ছোটো গল্প
15% OFF * FREE SHIPPING
ছোটো গল্প
পুটুস-পাটুস কাচের শো-কেসের তলায় অপেক্ষা করছে কখন ছাইরঙ বেড়াল জানালার বাইরে যাবে। আর ওদিকে মেটেরঙা মিটমিটে বেড়াল জানালার ঠিক বাইরে ওত পেতে বসে আছে যে কখন ইঁদুরছানা দুটো বাইরে আসবে আর কপ কপ করে মুখে পুরবে তাদের।
সুস্মিতা কুণ্ডু
এক পাড়ায় থাকত দুই ইঁদুরছানা। পুটুস আর পাটুস। সারাদিন তারা খেলে বেড়ায়, নেচে বেড়ায়, গেয়ে বেড়ায়। হুটোপুটি করে, ছুটোছুটি করে, ধুলোয় লুটোপুটি করে। তাদের পাড়ায় অমনটাই নিয়ম কিনা—যার যেমন ইচ্ছে তেমনটি থাকো, কেউ বকবে নাকো। ভয়, কষ্ট, মনখারাপ এসব খায় না মাথায় মাখে সেটা জানেই না পুটুস-পাটুস। পুটুস-পাটুসদের দেশের ও-পাশে সবজে ঝোপের ও-ধারে ছিল বিল্লিদের পাড়া। বিল্লিদের পাড়া আবার ইঁদুরদের পাড়ার থেকে এক্কেবারেই আলাদা। কেমন যেন মেঘলা মেঘলা আকাশ সেখানে। রোদ ঝলমল নেই, নদী কলকল নেই। বিল্লিগুলো খালি ফ্যাঁঅ্যাঁসসস ফ্যাঁঅ্যাঁসসস করে আওয়াজ করে আর থাবা চাটে। খুব বেশি ছুটোছুটি তাদের নাপসন্দ। হেলে শুয়ে পড়ে থাকে আর ল্যাজ ঝাপটে মাছি তাড়ায়। ভারি আবর্জনা তাদের পাড়ার চারদিকে। মাছের কাঁটা, দুধের পচা সর, ছেঁড়া কাপড়ের টুকরোতে রাস্তাঘাট ভরা। হাঁটার অবধি জো নেইকো। নাকটি টিপে যেতে হবে তোমাকে বিল্লিদের পাড়ায়। সবুজ ঝোপের ওই ধারে ওই জন্য কক্ষনও কোনও ইঁদুরছানা যায় নাকো।
ইঁদুরদের পাড়ার ঠিক মাঝখানে, বড়ো করে লাল কালিতে গোটা গোটা করে লিখে সাইনবোর্ড টাঙানো আছে।—
‘সবুজ ঝোপের ওই পারেতে
ঘেঁষতে যাওয়া মানা,
এই কথাটি শুনবে না যে
দুষ্টু ইঁদুরছানা,
বিল্লি এসে ধরবে তাকে
পুরবে চটের বস্তাতে,
নিয়মটা না মানলে পরে
হবেই যে ভাই পস্তাতে।’
সেই সাইনবোর্ডের লেখা পড়ার পরে কি আর কোনও ইঁদুরছানা যায় সেদিকপানে! অবিশ্যি একদম যায় না এ-কথা বললে ভুল হবে। ইঁদুরছানাদের মধ্যে যারা খুব একটা শান্ত নয়, মানে ধরো এই পুটুস-পাটুসের মতো খানিক বেশি বেশি দুরন্ত, তারা মাঝেমধ্যে গণ্ডগোল করে ফেলে বইকি।
কী বললে? সাইনবোর্ডের লেখা? হায় কপাল! সাইনবোর্ডের লেখা তারা পড়তে পারলে তো! ওই যে বললুম, একটু বেশি বেশি দুষ্টু। ওই জন্যই তো কব্বে ওরা ‘অ আ ক খ, এ বি সি ডি’ লেখা রঙিন বইগুলো সব দাঁতে কুঁচিয়ে পেটে পুরে ফেলেছে। লেখাপড়া কি আর শিখেছে নাকি যে সাইনবোর্ডের লেখা পড়তে পারবে! অবিশ্যি তাদের মা-বাবারা তাদের ঢের ঢের বার সাইনবোর্ডের ওই ছড়াখানা বলে বলে মুখস্থই করিয়ে দিয়েছে প্রায়। কিন্তু সে-কথা মানলে তো তারা!
পুটুস-পাটুস আবার বেজায় কৌতূহলী দুই ছানা কিনা।
তা একদিন পুটুস-পাটুস দুজনায় আলোচনায় বসল। পুটুস বললে, “সবুজ ঝোপের ওই পারে গেলে কী হয়?”
পাটুস বললে, “বিল্লির মাথা হয়, ইল্লির মুণ্ডু হয়।
পুটুস ফের বললে, “খামোখা আমাদের ছানা ভেবে ভয় দেখানোর ছল সব।”
পাটুস বললে—
“ছল সব, ছল সব,
ভয় ভয় কল সব,
ছানাপোনা ভয় পায়,
সব মানা কেন হয়?”
পুটুস ঘুসি পাকিয়ে বলে, “ওসব বিল্লি-টিল্লি কিস্যু নেই। আমি জানি। তবে নির্ঘাত ভালো ভালো খাবার আছে।”
পাটুস জিভের জল সুড়ুত করে টেনে নিয়ে বলে, “মণ্ডা আছে, মিঠাই আছে।”
“চল তবে একদিন চুপিচুপি, দুপুরবেলায় সব্বাই যখন ঘুমোবে, আমরা যাব সবুজ ঝোপের ওই পারে। মিশন বিল্লিপাড়া।” হাতের ঘুসি আকাশের গায়ে ছুড়ে বলে পুটুস।
পুটুসের তালে তাল দিয়ে পাটুসও হাত ছোড়ে, কিন্তু মাঝপথেই থমকে যায়।—“চলো মিশন বিল্লিপা… অ্যাই পুটুস, এটা একটু বেশি অ্যাডভেঞ্চুরা হয়ে যাচ্ছে না? ওই যে সানাইবোর্ডে মানা আছে!”
পুটুস রেগে বলে, “নিকুচি করেছে তোর সানাইবোর্ডের। ও আমরা পড়তেই পারি নাকো, তাই কী লেখা আছে জানি নাকো। তুই যদি ভিতুর ডিম হয়ে বসে থাকিস তো থাক তবে। আমি একাই যাব আজ দুপুরে যখন সবাই ঘুমে কাদা।”
এমন কথা শোনার পর কি আর পাটুস ভিতুর ডিম সেজে বসে থাকতে পারে? কভভি নেহি! বিলকুল নেহি!
অতএব পুটুস-পাটুস দুই ইঁদুরছানা চলল বিল্লিপাড়া। ঠিক দুক্কুরবেলা যখন বিল্লি মারে ঢ্যালা।
এদিকে পুটুস-পাটুস না জানলেও আমরা কিন্তু জানি যে বিল্লিপাড়া থেকে রোজই একটা দুষ্টু বিল্লি—নাম তার মিটমিটে, এসে গাছের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে ইঁদুরদের পাড়ায় নজর রাখত। যেমন তার নাম মিটমিটে তেমনই সে মিটমিটে শয়তান। মিটমিটে শয়তান বলেই তার নাম মিটমিটে, নাকি তার নামটাই মিটমিটে বলে সে অমন শয়তানি করতে শিখেছে—সে আমি জানিনে। তার গায়ের রঙখানি মেটে বলে, নাকি ‘হিঁ! হিঁ! হিঁ!’ করে মিটমিটিয়ে হাসে বলে তার অমন নাম, সেও আমি জানিনে বাপু। মোদ্দা কথা, সেদিনও মিটমিটে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুটুস-পাটুসের সব অ্যাডভেঞ্চুরার মতলব শুনছিল। হাত কচলে, একটা ভুরু নাচিয়ে, কান অবধি ফিচেল হাসি হেসে মিটমিটে বিড়বিড় করে বলতে লাগল, ‘হিঁ! হিঁ! হিঁ! আয় দেখি বিল্লিপাড়ায়। হিঁ! হিঁ! হিঁ! মণ্ডা-মেঠাই খাবি, নাকি আমি তোদের হিঁ! হিঁ! হিঁ! রসগোল্লা পান্তুয়ার মতো টপটপ করে গিলে নেব সেটা টের পাবি। হিঁ! হিঁ! হিঁ!”
ওদিকে পুটুস-পাটুস তো সে সব জানে না, ওরা তৈরি হয়ে চলল বিল্লিপাড়ায়। পা টিপে টিপে, ফিসফিসিয়ে, চুপি চুপি এই গাছের আড়ালে, ওই ল্যাম্প-পোস্টের আড়ালে, ওই ডাস্টবিনের পেছনে, ওই বাড়ির কোণে লুকিয়ে লুকিয়ে এগোয়। বিল্লিপাড়ায় কত দোকান। সত্যি সত্যি কত খাবার। দেখেছ! ইঁদুরপাড়ার বড়োরা কেমন খামোকাই ভয় দেখিয়ে সানাইবোর্ড টাঙিয়ে রেখেছে! চারদিকে কেক, পেস্ট্রি, মাছ, মাংস, দুধ, দই, ছানা, মিষ্টি থরে থরে সাজানো
কিন্তু মুশকিল একটাই। সব দোকানের মালিকদের পাশেই একটা বা দুটো করে গাবদাগোবদা বিল্লি বসে বসে থাবা চাটছে, নয়তো ঝিমোচ্ছে, নয়তো ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে দাঁত খিঁচিয়ে থাবা নাড়িয়ে বোলতা, মশা, মাছি তাড়াচ্ছে। আর কী নোংরা, কী নোংরা রে বাবা, রক্ষে করো! দোকানগুলোর ভেতরে, রাস্তার ওপরে চারদিকে শুধু খাবারের টুকরো, আবর্জনা। দেখলেই গা ঘিনঘিন। ইঁদুরপাড়া আবার ভারি টিপটপ। সেখানে সব দোকানে বাজারে সবাই খাবার ঢেকেঢুকে রাখে। রাস্তায় কেউ খাবারের টুকরো ফেলে না। ইঁদুরদের সাধ্য কী দোকান থেকে খাবার নিয়ে আসে! বড়ো একটা ঘরের মতো জায়গায় সব খাবারদাবার ফেলে যায় মানুষেরা, সেখান থেকেই ইঁদুররা খাবার সংগ্রহ করে আনে। দোকানে ঢোকা? উঁহু! একদম বারণ।
যাই হোক, তারই মধ্যে একটা সাফসুফ দোকানে বেশ কাচের শো-কেসের মধ্যে সাজানো জিভে জল আনা রঙবেরঙয়ের কেকের টুকরো দেখে পাটুসের পেটের ভেতর থেকে কেমন যেন গুড়গুড়, কুড়কুড়, মুড়মুড় ডাক আসতে শুরু করল।
পুটুস তাই না শুনে মুখে আঙুল দিয়ে বলে, “চুপ কর হাঁদাগঙ্গারাম, চুপ কর! বিল্লিরা শুনতে পেলে আমাদের পেটে কেক যাওয়ার বদলে আমাদের ওদের পেটে যেতে হবে।”
পাটুস তো কাঁদো কাঁদো গলায় উত্তর দেয়, “আমি কই কথা বলছি? আমার বজ্জাত পেটটাই তো বকমবকম করছে!”
পুটুস দাঁত কিড়মিড় করে বলে, “কী আপদ! বজ্জাত পেটকে এখন সামলে-সুমলে রাখ দেখি বাপু! বিল্লির দল শুনতে পেলে এসে আমাদেরই পেটে পুরে দেবে। যত জ্বালা। ওই জন্যই বলেছিলুম আসিসনি। তা সে-কথা শুনলে তো!”
পাটুস বেচারা আর কী করে? ওই রঙিন কেকগুলো খাওয়ার কথা তো পুটুসকে বলতেই পারল না, উলটে এখন পেটের বকমবকম কী করে থামাবে সেই চিন্তায় পেটে হাত। হ্যাঁ, দু-হাত দিয়েই পেট চেপে ধরে রইল পাটুস আর উপায় না পেয়ে। পুটুসের কাছে নইলে একেবারে নামটা ডুবে যাবে। এমনিতেই পুটুস-পাটুস যমজ দুই ইঁদুরছানা হলেও পুটুস কয়েক সেকেন্ড আগে জন্মেছে বলে সে সবসময় একটু বেশি সাহসী, বেশি ডাকাবুকো। আর পাটুস বেচারা ছোটো বলে একটু ভিতু ভিতু, কিন্তু তা বলে সেটা কখনোই পুটুসের সামনে প্রকাশ করে না। মনে মনে হাজার ভয় পেলেও মুখে ভারি সাহস দেখায়। নইলে কি আর রক্ষে আছে পুটুসের হাত থেকে? সবসময় দুয়ো দেবে, ঠাট্টা করবে। পাটুসের মানসম্মানের যাকে বলে একদম দফারফা করে দেবে।
অবশ্য পুটুস যে সবসময়ই এরকম দাদাগিরি করে সেটা বললে অন্যায় হবে। এই যেমন এখন যতই রাগ করুক তবুও পাটুসের মনের ইচ্ছেটা ঠিক বুঝতে পেরে ওর জন্য ওই রঙিন কেকগুলো আনার চেষ্টা করতে লাগল। দোকানে যখনই কেউ কেক কিনতে আসছে, দরজাটা ঠেললেই মাথার ওপরের একটা ছোট্ট ঘণ্টি ট্রিংট্রিং করে বেজে উঠছে। পুটুস ওই দরজার পাশ দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ভেতরে ঢুকবে বলে তক্কে তক্কে রইল। যেই না এবার ট্রিংট্রিং করে ঘণ্টি বেজেছে পুটুস অমনি পাটুসের লেজটা ধরে ছুটল ভেতর দিকে। ঢুকেই ঝাঁপ দিল কাচের শো-কেসটা তাক করে। ওটার পাশেই একটা ছাইরঙা বেড়াল একটা চেয়ারে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। তার নজর এড়িয়ে পুটুস-পাটুস সাঁইইই করে পিছলে ঢুকে গেল শো-কেসের তলায়। এবার শুধু বেড়ালটা একবার বাইরে বেরোলেই টুক করে ওই কাচের ভেতর ঢুকে একটা কেক তুলেই চম্পট দেবে। কিন্তু ব্যাটা বেড়াল আর নড়েই না। কী মুশকিল! কতক্ষণ অপেক্ষা করে বসে থাকবে এবার?
এদিকে তো পুটুস-পাটুস কাচের শো-কেসের তলায় অপেক্ষা করছে কখন ছাইরঙ বেড়াল জানালার বাইরে যাবে। আর ওদিকে মেটেরঙা মিটমিটে বেড়াল জানালার ঠিক বাইরে ওত পেতে বসে আছে যে কখন ইঁদুরছানা দুটো বাইরে আসবে আর কপ কপ করে মুখে পুরবে তাদের। সেই দুপুর থেকে পিছু নিয়েছে দুই বুদ্ধু ইঁদুরছানার। ওরা গাছের আড়ালে লুকোলে মিটমিটে ডাস্টবিনের আড়ালে লুকোয়, ওরা ডাস্টবিনের পেছনে লুকোলে মিটমিটে গাছের পেছনে লুকোয়। এই করতে করতে ঝপ করে যেই দুজনে ওই কেকের দোকানটায় সেঁধিয়ে গেল, তখনই মিটমিটের নাগালের বাইরে চলে গেল। ওই দোকানটা আবার ছাইরঙা বিল্লির মালিকের। তার সঙ্গে মিটমিটের খুব একটা বনিবনা নেইকো। ভেতরে গেলেই মারপিট লাগবে, নয়তো শিকারের ভাগ দিতে হবে। অবিশ্যি বিল্লিপাড়ায় কারোর সঙ্গেই কারোর ভাব নেই এক টুসকিও। তবে মিটমিটেও ছাড়ার পাত্তর নয়কো মোটেই। তাই এই জানালার বাইরেই থানা দিয়ে বসে রইল। বিল্লিদের পাড়ায় ইঁদুরছানারা নাকি ভালোমন্দ খেতে এসেছে! হিঁ হিঁ হিঁ! হিঁ হিঁ হিঁ!।
দুপুর গড়াতে গড়াতে বিকেল হতে যায় প্রায়। এবার বাড়ি না ফিরলে বাবা-মা তো খোঁজ করবে। ওরা কি জানতেও পারবে যে পুটুস-পাটুস বিল্লিপাড়ায় কাচের শো-কেসের তলায় লুকিয়ে আছে! এবার একটু একটু ভয় পায় আর আপশোশ হতে থাকে ওদের। ঠিক তখনই ছাইরঙা বেড়ালটা আড়মোড়া ভেঙে মস্ত একটা হাই তুলে চেয়ার থেকে নেমে হেলেদুলে শো-কেসের পেছন দিকের একটা দরজা ঠেলে ভেতরের ঘরে চলে গেল। দোকান মালিক মানুষটাও উলটোদিকে ফিরে পয়সার হিসেব করছে।
এই সুযোগ পুটুস-পাটুসের! আর এক মুহূর্তও দেরি না করে দুজনে ঢুকে পড়ল শো-কেসের ভেতর। তারপর দুজনে দুটো কেকের টুকরো নিয়ে সোজা লাফ দিল শো-কেসের মাথায় সেখান থেকে জানালার ধারের চেয়ারে, তারপর উইন্ডো সিলে। সেখান থেকে একদম বাইরের রাস্তায়। এবার শুধু ছুট, ছুট। তাহলেই নিশ্চিন্তে বাড়ি, আর জমিয়ে পেটপুরে কেক।
কিন্তু কপাল অত ভালো হলে তো কথা ছিল না। রাস্তায় পড়বি তো পড় সোওওওজা গিয়ে পড়ল দুজনায় মিটমিটে বিল্লির ঘাড়ের ওপর। সে তো শুরুতে চমকে চেঁচিয়ে উঠল—‘ম্যাঁয়াওওওওও!'
তার চিৎকার শুনে তো পুটুস-পাটুসের পিলে চমকে গেল। থরথর করে বাঁশপাতার মতো ভয়ে কাঁপতে লাগল দুটিতে। শেষ, সব শেষ! এত কষ্ট করে জোগাড় করা সাধের কেকের টুকরো ছিটকে পড়ল রাস্তায়।
মিটমিটে দাঁত কিড়মিড়িয়ে থাবা বাগিয়ে বলে উঠল, “তবে রে! দাঁড়া! আমার ঘাড়ে পড়া? তোদের এক্ষুনি পেটে পুরে সন্ধের জলখাবার করব। হিঁ হিঁ হিঁ!”
এই বলে যেই না ওদের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করল, অমনি কোথা থেকে একটা বড়োসড়ো গোলাপি রঙের প্রজাপতি এসে মিটমিটের নাকের ডগায় ফড়ফড়িয়ে উড়তে শুরু করল। এদিক ওড়ে, সেদিক ওড়ে, নাকের সামনে ওড়ে, চোখের সামনে ওড়ে, কানের পাশে ওড়ে, গোঁফের পাশে ওড়ে। বিরক্তির একশেষ। আকাশে থাবা ছুড়ে মিটমিটে প্রজাপতিটাকে তাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু প্রজাপতি ভারি চালাক। না নাগালে আসে, না দূরে যায়। ভোঁ করে এসে মিটমিটের ভেজা নাকে ধাঁই করে ধাক্কা দিয়ে আকাশের দিকে উড়ে পালায়। মিটমিটে উঁচু উঁচু লাফ দেয় আকাশের গায়ে প্রজাপতিটাকে ধরার জন্যও। প্রজাপতিটাও উড়তে উড়তে একটু একটু করে সরতে সরতে একটা খোলা ডাস্টবিনের দিকে এগিয়ে যায়। এদিকে মিটমিটে তো দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে প্রজাপতি তাড়া করে। এই করতে করতে একটা ইয়াব্বড় লাফ মেরে মিটমিটে সোজা গিয়ে পড়ে ডাস্টবিনের ভেতর। এতক্ষণে পুটুসের সংবিৎ ফিরে আসে। দৌড়ে গিয়ে হেঁইও করে ডাস্টবিনের ঢাকনাটা ধাক্কা মেরে বন্ধ করে দেয়। ভেতর থেকে আওয়াজ আসে—‘হিঁক হিঁক হিঁক! মিঁয়াও মিঁয়াও মিঁয়াও!’ থাক বদমাইশ বিড়াল ডাস্টবিনের ময়লায় বন্দি হয়ে। যেমন কর্ম তেমন ফল।
গোলাপি প্রজাপতিটা উড়ে পুটুস-পাটুসের সামনে এসে রিনরিনে গলায় বলে, “তোমরা দুজন পুটুস-পাটুস দুই দুষ্টু ইঁদুরছানা নিশ্চয়ই? আমি হলুম ফড়ফড়ি প্রজাপতি।”
পুটুস একটু লজ্জা পেয়ে বলে, “মানে আমরাই পুটুস-পাটুস, কিন্তু মোটেই দুষ্টু নই।”
পাটুস ফিসফিস করে বলে, “আসলে আমরা দুষ্টু নই গো, একটু ছটপটে, একটু দুরত্ন।”
ফড়ফড়ি প্রজাপতি খিলখিল করে হেসে বলে, “দু-রত্নই বটে তোমরা। এদিকে বিল্লিপাড়ায় তোমরা কেক খাচ্ছ আর ওদিকে তোমাদের পাড়ায় সবাই তোমাদের চিন্তায় পাগল। চলো শিগগির তোমাদের পাড়ায় ফেরার একটা ভালো পথ দেখিয়ে দিই। নইলে আবার কোন বেড়ালের খপ্পরে পড়বে আর সে টপ করে পেটে পুরে দেবে। ভাগ্যিস তোমাদের পাড়ার ফুলবাগানে একটু মধু খেতে গেসলুম, তাই তো জানতে পারলুম সব্বাই তোমাদের খুঁজছে। আমরা প্রজাপতিরা তো ইঁদুরপাড়া, বিল্লিপাড়া, ভৌভৌপাড়া, টিয়াপাড়া, বুলবুলিপাড়া সব জায়গাতেই যেতে পারি বিনা বাধায়। সবার সঙ্গে আমাদের দোস্তি। সেখানে তো কোনও বিপদের ভয় নেই। শুধু এই বিল্লিপাড়াতেই আমাদের কোনও বন্ধু নেইকো। ওরা আমাদের দেখলেই শুধু তাড়া করে কিনা। তখনই সন্দেহ হল নির্ঘাত বিল্লিপাড়াতেই আটকা পড়েছ তোমরা। উড়ে এলাম এখানে আর দেরি না করে, তাই তো তোমাদের বাঁচাতে পারলাম। এবার চলো দেখি, পালাই শিগগির।”
গোলাপি প্রজাপতি ফড়ফড়ি পুটুস-পাটুসকে দুষ্টু বলায় ওদের একটু একটু রাগ লাগল। অবিশ্যি যার নাম ফড়ফড়ি সে তো একটু নেই-মাথা নেই-মুণ্ডু কথা কইবেই। তার ওপর দোষটা তো আসলে পুটুস-পাটুসেরই, তাই বেশি কিছু বলতে পারল না।
কী বিপদেই না পড়েছিল!
ভাগ্যিস ফড়ফড়ি প্রজাপতি ওদের জন্য উড়ে এল! এরপর কি আর তার ওপর রাগ করা যায়? করুণ মুখে একবার রাস্তায় পড়ে থাকা কেকের টুকরোগুলোর দিকে তাকাল দুজন। কেক তো কপালে জুটল না, উলটে এখন বাড়ি ফিরে কত না বকুনি কপালে নাচছে সেটা ভেবেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল দুজনের।
ওদের মুখের অবস্থা দেখে ফড়ফড়ি প্রজাপতির মায়া হল। সে হেসে বললে, “চিন্তা নেই। খুব শিগগিরই তোমাদের জন্য কেক পাঠানোর ব্যবস্থা করব।”
পুটুস-পাটুস অবাক হয়ে বলে, “তুমি এতটুকুনি প্রজাপতি, তুমি কী করে কেক নিয়ে আসবে?”
প্রজাপতি হেসে লুটোপুটি খেয়ে বলে, “এইটুকুন প্রজাপতি কেমন মিটমিটে বেড়ালের সঙ্গে লড়ল সেটা ভুলে গেলে? আমার নাম ফড়ফড়ি প্রজাপতি, আর আমি কি একা নাকি? প্রজাপতি পাড়ায়, ভৌভৌপাড়ায়, বুলবুলি পাড়ায় আমার কত বন্ধু আছে জানো? আর বন্ধু থাকলে কোনও কাজই অসাধ্য নয়কো! বুঝলে?”
এই না শুনে পুটুস-পাটুস জব্বর খুশি হয়ে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে ফড়ফড়ি প্রজাপতির পিছু নিল।
‘বিল্লিপাড়ায় পুটুস-পাটুস
পড়ল বেজায় ঝঞ্ঝাটে,
করল তাড়া খুব কষে
দুষ্টু বেড়াল মিটমিটে।
কেকের লোভে আজ বেঘোরে
প্রাণ হারাত সব শেষে,
দুই ছানাকে জোর বাঁচাল
প্রজাপতি ফড়ফড়ি যে!’
ছবি: ঐশিক মণ্ডল
প্রলয় সেন ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ রম্যাণী গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ তাপস মৌলিক ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ প্রদীপ কুমার দাস ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ দীপক দাস ▪ অমিয় আদক ▪ কল্যাণ সেনগুপ্ত
বদ্রীনাথ পাল ▪ দীনেশ সরকার ▪ রূপসা ব্যানার্জী ▪ শঙ্খশুভ্র পাত্র ▪ সৌরভ চাকী ▪ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪ শিবানী কুণ্ডু খাঁ ▪ সুব্রত দাস ▪ বসন্ত পরামানিক ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ তাপস বাগ ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ টুম্পা মিত্র সরকার
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ যূথিকা আচার্য ▪ মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ কেয়া চ্যাটার্জী ▪ ইন্দ্রজিৎ ঘোষ ▪ সুদীপ ঘোষাল ▪ অনিন্দ্য পাল ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অরিন্দম ঘোষ ▪ সৌম্যপ্রতীক মুখোপাধ্যায় ▪ রাজীবকুমার সাহা
সনৎ কুমার ব্যানার্জ্জী ▪ মলয় সরকার
অলংকরণ
প্রদীপ গোস্বামী ▪ মৌসুমী রায় ▪ অঙ্কিতা মণ্ডল ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ রাখি পুরকায়স্থ ▪ সুকান্ত মণ্ডল ▪ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪ প্রবাহনীল দাস ▪ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী ▪ রাজন্যা ব্যানার্জী ▪ সমৃদ্ধি ব্যানার্জী ▪ ঐশিক মণ্ডল ▪ বিজয় বোস ▪ দীপক কুণ্ডু