে মুহূর্তে সেই জল বাষ্প হয়ে উড়ে যেত।
পৃথিবীতে তাহলে জল এল কীভাবে? এই ব্যাপারে নানা বিজ্ঞানীরা নানা মত পোষণ করেন। সঠিকভাবে জলের আদি উৎসের কোনও প্রমাণ আজ আর পৃথিবীর বুকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বিজ্ঞানীরা নানা পরীক্ষানিরীক্ষা এবং অঙ্ক কষে একটা জোরালো মতবাদ তৈরি করেছেন জলের উৎসের। সেটি হল, এক বা একাধিক ধূমকেতু পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার জন্যই জল এসেছিল পৃথিবীতে। তবে কবে সেই ঘটনা ঘটেছিল, সঠিক বলা অসম্ভব। অনেকটাই অনুমানের ভিত্তিতে একটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব গড়ে তুলেছেন বিজ্ঞানীরা।
ধূমকেতুর মধ্যে প্রায় আশি শতাংশ জল থাকে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পৃথিবীতে মোট যত জল আছে নদীনালা সমুদ্র এবং বরফে, তার আশি শতাংশ জল জোগান দিয়েছিল পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়া ধূমকেতুরা।
অক্সিজেনের আলোচনায় জল কী করে ঢুকে পড়ল? এর কারণ হল, আমরা সবাই জানি জলের অণু গঠিত হয় দুটি হাইড্রোজেন এবং একটি অক্সিজেনের পরমাণু দিয়ে। জন্মাবার কয়েক কোটি বছর পর ক্রমশ ঠান্ডা হতে থাকে পৃথিবী। পৃথিবীর পাক খাওয়ার জন্য ঘূর্ণন বল আর অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে ভারী সব পদার্থ পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে চলে যায়। তৈরি হতে থাকে তিনটি স্তর—কোর, ম্যান্টল আর ক্রাস্ট। ক্রাস্ট হল পৃথিবীর উপরের খোলস, যেটা ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকে। ক্রাস্ট আর একটু শক্ত হলে মাঝেমধ্যে ফাটল দিয়ে ম্যান্টল-এর গলন্ত লাভা বাইরে বেরিয়ে আসত প্রবল বেগে। পৃথিবীর আকাশে উড়ত হাইড্রোজেন, মিথেন আর অ্যামোনিয়া গ্যাস। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে আরও কোটি কোটি বছর ধরে।
সূর্য থেকে অতিবেগুনি রশ্মি খুব সহজেই তখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়তে পারত। কারণ, আজ যে ওজোন গ্যাসের স্তর পৃথিবীর বুকে সূর্য থেকে ধাবমান অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের বাঁচায়, তার অস্তিত্ব তখন ছিল না, কেননা অক্সিজেন তখন জন্ম নেয়নি। আর ওজোন যে অক্সিজেনের তিনিটি পরমাণু দিয়ে তৈরি, তা তো স্কুলের সব বাচ্চারাই জানে। যাই হোক, অতিবেগুনি রশ্মি মিথেন, অ্যামোনিয়া আর হাইড্রোজেন গ্যাসের মিশ্রণে পড়ে তৈরি করল অ্যামিনো অ্যাসিড, যা প্রোটিনের মূল উপাদান। খুব সম্ভব এই অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে সৃষ্টি হল পৃথিবীর প্রথম প্রাণ—এককোষী জীব। এই প্রাণীটির কিন্তু অক্সিজেন দরকার ছিল না বাঁচার জন্য। কারণ, অক্সিজেন নয়, তার বেঁচে থাকার রসদ জোগাল মিথেন আর অ্যামোনিয়া গ্যাস।
ব্লু গ্রিন অ্যালগি
প্রাণীমাত্রই যে অক্সিজেন নির্ভর করে বেঁচে থাকে না, সে-কথা আজ যারা বিজ্ঞানের বইতে উঁকি দিয়েছে, তাঁরা সবাই জানে। সবচাইতে সহজ একটা উদাহরণ হল, দুধ থেকে তৈরি দইতে যে ল্যাক্টোব্যাসিলাস নামের ব্যাক্টিরিয়া থাকে, তারা কিন্তু অক্সিজেন ছাড়াই দিব্যি বেঁচে থাকে, বংশবৃদ্ধিও করে। আরও অনেক এমন উদাহরণ দেওয়া যায়, যেখানে প্রাণীরা অক্সিজেন ছাড়া নিশ্বাস নেয়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যানএরোবিক রেসপিরেশন’। কিন্তু মানুষসহ বেশিরভাগ প্রাণীদের নিশ্বাস-প্রশ্বাস চলে এরোবিক রেসপিরেশন পদ্ধতিতে, যেখানে অক্সিজেন না থাকলে জীবন বাঁচা সম্ভব নয়।
যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল তৈরি হল, তখন সেখানে বাতাসে ছিল মূলত কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন এবং জলীয় বাষ্প। হাইড্রোজেন, মিথেন, অ্যামোনিয়া আর হাইড্রোজেন সালফাইডও মিশে ছিল সামান্য পরিমাণে হলেও। সেই সময়ে জলীয় বাষ্পের জলকণার উপর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পড়ে যদিও-বা অক্সিজেন তৈরি হত, মুহূর্তে সেই অক্সিজেন মিথেন গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড আর নাইট্রোজেন তৈরি করে ফেলত। কাজেই স্বাধীন অক্সিজেন অণু বাতাসে টিকতে পারত না।
প্রথম যে এককোষী প্রাণটির সৃষ্টি হল পৃথিবীতে তাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘সায়ানো ব্যাক্টিরিয়া’। আবার তাকে ‘ব্লু গ্রিন এ্যালগি’ বলেও ডাকা হয়। তাকে ঠিক প্রাণী বলা যাবে কি না, সেই নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। সেইসব তর্কে যাবার প্রয়োজন নেই আমাদের। দেখা যাক তার অবদান পৃথিবীর বুকে কী।
সায়ানো ব্যাক্টিরিয়া
সায়ানো ব্যাক্টিরিয়া সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এসে নিজের শক্তি অর্জন করে বাঁচতে গিয়ে যা বর্জন করল সেটিই হল আমাদের অক্সিজেন। খুব সম্ভব তারা হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস ব্যবহার করে কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে বিজারিত করে শরীরে শক্তি তৈরি করত এবং অক্সিজেন বর্জন করত। তারপর সমুদ্রের জলে অসংখ্য সায়ানো ব্যাক্টিরিয়া জমে উঠতে থাকল। যত তাঁরা সংখ্যায় বাড়তে লাগল, তত বাড়তে লাগল অক্সিজেন। কিন্তু সেই অক্সিজেন প্রাণদায়ী ছিল না, তার ভিতরে এক ঘাতক ছিল, যার চরিত্রের সঙ্গে একটু পরেই আমরা পরিচিত হব। সায়ানো ব্যাক্টিরিয়ার এই অক্সিজেন তৈরির পদ্ধতিকেই বলা হয় সালোকসংশ্লেষ। তাদের শরীরের নানা প্রকারের ক্লোরোফিল থাকায় সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে শরীরে প্রয়োজনীয় খাদ্য তারা তৈরি করতে লাগল। আর এই পদ্ধতিতেই বর্জিত হল অক্সিজেন। মনে রাখতে হবে, গাছেরা তখনও পৃথিবীতে জন্ম নেয়নি।
অক্সিজেনের একটা বড়ো গুণ হল, সে এক নম্বরের ছিনতাইবাজ। জন্মেই সে যা ছিনতাই করতে লাগল, তা হল অন্য মৌলিক পদার্থ থেকে ইলেকট্রন। এর কারণ হল অক্সিজেন পরমাণুর বাইরের খোলে দুটি ইলেকট্রন কম আছে। অক্সিজেনের পারমাণবিক সংখ্যা ৮ = ২+৬। অক্সিজেন পরমাণুর প্রথম খোলে থাকে দুইটি ইলেকট্রন, বাইরের খোলে ছয়টি ইলেকট্রন। আটটি ইলেকট্রন থাকলে পরমাণুটি বিক্রিয়া করতে পারে না। কিন্তু অক্সিজেনের বাইরের খোলে আটটি ইলেকট্রন সম্পূর্ণ করার জন্য সে অন্যের কাছ থেকে দুটো ইলেকট্রন ছিনতাই করার চেষ্টা করে, কিন্তু নিজে পালাতে পারে না। প্রকৃতির সূত্র মেনে তাকে বাধা পড়ে যেতে হয় মৌল পদার্থের সঙ্গে, বাস করতে হয় মিলেমিশে। অর্থাৎ, অন্য পদার্থের সংস্পর্শে এসে অক্সিজেনের যৌগ তৈরি হয়।
বিজ্ঞান বইয়ের ভাষায় এই ঘটনাকে বলা হয় অক্সিডেশন। একটু উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা জানে, যে-কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যদি ইলেকট্রন ছিনতাই করা হয়, সেই ঘটনাকে বলা হয় অক্সিডেশন। (অক্সিজেনের পরিবর্তে অন্য কোনও পরমাণু যদি ইলেকট্রন ছিনিয়ে নেয় আর এক পরমাণু থেকে তাহলেও সেই বিক্রিয়াকে বলা হয় অক্সিডেশন।)
অক্সিডেশন হবার ফলে পৃথিবীতে তৈরি হতে লাগল খনিজ পদার্থ, যাদের বলা হয় মিনারেল। তাই সায়ানো ব্যাক্টিরিয়ার বর্জন করা ঘাতক অক্সিজেন গ্যাস জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গে খনিজ পদার্থে মিশে যাবার ফলে স্বাধীন অক্সিজেন অণু কোথাও ছিলই না প্রায়। মানে জন্মানো মাত্র খপাত করে অক্সিজেনকে গিলে ফেলত লোহা, তামা বা অন্যান্য মৌল। যে-যৌগগুলো তৈরি হল, বিজ্ঞানীরা তাদের নাম দিয়েছেন আয়রন-অক্সাইড, কপার-অক্সাইড ইত্যাদি। পৃথিবীর জন্মমুহূর্তে এই অক্সিডেশন প্রক্রিয়াটি সায়ানো ব্যাক্টিরিয়াদেরও ক্ষতি করত অবশ্যই। সবটা জানা সঠিকভাবে সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করে কিছুটা সত্যি জানতে পেরেছেন মাত্র।
অক্সিজেন জন্মেই পৃথিবীর বাতাসে মজুদ হাইড্রোজেনকে অক্সিডাইজড করে বানিয়ে ফেলল জল। অবশ্য এই কাজে সাহায্য করল সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি। হাইড্রোজেনকে এইভাবে বেঁধে না ফেললে কী হত? হাইড্রোজেন যেহেতু হালকা গ্যাস, সে সহজেই মহাকাশে বিলীন হয়ে যেত। তাহলে আমাদের গ্রহের অবস্থা হত বৃহস্পতি বা শুক্র গ্রহের মতো। এই দুটি গ্রহেও একসময় হাইড্রোজেন ছিল এবং অক্সিজেন থাকলেও পরিমাণে কম ছিল। কাজেই জল তৈরি হলেও সেখানে আবার সূর্যের আলোর প্রভাবে জল বিভাজিত হয়ে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন আলাদা হয়ে যেত। এইভাবেই হাইড্রোজেন উবে গিয়েছিল বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহ থেকে। কিন্তু যত সায়ানো ব্যাক্টিরিয়া পৃথিবীতে বাড়তে লাগল, ততই তৈরি হতে লাগল অক্সিজেন।
অক্সিজেনের জন্ম কবে হয়েছিল জানতে হলে পাথরের কাছে যেতে হবে। বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের তলায় জমে ওঠা মাটির স্তর এবং পাথর পরীক্ষা করে ৩৫০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর প্রথম প্রাণের অস্তিত্ব পেয়েছেন। তখন সমুদ্রে এবং বায়ুমণ্ডলে মুক্ত অক্সিজেন একেবারে ছিল না বললেই চলে। থাকলেও আজকের অক্সিজেনের পরিমাণের এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ ছিল। পাথরের স্তরে অক্সিজেনের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে ২৫০ কোটি বছর আগে। পাথরের স্তরে কীভাবে পাওয়া গেল অক্সিজেন? আগেই আলোচনা করা হয়েছে, অক্সিজেনের উপস্থিতিতে অন্যসব মৌল অক্সিডাইজড হয়ে যৌগে পরিণত হয়। পাথরে মূলত সেই যৌগের বয়স নির্ধারণ করে জানা গিয়েছে এই তথ্য।
এককোষী প্রাণী থেকে বহুকোষী প্রাণীর জন্ম হতে সময় লেগে গেল আরও কোটি কোটি বছর। মানুষের জন্ম হতে তখনও ঢের বাকি। অক্সিজেন বেঁধে ফেলে অক্সিডাইজড হতে হতে একসময় প্রায় সব মৌলই যৌগ হয়ে গেল—গুটিকয়েক ছাড়া, যেমন সোনা বা রুপো। এদিকে সায়ানো ব্যাক্টিরিয়ারা সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে পৃথিবীর সব সমুদ্র, জলাশয়, জলাজমিতে রাজত্ব চালাতে লাগল। ফলে অক্সিজেনের উৎপাদন এত বেড়ে গেল যে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বাড়তে লাগল অক্সিজেনের পরিমাণ। এই পর্যায়কে বলা হয় ‘গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট’। সেই পর্যায় শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ২৫০ কোটি বছর আগে। ২০০ কোটি বছর ধরে এইভাবেই অক্সিজেন তৈরি চলতে থাকে। তবে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন তখন ছিল না বললেই চলে। কারণ একটাই, সমুদ্রের তলায় তখন অক্সিজেন জন্মাচ্ছে আর মুহূর্তে তাকে কপ করে গিলে নিচ্ছে বিভিন্ন ধাতু। এইভাবে চলতে চলতে একসময়ে প্রায় সব ধাতু যৌগে পরিণত হলে তবেই অক্সিজেন বাড়তে লাগল বায়ুমণ্ডলে।
বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ যখন ৩৫ শতাংশ হয়ে গেল, তখনও কিন্তু পৃথিবীতে গাছপালা দেখা দেয়নি। কারণ, এত বেশি অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে গাছের কোষ অক্সিডাইজড হয়ে তারা খুব বেশি বাড়তে পারত না। হয়তো বামন কিছু গাছ দেখতে পাওয়া যেত কোথাও কোথাও।
পৃথিবী আরও ঠান্ডা হয়ে যেতে একসময় নানা কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ২১ শতাংশতে এসে অক্সিজেনের পরিমাণ থেমে গেল। আজও পৃথিবীর বুকে এই পরিমাণ অক্সিজেনই আছে, যা জীবজগতকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে, কিংবা বিবর্তনের ফলে এই পরিমাণ অক্সিজেন জীবজগতকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। প্রকৃতির যে নিজস্ব নিয়ন্ত্রক আছে, সে যে ভারসাম্য বজায় রাখে অক্সিজেনের বিবর্তন সেই কথাই জানায়। ৫৫ কোটি বছর আগে অক্সিজেনের প্রাণদায়ী প্রভাবে এবং পৃথিবী আরও ঠান্ডা হয়ে যেতে গাছপালা সংখ্যায় এবং আকারে বাড়তে থাকে।
যখন জল বাষ্প হয়ে বৃষ্টি শুরু হয়, তখন পৃথিবী আরও ঠান্ডা হতে থাকে। এই বৃষ্টিপাতের ফলেই যে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ২১ শতাংশ হয়ে যায়, বিজ্ঞানীরা তাই জানাচ্ছেন। একটানা প্রবল বৃষ্টিপাত ঘন রেইন ফরেস্ট বেড়ে যাবার জন্য উপযুক্ত ছিল। শুকনো দিনে আবার সেই জঙ্গলে আগুন ধরে যেত। আগুন জ্বলতে গেলে যা লাগে, তার আবশ্যক শর্ত হল অক্সিজেনের উপস্থিতি। অক্সিজেনের সহায়তায় গাছের শরীরের কার্বন পুড়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড আর জল তৈরি হয়। হয়তো প্রকৃতির নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে জঙ্গলে আগুন লাগা বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা কমানোর জন্য প্রয়োজন ছিল। কারণ প্রাকৃতিক নিয়ম হল, অস্থির পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করে সাম্য এনে দেওয়া। কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবেশে বেড়ে যেতে আবার নতুন করে গাছপালা গজিয়ে উঠত পৃথিবীর বুকে।
এরপর জন্ম হল বড়ো বড়ো প্রাণীর। তারা হল ডাইনোসর আর নানা বড়ো বড়ো সরীসৃপ। ২০ থেকে ১৪.৫ কোটি বছর আগের পর্যায়কে বলা হয় জুরাসিক যুগ। মানে এই পাঁচ কোটি বছর ধরে তারাই দাপিয়ে বেড়াল পৃথিবীতে। কী করে তারা বিলুপ্ত হয়ে গেল, সেই কথা এইখানে অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু অক্সিজেনের সাহায্যেই তারা পৃথিবীর বুকে বেঁচে ছিল এই দীর্ঘ সময়ে।
জুরাসিক পর্যায়ে পৃথিবীর বুকে অনেক পরিবর্তন আসে। এই সময় পৃথিবীর উপরের যে শক্ত খোলা তৈরি হয়েছিল, উত্তাপ ও চাপের কারণে সেই খোলার প্লেটগুলো সরে যেতে থাকে। জেগে ওঠে সমুদ্রের তলদেশ, ফাটল দিয়ে লাভা বেরোতে থাকে। সমুদ্রের তলা থেকে মাথাচাড়া দেয় পাহাড়, পৃথক মহাদেশ সৃষ্টি হয়, তৈরি হয় মহাসমুদ্র। পৃথিবীর আকাশে লাভা উদ্গিরণের কারণে প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস বেরোতে থাকে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস বেশি হয়ে যাওয়ায় গ্রিন হাউস এফেক্টে পৃথিবীর তাপমান বাড়তে থাকে। আবার সেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড বলয়ের কারণে রাতেও পৃথিবী অতিরিক্ত ঠান্ডা হতে পারত না। ডাঙা ও জলে নানাধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী জন্ম নিল। তাদের মধ্যে গড়ে উঠল খাদ্যচক্র। ডাঙায় আর আকাশে যেমন ডাইনোসরেরা রাজত্ব করত, জলের দখল ছিল বড়ো বড়ো কুমির, হাঙর জাতীয় প্রাণীর। মাছেরাও জন্ম নিল। অক্সিজেন যত উৎপন্ন হত, ততটাই কাজে আসতে লাগল প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য। তাই অক্সিজেনের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে একই রয়ে গেল, সেই ২১ শতাংশ।
পৃথিবীর ইতিহাসে চক্রবৎ চলে তার ঠান্ডা ও গরম হয়ে যাওয়া। একটা মাত্র কারণের জন্য এমন হয় না। আসলে সব ঘটনাই একে অন্যকে প্রভাবিত করে। জমে বরফ হয়ে গিয়ে পৃথিবী যে চেহারা নেয়, তাকে বলা হয় ‘স্নোবল আর্থ’। প্রথম তুষার যুগ এসেছিল আজ থেকে ২৩০ কোটি বছর আগে। ৮০ থেকে ৬০ কোটি বছর আগেকার সময়ের মধ্যে দুইবার পৃথিবী জমে শক্ত হয়ে যায়। পৃথিবী এই অতিশীতল হয়ে যাওয়ার পিছনেও আছে অক্সিজেনের প্রভাব বা উলটোদিক থেকে দেখতে গেলে, পৃথিবী ঠান্ডায় জমে যেতে অক্সিজেনের মাত্রাও কমে যায়। আমরা আগেই দেখেছি, একসময় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অনেক বেশি মিথেন গ্যাস ছিল। মিথেন আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড—দুটি গ্যাসই গ্রিনহাউস গ্যাস, যারা পৃথিবীর গায়ে কম্বলের মতো জড়িয়ে থেকে তার উত্তাপ মহাকাশে বিলীন হতে দেয় না। অক্সিজেন বেড়ে যাওয়াতে মিথেন গ্যাসের সঙ্গে সেই অক্সিজেন বিক্রিয়া করে জল তৈরি করে। কাজেই মিথেন গ্যাস কমে যায় বাতাসে। সায়ানো ব্যাক্টিরিয়া সংখ্যায় বেড়ে গিয়ে সালোকসংশ্লেষের কারণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমে যেতে থাকে ও অক্সিজেন বাড়তে থাকে। গাছেদের সংখ্যা বৃদ্ধি হলে আরও দ্রুত বেড়ে যায় অক্সিজেন।
সালোকসংশ্লেষ
এই কারণে পৃথিবীর উপর থেকে ঢাকনা পাতলা হয়ে যাবার ফলে সূর্যের থেকে আসা উত্তাপ মহাকাশে বিলীন হয়ে যায়। একই সঙ্গে পৃথিবীর অক্ষ এমনদিকে ঘুরে যায় যে সূর্যের আলো কমে যায় পৃথিবীর উপর। কাজেই ঠান্ডায় জমে যায় সব জল। পরিবর্তন হয়ে যায় প্রাণীদেরও। সংখ্যায় তারা কমে যায়। আর একদিকে প্রবল তুষারপাতের কারণে গাছপালা সামান্য যা ছিল, তারাও বিলুপ্ত হয়ে যায়। পৃথিবী বরফের চাদরে ঢেকে গেলেও কিন্তু প্রাণীরা বরফের তলায় বেঁচে ছিল, কিন্তু তারা খুবই ছোটো ছোটো প্রাণী, যাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন ছিল না। বরফের নীচে নানা খনিজ পদার্থ এবং হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ব্যবহার করে তারা প্রয়োজনীয় খাদ্য তৈরি করে নিতে পারত।
পৃথিবী উষ্ণ হলে আবার অক্সিজেন মুক্ত হতে থাকে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনরা জন্মায়। তারা অক্সিজেন তৈরি করতে পারত। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন হচ্ছে একধরনের সামুদ্রিক অ্যালগি। তাদের শরীরে ক্লোরোফিল আছে। সূর্যের আলোর প্রভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও জল থেকে তারাও অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। তাদের শরীরে নাইট্রেট, সালফার এবং ফসফেট থেকে তৈরি হয় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট। এরা সমুদ্রের জলে অক্সিজেন তৈরি করতে থাকে। কাজেই অক্সিজেনের প্রভাবে প্রাকৃতিক বিবর্তনে জন্মাতে থাকে নানা প্রাণী। অক্সিজেন যেমন প্রাণদায়ী হয়ে উঠল, আর একদিকে দেখা গেল প্রাণীদেহে অক্সিজেনের ঘাতক রূপ।
অক্সিজেনের ঘাতক রূপের কারণ হল হাইড্রক্সিল আয়ন। অক্সিজেনের বাইরের খোলে দুটি ইলেকট্রন কম থাকায় অন্যের কাছ থেকে ইলেকট্রন নিতে সে সিদ্ধহস্ত। ব্যাপারটা বেশি জটিল না করে বলা যায়, অক্সিজেন অন্যের কাছ থেকে ইলেকট্রন ছিনিয়ে নিয়ে নিজে সুপার অক্সাইড এবং তারপর হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড তৈরি করে। শুধু হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড প্রাণীদের কোষে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করতে পারে না, কিন্তু হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থেকে আবার সুপার অক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে হাইড্রক্সিল আয়ন তৈরি হয়। শেষোক্ত হাইড্রক্সিল আয়ন সরাসরি প্রাণী কোষে আক্রমণ করতে ওস্তাদ। হাইড্রক্সিল আয়ন ঋণাত্মক হবার জন্য কোষের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ইলেকট্রন দান করে দিতে পারে। ফলে কোষের ক্ষতি হয়। হাইড্রক্সিল আয়নের আক্রমণ অনেকটা চেইন রি-অ্যাকশনের সৃষ্টি করে কোষে। তাই একাধিক কোষের গঠন বদলে যেতে পারে।
প্রকৃতি সামঞ্জস্য বজায় রাখার চেষ্টা করে সর্বদা। অক্সিজেনের এই ঘাতক রূপকে আটকে দেবার জন্য সে নানা ব্যবস্থা করে রেখেছে। প্রাণীদেহের কোষগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কাজ হল আগেই হাইড্রক্সিল র্যাডিকালের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে ইলেকট্রন দিয়ে দেওয়া। এরা না থাকলে প্রাণীদের কোনও কোষই অক্সিজেনের আক্রমণ থেকে বাঁচত না। আমাদের নিশ্বাসের সঙ্গে যে অক্সিজেন কোষে কোষে পৌঁছে যায়, তা কার্বোহাইড্রেট পুড়িয়ে আমাদের উত্তাপ দেয়। উত্তাপ থেকে আসে শক্তি। কিন্তু অক্সিজেন থেকে তৈরি হাইড্রক্সিল আয়ন যাতে কোষের ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকেও আছে প্রকৃতির কড়া নজর।
সুষম আহার না করলে কিন্তু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি হয় না শরীরে। অন্য প্রাণীরা দেহের চাহিদা অনুযায়ী সবরকম খাবার খায়, ফলে তাদের শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি হয় সহজে। আজকের দিনে মানুষের খাদ্যের প্রকারে বদল ঘটেছে অনেক। ফাস্ট ফুড এবং অতিরিক্ত সার দেবার ফলে যেসব খাবার আমরা খেয়ে থাকি, তার থেকে প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রাসায়নিক আমাদের শরীরে তৈরি হওয়ায় বাধা আসে। সবরকমের শাকসবজি এবং ফল না খেলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি হয় না। ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-ই এই দুটি ভিটামিন আমাদের শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি করে। লেবুজাতীয় ফল, পালং শাক, গাজর, ব্রকলি ইত্যাদি খাবারে এই দুটি ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি করতে পারে না ঠিকভাবে। সেইজন্য ডাক্তারেরা বেশি বয়সের রুগীদের জন্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ট্যাবলেট দিয়ে থাকেন। কিন্তু অতিরিক্ত কৃত্রিম রাসায়নিক শরীরে অক্সিডেশন কমিয়ে দিতে পারলেও অন্যান্য অনেক ক্ষতি করতে পারে। তাই সুস্থ থাকার জন্য সুষম আহার এবং নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করার অভ্যেস অনেক বেশি উপকারী।
অক্সিডেশনের ফলেই কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। অবশ্য প্রাকৃতিক নিয়মেই সেই ক্ষতিগ্রস্ত বা মৃত কোষ সরিয়ে দেয় দেহের অন্য কোষ। বেশি বয়সে অক্সিডেশনের ফলে কোষের মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে। শরীরের কোষগুলো ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। কিন্তু সেই ক্ষয় না কমাতে পারলেই বৃদ্ধ বয়সে মানুষ মারা যায়। শুধু মানুষই নয়, সব প্রাণীদের বেশি বয়সে মারা যাবার অন্যতম কারণ হল অক্সিডেশন। তাই চিকিৎসার নানা পদ্ধতির বদল হওয়ায় মানুষ আগের দিনের তুলনায় বেশিদিন বাঁচে।
অক্সিজেনের ভারসাম্য বাঁচিয়ে রাখে প্রকৃতি। দেখা গেল, সমুদ্রে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন এবং ব্লু-গ্রিন অ্যালগিরা অক্সিজেন তৈরি করে, আর জমিতে গাছেরা। এই অক্সিজেন চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে আরও অনেক প্রাকৃতিক চক্র—যেমন জলচক্র, কার্বন-ডাই-অক্সাইড চক্র ইত্যাদি। পরিবেশে একটি চক্রের ক্ষতি আর একটি চক্রকে প্রভাবিত করে। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে বলেছেন, যদি আজ সব গাছ কেটে ফেলা হয় পৃথিবী থেকে তাহলেও অক্সিজেনের ভাণ্ডার লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবে, এতটাই তার পরিমাণ। কিন্তু গাছেদের নষ্ট করলে পৃথিবীতে বৃষ্টি হবে না, তাপমাত্রা এত বেড়ে যাবে যে, কোনও প্রাণীর বেঁচে থাকা সম্ভব হবে না। তাই প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য গাছেদের বেঁচে থাকা খুবই প্রয়োজন। তবে শুধু অক্সিজেন নির্ভর করে প্রাণ বাঁচবে না। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও।
তথ্যসূত্র—
1. Oxygen and the Evolution of Life by Heinz Decker and K.E. van Holde, Springer, 2011.
2. Oxygen, A Four Billion Year History, by Donald Eugene and Canfield, Princeton University Press, Oxford, 2014.
লেখকের অন্যান্য লেখা
প্রলয় সেন ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ রম্যাণী গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ তাপস মৌলিক ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ প্রদীপ কুমার দাস ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ দীপক দাস ▪ অমিয় আদক ▪ কল্যাণ সেনগুপ্ত
বদ্রীনাথ পাল ▪ দীনেশ সরকার ▪ রূপসা ব্যানার্জী ▪ শঙ্খশুভ্র পাত্র ▪ সৌরভ চাকী ▪ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪ শিবানী কুণ্ডু খাঁ ▪ সুব্রত দাস ▪ বসন্ত পরামানিক ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ তাপস বাগ ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ টুম্পা মিত্র সরকার
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ যূথিকা আচার্য ▪ মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ কেয়া চ্যাটার্জী ▪ ইন্দ্রজিৎ ঘোষ ▪ সুদীপ ঘোষাল ▪ অনিন্দ্য পাল ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অরিন্দম ঘোষ ▪ সৌম্যপ্রতীক মুখোপাধ্যায় ▪ রাজীবকুমার সাহা
সনৎ কুমার ব্যানার্জ্জী ▪ মলয় সরকার
অলংকরণ
প্রদীপ গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ অঙ্কিতা মণ্ডল ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ সুকান্ত মণ্ডল ▪ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪ প্রবাহনীল দাস ▪ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী ▪ রাজন্যা ব্যানার্জী ▪ সমৃদ্ধি ব্যানার্জী ▪ ঐশিক মণ্ডল ▪ বিজয় বোস ▪ দীপক কুণ্ডু
কুড়ি জন দিকপাল বিজ্ঞানীর অসাধারণ কর্মকাণ্ড আর জীবনের গল্প। যে বিজ্ঞানীদের হাত ধরে সভ্যতা এগিয়ে গিয়েছে, কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের ঢাকনা খুলে অনাবৃত হয়েছে বিজ্ঞানের সৌন্দর্য, যাঁদের আপসহীন জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞানের জয়ধ্বজা উড়েছে, তাঁদের জীবনের অন্যান্য দিকগুলোও তুলে ধরা হয়েছে এই বইতে।
নদীর স্রোত কি কথা বলে? বাতাস তার জবাব দেয়? ফুল বুঝি গাছের দুঃখের ধন? ঝরে যাওয়া পাতায় কোন ইতিহাস লেখা থাকে? হাজার হাজার মাইল সাঁতার কেটে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে যায় পেঙ্গুইন। নেকড়ে-মা দুধ দিয়ে বড়ো করে মানুষের সন্তান। শান্ত মাটির তলায় কোটি বছরের ঘুম ভেঙে ক্ষেপে ওঠে আগ্নেয় লাভা। তাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করে মেঘ-ভাঙা বৃষ্টি। নিরালা বনে পিউপার জাল ছিঁড়ে উড়ে যায় রঙিন প্রজাপতি। লক্ষ বছর আগে একজন দাগ কেটেছিল গুহার অন্ধকার দেয়ালে। দাগ হল ছবি, ছবি হল লেখা। চাপা থাকে আগামী দিনের জন্য। গম্ভীর হিমবাহ নিঃশব্দে নামে লঘু সঞ্চারে।