বড়ো গল্প
FREE SHIPPING IN INDIA
বড়ো গল্প
একবার তাদের জাহাজ রেঙ্গুন থেকে পেনাং বন্দরের উদ্দেশে যাচ্ছে। জাহাজে বেশ কিছু গণমান্য যাত্রী আছেন, একদল ইউরোপীয় যাত্রীও ছিল। তাঁদের মধ্যে এক সম্ভ্রান্ত মেমসাহেবের সোনার চেন বাঁধানো পকেটঘড়িটি হঠাৎ চুরি হয়ে গেল। মানে, পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ খোঁজ পড়ে গেল। সারা জাহাজ তোলপাড়। স্বয়ং ক্যাপ্টেন সাহেব জনে জনে জেরা করলেন। কিন্তু সে-ঘড়ি আর পাওয়া যায় না। মুখে চুনকালি পড়ল জাহাজ কোম্পানির।
দীপঙ্কর চৌধুরী
কলকাতা শহরে এককালে মেসবাড়ির খুব চল ছিল। বিভিন্ন পেশা ও চাকুরিতে রত বেশ কিছু মানুষজন, তা তাঁরা সংখ্যায় পাঁচ-সাত থেকে বিশ-বাইশ জনও হতে পারেন, গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সপ্তাহভর বা পক্ষকাল কলকাতায় পড়ে থাকতেন পেশার কারণে। সপ্তাহে দু-সপ্তাহে একবার গ্রামের বাড়িতে যেতেন পরিবারের কাছে। বাংলা শিল্প-সাহিত্যে এমন বেশ কিছু মেসবাড়ি অমর হয়ে রয়েছে— যেমন, ঘনাদার গল্পে বা ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমায়।
আমাদের আজকের গল্পের সময়কালটা উনিশশো ষাট-সত্তর হবে। এই সময়ে মধ্য কলকাতার বৌবাজার অঞ্চলে একটি মেসবাড়ি ছিল, লোকে বলত ‘পালোয়ানের মেস’। কেন যে এমন নাম, কে জানে! না সেখানে পালোয়ানেরা থাকত, না পালোয়ানি ভোজ মিলত। হরিবাবু বা হরিহর সামন্ত বলে এক মাইনে করা ম্যানেজার মেসটি চালাতেন, গোটা পাঁচেক ঝি-চাকর-রাঁধুনি-জোগাড়ে ছিল।
নদীয়া জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিরাজমোহন পাল নামের এক ছোকরা তার জ্যাঠামশায়ের দেওয়া একখানি চিঠি হাতে করে থাকতে এল এই মেসবাড়িতে। বিরাজের জ্যাঠাবাবু এককালে এখানে থেকে গেছেন, হরিবাবুর সঙ্গে তাঁর খাতির ছিল।
পুবদিকে দোতলার একটি ঘরে ঠাঁই হল বিরাজের। পাড়াটি যদিও বড়োই ঘিঞ্জি, তবু ভোরবেলার দিকে মাথার কাছের জানালাটি দিয়ে একচিলতে রোদ আসে, এইটুকুই শান্তি। একতলা ও দোতলা মিলিয়ে চারটি ঘর আছে। জনা বারো বোর্ডার আঁটে। বর্তমানে আছে নয় জন, বিরাজকে নিয়ে।
ডালহৌজি অঞ্চলের যে বিলিতি কোম্পানিতে শিক্ষানবিশি চাকুরিটির ভরসায় শহর কলকাতায় আসা বিরাজের, তিন মাসের মধ্যে সে-চাকরি নট হয়ে গেল, কারণ পোস্টটি পার্মানেন্ট হয়নি। আতান্তরে পড়ল বেচারি বিরাজমোহন। কী করা যাবে এবার? খাবে কী? দেশের বাড়িতে দশটি প্রাণীর বাস। সেখানে টাকা পাঠাতে হয়। বাড়ির বড়ো ছেলে সে। বয়স এ-সময় তার বছর তেইশ হবে। অবিবাহিত।
এই মেসে এসে একমাত্র কুঞ্জ, অর্থাৎ কুঞ্জবিহারী সেনের সঙ্গেই ভালো আলাপ হয়েছিল বিরাজের। কুঞ্জ হল বিরাজের রুমমেট। বলিয়ে-কইয়ে চালাক-চতুর ছেলে। এক ইন্সুরেন্স কোম্পানির ক্যানভাসার সে। গুছিয়ে কথাবার্তা না বলতে পারলে ওই লাইনে টিকে থাকা শক্ত। পরপর দু-দিন বিরাজকে অনেক বেলা পর্যন্ত শুয়ে থাকতে দেখে তৃতীয় দিন সকালে অফিস বেরোনোর আগে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে কুঞ্জ শুধাল, “কী হে রাণাঘাটের পান্তুয়া, তোমার কি চাকরিটি আছে না গেছে?”
অতঃপর কুঞ্জবিহারীর ‘হাত ধরে’ পরের সপ্তাহ থেকে বেরোতে শুরু করল বিরাজমোহন। গোদা বাংলায় যাকে বলে বিমার দালালি। কিন্তু এই করে চলা শক্ত। বেতন এখানে যৎসামান্য । পলিসি বেচতে পারলে কমিশন আছে। তাতেই চলে। কিন্তু বিরাজ সুবিধে করে উঠতে পারছে না ভালো। কারণ, ছেলেটি ভারি মুখচোরা। মনমেজাজ তার খুবই খারাপ, পকেটের অবস্থা তার চেয়েও বেশি।
সপ্তাহান্তে খালি হয়ে যায় মেসবাড়িটি। একজন দুজন কখনো-বা কোনও কারণে রয়ে যায়। যেমন, এই সপ্তাহে বিরাজ আছে। দেশে যাবার রাহাখরচটা তো অন্তত বাঁচবে। সকাল থেকে এলোমেলোভাবে শহরের এখানে ওখানে হেঁটে বেড়িয়েছে সে। রবিবার মেসের মিল বন্ধ থাকে। এক পাইস হোটেলে দুপুরে নিরিমিষ্যি ঝোল-ভাত খেতে চারটি টাকা গিয়েছে। সন্ধ্যায় ফাঁকা মেসে ফিরে এসে নিজের তক্তপোশে শুয়ে শুয়ে আকাশপাতাল ভাবছিল বিরাজ, এমন সময় এক গানের সুর ভেসে এল তার কানে—
‘ভুবনজোড়া আসনখানি
আমার হৃদয়-মাঝে বিছাও আনি॥’
এমন গান সে আগে কখনও শোনেনি। কী গান, কার বাঁধা, কার গাওয়া—কিছুই জানে না সে, কিন্তু অভিভূত হয়ে গেল এক ভরাট গলায় সে-গান শুনে।—
‘…দুঃখসুখের সকল হরষ, ফুলের পরশ,
ঝড়ের পরশ—
তোমার করুণ শুভ উদার পাণি
আমার হৃদয়-মাঝে দিক-না আনি॥’
বিরাজের দেহের প্রতিটি শিরায় শিরায় যেন একটা বিদ্যুৎ বয়ে গেল। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল সেই যুবক এ গানখানি শুনে।
কিন্তু গাইছে কে গানটি? ভেসে আসছে উপর থেকে। উপরে তো খোলা ছাদ। কেউ তো থাকে না। ছাদে ওঠা মানা মেসের বোর্ডারদের। তারা নীচের ঢাকা বারান্দাতেই দড়ি টাঙিয়ে কাচা কাপড়চোপড় মেলে দেয়। বিরাজও আগে কখনও ছাদে ওঠেনি। কিন্তু কী যে হল তার সেই সন্ধ্যায়, মোহগ্রস্ত অবস্থায় তিনতলার সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে এল। দরজাটা আলগা ভেজানো ছিল। একটি চিলেকোঠা আছে ছাদের উত্তরদিক পানে। তাতে মৃদু আলো জ্বলছে একখানি। ভিতরে বসে কেউ একখানি সিঙ্গল রিডের হারমোনিয়াম নিয়ে প্যাঁ-পোঁ করছে। সেই গায়ক! আগের গান শেষে বোধ হয় দ্বিতীয় গানখানি ভাঁজতে চলেছেন। আর অন্য কোনও মনিষ্যি নেই। উনি নিজেই গায়ক, নিজেই শ্রোতা।
খুট করে শব্দ পেয়ে ‘কে? কে ওখানে?’ বলতে বলতে একজন দীর্ঘদেহী একহারা বৃদ্ধ বেরিয়ে এলেন চিলেকোঠাটি থেকে। হাতে ধরা হ্যারিকেন ল্যাম্পের মৃদু আলোয় তাঁর আবক্ষলম্বিত সাদা দাড়ি দেখা গেল। মাথার সামনের দিকটা খালি, ওদিকে ঘাড় পর্যন্ত সাদা চুল। পরনে একটা গেরুয়া ধুতি, আদুর গা। চোখে মোটা পাওয়ারের ঘষা কাচের চশমা একজোড়া।
“কে? কে দাঁড়িয়ে ওখানে?” বৃদ্ধের গলাটি অত্যন্ত ভারী।
দোতলা থেকে এঁর গলাতেই গান শুনেছে বিরাজমোহন ‘ভুবনজোড়া আসনখানি…’।
বৃদ্ধের গম্ভীর গলা শুনে কী যে হল বিরাজের, হঠাৎ ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠল সে। মানসিক দুশ্চিন্তা, দুর্বল শরীর আর তার ওপর ওই মোহময় সুর ও বাণী। সে যেন আর নিজেকে সামলাতে পারল না।
ওকে কাঁদতে দেখে বৃদ্ধও বোধ হয় একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। বললেন, “আরে বাপু, কান্দ ক্যান হে তুমি? কী হয়েছে তোমার? কে তুমি? নীচের মেসের বোর্ডার নিশ্চয়ই!”
বিরাজ এগিয়ে এসে পদস্পর্শ করে প্রণাম করলে বৃদ্ধকে। তারপর দু-পা পিছিয়ে এসে ঘাড় নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
॥ ২॥
এরপর থেকে সেই বৃদ্ধের সঙ্গে বিরাজমোহনকে দেখা যেতে লাগল গঙ্গার তীরে, কার্জন পার্কে, ইডেনের বাগানে।
এর মাঝে কয়েক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে।
এক বিকেলে প্রিন্সেপ ঘাটে বসে বাদামভাজা কিনে খেতে খেতে বৃদ্ধ বললেন, “বাবা বিরাজ, তোমার কাজকম্মের কিছু চেষ্টা তো করো। পলিসি সেল হল কি কিছু? এই বুড়ো মানুষের পিছনে ঘুরে ঘুরে কী পাবে বলো তো তুমি?”
আঙুলের ডগায় ঝালনুন তুলে জিভে টাকনা দিতে দিতে বিরাজ হেসে বললে, “সেই পেনাং বন্দরের গল্পের শেষটা কিন্তু আপনি এখনও বলেননি।”
হো হো করে হেসে উঠে বৃদ্ধ বললেন, “সেই বর্মি বালক থুরার গল্প তো? তা, কী আছে বলো তো তার গল্পে যে তুমি বার বার শুনতে চাও? তাকে কিন্তু আমি কখনও চোখেও দেখিনি। আর, চোখে দেখছ তো আমার পুরু ঘষা কাচের চশমা। হে হে হে হে…”
ঘটনাটা এমন ঘটেছিল—
সেই সন্ধ্যায় ছাদের ঘরে বৃদ্ধের কণ্ঠে গান শুনে অভিভূত হয়ে পড়ে কর্মহীন যুবক বিরাজমোহন। দিশাহারা অসহায় ছেলেটি সেই গানের মধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে পায়, পায় এগিয়ে চলার শক্তি। আরও বহু বহু গান আছে ওই গায়কের ভাণ্ডারে। অতএব বিরাজ ওই বাউণ্ডুলে বৃদ্ধ মানুষটির বিশেষ ভক্ত হয়ে পড়ে। ও বার বার শুনতে যায় তাঁর গান। কেন এবং কী সূত্রে তিনি মাঝে মাঝে এই মেসবাড়িতে এসে চিলেকোঠার তালা খুলে কয়েকদিন কাটিয়ে যান, কোথায়ই-বা চলে যান তারপর, সে-সব জানবার দরকারও পড়েনি বিরাজের। আর জানতে চাইবেই-বা কার কাছে? মেসের অন্য বাসিন্দাদেরও মাথাব্যথা নেই কোন সে বুড়ো চিলেকোঠায় এসে থেকে যায়, তাতে।
নামটি তাঁর জানা গেল, শক্তিধর। পদবি বলেছিলেন বন্দ্যোঘটি। গোত্র শাণ্ডিল্য। তাঁর মুখে কিছুটা মঙ্গোলিয়ান কাট আছে বটে। বিরাজ বলত, শচীনকর্তার মতো। আদি নিবাসটিও ছিল তাঁর জিলা কুমিল্লায়!
“ছোটবেলা থেকে বহু কষ্টে মানুষ হয়েছি গো ভাই বিরাজ।” গল্প করতেন শক্তিবাবু, “অনেকের লাথিঝাঁটা খেয়েছি। জাহাজে জাহাজে ডেক-মোছা বাসন-ধোওয়া চাকরের কাজ করেছি। যদিও ওই জাহাজেই এক সন্তের দেখা পেয়ে যাই, বদলে যায় আমার জীবন। আমার জম্মও কিন্তু হয়েছিল ব্রহ্মদেশেই, বাংলায় নয়। ব্রিটিশ বার্মা! আমার দাদামহাশয়, অর্থাৎ মায়ের বাবা শুনেছি সেখানে রেল কোম্পানির টাইমবাবু হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের বাবা বা মা কাউকেই কখনও চোখে দেখিনি গো। আমাকে জন্ম দিয়েই মাতৃদেবী চক্ষু মুদেছিলেন। মামা-মামির কাছে মানুষ হয়েছি। আমার বাবা শুনেছি চাকুরি করতেন উত্তর বার্মায় এক সাহেবি টিক কোম্পানিতে। তাঁর আর হদিস পাওয়া যায়নি। কেউ বলে তিনি নাকি সন্ন্যাসী হয়ে তিব্বতে চলে গিয়েছিলেন, আবার কেউ বলত মশার কামড়ে তিনি মারা যান কাচিনের জঙ্গলে। সেই ভয়ংকর জঙ্গুলে এলাকায় সে-কালে জ্বরে ভুগে বা বন্যপ্রাণীর আক্রমণে মৃত্যু আকছার ঘটত…”
ভোঁ করে আউট্রাম ঘাটে এক জাহাজ ডেকে উঠতে গল্পের খেই ভাঙল এঁদের। সেই বিকালেও একটি বেঞ্চিতে বসে বাদামভাজা কিনে খাচ্ছিল দুই অসম বয়সের বন্ধু শক্তিধর বাঁড়ুজ্জে ও বিরাজমোহন পাল। একজন চালচুলোহীন ভবঘুরে বৃদ্ধ, অপরজন চাকুরিহীন বেকার এক যুবক।
আর সেদিনই উনি প্রথম এক বর্মি বালক থুরার কথা বলেছিলেন বিরাজকে। বছর সাত-আট বয়স হবে হয়তো তখন সেই বালকের। রোগা দুবলা পাতলা একটা ছেলে, বাঁ চোখটি তার উপর আবার কানা। আজ একটা বোটে, কাল একটা স্টিমারে ফাইফরমায়েশ খাটত সে। বিনা বেতনের চাকর। চালচুলো নেই। দু-বেলা দু-মুঠো খেতে পেয়ে যায়, তাই দিয়েই দিন গুজরান হয় তার। জাহাজের সারেং থেকে মেজো-সেজো কর্তা সকলেই উঠতে বসতে কানা বলে গালি দেয়, চড়-চাপড় লাথি মারে থুরাকে। মার খেয়ে কাঁদে সে। কিন্তু চোখের জল চোখেই শুকিয়ে যায়। পরমুহূর্তেই হয়তো আর এক ফরমায়েশের ডাকে ছুটে যেতে হয়।
এমনিতে কিন্তু বেশ হাসিখুশি ছেলে ছিল সেই থুরা। সমবয়সি আরও চার-পাঁচজন অমন চাকর ছিল সেই স্টিমারে, তাদের সঙ্গে কাঁইবিচি, খাপরা নিয়ে বাঘবন্দির মতো দেশি খেলা খেলত। কখনো-বা হো হো করে হেসে উঠত দল বেঁধে, আবার জাহাজের ডেকেই হয়তো বা ঘুমিয়ে পড়ল কোনদিন।
আর সে-বালক জানত ম্যাজিক! এ-হাত থেকে ও-হাত ফিরিয়ে একটা চাবিকে দুটো করে দিল, বা সঙ্গী আর এক নফরের চুলের মধ্যে থেকে টেনে বের করল একটা অচল আধুলি। মাঝে মাঝে স্টিমারের সকল কর্মী দল বেঁধে এসে দেখত থুরার হাতসাফাইয়ের কেরামতি। কী করে যে সে এসব ম্যাজিক শিখেছিল কেউ জানে না। অনুমান, ছেলেটি বোধ হয় কোনও জিপসি-যাযাবরের দলে বড়ো হয়েছিল, সেখানেই শিখে থাকবে এসব। তিব্বতি লামারাও এমন জাদু জানত বটে।
এই ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে একবার মস্ত বিপদে পড়েছিল থুরা।
একবার তাদের জাহাজ রেঙ্গুন থেকে পেনাং বন্দরের উদ্দেশে যাচ্ছে। জাহাজে বেশ কিছু গণমান্য যাত্রী আছেন, একদল ইউরোপীয় যাত্রীও ছিল। তাঁদের মধ্যে এক সম্ভ্রান্ত মেমসাহেবের সোনার চেন বাঁধানো পকেটঘড়িটি হঠাৎ চুরি হয়ে গেল। মানে, পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ খোঁজ পড়ে গেল। সারা জাহাজ তোলপাড়। স্বয়ং ক্যাপ্টেন সাহেব জনে জনে জেরা করলেন। কিন্তু সে-ঘড়ি আর পাওয়া যায় না। মুখে চুনকালি পড়ল জাহাজ কোম্পানির।
এমন সময়ে কে যেন এসে খবর দিল যে সেই কানা চাকর থুরাকে নাকি জুলজুল করে মেমসাহেবের ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। সে যে ওই ঘড়িটি নিয়েও ম্যাজিক দেখাতে পারে সেটা বড়াই করে সঙ্গী চাকরদের মধ্যে বলেও ছিল সে।
আর যায় কোথায়? সারেংয়ের আদেশে তাকে হিড়হিড় করে টেনে এনে জোর জেরা চলল এবং কিছুই উদ্ধার না হলেও আক্রোশবশত তুমুল প্রহার করা হল।
অভুক্ত প্রহৃত সেই বালকের তুমুল জ্বর এল সেই রাত্রে। হয়তো মরেই যাবে। অন্য এক দয়ালু বৃদ্ধ নাবিক তার কিছু শুশ্রূষা করলে, কিচেন থেকে এক বাটি দুধ এনে খাওয়াল সে-রাত্রে।
ভোর রাত্রে শোনা গেল যে সেই বর্মি বালক থুরা হেসে হেসে কার সঙ্গে যেন কথা বলছে। জ্বরজারি বেদনার চিহ্নমাত্র নেই। কোন সে তার অদৃশ্য বন্ধুও যেন অজ্ঞাত কোন ভাষায় তাকে উত্তর দিচ্ছে, যেটা পাশে শুয়ে থাকা অন্য চাকরদেরও কানে গেছে, কিন্তু চোখে দেখা যায়নি কাউকে। ভয়ে তারা সকলে ইষ্টনাম জপেছে, কিন্তু আশ্চর্য হল, তার সেই অজানা বন্ধুর স্পর্শে থুরা কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠল। অত প্রহারের বিন্দুমাত্র চিহ্ন তার অঙ্গে আর নেই। পরের দিন সকালে উঠেই নিয়মমতো ডেকে ঝাড়ু দিতে লেগেছে সে।
এ-গল্পও জাহাজে চাউর হতে দেরি হল না। স্বয়ং কাপ্তেন সাহেব তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেও কোনও সদুত্তর পেলেন না।
এ-গল্প কানে যেতে সেই প্রৌঢ়া মেমসাহেব, যাঁর ঘড়ি হারিয়েছিল, একবার কথা বলতে চাইলেন বর্মি বালকটির সঙ্গে। তাঁকে জাহাজের সকলে বড্ড খাতির করছিল। দীর্ঘাঙ্গিনী তিনি, গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা। এককালে তিনি নাকি ছিলেন প্রখ্যাত এক অপেরা-গায়িকা, এখন সারা বিশ্ব ভ্রমণ করে বেড়ান। পরনে তাঁর তিব্বতি লামানিদের মতো গেরুয়া রঙের জোব্বা, মাথায় লামা-ক্যাপ।
জাহাজের সারেং থুরাকে নিয়ে এল মেমসাহেবের কাছে, সে-ই দোভাষীর কাজ করবে। সে কিছু কিছু ফরাসি ভাষা জানত। কিন্তু তার দরকার পড়ল না। বালকটির দিকে সরাসরি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মহিলা যেন কেমন এক ঘোরের মধ্যে চলে গেলেন। তারপর অজানা এক ভাষায় কী যেন বলে উঠলেন বালকটিকে। বালক থুরা আনন্দে হাততালি দিয়ে বলে উঠল, “তুল্প! তুল্প!”
মানে কী এর?
এবার সেই ফরাসি মেমসাহেবও ‘তুল্প, তুল্প’ বলে উঠলেন। হেসে উঠলেন। আলিঙ্গন করলেন তাকে। সে ডেকে দাঁড়িয়ে, মহিলা বেতের ডেকচেয়ারে বসে। জাহাজের সকলে ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল। এ আবার কী! এক পাক্কা গোরা মেমসাহেব এক দীনহীন দিশি বালককে জড়িয়ে ধরে আদর করছে, বন্ধুর মতো গল্প করছে তার সঙ্গে! এমনটা তারা আগে কখনও দেখেনি।
পরদিন জাহাজ পেনাং বন্দরে পৌঁছবে। সাজসাজ রব পড়ে গেল সকলের মধ্যে। অনেক গোছগাছ আছে। আর পেনাংয়ে পৌঁছেই ঘটেছিল সেই অদ্ভুত ঘটনা।
এই পর্যন্ত বলেই আগেরদিন থেমেছিলেন বুড়ো শক্তিধরবাবু। আজ তাই আর বিরাজমোহনের তর সইছে না গল্পের বাকিটুকু শুনতে।
॥ ৩॥
“কী হবে ওই পাগলাটে বর্মি বালকের গল্প শুনে?” বুড়ো বলতে চান না।
“তুল্প মানে কী?” বিরাজমোহনের জিজ্ঞাসা।
প্রশ্ন এড়িয়ে বুড়ো বলেন, “ওই জাহাজে একজন ভারতীয় সেন্টও যাচ্ছিলেন, সেটা জানো কি? গেরুয়াধারী সন্নেসি নয়, কালো রোব পরা দীর্ঘদেহী এক সেন্ট, অর্থাৎ সাধু। বুক পর্যন্ত ঢলা তাঁর সাদা দাড়ি। বাঙালি। তিনি অবশ্য তাঁর দোতলার কেবিন থেকে নামতেন না। চারজন সম্ভ্রান্ত সঙ্গী নিয়ে ওখানেই থাকতেন। আর্লি ডিনার পাঠিয়ে দেওয়া হত দোতলায়।”
“থাকুন তিনি সেখানে, কিন্তু আপনি এত কথা জানলেন কী করে বলুন তো? আপনি তো আর সে-জাহাজে ছিলেন না।” বিরাজ বলে।
আবারও প্রশ্ন এড়িয়ে বৃদ্ধ বলেন—
পেনাংয়ে পৌঁছে ভিড়ভাড় ডামাডোলের মধ্যে—মালপত্র নামানো হচ্ছে, হঠাৎ একটি ডিঙি উলটে যায়। ওই যাতে চড়ে জাহাজ থেকে যাত্রীরা ডাঙায় নামে আর কি। অনেক যাত্রী ও মালপত্রের সঙ্গে তাতে এক ইউরোপিয়ান যুবতী বধূ ও তার কোলের মেয়েটিও ছিল। তারা ডুবে যায়। তুখোড় মগ মাঝিরা অবশ্য তখনই ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্ধার করে তাদের, কিন্তু কোলের শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। দম বন্ধ হয়ে মারা যায় সে। তুলকালাম কান্নাকাটি পড়ে গেল।
অন্য কুলিদের সঙ্গে সেই বর্মি বালক থুরাও মালপত্র নামাচ্ছিল। শিশুটির জলে ডুবে মারা যাবার খবর পেয়ে সে কখন চুপিচুপি সেই প্রৌঢ়া ফরাসি মহিলার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে, যিনিও জাহাজ থেকে নামবেন বলে তোড়জোড় করছিলেন। আরও সাহেবসুবো দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানে। তাকে দেখতে পেয়ে মহিলা এসে দাঁড়ালেন তার পাশে। সাংকেতিক ভাষায় কিছু কথপোকথন হল দুজনের।
বালক বললে, “তুল্প! তুল্প!”
সন্ন্যাসিনীও বললেন, “তুল্প! তুল্প!”
দুজনেই এবার যেন গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে গেল। ডেকের এক নির্জন কোণে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়েই। অদ্ভুত কাণ্ড!
ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই সুখবর এল, ওই যে শিশুটি জলে ডুবে মারা গিয়েছিল, জাহাজের সাহেব ডাক্তার জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন, তার নাকি ফের শ্বাস-প্রশ্বাস শুরু হয়েছে। বেঁচে গেল সে। আনন্দের আর সীমা রইল না সকলের মধ্যে।
কিন্তু কী করে সম্ভব হল এটা? জলে ডোবা মানুষের মুখে ফুঁ দিয়ে বাঁচানো যায়—ফার্স্ট এইড ট্রেনিংয়ে শেখায় এটা, কিন্তু এত পরে কি আর সেটা সম্ভব? এক ঘণ্টা নিশ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ থাকবার পরেও কি…
জানা গেল, দুইজন তিব্বতি বদ্যি নাকি হঠাৎ এসে উপস্থিত হয়েছিল জাহাজঘাটায়, তারা নাকি ঝাড়ফুঁক জানে। একটি শিশু সদ্য সদ্য জলে ডুবে মারা গেছে জানতে পেরে নিজেরাই উপযাচক হয়ে এসে তার নাকে-কানে-মুখে ফুঁ দিয়ে দিয়ে…
দূর! যত্তসব বুজরুকি! নাকে কানে ফুঁ দিলে মড়া আবার বেঁচে যেতে পারে নাকি?
সে দুই তিব্বতি নিজেদের মধ্যে অং-বং-চং কীসব সাংকেতিক ভাষায় কথা বলছিল। থুরাকে দেখতে পেয়ে ‘তুল্প, তুল্প’ বলতে বলতে এগিয়ে এসে আনন্দে জড়িয়ে ধরেছিল পরস্পরকে। সেই ইউরোপিয়ান সন্ন্যাসিনী এবার এগিয়ে এসে আঙুল দিয়ে থুরাকে দেখিয়ে আগন্তুকদ্বয়কে বললেন, “হি কলড ইউ। এ-ই ডেকেছিল তোমাদের।”
এ-কথার কী মানে কেউ বোঝেনি। পরস্পর মুখ তাকাতাকি করেছে।
তিনদিন পরে জাহাজ যখন পেনাং ছেড়ে ক্যান্টনের উদ্দেশে যাত্রা করল। সেই থুরা নামক চাকরটিকে আর দেখা গেল না কোথাও। তা নিয়ে অবিশ্যি মাথাব্যথা নেই কারও, কারণ অমন খুচরো চাকরবাকর প্রতি বন্দরেই আসে যায়। লশকরদের ওস্তাদ কেবল মাথা গুনে নেয় যে সংখ্যায় তারা ঠিক আছে কি না। যাত্রীদের মলমূত্র পরিষ্কার করবার জন্যে দু-চারজন চাকর এখান থেকে উঠেছে, তার মধ্যে একটা নতুন ছোকরা আছে। সে আবার বাংলা বলে। কুমিল্লা-চট্টগ্রামের ছেলে হতে পারে। তারও বাম চোখটা কানা।
গল্পটা আধা-খ্যাঁচড়া রয়েই গিয়েছিল।
॥ ৪॥
পরের দিন সকালে কেউ একজন একতলায় মেসবাড়ির উঠোনে ঢুকে এসে ছাদের দিকে তাকিয়ে ‘এ পালোয়ান! ও পালোয়ান!’ বলে চিৎকার লাগিয়েছে।
বুদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি ছিল সেদিন, বোর্ডাররা একটু বেলা পর্যন্ত বিছানায় গড়াচ্ছে। দোতলার জানালা থেকে গলা বাড়িয়ে বিরাজমোহন দেখল, একজন নয়, দুইজন বয়স্ক লোক নীচে দাঁড়িয়ে আছে, সঙ্গে মালপত্র। কিন্তু পালোয়ানটা আবার কে আছে এখানে? তারপর কী যেন মনে হওয়ায় মুখে-চোখে জল দিয়ে নীচে নেমে এল সে একতলায়।
আগন্তুক দুজন ততক্ষণে আপিস-ঘরের চেয়ারে বসে ম্যানেজার হরিহরবাবুর সঙ্গে চা খাচ্ছে। একজন ধুতি-শার্ট পরা টাকমাথা রোগা বাঙালি ভদ্রলোক, অপরজন পাক্কা চিনেম্যান বা বর্মি মানুষের মতো দেখতে। চ্যাপ্টা নাক। যদিও স্পষ্ট বাংলা বলছে।
“এই তো বিরাজ এসে গেছে। ওকেই জিজ্ঞেস করুন না আপনারা। ওর সঙ্গে তো শক্তিবাবুর খুবই ওঠাবসা।” চায়ের কাপটা রাখতে রাখতে হরিবাবু বললেন।
“কী হয়েছে?” অবাক প্রশ্ন বিরাজমোহনের।
“শক্তিবাবুকে কি কখনও কালো সান-গগলস পরতে দেখেছ?” হরিবাবুর প্রশ্ন।
“না তো। ওঁর এমনিতেই হাই পাওয়ারের চশমা, ঘষা কাঁচ…”
“হাই পাওয়ার নয়, জম্ম থেকেই বাম চক্ষুখানিতে দিষ্টি নেই আমাদের থুরাবাবুর। তাই ঘষা কাঁচে ঢেকে রাখা আর কি।” সেই বর্মি-দেখতে প্রৌঢ় বললেন।
“থুরাবাবুটা আবার কে?” মহা বিস্মিত বিরাজমোহন।
“ও হল আমাদের মজা করে বলা। বর্মি ভাষায় থুরা মানে শক্তিমান, সাহসী। তাই আমি ওকে চিরকাল ওই নামেই ডেকে এসেছি, যেমন আমাদের এই রঘুবাবু ওকে পালোয়ান বলেই ডাকে। শক্তিধর কিনা!” হাসতে হাসতে পাশে বসা ইন্দ্রলুপ্ত সঙ্গীটির দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে বললেন উনি, “আমরা তিনজন, বুঝলেন, আজ চল্লিশ বছরে বন্ধু ও বিজনেস পার্টনার। চাল ও রঙের ব্যাবসা আছে আমাদের রেঙ্গুন ও পেনাং শহরে।”
“কিন্তু শক্তিবাবু কোথায়? এত দেরি পর্যন্ত ঘুমোনোর লোক তো তিনি নন। ছাদে গিয়েছিলেন?” বিরাজের প্রশ্ন।
“তাহলে আর বলছি কী? আজ সেই ভোর চারটেয় আমাকে টোকা দিয়ে তুলে হাতে এই চাবিগাছা ধরিয়ে দিয়ে…” হাই তুলতে তুলতে হরিবাবুর নিবেদন।
“সে কী! কাল অনেক রাত পর্যন্তও তো আমরা…” বলতে বলতে চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে দুদ্দাড় করে সিঁড়ি ভেঙে তিনতলায় উঠে চিলেকোঠার দরোজায় তালা ঝুলতে দেখল বিরাজ। আর, দেখেই প্রথম দিনের মতো চোখের জল ধরে রাখতে পারল না সে। অকারণে, সম্পূর্ণ অকারণে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগল বেকার যুবক বিরাজমোহন পাল।
আগন্তুক দুজনেও ততক্ষণে হরিবাবুর সঙ্গে উঠে এসেছেন তিনতলার ছাদে। বিরাজের পিঠে হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন একজন, “আসলে, বুঝলেন কিনা, ব্যাবসা-ট্যাবসা নয়, পাক্কা এক সাধক মানুষ হলেন আমাদের পালোয়ান শক্তিধর বাঁড়ুজ্জে। কঠিন রোগের নিদানে প্রাচীন আয়ুর্বেদশাস্ত্রে যেমন আছে কায়কল্প চিকিৎসা—কল্প—তেমনি প্রাচীন তিব্বতীয় বজ্রযান মতে আছে ত্রিকায়। তার একটা কায় হল তুল্প। মানুষে মানুষে ভাব-ভালোবাসা, পরস্পর পরস্পরের পাশে এসে দাঁড়ানো—মনঃযোগে! মনে মনে যোগ। মনের সঙ্গে মনের যোগ। অদৃশ্য বন্ধুর মতো। বিপদে পড়ে স্মরণ করলে এই তুল্প-বান্ধবগণ যেখানেই থাকুক ছুটে আসবে বন্ধুর পাশে। একাকিত্ব নেই, সর্বদাই সবাই সবার পাশে আছে। এক তুল্প-বান্ধব মিলে যাচ্ছে মিশে যাচ্ছে আর এক তুল্প-বান্ধবের মধ্যে, দেহে-মনে। এক থেকে আর একের সৃষ্টি, এক থেকে এক, এক থেকে বহু… সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে আছে তুল্প-সখারা।” বললেন সেই আগন্তুক।
অদ্ভুত কথা! নতুন তথ্য জেনে হাঁ হয়ে গেল বিরাজমোহন।
“এখন তো শুনি সারা পৃথিবী জুড়ে তুল্প সোসাইটি হয়েছে। শক্তির পিতৃদেবের আমলে তিব্বতের সুউচ্চ মঠে বছরের পর বছর পড়ে থেকে তুল্প-বিদ্যা শিখে আসতে হত। যেমন শিখেছিলেন ফরাসি গায়িকা তথা সন্ন্যাসিনী আলেকজান্দ্রা ডেভিড নিল। শক্তির কাছেই এসব গল্প শোনা আমাদের।” বললেন সেই বর্মি ভদ্রলোক।
বিরাজমোহনের কানে আর কিছু ঢুকছে না। তার কেবল মনে পড়ে যাচ্ছে গত রাত্রের কথা, যখন এই ছাদে মাদুর পেতে বসে তার বৃদ্ধ বন্ধু হারমোনিয়ামে সুর তুলতে তুলতে বলেছিলেন, “ওই গানটা আবার শুনবে? জানো তো, ভুবনজোড়া আসনখানি গানটি গুরুদেব বেঁধেছিলেন চিন সমুদ্রে জাহাজে ভাসতে ভাসতে ক্যান্টন যাবার পথে। আর এ গানখানি? শোনো—
জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে,
বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে॥
এ মোর হৃদয়ের বিজন আকাশে
তোমার মহাসন আলোতে ঢাকা সে,
গভীর কী আশায় নিবিড় পুলকে
তাহার পানে চাই দু-বাহু বাড়ায়ে॥
নীরব নিশি তব চরণ নিছায়ে
আঁধার-কেশভার দিয়েছে বিছায়ে।
আজি এ কোন গান নিখিল প্লাবিয়া
তোমার বীণা হতে আসিল নাবিয়া!
ভুবন মিলে যায় সুরের রণনে,
গানের বেদনায় যাই যে হারায়ে॥”
কিশোর ঘোষাল ▪ পুষ্পেন মণ্ডল ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ মৌসুমী রায় ▪ অদিতি ভট্টাচার্য ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ শংকর লাল সরকার ▪ বাণীব্রত গোস্বামী ▪ সহেলী রায় ▪ অমিয় আদক ▪ সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত ▪ সুতপা সোহহং
বদ্রীনাথ পাল ▪ শ্যামাচরণ কর্মকার ▪ দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী ▪ স্বপন কুমার বিজলী ▪ সুব্রত দাস ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ মধুমিতা ভট্টাচার্য ▪ কণিকা দাস ▪ সৌমেন দাস ▪ নীলেশ নন্দী
রম্যাণী গোস্বামী ▪ দীপঙ্কর চৌধুরী ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ রণিত ভৌমিক
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ অরিন্দম দেবনাথ ▪ গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ▪ কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ সুশান্ত কুমার রায় ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অলংকরণ
মায়াসখা নন্দী ▪ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ▪ একপর্ণিকা ক্রিয়েটিভস