ছোটো গল্প
15% OFF * FREE SHIPPING
ছোটো গল্প
দুলদুল নদীতে রূপকপুরের সবাই নাইতে আসে, মাছ ধরতে আসে। নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে কত কত গল্প করে। তাই তো দুলদুল সব খবর জানে—রাজকুমারী সিলভিয়া আর সখী মনুশ্রী ধনুর্বিদ্যায় সেনাপতিপুত্র মুরাদকে হারিয়ে দিয়েছেন। হেরে গিয়ে সেনাপতি পুত্রের খুব রাগ হয়েছে, এই কথা সেনাপতিকে বলতেই সেনাপতিমশায় রেগে কাঁই।
সবিতা বিশ্বাস
রাজকুমারী সিলভিয়া সখীদের নিয়ে বসে আছেন দুলদুল নদীর জলে পা ডুবিয়ে। ভাবছ, দুলদুল নদী—সে আবার কেমন? সে-নদী কি সবসময় দোলে? হ্যাঁ গো, দোলে বলেই তো অমন মিষ্টি নাম। দুলদুল নদী যে-পাহাড় থেকে এসেছে, সেই পাহাড়ের গা বেয়ে ছয় ঝরনা বোন জলের দোলনায় দুলতে দুলতে, খিলখিল করে হাসতে হাসতে এসে পড়েছে রূপকপুরে। তাই তো দুলদুল দোলে, কেবলই দোলে। ঢেউ তুলে ছোটে না, চঞ্চল মোটে না, সে দুলতে দুলতে হাসে আর হাসতে হাসতে দোলে। রাজকুমারী সখীদের সঙ্গে রাজপুরীর বাগানে খেলাধুলা করে যখন ক্লান্ত হয়ে যায় তখন দুলদুলের জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকে। আহ্, কী আরাম!
কিন্তু নদীর গভীরে যে দুষ্টু মাছটা থাকে, যার নাম অম্বুকুমার, সে মাঝে মাঝে ভুস করে মাথা তুলে ছড়া কেটে দুলদুল নদীকে ভেংচি কাটে—
‘দুল দুল দুলুনি
হাঁটু জল তুলুনি
তোর গায়ে কাদা
বর হবে গাধা।’
খুব খুব রাগ হয় দুলদুলের। তার জলে থাকবে, ছোটো মাছ খেয়ে পেট মোটা করবে আর তাকেই কিনা বাজে কথা বলবে? ওই অম্বুকুমারকে ধরে আচ্ছা করে নাকানিচোবানি খাওয়াতে পারলে শান্তি হয় দুলদুলের। কিন্তু তাকে ধরে কার সাধ্যি! ভুস করে মাথা তোলে, ফুস করে পালিয়ে যায়।
রূপকপুরের রাজকুমারী সিলভিয়া ভারি মিষ্টি মেয়ে, কখনও কাউকে কটু কথা বলে না, মুখে হাসিটি লেগেই আছে। সেই রাজকুমারীকে অম্বুকুমার বলে কিনা—
‘রাজকুমারী ফুলকুমারী
ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যান
অসিচালনা মসীচালনা
শুনলে তিনি অক্কা পান।’
এত বড়ো সাহস ওই অম্বুকুমারের? সিলভিয়ার সখীরা রেগেই আগুন। এ-কথা রাজামশাইকে বলতেই হবে, জেলেরা জাল ফেলে অম্বুকুমারকে ধরে এনে কেটেকুটে রান্না করে খাবে। বেশ হবে!
কিন্তু সিলভিয়া এতে কোনোমতে রাজি হলেন না। সখীরা ভাবল, রাজকুমারীর মনটা তো গোলাপের পাপড়ির মতো নরম তাই তিনি কাটাকাটি, মারামারি চান না। তবে অম্বুকুমারের কথায় রাজকুমারী যে খুব দুঃখ পেয়েছেন তা তাঁর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রাজকুমারী ফুলের পাপড়ি বিছানো পথে না হেঁটে পাশের মেঠো পথে নেমে হনহন করে হাঁটতে লাগলেন। রাজকুমারীকে দেখে মেঠো পথ ভারি খুশি হয়ে সবুজ ঘাসের নরম গালিচা বিছিয়ে দিল।
পরদিন ভোর হতেই হইহই করে সখীরা এসে পড়ল। কিন্তু রাজকুমারী বললেন, আজ তিনি খেলাধুলা করবেন না। খবর শুনে রানিমা ছুটে এলেন।—“এ কেমন কথা! রূপকপুরের রাজকুমারীর মুখে এ কী কথা! কী হয়েছে মা? সকালের খাবার পছন্দ হয়নি? দাসীরা ঠিকমতো সাজিয়ে দেয়নি? বলো মা সিলভিয়া, কেউ কি তোমাকে কিছু বলেছে?”
সবেতেই রাজকুমারী মাথা নাড়েন—“কিছুই হয়নি। তবে রাজামশায়ের সঙ্গে একখানা কথা আছে।”
রাজামশায় ছুটে এলেন।—“বলো মা, যে তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে তার নাম একবার উচ্চারণ করো। এই দণ্ডে তার গর্দান নেব।”
রাজকুমারী খুব বিরক্ত হলেন। রাজা হলেই কি কথায় কথায় কারও মুণ্ডু কাটতে হবে? এ কেমন কথা! আগে তো কথাটা মন দিয়ে শুনতে হবে!
রাজকুমারী ধীর কণ্ঠে বললেন, “পিতা, আমি অসিচালনা, মসীচালনা শিখতে চাই। সারাদিন খেলাধুলা করতে আমার ভালো লাগে না। আমি আপনার একমাত্র কন্যা, আপনার বয়স হলে আমাকেই রাক্ষস-খোক্ষসদের হাত থেকে রূপকপুরকে রক্ষা করতে হবে।”
এই কথা শুনে রাজা-রানি দুজনের চোখ দিয়ে জল ঝরতে লাগল। রানি বললেন, “সিলভিয়া, মা আমার, তুমি রাজপণ্ডিতের কাছে পড়াশোনা শেখো, আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু যুদ্ধ-বিগ্রহ—সে তোমার কাজ নয় মা, ওটা শেখার প্রয়োজন নেই।”
এ-কথা শুনে সিলভিয়া বললেন, “আমি তো এখনই যুদ্ধ করতে যাচ্ছিনে, শিখে রাখছি। পিতা, আপনি সেনাপতিকে বলুন সব ব্যবস্থা করতে।”
রাজামশাই বুঝলেন, কন্যাকে নিরস্ত করা যাবে না। তখন তিনি রাজকুমারীর জন্মের আগের একটি ঘটনা বললেন।—“সিলভিয়া, আগে আমাদের একটি পুত্রসন্তান জন্মেছিল। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই সে শাস্ত্র-শস্ত্র—সব বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিল। গভীর জঙ্গলে যেত শিকার করতে, দুলদুল নদীর ঢেউয়ের দোলায় দুলে কুমার যেত ঝরনা বোনেদের সঙ্গে খেলা করতে। রাজপরিবারের সকলের দিন আনন্দে কাটছিল। কিন্তু মাত্র দশ বছর বয়সে রিহানকুমার, মানে রাজকুমার একদিন হারিয়ে গেল।”
রাজকুমারী অবাক হয়ে শুনছিলেন। তাঁর একটি দাদা আছে জেনে খুব আনন্দ পাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ কথাটি কী শুনলেন? দাদা হারিয়ে গেছেন? না না, তা কিছুতেই হতে পারে না। কেউ নিশ্চয় তাঁকে বন্দি করে রেখেছে।
সিলভিয়া এবার জেদ ধরলেন, ত্রিভুবন ঘুরে তিনি দাদাকে উদ্ধার করে আনবেন, তাই তাঁকে সবরকমের বিদ্যাশিক্ষা করতেই হবে।
রাজা-রানি মেনে নিলেন রাজকুমারীর কথা। শিক্ষা শুরু হল রাজকুমারীর। সখীরা আর কী করে!—মনখারাপ করে ঘুরে বেড়ায়, রাজকুমারী না হলে খেলা জমে নাকি?
সখীদের মধ্যে যে সবচেয়ে প্রিয় সখী মনুশ্রী, তারও সারাদিন খেলাধুলা ভালো লাগত না। মনুশ্রীও রাজকুমারী সিলভিয়ার সঙ্গে অসিচালনা শিখতে লাগল।
রাজকুমারী এখন খুব ব্যস্ত, তাই আর দুলদুল নদীর জলে পা ডুবিয়ে দোল খাওয়া হয় না। রাজকুমারীকে না দেখতে পেয়ে অম্বুকুমারেরও খুব মনখারাপ। একদিন দুলদুলকে জিজ্ঞেস করল—
‘রাজকুমারী ফুলকুমারী
কোথায় গেল সই?
ও নদী বোন আন না ডেকে
মনের কথা কই।
রাজকুমারী মিষ্টি খুবই
চোখটা টানা টানা,
তিন সত্যি করছি রে সই
বকব না না না না।’
দুলদুলের বয়েই গেছে অম্বুকুমারের কথা শুনতে। বাজে কথা বলার সময় মনে ছিল না?
দুলদুল নদীতে রূপকপুরের সবাই নাইতে আসে, মাছ ধরতে আসে। নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে কত কত গল্প করে। তাই তো দুলদুল সব খবর জানে—রাজকুমারী সিলভিয়া আর সখী মনুশ্রী ধনুর্বিদ্যায় সেনাপতিপুত্র মুরাদকে হারিয়ে দিয়েছেন। হেরে গিয়ে সেনাপতি পুত্রের খুব রাগ হয়েছে, এই কথা সেনাপতিকে বলতেই সেনাপতিমশায় রেগে কাঁই। মুরাদের কান মুলে দিয়ে বলেছেন, “এই কথা বলতে তোমার লজ্জা করছে না? ছোট্ট, মিষ্টি এতটুকুনি আদরের রাজকুমারী আমাদের, তাঁর কাছে হেরে গিয়ে সে-কথা আমাকে বলতে এসেছ! গণ্ডমূর্খ তুমি!”
সেনাপতির রাগ দেখে তাঁর স্ত্রী দৌড়ে এসে ছেলেকে আঁচল দিয়ে আড়াল করে পাকশালে নিয়ে গিয়ে মস্ত বড়ো রুপোর থালায় এক মন চালের ভাত বেড়ে দিয়ে বললেন, “খাও বাবা, বেশি করে ভাত খাও। গুরুজনরা বলে গেছেন, রাগ হলে বেশি করে ভাত খেতে হয়।”
তারপরে যা হবার তাই হল। মুরাদ সেই ভাত খেয়ে কুমড়োপটাশের মতো গড়াগড়ি খেতে লাগল।
ওদিকে রাজকুমারী শস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হবার সঙ্গে সঙ্গে শাস্ত্রবিদ্যাতেও রাজপণ্ডিতের পাঠশালায় সবার সেরা হলেন। রূপকপুরের রাজকন্যার খ্যাতি রূপকপুর রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে রূপকথার দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল।
সে-কথা শুনল দুলদুল নদী। দুলদুলের কাছ থেকে সে-গল্প শুনল ছয় ঝরনা বোন। তারা বলাবলি করল—“সবই তো ভালো শুনছি, কিন্তু রাজকুমারী এখনও সাঁতার শেখেননি, ঘোড়ায় চড়া শেখেননি!”
কথাখানা দুলতে দুলতে এসে পৌঁছল রূপকপুরের ঘাটে। রাজকুমারী সিলভিয়ার সখীরা সেদিন জোর করে তাঁকে নাইতে নিয়ে গিয়েছিল, সেখানেই অম্বুকুমার রাজকুমারীর পায়ের কাছে জলে বুড়বুড়ি কেটে ভুস করে উঠে শুনিয়ে গেল—
‘রাজকুমারীর গুমোর ভারি
কয় না কথা মোটে,
কাটলে সাঁতার নদীর জলে
শিরোপা তবে জোটে।
টগবগিয়ে লাগাম ধরে
পক্ষীরাজে চড়ে,
আকাশপুরে যেতেই হবে
একনাগাড়ে উড়ে।
পাহাড়চূড়ায় উঠতে হবে
ভয় রেখো না প্রাণে,
রিহানকুমার বন্দি আছে
বলছি কানে কানে।’
এইটুকু বলেই অম্বুকুমার ডুব দিল গভীর জলে। রিহানকুমার কোথায় বন্দি আছেন, কে তাঁকে বন্দি করেছে—সে-সব কিছুই বলে গেল না। তবে এটুকু বোঝা গেল, সিলভিয়াকে আরও অনেক কিছু শিখতে হবে, তবে দাদাকে উদ্ধার করতে যেতে পারবেন।
সখীরা অনেকদিন পরে নদীতে নাইতে নেমেছে, তারা এ-ওর গায়ে জল ছিটিয়ে খুব মজা করছে। অম্বুকুমার যে রাজকুমারীকে এসব কথা বলেছে তারা জানেই না। দুই সখীর চোখে চোখে কথা হল, আর দেরি না করে টুপ টুপ করে তিন ডুব দিয়ে পাড়ে উঠে এলেন রাজকুমারী আর মনুশ্রী।
পরের দিন থেকেই রাজকুমারী শুরু করলেন অনুশীলন। ঘোড়াশালে ধবধবে সাদা, সবচেয়ে তেজি ঘোড়ার নাম ক্যাসপার। সেই ক্যাসপারকে এখনও পর্যন্ত কেউ বশ করতে পারেনি, এমনকি রাজামশাইও নন।
রাজকুমারীকে ঘোড়াশালে যেতে দেখেই সেনাপতিপুত্র মুরাদ খোঁড়াতে খোঁড়াতে এসে বলল, “রাজকুমারী, আপনি আমাকে ধনুর্বিদ্যা, অসিচালনা, মসীচালনা—সবেতেই হারিয়েছেন, তবুও আপনার ভালোর জন্যই আপনাকে সতর্ক করছি, আপনি ক্যাসপারের কাছে যাবেন না। ও ভীষণ দুষ্টু একটা ঘোড়া, আপনাকেও আঘাত করতে ছাড়বে না। এই দেখুন আমার কী অবস্থা করেছে!”
রাজকুমারী কিছু বলার আগেই সহিস মুরাদকে ঘোড়াশাল থেকে বাইরে বের করে দিল।
রাজকুমারী তাড়াহুড়ো না করে প্রথম কয়েকদিন আস্তাবলের সব ঘোড়াদের সঙ্গে ভাব জমালেন, নিজের হাতে খাওয়ালেন। যদিও সবাই আপত্তি করেছিল—‘এ কী কথা! রাজকুমারীর ননীর মতো দেহ, মাখনের মতো হাত—তার কি এসব কাজ শোভা পায়?’
তারপর একদিন সবাই অবাক হয়ে দেখল, রাজকুমারী সিলভিয়া আর মনুশ্রীকে নিয়ে ক্যাসপার রাজবাড়ির মাঠে ছুটছে। রাজকুমারী কোমরে তলোয়ার ঝুলিয়ে, হাতে তির-ধনুক নিয়ে যেতে যেতে বলে গেলেন, “চিন্তা কোরো না, আমি দাদা রাজকুমার রিহানকে খুঁজতে যাচ্ছি। আর তাঁর বন্ধু রঞ্জনকেও খুঁজে আনব।”
রূপকপুরের রাজামশায় চারদিকে এত চর, সৈন্যসামন্ত পাঠিয়ে এতদিনেও রাজকুমারকে খুঁজে পেলেন না, এখন ছোট্ট রাজকুমারী সিলভিয়া গেলেন তাঁকে খুঁজে আনতে! সারা রাজ্যের লোক হায় হায় করে উঠল, রাজকুমারীও যদি হারিয়ে যান?
এক মাস যায়, দুই মাস যায়, তিন মাস পার হতেও আর দেরি নেই, তবু না ফিরল রাজকুমারী আর সখী মনুশ্রী। না ফিরে এলেন রাজকুমার আর তাঁর বন্ধু রঞ্জন।
ওদিকে হয়েছে কী, রাজকুমারী আর মনুশ্রী দুজনে ছয় ঝরনা বোনেদের কাছ থেকে খবর নিয়েছিল রাজকুমার নাকি রামধনুর রঙ আনতে গেছেন মেঘের পাড়ায়, চাঁদবুড়ির কাছেও যাবেন। সেখান থেকে খানিকটা দুধসাদা জ্যোত্স্নার তুলো আনবেন।
কেন? কেন? তুলো দিয়ে কী হবে?
তুলি আর রঙ দিয়ে রাজকুমার ছবি আঁকবেন।
তা সে-সব নিয়ে ফিরতে কি এত দেরি হয়?
ওইখানেই গণ্ডগোল। রাজকুমার জানতেন না, ইচ্ছে হলেই চাঁদবুড়ির কাছে যাওয়া যায় না। তাকে ঘিরে রেখেছে কত কত তারা। কেউ মিটমিট করে জ্বলছে, মিচমিচ করে হাসছে তো কেউ কটমট করে তাকাচ্ছে আর মকমক করে রাগ করছে। আকাশপাড়ায় ভারি হাঙ্গামা।
রাজকুমারী আর মনুশ্রী তলোয়ার, মুকুট, পোশাক-আশাক খুলে গোলাপি রঙের ঝালর দেওয়া দুটো জামা পরে, ছোট্ট তারাদের সঙ্গে ভাব করে তাদের দেওয়া ঝকমকে তারার ফুল চুলে গুঁজে সন্ধ্যাতারার কাছে গিয়ে বললেন, “তারামাসি, তারামাসি, তুমি কী ভালো গো! তোমায় দেখতে সবথেকে সুন্দর। রূপকপুর থেকে রোজ তোমায় দেখি। জানো তো তারামাসি, আমার দিদা নেই, তাই গল্প শোনাও হয় না। আমাদের চাঁদমামার বাড়ি যাবার রাস্তা দেখিয়ে দেবে? ওখানে গিয়ে বুড়িদিদার মুখ থেকে ঝুড়ি ঝুড়ি গল্প শুনব। তারপর ফেরার সময় মখমলের থেকেও নরম আর দুধের থেকেও সাদা জোছনার কাপড়ের পুঁটুলি করে কিছু গল্প নিয়ে গিয়ে ঠাকুমার ঝুলিতে রেখে দেব। রাস্তা দেখিয়ে দেবে গো তারামাসি?”
***
চাঁদের বুড়িদিদা খুব ভালো। বলল, “তা খুকিরা, এসেই যখন পড়েছ গল্প তো বলতেই হবে। তোমরা খুব সাহসী, তোমাদের দেখে খুব খুশি হয়েছি।”
সিলভিয়া এক ফাঁকে রাজকুমারের কথা জিজ্ঞেস করতে বুড়ি বলল, “হ্যাঁ, দুটো খোকা এসেছিল, আমি তাদের ছবি আঁকার জন্যে তুলো দিলাম। তারপর তারা রঙের খোঁজে মেঘ-বৃষ্টির পাড়ায় গেল।”
রাজকুমারী বুঝতে পারলেন, দাদা মেঘের পাহাড়ে আটকে পড়েছেন। চাঁদের বুড়ির কাছ থেকে গল্পের ঝুড়ি নিয়ে পুঁটুলিতে রেখে চললেন মেঘের পাড়ায়।
ওরে বাবা! মেঘ পাহাড়ের দরজায় দাঁড়িয়ে দুন্দুভি নিয়ে পাহারা দিচ্ছে মেঘ সর্দার। ভয়ানক গর্জন করে বলল, “এই যে খুকিরা, যাচ্ছ কোথায়?”
“না মানে…”
“মানে? সে আবার কী? হা-হা-হা, বুঝেছি রামধনুর রঙ আনতে যাচ্ছিলে নিশ্চয়? খুব সাহস দেখছি! বেশি সাহস ভালো নয়, বুঝলে? যাও যাও, লক্ষ্মী মেয়ের মতো পক্ষীরাজে চড়ে মায়ের কোলে ফিরে যাও। না-হলে!”
“না-হলে কী হবে মেঘকাকু?”
“কী হবে? এর আগে দুজন সাহস দেখিয়েছিল, তাদের মতো হবে। তারা রঙ নিতে গিয়ে ধরা পড়ে এখন মেঘপাহাড়ে বন্দি হয়ে সাজা খাটছে।”
“রাজকুমারী সিলভিয়া আর মনুশ্রী দুজনে চোখে চোখে কথা বলল। তারপর রাজকুমারী দুঃখ দুঃখ মুখ করে বললেন, “বুঝলে মেঘকাকু, ভেবে দেখলাম চলেই তো যাব, তার আগে একটু গল্প করি। তুমি নিশ্চয় মেঘরাজ্যের অনেক গল্প জানো, তার থেকে যদি আমাদের একটা শোনাও তাহলে আমরা তোমাকে দুটো গল্প শোনাব। কী, রাজি তো?”
মেঘ সর্দার ভাবল, নাহ্, মেয়ে দুটো খুবই ভালো। কেমন সুন্দর মিষ্টি করে মেঘকাকু বলে ডাকছে। একটু গল্প করলে কী আর ক্ষতি হবে?
তারপর যা কাণ্ড হল! রাজকুমারী পুঁটুলি থেকে দুটো গল্প বের করে মেঘকাকুকে শোনাল আর চাঁদের বুড়ির কাছ থেকে আনা জোছনার তৈরি নরম কাপড় দিয়ে বাতাস করতে লাগল। ব্যস, কাকু ঘুমে কাদা। এই ফাঁকে টপাটপ মেঘের সিঁড়ি বেয়ে উঠে সোজা চলে গেল মেঘের রাজ্যে। মেঘেরা সব আকাশপাড়ায় ঘুরতে বেরিয়েছে। রামধনুর ঘরে রিহানকুমার আর রঞ্জন বৃষ্টি ফোঁটার প্রিজমে সাদা আলো থেকে সাত রঙ বের করে ক্যানভাসে রামধনু আঁকছে।
তারপর?
তারপর আর কী! মেঘ সর্দারের ঘুম ভাঙার আগেই সবাইকে নিয়ে ক্যাসপারের পিঠে চড়ে হুঁশ করে নেমে পড়ল রাজবাড়ির মাঠে। রাজকুমার আর রঞ্জন দুজনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। আবার কি ওদের অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রাখবে? কিন্তু মা-বাবাকে দেখে বুঝতে পারল নিজেদের রাজ্যে ফিরে এসেছে। মাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল, “এরা কারা মা?”
রাজামশাই কন্যা সিলভিয়াকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে আদর করে বললেন, “এ তোমার বোন সিলভিয়া, রূপকপুরের গর্ব।”
রানি বললেন, “সিলভিয়া আর মনুশ্রী শুধু রূপকপুর রাজ্য নয়, রূপকথার দেশের গর্ব।”
রাজা ঘোষণা করলেন—“এবার থেকে রূপকথার দেশের মেয়েরা সবাই অসিচালনা, মসীচালনা শিখবে।”
এই খবর শুনে অম্বুকুমার বেজায় খুশি হয়ে গান গাইতে লাগল—
‘রূপকপুরের রাজা প্রজা
শোনো দিয়ে মন,
এক যে ছিল রিহানকুমার
সিলভিয়া তার বোন।
তার সমান রূপে গুণে
কেউ ছিল না আর,
সবকিছুতে সেরা ছিল
মানত না যে হার।
বুদ্ধি করে বিপদ রুখে
দাদাকে নিয়ে সাথে,
রূপকপুরে ফিরলে মেয়ে
খুশিতে দেশ মাতে।
রাজকুমারী সিলভিয়াকে
দেখতে যদি চাও,
দুলদুলেতে ভাসাও ওগো
রূপকথার ওই নাও।’
ছবি: সুকান্ত মণ্ডল
প্রলয় সেন ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ রম্যাণী গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ তাপস মৌলিক ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ প্রদীপ কুমার দাস ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ দীপক দাস ▪ অমিয় আদক ▪ কল্যাণ সেনগুপ্ত
বদ্রীনাথ পাল ▪ দীনেশ সরকার ▪ রূপসা ব্যানার্জী ▪ শঙ্খশুভ্র পাত্র ▪ সৌরভ চাকী ▪ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪ শিবানী কুণ্ডু খাঁ ▪ সুব্রত দাস ▪ বসন্ত পরামানিক ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ তাপস বাগ ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ টুম্পা মিত্র সরকার
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ যূথিকা আচার্য ▪ মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ কেয়া চ্যাটার্জী ▪ ইন্দ্রজিৎ ঘোষ ▪ সুদীপ ঘোষাল ▪ অনিন্দ্য পাল ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অরিন্দম ঘোষ ▪ সৌম্যপ্রতীক মুখোপাধ্যায় ▪ রাজীবকুমার সাহা
সনৎ কুমার ব্যানার্জ্জী ▪ মলয় সরকার
অলংকরণ
প্রদীপ গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ অঙ্কিতা মণ্ডল ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ সুকান্ত মণ্ডল ▪ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪ প্রবাহনীল দাস ▪ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী ▪ রাজন্যা ব্যানার্জী ▪ সমৃদ্ধি ব্যানার্জী ▪ ঐশিক মণ্ডল ▪ বিজয় বোস ▪ দীপক কুণ্ডু