ছোটো গল্প
FREE SHIPPING IN INDIA
ছোটো গল্প
সেই ফাঁকেই বিদ্যাধর পালায়। পৌঁছায় পাশের পাড়ার মন্দির চত্বরে। সেখানে মন্দিরের সামনের আটচালা। সেখানে রোজ সংকীর্তনের আসর। একটু দূরে বসেই গায়কের গানে গলা মেলায়। তারা কেউ জানতেও পারে না। তখন বিদ্যাধরের বয়স মাত্র আট। বিদ্যাধরের গানের প্রতি বেজায় টান। অন্যের গান শুনে অবিকল গায়। বাবা-মা রাগ করেন। দিনে সংকীর্তনের আসরে হাজির, সন্ধ্যায় হাজির পাশের পাড়ার মন্দিরে। মা রাগারাগি করেন। প্রায় দিন ঘরে আটক রাখেন। তবুও ছেলের লেখাপড়ায় মন বসাতে পারেন না।
অমিয় আদক
গল্পটা অনেক পুরোনো। এক প্রতিভাবান ছেলের গল্প। রাজ্যের নাম আনন্দনগরী। সেই রাজ্যের ছোটো এক গ্রাম। বনভূমি লাগোয়া ছবির মতোই গ্রামটি। গ্রামের নাম উজানগাঁও। গাঁয়ের পশ্চিমে নদী। নাম তার উজানি। সেই গাঁয়ের এক দরিদ্র কায়স্থ পরিবার। পরিবারের পদবি দত্ত। পরিবারের সদস্য সংখ্যা আট। চার ভাই, দুই বোন আর মা-বাবা। সেই পরিবারের ছোটো ছেলে বিদ্যাধর। তার পরেই দুই বোন। দত্ত পরিবারে বাবার আয়ে সংসার চলে। জমিজমা নেই। বাবার সামান্য বেতনের চাকরি। সংসারে অভাবের সীমা নেই। সবদিন সকলের পেটপুরে খাবারও জোটে না। ছেলেরা পাঠশালায় যায়। মেয়ে দুটোর পাঠশালায় যাওয়ার বয়স হয়নি। বাবা গুরুমশাইয়ের বেতন দিতে পারেন না। তবুও গুরুমশাই লেখাপড়া শেখান। বিদ্যাধরের দাদারা লেখাপড়ায় মনযোগী।
সে কিন্তু লেখাপড়ায় মনযোগ দিতে পারে না। সে পাঠশালা থেকে ফেরে। ঘরে তার মন টেকে না। চলে যায় বাড়ির কাছের জঙ্গলে। সেখানে সে কিছু একটা ঘোর অনুভব করে। আপন খেয়ালে ঘুরে বেড়ায়। পাখিদের ডাক শোনে। কোকিল, বুলবুলি ইত্যাদি পাখিদের ডাক তার ভালো লাগে। সে গান শুনতে ভালোবাসে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিখারিদের গান শোনে। বাউলদের একতারার সুর তাকে বেজায় টানে। সে নিজেই একতারা বানানোর চেষ্টা করে। পারে না। সে পাড়ার বন্ধু নবীনের কাছে যায়। তার আড়বাঁশিটা চায়। বাজানোর চেষ্টা করে। নবীন তাকে বাঁশি বাজানো শেখায়। কয়েকদিনেই সে বাঁশিতে মিষ্টি সুর বাজাতে পারে। নবীন অবাক। সেই খুশিতেই তার একটা বাঁশি বিদ্যাধরকে বাজাতে দেয়। তখন বাঁশি বাজানোই বিদ্যাধরে ধ্যানজ্ঞান।
বিদ্যাধর পাঠশালা থেকে ফিরে বাঁশি হাতে বেরিয়ে পড়ে জঙ্গলে। বুড়ো বটগাছের ঝুরির আড়ালে বসে। আপনমনে বাঁশিতে সুর তোলে। সুরেই মগ্ন। খিদের কথা তার খেয়ালেই আসে না। তার মা দাদাদের খুঁজতে পাঠান। দাদারা তাকে জোর করে বাড়ি নিয়ে যায়। তারাই ইঁদারার জল তোলে। ছোটো ভাই বিদ্যাধরকে সেই জলেই চান করায়। তখন প্রায় বিকেল। সূর্যের আলোয় কমলা কোয়া আভা। তখন খেতে বসে বিদ্যাধর। খেতে-খেতেও মায়ের বকাঝকা কানে আসে। তার খাওয়ার পরে সূর্য ডোবে। চুপচাপ বসে থাকে বারান্দায় পা ঝুলিয়ে। গোধূলি পেরিয়ে সন্ধে নামে। খানিক পরেই মা যান তুলসি তলায় সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালাতে।
সেই ফাঁকেই বিদ্যাধর পালায়। পৌঁছায় পাশের পাড়ার মন্দির চত্বরে। সেখানে মন্দিরের সামনের আটচালা। সেখানে রোজ সংকীর্তনের আসর। একটু দূরে বসেই গায়কের গানে গলা মেলায়। তারা কেউ জানতেও পারে না। তখন বিদ্যাধরের বয়স মাত্র আট। বিদ্যাধরের গানের প্রতি বেজায় টান। অন্যের গান শুনে অবিকল গায়। বাবা-মা রাগ করেন। দিনে সংকীর্তনের আসরে হাজির, সন্ধ্যায় হাজির পাশের পাড়ার মন্দিরে। মা রাগারাগি করেন। প্রায় দিন ঘরে আটক রাখেন। তবুও ছেলের লেখাপড়ায় মন বসাতে পারেন না।
তিনি বিদ্যাধরকে বোঝান, “বাবা বিদ্যা, লেখাপড়া তোমায় শিখতেই হবে। কায়স্থের ঘরের ছেলে তুমি। চাষ করতে পারবে না। তাছাড়া আমাদের জমিজমাও নেই। লেখাপড়া না শিখলে কেউ চাকরি দেবে না। সংসারে অভাব দেখতেই পাচ্ছ। তোমাদের সবাইকে একদিন রোজগার করতেই হবে। না-হলে সংসার চলবে কী করে?”
উত্তরে বিদ্যাধর জানায়, “মা, গুরুমশাই যা শেখান সবই আমার মনে থাকে। বাড়িতে পড়ার আর দরকার হয় না। আমার গান ভালো লাগে। বাঁশি বাজিয়ে মনে আনন্দ পাই। তাই বাঁশি বাজাই। সংকীর্তনের আসরেও যাই। জঙ্গলে যাই পাখিদের গান শুনতে। তোমরা এত রাগ করো কেন? গুরুমশাই কি আমার নামে নালিশ করেছেন?”
“তা করেননি। তোমার পড়ার অবহেলা তোমার বাবা মোটেই মানতে পারেন না। পড়াশোনায় মন দাও।”
“আমি পারব না মা কিছুতেই। আমি মন্দিরে, বনে যাবই। আমি তো পড়াশোনায় ফাঁকি দিই না। গুরুমশাই তেমন নালিশও করেন না। তবুও তোমরা আমার উপরে রাগ দেখাও। ঘরে আটক রাখো। এসব আমার ভালো লাগে না।”
গানের আসরে যেতে বাবা-মার নিষেধ। নিষেধ সে মানে না। সে নিষেধ মানতেই পারে না। গানের এবং সুরের চুম্বক-টান তাকে পাগল করে তোলে।
সেই সন্ধ্যায় পাশের পাড়ার মন্দিরের সামনে আটচালায় নতুন গাইয়ে। বেশ সুরেলা গলা। তার গানের সুরে মোহিত বিদ্যাধর। সময় পেরিয়ে রাত ন’টা। তবুও সে ফিরতে পারছে না। তার দুই দাদা হাজির। তাকে চ্যাংদোলা করে চাগিয়ে নিয়ে যায় বাড়িতে। বিদ্যাধরের আপত্তি তারা শোনে না। বাড়িতে ফিরতেই মায়ের রাগারাগি। বাবার বকাবকি। সে সহজভাবেই জানায়, “তোমরা এত রাগারাগি বকাবকি করছ কেন? আমি কী অন্যায় করেছি?”
বাবা হুংকার দেন, “লেখাপড়া না করে কেত্তন শুনে জীবন কাটে রে হতচ্ছাড়া! পাঠাশালায় শুধু পড়লে হবে না। বাড়িতেও সেই পড়া তৈরি করতে হয়। বুঝলি কিছু?”
খুব সহজেই উত্তর দেয় বিদ্যাধর, “পাঠশালায় গুরুমশাই যা পড়ান, তাতেই আমার পড়া তৈরি। আমার আর পড়ার দরকার নেই।”
সেই উত্তর তার বাবার পছন্দ নয়। বেজায় রেগে যান। হাতের সামনে পেয়ে যান একটা কঞ্চির বাড়ি। তাই দিয়েই আট বছর বয়সি বিদ্যাধরকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকেন। বিদ্যাধরের মা কঞ্চির বাড়িটা কেড়ে নেন। ছেলেকে নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢোকেন। বাইরে তার বাবার কথা থামে না। তিনি বলেন, “তোমার আশকারাতেই ছোটো ছেলে উৎসন্নে যাবে। তা তুমি দেখে নিও। ওর কপালে ভিক্ষেও জুটবে না।”
তার মা তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। পড়শোনা করার জন্য বুঝিয়ে বলতে থাকেন। তবুও বিদ্যাধরের মনে বেজায় কষ্ট। বিস্তর অভিমান তার। সে মনে মনে ঠিক করে, ঘরে আর থাকবে না। সে ভোরেই বেরিয়ে পড়ে। কোথায় যাবে, তারও ঠিক নেই। গ্রাম ছেড়ে পুবের পানে হাঁটতে থাকে। হাজির প্রায় আট ক্রোশ দূরে। এত দূরত্ব আসায় খিদেয় কাতর। খাবার কোথায় পাবে, তাও জানে না। ধুতির খুঁটে সামান্য ক’টা পয়সা। অসহ্য খিদে লাগে। অজানা গাঁয়ের পুকুরঘাটে নামে। আঁজলা ভরে জল পান করে। এক বয়স্কা মহিলা ঘাটে তখন। মহিলাটি অনুমান করেন, ছেলেটি খিদেয় কাতর। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, “বাবা, তোমার বাড়ি কোথায়? তুমি যাবেই-বা কোথায়?”
“আমার বাড়ি অনেক দূরে। আমি গান শেখার গুরুর খোঁজে বেরিয়েছি।”
“কোথায় তোমার গানের গুরুর বাড়ি?”
“তা তো জানি না। এখানের গাঁয়ে গানের কোনও গুরুর খোঁজ আপনি দিতে পারেন?”
“রাখো তোমার গানের গুরু। আমায় বলো তো, তুমি এইটুকু ছেলে, কে তোমায় গান শেখাবে? তাছাড়া এত বেলায় শুধু জল খাচ্ছ কেন? পিপাসা পেয়েছে?”
“নাহ্, খুব খিদে পেয়েছে। খাবার কিছু কাছে নেই। তাই জল খেলাম।”
“শোনো বাছা, তুমি আমার সঙ্গে বাড়িতে চলো। কিছু খাবে। তারপর তোমার গুরুর খোঁজে বেরোবে।”
“না মাসিমা, আমি কোথাও কিছু কিনে খেয়ে নেব।”
“পাগল ছেলে। বলছি খেয়ে যাবে! তবুও শুনবে না? শোনো বাছা, বাড়িতে আমরা দুজন। ভয় নেই। কেউ কিছু বলবে না। চলো আমার সঙ্গে।”
বেশ লজ্জা লাগে তার। তবুও মহিলার সঙ্গে তাঁদের বাড়িতে যায়। বেশ যত্নেই বিদ্যাধরকে খেতে দেন তিনি।
খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই হাজির মহিলার স্বামী। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, “প্রমীলা, ছেলেটি কি তোমার কোনও আত্মীয়ের?”
“না গো, ছেলেটি গান শিখতে চায়। তুমি তো বাড়িতে গান শেখাও। এ-গাঁয়ে সে-গাঁয়ে গান শিখিয়ে বেড়াও। এই ছোটো ছেলেটিকে তুমি গান শেখাতে পারবে না?”
“পারব না কেন? কিন্তু কাদের ছেলে, কোথায় বাড়ি, সেগুলো জানতে হবে তো। না-হলে শেখাব কী করে?”
“জানো, ছেলেটির নামঠিকানা এখনও জানা হয়নি। তুমিই না-হয় জেনে নাও।”
বিদ্যাধর মহিলার স্বামী মন্দ্র সেনের সব প্রশ্নের উত্তর দেয়। সে মিথ্যে একটাও বলে না।
মন্দ্র সেন জানান, “গানের জন্য তুমি বাড়ি ছেড়েছ। গানের প্রতি সত্যই তোমার অনুরাগ আছে। আমার বাড়িতে থেকেই তুমি গান শিখবে। আগামীকালই তোমার বাবাকে আমার কাছে আনবে। তাঁর অনুমতি পেলেই আমি গান শেখাব। তোমার গলার স্বর সত্যিই গানের উপযুক্ত। তুমি এখনি বাড়ি ফিরে যাও।”
“বাবা তো গান পছন্দ করেন না। যদি আসতে না চান? তাহলে কি গান আমার গান শেখা হবে না?”
“তোমার বাবাকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার। তাঁকে সঙ্গে আনবে। যাও, আজই বাড়ি ফিরে যাও।”
এদিকে বিদ্যাধরের বাড়ি থেকে পালানোয় তাদের বাড়িতে নেমে আসে উদ্বেগের ছায়া। চারদিকে খোঁজাখুঁজি চলে। সব আত্মীয়ের বাড়িতে খোঁজ পাঠায়। কোথাও খোঁজ মেলে না। সবাই পাগলের মতো বিদ্যাধরের খোঁজে।
তাদের উদ্বেগের অবসান ঘটে। বিকেলের ম্লান আলোয় বাড়ি ফেরে বিদ্যাধর। রাতে বাবা-মাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলে। সে গান শিখবেই। গান ছাড়া সে কোনও কিছুই শিখতে চায় না। তার বাবাকে তার সঙ্গে যেতেই হবে। তার বাবা নিমরাজি। অন্তর থেকে সায় নেই। তার মায়ের অনুরোধেই পরের সকালে বিদ্যাধরের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন। তাঁরা হাঁটতে থাকেন মন্দ্র সেনের গাঁয়ের উদ্দেশে।
মন্দ্র সেনের সঙ্গে তার বাবার কথা চলতেই থাকে। অনেক বাদানুবাদের পর শেষ পর্যন্ত অনুমতি দেন। তার সঙ্গে কিছু শর্ত রাখেন। বলেন, “বিদ্যাধর গান শিখলেও বাড়িতে ফিরতে পারবে না। তার টাকা রোজগারের ক্ষমতাই থাকবে না। অমন ছেলেকে বাড়িতে ফেরাতে চাই না। গান শিখে খাবে কী?”
মন্দ্র সেন জানান, “ঠিক আছে, বিদ্যাধর বাড়ি ফিরবে না। আপনি বাড়ি ফিরে যান। তার দায়িত্ব আমিই নিলাম।”
বিদ্যাধরের বাবা বাড়ি ফেরেন।
বিদ্যাধরের গানের তালিম চলতে থাকে গুরু মন্দ্র সেনের কাছে। তিনিই বিদ্যাধরের নাম দেন সুকণ্ঠ। দশ বছরে সুকণ্ঠ পরিণত সংগীতজ্ঞ। সুকণ্ঠের সংগীতের সুনাম আনন্দনগরীর রাজার কানে পৌঁছায়। তিনি বালিকা রাজকুমারীর সংগীত গুরু হিসাবে নিয়ে যান সুকণ্ঠকে। সুকণ্ঠের বাবার কাছে ছেলের সুসংবাদ পৌঁছায়। তিনি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে চান। ছেলে রাজবাড়ির সংগীত শিক্ষক। অনেক বেতন! ছেলের কাছে কিছু টাকা চাইবেন। তাঁদের অভাব মেটাতে।
অনেক পথ হেঁটে রাজবাড়িতে পৌঁছান তিনি। ছেলে বিদ্যাধরের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি উদগ্রীব। প্রহরীর কাছে বিদ্যাধর দত্ত নামে সংগীতজ্ঞের খোঁজ করেন। প্রহরী জানায়, “এই নামে কোনও সংগীতজ্ঞ রাজবাড়িতে নেই।”
বিদ্যাধরের বাবা ফিরে আসেন না। রাজবাড়ির বাগানে অপেক্ষা করেন। খানিক পরেই সুকণ্ঠ রাজকুমারীর গানের তালিম দিতে বসেন। ছেলের গলার স্বর চিনতে পারেন তিনি। প্রহরীকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, “যিনি গান শেখাচ্ছেন, তাঁর নাম কী?”
“তাঁর নাম সুকণ্ঠ সেন।”
“কিন্তু গলার স্বরটা অবিকল আমার ছেলের মতোই।”
“গলার স্বর এক হলেও উনি বিদ্যাধর দত্ত নন।”
প্রহরীর কথা বিশ্বাস করতে পারেন না তিনি। বাগানেই অপেক্ষা করেন। যদি ছেলেকে দেখতে পান, নিজেই ডেকে নেবেন। এমন বিশ্বাস নিয়েই অপেক্ষা করেন।
প্রহরী তাঁকে আবার বাগানে দেখে। সে ভাবে, লোকটির মতলব খারাপ হতে পারে। যদি লোকটি কোনোভাবে রাজবাড়িতে ঢুকে পড়ে, তাহলে তার নিজের উপরেই দায়িত্বহীনের তকমা জুটবে। তাই লোকটাকে বাগান থেকে হটাতেই হবে। প্রহরী এগিয়ে যায়। গিয়ে বলে, “তোমার মতলব ভালো নয়। তুমি এখান থেকে না গেলে তোমায় কারাগারে পাঠিয়ে দেব।”
“আমাকে কারাগারে পাঠালেও আমি যাব। আমার ছেলের সঙ্গে দেখা করবই। ওই গায়ক আমার ছেলে বিদ্যাধর। আমি হলফ করেই বলতে পারি।”
“তাহলে তোমার হলফ তোমার থাক। তোমাকে কারাগারেই পাঠাচ্ছি।”
প্রহরী অন্য এক প্রহরীকে ডেকে তাঁকে বন্দি করে। কারাগারে পাঠায়।
প্রায় আলো নেই কারাগারে। সেখানে খেতে পান। কিন্তু বাইরের দিকে কোনও জানালা নেই। সেই গায়ককে দেখার সুযোগ পান না। তাঁর গান, কণ্ঠস্বর কানে আসে। কেঁদেই দিন কাটে। কারাগারের প্রহরীকে জানান, “আমি তো অপরাধী। আমার বিচার কবে?”
“সে আমি বলতে পারব না। রাজামশাইয়ের মর্জি হলেই তোমার বিচার হবে।”
চলতে থাকে বিচারের জন্য দিন গোনা। দিন যায়। তিন মাসের পর তাঁকে হাজির করে বিচারসভায়। রাজা জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি রাজবাড়ির বাগানে এসেছিলে কেন?”
“মহারাজ, আমার ছেলে রাজবাড়ির সংগীত শিক্ষক।”
“কী নাম তাঁর?”
“বিদ্যাধর দত্ত।”
“পাগলের প্রলাপ, বিদ্যাধর নামে রাজবাড়িতে কেউ নেই। পন্ডিত সুকণ্ঠ মন্দ্র সেনের ছেলে। তুমি মিথ্যে বলছ।”
“না মহারাজ, আমি মিথ্যে বলছি না। আমি তার গান রোজ শুনি। আপনি সুকণ্ঠ সেনকে বিচারসভায় আসার অনুমতি দিন। আমি নিজের চোখে তাকে দেখব।”
“তোমার অনুরোধেই তাঁকে আনার ব্যবস্থা করছি। প্রহরী, পন্ডিত সুকুণ্ঠকে সম্মানের সঙ্গে বিচারসভায় আসার অনুরোধ জানাও এবং সঙ্গেই আনো।”
আসেন সুকণ্ঠ সেন। মুখ-ভরতি দাড়ি, শীর্ণ শরীর তাঁর বাবার। দেখেই তিনি শিউরে ওঠেন। ভাবেন, বাবার কীসের অপরাধ? ছেলেকে দেখেই চেঁচিয়ে ওঠেন বাবা, “ওই তো আমার ছেলে বিদ্যাধর!”
রাজা জিজ্ঞাসা করেন, “পন্ডিত, উনি আপনার বাবা?”
“হ্যাঁ, মহারাজ। উনিই আমার বাবা। পন্ডিত মন্দ্র সেন আমার গুরু এবং পালক পিতা।”
“তাহলে আপনার প্রকৃত নাম বিদ্যাধর দত্ত?”
“হ্যাঁ মহারাজ, গুরুমশাই ডাকতেন সুকণ্ঠ সেন। সেই নামটাই আপনারা সকলে জানেন।”
“তাহলে আপনার বাবা নির্দোষ। প্রহরী, হাতের বাঁধন খুলে দাও।”
বাঁধন খোলা হাত দিয়ে তিনি সুকণ্ঠকে জড়িয়ে ধরেন। সুকণ্ঠ তাঁর বাবাকে বলেন, “আপনি বাড়ি ফিরে যান। প্রতিমাসেই রাজবাড়ির কেউ আপনাকে টাকা দিয়ে আসবে। আমি শুনেছি দাদারা এখন পৃথক। মা এবং আপনি কষ্টেই আছেন। তাই আমি টাকা পাঠাব। মাকে আমার প্রণাম জানাবেন। তবে হাজার অনুরোধ করলেও এখনকার সুকণ্ঠ, বিদ্যাধর হিসাবে বাড়ি ফিরবে না। আপনি তখন আমার আগ্রহের প্রতি সম্মান জানাননি। তাই আমি ফিরে যাব না। কারণ, গান আমার প্রাণ। আমি আসছি বাবা। আপনি নিশ্চিন্তে বাড়ি যান। আপনাদের ইচ্ছা হলে আমার সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা করতে পারবেন।”
কথাগুলো শেষ করেই সুকণ্ঠ রাজবাড়িতে ফিরে যান।
কিশোর ঘোষাল ▪ পুষ্পেন মণ্ডল ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ মৌসুমী রায় ▪ অদিতি ভট্টাচার্য ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ শংকর লাল সরকার ▪ বাণীব্রত গোস্বামী ▪ সহেলী রায় ▪ অমিয় আদক ▪ সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত ▪ সুতপা সোহহং
বদ্রীনাথ পাল ▪ শ্যামাচরণ কর্মকার ▪ দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী ▪ স্বপন কুমার বিজলী ▪ সুব্রত দাস ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ মধুমিতা ভট্টাচার্য ▪ কণিকা দাস ▪ সৌমেন দাস ▪ নীলেশ নন্দী
রম্যাণী গোস্বামী ▪ দীপঙ্কর চৌধুরী ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ রণিত ভৌমিক
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ অরিন্দম দেবনাথ ▪ গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ▪ কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ সুশান্ত কুমার রায় ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অলংকরণ
মায়াসখা নন্দী ▪ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ▪ একপর্ণিকা ক্রিয়েটিভস