নিবন্ধ
FREE SHIPPING IN INDIA
নিবন্ধ
বর্তমানে জিন প্রযুক্তির অপরিসীম উন্নতি হওয়ায় তাদের ফিরিয়ে আনার কাজটা অনেকটাই সহজসাধ্য হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই শ্রেণির নেকড়ের ১৩ হাজার বছর আগেকার দাঁত ও ৭২ হাজার বছর পুরোনো খুলি উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছিলেন। সেখান থেকেই ডি.এন.এ সংগ্রহ করেন তাঁরা। এরপর বিজ্ঞানীরা জিন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুনভাবে ডায়ার উলফের জন্ম দিতে সমর্থ হন।
ড. উৎপল অধিকারী
আজ থেকে প্রায় বারো হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল সাদা নেকড়ের ‘ডায়ার উলফ’ নামক প্রজাতিটি। তার দেহাবশেষ উদ্ধার করে সেই প্রজাতিটিকে ফিরিয়ে আনলেন বিজ্ঞানীরা।
প্রাণীবিদেরা জানান, এই প্রজাতির নেকড়ে উত্তর আমেরিকার তৃণভূমি, সমভূমি ও পাহাড়ি বনভূমি অঞ্চলে বসবাস করত। এছাড়া তাদের স্বচ্ছন্দ বিচরণ লক্ষ করা যেত দক্ষিণ আমেরিকার সাভানা তৃণভূমি অঞ্চলেও। এই প্রাণীটির উচ্চতা ছিল ৯৭ সেন্টিমিটার এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০ সেন্টিমিটার। ৬০ থেকে ৬৮ কেজি ওজন বিশিষ্ট প্রাণীটির প্রধান খাবার ছিল স্বল্পদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট পর্ণ হর্ন, প্রাচীন বাইসন, স্লথ নামক স্তন্যপায়ী প্রাণী ইত্যাদি। খাদ্যশৃঙ্খলের সর্বোচ্চ খাদক হিসেবে এই প্রাণীটির বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা ছিল অপরিসীম। কিন্তু হঠাৎ করেই পরিবর্তিত আবহাওয়ায় এবং প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারার কারণে সারা পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায় ডায়ার উলফেরা।
বর্তমানে জিন প্রযুক্তির অপরিসীম উন্নতি হওয়ায় তাদের ফিরিয়ে আনার কাজটা অনেকটাই সহজসাধ্য হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই শ্রেণির নেকড়ের ১৩ হাজার বছর আগেকার দাঁত ও ৭২ হাজার বছর পুরোনো খুলি উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছিলেন। সেখান থেকেই ডি.এন.এ সংগ্রহ করেন তাঁরা। এরপর বিজ্ঞানীরা জিন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুনভাবে ডায়ার উলফের জন্ম দিতে সমর্থ হন।
‘কলোসাস বায়োসায়েন্স’ নামক বিশ্ববিখ্যাত সংস্থাটিই প্রথম এই বিলুপ্ত প্রাণীটির পুনরুদ্ধারে সমর্থ হয়েছে। ওই সংস্থার বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে সফলভাবে তিনটি ডায়ার নেকড়ে শাবকের জন্ম দেন। এই ঘটনা সমগ্র বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
পরীক্ষাটির মাধ্যমে নতুন যে ডায়ার শাবকের ভ্রূণ তৈরি করা হয়েছিল, তা কুকুরের গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। নেকড়ে ভ্রূণগুলি ওই কুকুরদের গর্ভেই পূর্ণতা পায়। এই কারণে কুকুরগুলিকেই তাদের ‘সারগেট মাদার’ বা ভাড়াটে মা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু এখনও কিছু সংশয় রয়েছে। এই নবজাতকদের কারা বড়ো হওয়ার কৌশল শেখাবে তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। কীভাবে এই প্রাণীগুলি পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবে সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তার থেকেও বড়ো বিষয়, আগে খাদ্যশৃঙ্খলে যে গুরুত্ব ছিল তা কি আর থাকবে? কোনো-কোনো সমালোচক এদের ‘সংকর প্রাণী’ বলছেন। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে না থাকলে এরা পৃথিবী ও বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তবে বিজ্ঞানীদের অপর অংশের দাবি, এখনই এ-বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলার সময় আসেনি। তাঁরা জানাচ্ছেন, সময়ের গর্ভে অনেক প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে। এই প্রাণীগুলিকে পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া নিরাপদ কি না তা জানতে আমাদের এটুকু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতেই হবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
ডায়ার উলফদের সফলভাবে পুনরুদ্ধারের পরে আশায় বুক বাঁধছেন অনেক বিজ্ঞানীই। তাঁদের দাবি, এই চেষ্টা সফল হলে আরও অনেক হারিয়ে যাওয়া প্রাণীকে ফেরানোর পথ প্রশস্ত হবে।
লেখকের অন্যান্য লেখা
কিশোর ঘোষাল ▪ পুষ্পেন মণ্ডল ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ মৌসুমী রায় ▪ অদিতি ভট্টাচার্য ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ শংকর লাল সরকার ▪ বাণীব্রত গোস্বামী ▪ সহেলী রায় ▪ অমিয় আদক ▪ সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত ▪ সুতপা সোহহং
বদ্রীনাথ পাল ▪ শ্যামাচরণ কর্মকার ▪ দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী ▪ স্বপন কুমার বিজলী ▪ সুব্রত দাস ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ মধুমিতা ভট্টাচার্য ▪ কণিকা দাস ▪ সৌমেন দাস ▪ নীলেশ নন্দী
রম্যাণী গোস্বামী ▪ দীপঙ্কর চৌধুরী ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ রণিত ভৌমিক
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ অরিন্দম দেবনাথ ▪ গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ▪ কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ সুশান্ত কুমার রায় ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অলংকরণ
মায়াসখা নন্দী ▪ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ▪ একপর্ণিকা ক্রিয়েটিভস