ছোটো গল্প
FREE SHIPPING IN INDIA
ছোটো গল্প
মাঝরাতে বৃষ্টি এল। একবার বাজ পড়ল। ঘুম ভাঙতে বাথরুমে গেলাম। আর তখনই… এই বাংলোটা একটা পাঁচিলঘেরা কম্পাউন্ড। বাগান আছে। দোতলা থেকে পাঁচিলের ও-পাশ দেখা যায়। বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে চারধার। আর সে-সব অগ্রাহ্য করে দাঁড়িয়ে আছেন সাধুবাবা। একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে। দৃষ্টিতে এক ভয়ংকর রাগ। কাঁপতে কাঁপতে বিছানায় গেলাম। আলো জ্বালিয়ে, টিভি চালিয়ে সারারাত জেগে রইলাম। আর উঁকি মারার সাহস হয়নি।
সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত
কেয়ারটেকার বলল, “স্যার, ওই নিরামিষ তরকারি আর রুটি, যাব আর আসব।”
আমি রিপোর্ট লিখছিলাম। অন্যমনস্ক হয়ে বললাম, “যাবে? যাও।” তারপর কথা বোধগম্য হওয়াতে চমকে উঠে বললাম, “এর আগে কী বললে? যোগী?”
“হ্যাঁ, স্যার।”
তারপর ভাঙা ভাঙা বাংলায় সে জানাল গত সপ্তাহ থেকে এক সাধুবাবা এসেছে এলাকায়। জঙ্গলেই থাকছে গাছের তলায়। গাঁয়ের বউ-ঝিরা তাঁকে খেতে দেয় দু-বেলা। উনি নানা কথাবার্তা বলেন। লোকের জ্বালা-যন্ত্রণার কথা শোনেন। এ-বেলা কেয়ারটেকারের বউয়ের সেবা নিয়ে ধন্য করেছেন ইত্যাদি।
“ওষুধ-টসুধ দেয়? নাকি মন্ত্রপূত মাদুলি? তাগা-তাবিজ?” আমি হালকা জিজ্ঞেস করলাম।
মাঝবয়সি দেহাতি কেয়ারটেকার দেঁতো হেসে চলে গেল। এদের ভয়ভক্তি প্রচুর থাকে সাধারণত। আমি কাজে মন দিলাম। রিপোর্ট লিখে হেড অফিসে মেল করতে হবে। সরকারি কাজে এসেছি। আমাদের দপ্তর নদীর বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ করে। পাশেই দামোদর বইছে। সামনেই বর্ষাকাল। এ-সময় সতর্ক না হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে জেলায়।
॥ ২॥
সরকারি বাংলোটা নির্জন। আমি ছাড়া লোকই নেই এখন। একা কথা না বলে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। বিকেলে কাজ শেষ হতে ভাবলাম হেঁটে আসি।
পশ্চিম বর্ধমানের এ-অঞ্চলটা দুর্গাপুর থেকে আর একটু ভেতরে। ওডোমস মেখে মশার ভয় কাটিয়ে হাঁটতে বেরিয়ে এমন হাঁটা লাগালাম জঙ্গলের ভেতর, দেখি ঝপ করে কখন সন্ধে নেমে এসেছে। আমার আবার জঙ্গল বেশি ভালো লাগে পাহাড়-সমুদ্রের চেয়ে। জঙ্গল অবশ্য খুব ঘন নয়। গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে দিব্যি পায়ে চলা পথ আছে। সঙ্গে টর্চ ছিল আমার। আলো মেরে মেরে ফিরতে লাগলাম। বাঘ-ভালুক নেই যখন ভয়ও নেই। দু-চারটে শেয়াল থাকলে থাকুক না।
সবে ভাবছি পথ ভুল হল নাকি, দেখি সামনে গাছের গোড়ায় ধুনি জ্বালানো। সামনে বসে সেই সাধুবাবা।
লম্বা বটে। রোগা, মাংসহীন চেহারায় আরও প্রকাণ্ড লাগে। বসে আছেন, তবু মনে হল দাঁড়ালে সাড়ে ছয় ফুট হবেন। মুখে দাড়িগোঁফ সবই সাদা।
মানে মানে সরে পড়ছিলাম, হঠাৎ নজর আটকে গেল গলায়। কালোমতো সুতোয় নীলচে মণি ঝুলছে একটা। কোথায় দেখেছি এ-মণি? কোথায়…
বিদ্যুৎচমকের মতো মনে পড়ে গেল। গতবছর পৈতৃক বাড়ি ভেঙে প্রমোটারের হাতে দেওয়া হয়েছিল। তখন ছাদের চিলেকোঠার ঘর থেকে একখানি খাতা বেরোয়। পুরোনো ঝুরঝুরে খাতা। ঠাকুরদাদারই হবে বোধ হয়। অনেক জমিজিরেত মাপের হিসেব ছিল তাতে। ঠাকুরদাদা সার্ভেয়র ছিলেন।
“ক্যায়া দেখ রহে হো?” চোখ বন্ধ অবস্থায় সাধুবাবা গর্জে উঠেছেন।
ভয়ে কোন দিকে পালাব বুঝে পেলাম না।
“তোমাদের বারণ করেছি না রাতে আমার কাছে আসবে না?”
“ভুল হো গয়ে বাবা। অভি যাতা হুঁ।” বলে আমি কোনোমতে প্রায় দৌড় লাগাব, সাধুবাবা ডাকলেন।— “তুমনে ক্যায়া দেখা?”
“কুছ নহি বাবা!”
“ঝুট। বতাও।”
ভয়ের চোটে গড়গড় করে বলে ফেললাম আঙুল তুলে, “উও হার বাবা।”
“অউর ক্যায়া দেখা?”
“কুছ নহি, অউর কুছ নহি।”
“যাও ভাগো।”
আমি দৌড় দিলাম।
॥ ৩॥
হাঁপাতে হাঁপাতে বাংলোয় ঢুকলাম। চৌকিদারকে কফি বলে চোখে-মুখে জল দিয়ে ধাতস্থ হলাম খানিক। আর একটু হলেই হয়েছিল। এসব সাধু-সন্ন্যাসীদের বিশ্বাস আছে? তেড়ে এসে গায়ে হাত তুললে কী করতাম কে জানে। এঁদের গায়ে আসুরিক জোর হয়।
কফি আসার পর চৌকিদারকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমাদের সাধুবাবা রাতে খান না?”
“না, হুজুর। উনি সূর্যাস্তের পরে কিছু খান না। সূর্যাস্তের পর ওঁর কাছে যাওয়া মানা। নিষেধ করেছেন।”
কফি খেয়ে ল্যাপটপ খুললাম। বার করলাম সেই ছবি। স্ক্যান করা ছিল আমার কাছে।
ঠাকুরদাদার সেই খাতায় জমির মাপ বাদেও একটা জিনিস ছিল। একটা পেন্সিল স্কেচ। এক যোগীর ছবি। প্যাস্টেল রঙে আঁকা। গেরুয়া কাপড়। গলায় নীলচে মণি।
ভুল বললাম, যোগী নয়। যোগিনী। মাঝবয়সি মহিলা। বয়েস ষাট তো হবেই। হাতে ত্রিশূল। মুখ থমথমে।
ল্যাপটপে সেই ছবির দিকে তাকিয়ে রইলাম বহুক্ষণ। হুবহু সেই মণি, যা আজ দেখেছি।
মাঝরাতে বৃষ্টি এল। একবার বাজ পড়ল। ঘুম ভাঙতে বাথরুমে গেলাম। আর তখনই…
এই বাংলোটা একটা পাঁচিলঘেরা কম্পাউন্ড। বাগান আছে। দোতলা থেকে পাঁচিলের ও-পাশ দেখা যায়।
বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে চারধার। আর সে-সব অগ্রাহ্য করে দাঁড়িয়ে আছেন সাধুবাবা। একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে। দৃষ্টিতে এক ভয়ংকর রাগ।
কাঁপতে কাঁপতে বিছানায় গেলাম। আলো জ্বালিয়ে, টিভি চালিয়ে সারারাত জেগে রইলাম। আর উঁকি মারার সাহস হয়নি।
॥ ৪॥
সকালে কফি-বিস্কিট দেবার সময় চৌকিদার জানাল সাধুবাবা নাকি চলে গেছেন। সকালে কেউ তাঁকে আর দেখেনি।
মনের আনন্দে আমি দশটা অবধি ঘুমোলাম।
বিকেলে আবার বেরিয়েছি, যাব না যাব না করেও মন জঙ্গলে টেনে নিয়ে গেল। এবারে ধুনি নেই, সাধু নেই— সব ফাঁকা। নেই বলেই অবশ্য সাহস করে এসেছি। থাকলে…
এদিক-ওদিক ঘুরে ফিরব, কে যেন মুখ চেপে ধরল পিছন থেকে। মহা আতঙ্কে জ্ঞান হারালাম।
বেশিক্ষণ অবশ্য অজ্ঞান থাকা হল না। শিউরে উঠে দেখি সেই প্রকাণ্ড সাধু নাকের সামনে কী ধরেছেন। মিটিমিটি হাসছেনও। ভয়ে চেঁচাব কি না ভাবছি এমন সময় সাধু বললেন, “কুছ ডর নহি বেটা, ম্যায় বুঢ়া সাধু হুঁ, মুঝসে ক্যায়া ডর? সচ সচ বতাও সব।”
প্রাণ যেতে বসেছে। তবু আশায় আশায় সব বললাম। ঠাকুরদাদা, চিলেকোঠা, ছবি… সাধু শুনলেন। আর নিঃশব্দে ঘাড় নেড়ে যেতে লাগলেন।
একসময় বললেন, “দাদাজি কৌনসা নৌকরি করতে থে?”
বললাম।
“বনারস ইয়া আগ্রা থে কভি?”
আমি উৎসাহে চেঁচিয়ে বললাম, “বেনারস… হ্যাঁ, কুড়ি বছর ছিলেন। স্বাধীনতার আগে।”
সাধু চুপ করে রইলেন। তারপর শ্বাস ফেলে বললেন, “মেরা অন্দাজা সহি থা। উও বনারস মে হি হ্যায় অভি।”
“কে?”
“যোগিনী।” বলে নিজের মণিটি গলা থেকে খুললেন। হাতের তালুতে রেখে বললেন, “এই জিনিস তার কাছেও আছে। দুটো যার কাছে থাকবে সে…”
“সে কী, মহারাজ?” আমি ভয়ে ভয়ে বললাম।
সাধু হাসলেন।— “ঠিক বলেছ। যার কাছে থাকবে সে মহারাজা। তা-ই কেন? সে সম্রাট।”
আমি চুপ করে রইলাম।
“তাই দুটো ছিল এক সম্রাটের কাছে। ভারতের সেরা সম্রাট। তিনি মানুষের ভালো চাইতেন।”
জঙ্গলে কীসের যেন আলোড়ন। আমি চমকে উঠলাম। কী যেন ছুটে আসছে। গাছপালা তোলপাড় করে।
“ভয় পেও না। কিছু করবে না।” সাধু হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়েছেন।
সামনে এসে যে দাঁড়িয়েছে, সে কি মানুষ? অন্তত আট ফুট। শরীর সাদা পোশাকে মোড়া। হাতে গ্লাভস। কী একটা যন্ত্র হাতে ধরা। গাছের গোড়া খুঁড়ছে।
“তুমি ভবিষ্যৎ দেখছ। ও আমাদের দেখতে পাচ্ছে না। খেয়াল করে দেখো চারপাশ পালটে গেছে।”
আমি নির্বাক হয়ে দেখছি। গাছপালা অন্যরকম লাগছে। দূরে বাড়িগুলো নেই। কেমন যেন আকাশ।
“এই গাছের শিকড়ের গুণ আছে। ওর লাগবে। মৃত্যুর পর খেলে শরীর অন্তত কয়েক বছরের জন্য পুনরায় জীবিত হয়ে ওঠে।”
মানুষটা খুঁড়ে চলেছে প্রাণপণে।
“ওর কেউ মারা গেছে আজ। কোনও আপনজন। এই লোকটি একজন গবেষক। এদের পৃথিবীতে মৃত্যু হলে পুনর্জীবিত করার আইন নেই। অথচ বিজ্ঞান এগিয়েছে। ও লুকিয়ে…”
লোকটি মুখোশ খুলে ফেলেছে। কাঁদছে।
॥ ৫॥
মণিকর্ণিকা ঘাটে রাতে মাঝে মাঝে তাঁকে দেখা যায়। তিনি শিব উপাসিকা। পুরাণে কথিত আছে, স্বয়ং মহেশ্বর মণিকর্ণিকায় রাত্রিযাপন করেন। মৃত ব্যক্তির কানে কানে পথনির্দেশ করেন।
আজও তিনি ছিলেন। আমার চিনতে ভুল হয়নি। ছবি এখন আমার হাতে। ল্যাপটপ থেকে প্রিন্ট আউট নেওয়া। সাধুবাবাই বলে দিয়েছিলেন—‘দেখলে কথা বলবে, ভয় নেই।’
উনি গঙ্গাজল মুখে ঠেকিয়ে প্রণাম করে সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলেন। আমি সামনে দাঁড়ালাম। তারপর ছবিটা এগিয়ে দিলাম।
একটা মুহূর্ত। যেন অনেকক্ষণ মনে হল। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি অনাদিবাবুর কে হও? নাতি?”
আমি গলার সেই হার দেখছিলাম। বললাম, “হ্যাঁ।”
“এস।”
গলিঘুঁজি পেরিয়ে আমরা একটা তিনতলা বাড়িতে এসেছি। উনি হঠাৎ পিছন ঘুরে বললেন, “সিপাহি গদরের সময় এখানে খুনখরাবা হয়েছে। বাহাদুর শাহের এক ছেলে এ-বাড়ি লুকিয়ে ছিল। পারেনি বাঁচতে। অংরেজরা আমার সামনেই তাঁকে কচুকাটা…”
বলে হাসলেন। আমি ভয়ে কেঁপে উঠলেও কিছু বললাম না। সিপাহি বিদ্রোহ একশো পঁয়ষট্টি বছর আগের ঘটনা।
“অনাদিবাবু এ-বাড়ি ভাড়া নেন। আমি এককোণে থাকতাম। কেউ জানতে পারেনি। অনাদিবাবু ধরে ফেলেন। তোমরা বাঙালিরা বহত চালাক। ভারি লেখাপড়া করো তোমরা। অনাদিবাবু আমার কথা কোন যোগীপুরুষের কাছে শুনেছিলেন। তাঁর নাম নেব না।”
আমি চুপ করে আছি। ঠাকুরদাদা মহা পন্ডিত লোক ছিলেন। ইতিহাস-পাগল ছিলেন একদম। শেষ জীবনে অবশ্য উন্মাদ হয়ে যান। আমি তখন ছোটো। চিৎকার করে বলতেন, ‘কী দেখলাম, কী দেখলাম… কেন দেখলাম… কাকে দেখলাম…’ আমরা ছোটোরা ভয়ে কাছে যেতাম না।
যে-ঘরে ঢুকেছি তা ছোটো। আসবাব সামান্য। একখানা খাট। এখানে থাকেন উনি? কত বছর ধরে?
“উনি বললেন, ‘মা, আমি সব জেনে ফেলেছি।’
“আমি বললাম, ‘কত টাকা চাও? কাউকে বলবে না। তোমায় এমন গুপ্তধনের সন্ধান বলে দিচ্ছি…’
“উনি বললেন, ‘মা, টাকা নয়। শুধু বলো এ-জিনিস কি সত্যি?’
“আমি বললাম, ‘সত্যি।’
“ ‘তুমি পেলে কী করে?’
“ ‘জানতে চেও না। সব কথা বলতে পারব না। তবে দুটি সন্ন্যাসী গোষ্ঠী যন্ত্রটিকে দু-ভাগে ভাগ করে নিয়েছিল। একদল অতীত রাখল। তাদেরই শেষ প্রতিনিধি আমি। অন্যদল ভবিষ্যৎ রেখেছে।’
“ ‘অতীত-ভবিষ্যৎ সব দেখা যায়?’
“ ‘না। আমারটায় শুধু অতীত। ভবিষ্যতের যন্ত্র আর একজনের কাছে। সেও যোগী। অতীত-ভবিষ্যৎ শুধু সম্রাটের কাছেই একসঙ্গে থেকেছে। তাঁর গলায় দুটি মণিই ছিল। তাঁর মৃত্যুর আগে মণি দুটি খুলে নেওয়া হয়। তিনিই চেয়েছিলেন এ-জিনিস কোনও গৃহী মানুষের হাতে পুরোপুরি না পড়ুক।’
“অনাদিবাবু এরপর যা বললেন তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি বললাম, এ হয় না। উনি জেদ ধরলেন। শেষে আমি বাধ্য হলাম…”
ঘড়িতে রাত বারোটা। আমি বললাম, “ঠাকুরদাদা পাগল হয়ে গেছিলেন।”
উনি শ্বাস ফেলে বললেন, “জানতাম। ও যে দেখে…”
আমি চমকে উঠে বললাম, “কী দেখেছিলেন?”
উনি একটু চুপ করে থেকে উত্তর দিলেন, “যা দেখেছিলেন তা আমিও কখনও দেখতে চাইনি। উনি কুরুক্ষেত্র দেখতে চেয়েছিলেন। একটি অলিখিত নিয়ম আছে— যার সঙ্গে অতিমানবীয় কিছু যুক্ত তা দেখা যাবে, কিন্তু তাতে রক্ষাকবচ থাকবে না। অর্থাৎ, এই যন্ত্র তোমাকে যা দেখাবে তার কু-প্রভাব থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু কোনও অপার্থিব শক্তি তাতে থাকলে তার প্রভাব মনে পড়তে পারে। অনাদিবাবু টানা দশদিন দেখেন। তখন থেকেই তাঁর বিকৃতি শুরু হয়ে গিয়েছিল।”
আমি হিসেব করে বললাম, “তারপর থেকেও প্রায় কুড়ি-পঁচিশ বছর চাকরি করেছেন। কিন্তু মানসিক রোগ ছিল। শেষদিকটা আর সামলাতে পারেননি।”
কিছুক্ষণ চুপচাপ। উনি প্রশ্ন করলেন, “তুমি কী চাও?”
“কিছু চাই না। শুধু কৌতূহল ছিল।”
“কিছু দেখতে চাও না?”
“চাই।”
“কী?”
“যিনি এই যন্ত্র প্রথম ব্যবহার করেছিলেন তাঁকে একবার দেখব।”
উনি চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, “তাহলে কথা দাও তারপর আর কোনোদিন আমার কাছে আসবে না, আমাকে শান্তিতে থাকতে দেবে।”
॥ ৬॥
একটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলেছি আমি। ঘন দুর্ভেদ্য জঙ্গল। এখন রাত।
তবে তাতে কোনও অসুবিধা নেই। কারণ, জঙ্গলের মাঝে মাঝে আগুন জ্বলছে। কিন্তু সেগুলি মশালের আগুন নয়। চিতার আগুন। তাতে জীবন্ত মানুষ জ্বলছে।
ওই একজন লাফ দিয়ে পড়ল। একজন নারী। রক্তমাখা খোলা তরবারি নিয়ে তিনি ঝাঁপ দিলেন।
পরমুহূর্তে এক বালিকা উন্মাদের মতো সেই চিতায় ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি চিৎকার করে ঠেকাতে গেলাম। আমাকে ভেদ করে বালিকাটি ঝাঁপিয়ে পড়ল আগুনে।
আর একটু এগিয়ে খোলা জায়গা। সেখানেও চিতা জ্বালানো হয়েছে। তা প্রদক্ষিণ করে চলেছেন এক বিশালদেহী পুরুষ। দানবের মতো চেহারা। খালি গায়ে ডুমো ডুমো পেশি। গলায় স্বর্ণহার। হাতে সোনার বাজু। তাঁর পিছনে অনেক লোক। তাঁকে আকুলভাবে ডাকছে। তিনি কর্ণপাত করছেন না। তাঁর দু-চোখে জল। তিনি আত্মাহুতি দেবেন। গুনে গুনে সাতবার প্রদক্ষিণ করে তিনি থামলেন। পিছনের লোকেরা সব ডুকরে কেঁদে উঠল।
আমি স্থান-কাল-পাত্র ভুলে চিৎকার করে উঠলাম, “না মহারাজ, না! শুনুন, আমার কথা শুনুন! আপনি ইতিহাস হতে চলেছেন। কলিঙ্গ আপনাকে ধ্বংস করতে নয়, গড়তে এসেছে ইতিহাসে। আপনি তথাগতর শরণ নিতে চলেছেন। দিকে দিকে বইবে ধম্মের বাণী। এখনই আসবেন উপগুপ্ত আর রাজমহিষী কারুবাকি। মহারাজ, দয়া করুন!”
শিবসাধিকা সন্ন্যাসিনী, তুমি ভুল বলেছ। ঘটনা যা প্রবাহিত হয়ে গেছে তাকে ঠেকানো যায় না বলেছিলে। ভুল বলেছ।
ওই যে মহারাজ চণ্ডাশোক দাঁড়িয়ে পড়েছেন। মুখ নীচু করে কান পেতে কী যেন শোনার চেষ্টা করে চলেছেন। এদিক-ওদিক দেখছেন। কাকে খুঁজছেন।
তুমি ভুল বলেছ সাধিকা। আমি ইতিহাস হতে চলেছি এখন।
কিশোর ঘোষাল ▪ পুষ্পেন মণ্ডল ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ মৌসুমী রায় ▪ অদিতি ভট্টাচার্য ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ শংকর লাল সরকার ▪ বাণীব্রত গোস্বামী ▪ সহেলী রায় ▪ অমিয় আদক ▪ সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত ▪ সুতপা সোহহং
বদ্রীনাথ পাল ▪ শ্যামাচরণ কর্মকার ▪ দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী ▪ স্বপন কুমার বিজলী ▪ সুব্রত দাস ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ মধুমিতা ভট্টাচার্য ▪ কণিকা দাস ▪ সৌমেন দাস ▪ নীলেশ নন্দী
রম্যাণী গোস্বামী ▪ দীপঙ্কর চৌধুরী ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ রণিত ভৌমিক
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ অরিন্দম দেবনাথ ▪ গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ▪ কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ সুশান্ত কুমার রায় ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অলংকরণ
মায়াসখা নন্দী ▪ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ▪ একপর্ণিকা ক্রিয়েটিভস