বড়ো গল্প
FREE SHIPPING IN INDIA
বড়ো গল্প
বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে করতে আর ঘুম এল না। খুব ভোরের দিকে দুত্তোর বলে উঠে পড়লাম। নীচে কলতলায় গিয়ে মুখে-চোখে জল দিয়ে ফিরে আসছি, হঠাৎ কাসুন্দি গাছের ঝোপের কাছটা নড়েচড়ে উঠল। ঝাপসা অন্ধকারে চমকে তাকিয়ে দেখি দুটো পাটকিলে রঙের খরগোশ। কী সুন্দর গোলাপি চোখ দুটো। চকচক করছে। ওরা ছোট্ট ছোট্ট লাফে জঙ্গলে মিলিয়ে গেলে চোখ সরাতে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার হৃৎপিণ্ডটা এক লাফে বুকের কোর্টের ভিতরে হাডুডু খেলতে আরম্ভ করল।
রম্যাণী গোস্বামী
আমার জেঠুর বাড়িটা কোনও এককালে জমিদারের প্রাসাদ ছিল। রোদে পুড়ে, বৃষ্টির জলে ভিজে এখন সেই প্রাসাদের একটা অংশ প্রায় ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে। যে অংশটা টিকে আছে, তার কিছুটা জায়গায় সিমেন্টের নতুন গাঁথনি তুলে চুনকাম আর সাদা রঙের পোঁচ মেরে সামান্য কলি ফেরানো হয়েছে। দূর থেকে দেখা যায় কালো জীর্ণ অংশটার পাশেই সাদা বাড়িটা কেমন ঝকঝক করছে।
চব্বিশ ঘণ্টা কাজে ব্যস্ত থাকা হরিকাকা মুখ বেঁকিয়ে বলে, “পোড়া কপাল। এ আর কী দেখছ? সেই ঠাটবাট, সিন্দুক উপচানো পাহাড়ের মতো ধনদৌলত— না না, ও তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না। সে দেখেছিল বটে আমার বাপ-ঠাকুরদারা। জানো এই বাড়ির পিছন দিকটায় দিঘির ধার ঘেঁষে এককালে হাতিশাল ছিল? সেখানে বড়ো কর্তা অসমঞ্জবাবুর তিন-তিনটে পোষা হাতি ছিল। সেই হাতিদের পিছনেই মাস গেলে খরচ ছিল কত।”
আর একটু থেমে খেঁকিয়ে ওঠে হরিকাকা— “তোমরা কী বুঝবে ওসবের? তোমার জেঠু তো পঞ্চাশ টাকা মাইনে বাড়ানোর কথায় সেদিন এমন আঁতকে উঠল! দেখি কিছুক্ষণ নড়েও না, চড়েও না। আমার মনে হল কী জানি বাপু, হার্টফেলই করল বুঝি। যাও যাও, খেলাধুলা করো গিয়ে। কাজের সময় আমাকে জ্বালিও না।”
হরিকাকার নাকি খুব বানিয়ে বানিয়ে কথা বলার অভ্যেস আছে। কে জানে কোনও কালে এখানে সত্যিই হাতিশালা ছিল কি না। জেঠু তো ওকে মুখের ওপরেই বলে, “হরি, বকবক বন্ধ কর তো! ছেলেটা এসেছে, ওর আদর-যত্নের যেন ত্রুটি না হয়। তাহলে কিন্তু আমার এই হাতের লাঠিই তোর পিঠে ভাঙব।”
দোতলায় চারটে বড়ো বড়ো ঘর। তার মধ্যে পাশাপাশি দুটো শোবার ঘর আর তৃতীয়টায় সোফা-টোফা দিয়ে সাজিয়ে বাইরের লোকেদের বসবার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই পুরোনো বাড়ির ড্রয়িং-রুমে আধুনিক ধাঁচের সোফাগুলো দেখে যে কী হাসি পায় আমার! দোতলায় আরও আছে এক চওড়া বারান্দা। ওতে বড়ো বড়ো থাম। মেঝেতে লাল কালো টালির চৌকো খুপরি। চাঁদনি রাতে সেই খোপগুলোয় আলো এসে পড়ে চকচক করে। ঘুমরি নদীর জল রূপালি আলো ঝলকায়। বারান্দায় দাঁড়ালে নদীটাকে স্পষ্ট দেখা যায়। আগে নদী এত কাছে ছিল না। ধীরে ধীরে পাড় ভাঙছে। নদী এগিয়ে আসছে এদিকেই।
ঘোর বর্ষায় প্রবল হুংকার জেগে ওঠে ঘুমরি নদীর বুকের তলা থেকে। কেমন যেন গুমগুম করে ওঠা কামানের ডাকের মতো সেই আওয়াজ। শুনলে বুকটা ছমছম করে ওঠে ভয়ে। জেঠতুতো দাদা বলেছে সেও নাকি মাঝরাতে শুনেছে অমনি আওয়াজ। দাদাটা অবশ্য আমাকে ভয় পাওয়ানোর মাস্টার। ইচ্ছে করেই বলল, নাকি সত্যিই শুনেছে জানি না। ও সদ্য কলেজে ভরতি হয়েছে। বর্ধমানে হস্টেলে থাকে। এখন পড়াশোনার ভীষণ চাপ। আগের মতো আর আমাকে পাত্তা দেয় না। খেলেও না আমার সঙ্গে। তবে ওই খ্যাপা নদীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে একদিন এই বাড়িটাও নদীর গর্ভে তলিয়ে যাবে। তখন? জেঠু যে কেন এত জায়গা থাকতে এরকম একটা জঙ্গলের ভিতরে এসে পয়সা খরচ করে এই বাড়িটাই কিনতে গেল। কোনও মানে হয়? ধুস।
একতলায় বিশাল রান্নাঘর। সেখানেই মেহগনি কাঠের বড়ো ডাইনিং টেবিলটা রাখা হয়েছে। রাতে মোমবাতির আলো এ-মাথা থেকে ও-মাথা অবধি পৌঁছতে পারে না, এমনি বিশাল জিনিসটা। এটা নাকি জমিদার পরিবারেরই ছিল। আর যা সব দামি দামি ফার্নিচার মোটামুটি সবই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল আগেই। আগেকার দিনের নিয়ম মেনে স্নানঘরটা একটু দূরে। উঠোন পেরিয়ে যেতে হয়। বৃষ্টির দিনে বড্ড অসুবিধে হত বলে এখন উঠোনের একপাশে একটা টিনের শেডমতো তৈরি করা হয়েছে। সেটা সোজা গিয়ে শেষ হয়েছে স্নানঘরের দরজায়। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়লে আশেপাশের সবকিছু ঝাপসা হয়ে মুছে গিয়ে টিনের চালের নীচের সরু লম্বা পথটা একটা সুড়ঙ্গের আকার নেয়।
স্নানঘর লাগোয়া ওই ছোট্ট পাতকুয়োটাকে দারুণ ভয় পাই আমি। জানি না এর পিছনে কী কারণ রয়েছে। কিন্তু যতবারই ওই কুয়োর কাছাকাছি যাই, আমার সমস্ত শরীর জুড়ে একটা কিলবিলে ভয়ের স্রোত অকারণেই চলাফেরা করে। স্নানের সময় দম বন্ধ করে মাথায় জল ঢালতে ঢালতে টের পাই অজানা আতঙ্কের ভাব খুদে খুদে পোকার মতো সেই ভয়ের স্রোতে প্রবলভাবে সাঁতার কাটছে।
বাবার চাইতে প্রায় দশ বছরের বড়ো হবে জেঠু। অত ভালো চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে শহর ছেড়ে এত দূরে একটা জঙ্গুলে এলাকায় জেঠুর পাকাপাকিভাবে চলে আসাটা বাবা প্রথমটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। মায়ের মতে শাল-মহুয়ার বনের ভিতরে এত বড়ো একটা বাড়ি জলের দরে পেয়ে যাওয়ায় জেঠুর মাথাটাই আসলে খারাপ হয়ে গেছে। আমি কিন্তু জানি যে কলকাতার ভিড়, হইচই এড়িয়ে নিজের মতো পড়াশোনায় ডুবে থাকার জন্যই বাড়িছাড়া হল জেঠু। ফ্ল্যাটের খুপরি ঘরে তিনখানা বড়ো সাইজের ট্রাংকের ভিতরে জেঠুর প্রাণের চাইতেও প্রিয় যে বইগুলো পড়ে পড়ে পোকা লেগে, পাতাগুলো ঝুরঝুরে হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, সেগুলোর একটা গতি হল এতদিনে। দোতলায় বসবার ঘরের পাশেই বিরাট হলে চমৎকার লাইব্রেরি সাজিয়েছে জেঠু। স্টাডি-রুমও সেটাই। বিগত এক-দেড় বছরে বেশ কয়েকবার শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় আমরা জেঠুর বাড়িতে ছুটিছাটায় বেড়াতে এসেছি। জায়গাটা আমাদের সকলেরই বেশ পছন্দ হয়েছে।
পছন্দের কারণ হল এর পরিবেশ। বাড়িটার চারপাশেই ঘন শালবনের জঙ্গল। তিরতির করে একটা নাম না জানা নদী বয়ে চলে খুব কাছেই। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে শোনা যায় নিশাচর প্রাণীদের চলাফেরার শব্দ। শীতের পরিষ্কার আকাশে স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে দুধসাদা ছায়াপথ। বারান্দায় কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার বিচিত্র শব্দ শুনতে কী যে মায়াময় লাগে। এবারে অবশ্য জেঠুর কাছে কিন্তু আমি একাই এসেছি। একগাদা গল্পের বই ব্যাগে ভরে। বাবার অফিসে দারুণ চাপ। আমাকে পৌঁছে দিয়ে নিজে একটা দিনও থাকতে পারেনি। মায়ের ইস্কুলের একগাদা খাতা। আমিও আসতাম না। বাবা-মায়ের জোরাজুরিতে আসতে হল। কেউ না এলে জেঠুটা যে দুঃখ পাবে। দাদা হস্টেলে চলে যাওয়ার পর থেকে একা হয়ে গেছে জেঠু। আমি আসাতে খুশি হয়েছে খুব। সেভেনের ফাইনাল টার্ম শেষ করে এখন আমার হাতে দু-সপ্তাহের অবকাশ। ফের নতুন সেশনের ক্লাস আরম্ভ। তাছাড়া জেঠুর বাড়ির কেয়ারটেকার কাম রাঁধুনে হরিকাকা কষা চিকেনটা যা রাঁধে না! উফ্।
কিন্তু এই যে বিশ্রী স্নানঘর লাগোয়া বাঁধানো কুয়োটা! সে তার সারা গায়ে শ্যাওলা মেখে, নিষ্প্রাণ, সরীসৃপের মতো শীতল শরীরে অপেক্ষা করে আমার জন্য। আধো অন্ধকারে কুয়োটাকে দেখলেই কেন যেন আমার কলজে ছমছম করে ওঠে। মনে হয় যেন কুয়োর পিছনের ওই ঘিনঘিনে আঁধারে ওত পেতে গুটিসুটি দিয়ে বসে আছে একটা লম্বা কালো ছায়া। এত বড়ো বাড়িটায় ছায়াটা যেন আমাকে সবসময় লক্ষ করছে ওত পেতে।
আমার ধারণা যে ভুল নয় তা টের পেলাম। এবার এখানে আসার ঠিক দু-দিনের মাথায় ঘটনাটা ঘটল। স্নান শেষ। দ্রুত হাতে গামছা দিয়ে গা মুছতে মুছতে বার বার চোখের কোনা দিয়ে তাকিয়ে দেখছি কুয়োর পিছনটা। আমার বুকের ভিতরটায় ক্রমাগত দুরমুশ চলছে। মাঝারি মাপের স্নানঘর। পাশে অর্ধেকের বেশিই অংশ জুড়ে আছে সেই কুয়ো। ঘরটার খুব উঁচুতে একটাই ভেন্টিলেটর। সেটা দিয়ে আলো বিশেষ ঢুকতে পারে না। সত্যিই কুয়োর ও-পিঠের অন্ধকারটায় যেন কিছু একটা নড়ে উঠল। একটা কালো কুচকুচে শরীর হামাগুড়ি দিয়ে সরসর করে পিছলে চলে এল আমার দিকে। শীর্ণ মুখ। চোখের কোটরে অন্ধকার এবং লোকটার কালো গায়ে একটা লেংটি মতো ছাড়া কোনও জামাকাপড় নেই। দারুণ ভয়ে আমি লাফিয়ে গিয়ে পড়লাম বন্ধ দরজার উপর। কাঁপা হাতে শিকল খুলে ছিটকে বেরিয়ে এলাম বাইরে।
রান্নাঘরের দাওয়ায় বসে হরিকাকা তখন উনুন ধরানোর জন্য ছোটো ছোটো টুকরোয় কাঠ চেরাই করছিল। আমাকে সে দেখল অবাক চোখে। তারপরই বিজ্ঞের মতো মুখ করে বলল, “ভয় পেলে? আহা, কীসে ভয় পেলে শুনি? ওরকম কত কী আছে এই বাড়িতে। একটেরে ঘরটায় বসে আপনমনে রান্নাবান্না করি, গায়ের কাছে ফোঁস ফোঁস নিশ্বাস শুনি, কতরকম শব্দ। কাঁসার বাটিতে খাবারের ঢাকনা সরসর করে সরে যায়, হয়তো বাতাসে ঝাপটা দেয়; মুখ ফিরিয়ে দেখি, কেউ কোথাও নাই।”
আমার কাছ থেকে গোটা ঘটনা শুনে হরিকাকা বলল, “যাকে দেখলে তার নাম কী জানো? ও হল কালাদেও। একশো বছর ধরে এই এলাকার বাসিন্দা। কুয়োর পিছনের ঠান্ডায় আর অন্ধকার ঝোপঝাড়ের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায়। শ্যাওলা খুঁটে খায়। দানাপানি কিছু জুটলে তবেই আরাম করে ঘুমায়। কাউকে কিছু করে না।”
আমি তখনও ভেজা শরীরে টাওয়েল জড়িয়ে কাঁপছি। আবার বলল হরিকাকা, “কিন্তু যখন-তখন দেও জাগনা হলে তো মুশকিল। তোমার জেঠু তো আবার শহুরে লোক। সে এসব কিছু মানে না। চলো জামা পরে নাও। তোমাকে একটু আদা-গুড় দিয়ে চা করে দিই। মুড়ির মোয়া বানিয়েছি। খাও দুটো।”
এতক্ষণে একটু যেন চিন্তিতই দেখায় হরিকাকাকে।
(২)
বিকেলে বেশ ক’বার গুমগুম করে মেঘ ডাকল। ঠান্ডা হাওয়া ভেসে এল ঘুমরি নদীর দিক থেকে। কেমন যেন শীত শীত পড়ে গেল। সুতরাং রাতে আমার পছন্দের মুসুরডালের খিচুড়ি। পেঁয়াজ কাঁচা লংকা ঠেসে। সঙ্গে আবার ঝাল ঝাল ডিমকষা, বেগুনি, পাঁপড়ভাজা। হরিকাকা রান্নাঘরে সে-সব নিয়েই ব্যস্ত। টানা দুপুর লম্বা ঘুম দিয়ে উঠে নদীর ধারে খানিক হেঁটে এসে তিনটে আলুর চপ আর এক বাটি মুড়ি খেয়ে অনেকক্ষণ গল্পের বই পড়ে পড়ে আর যখন ভালো লাগল না তখন উঠে পাশেই জেঠুর স্টাডিতে গেলাম।
দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর থেকেই শাল মুড়ি দিয়ে খুব সিরিয়াস মুখে জেঠু মহেঞ্জোদারো সভ্যতার ওপর একটা আর্টিকেল লিখতে ব্যস্ত। আমাকে দেখেই বলে উঠল, “কী? কেমন লাগছে পলাশ? এবার খোকনকে ছাড়া বাড়িটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, তাই না? আচ্ছা, হরি তোকে ঠিকমতো খেতে-টেতে দিচ্ছে তো? অসুবিধা হলে বলিস কিন্তু। ও-ব্যাটার সবটাতেই ফাঁকি।”
ব্যস, এটুকু বলেই আবার মুখ নামিয়ে লেখার মধ্যে ডুবে গেল।
আড্ডা মোটেই জমল না। বলি বলি করে দুপুরের স্নানের সময়ের ঘটনাটাও কিছুতেই মুখ ফুটে বলতে পারলাম না। বললে অবশ্য জেঠু হেসেই উড়িয়ে দিত।
একা একা বারান্দায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর নীচতলায় রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে হরিকাকার পাশে একটা পিঁড়ি পেতে বসলাম। বৃষ্টিটা আর এল না। বদলে কেমন অদ্ভুত একটা হাওয়া ছেড়েছে। দূর থেকে কেমন কান্নার মতো একটানা হু হু শব্দ। জঙ্গল পেরিয়ে এসে ফাঁকা জায়গায় পড়তেই আরও বেড়ে গিয়েছে শব্দটা। আমি গুটিসুটি মেরে উনুনের পাশে বসে হরিকাকার মুখের দিকে তাকালাম।
“কী? গল্প শুনবে? সেই কালাদেওয়ের গল্প?” আমার মনের কথা দিব্যি টের পেয়ে গিয়ে মুচকি হেসে বলল হরিকাকা।
“হুম। শুনব।” গা’টা শিরশির করে উঠলেও আমি জবাব দিলাম।
হরিকাকা চট করে উনুন থেকে কড়াইটা নামিয়ে অন্য একটা ছোটো কড়াই ওতে চাপিয়ে আরও কিছু চেরাই করা কাঠ গুঁজে দিল ভিতরে। আঁচটা জমে উঠতেই কড়াইতে তেল ঢেলে মুচমুচে করে ক’টা পাঁপড় ভেজে আমার সামনে একটা প্লেটে সাজিয়ে দিল। সবই দারুণ তাড়াতাড়ি। একেবারে চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই।
“নাও, পাঁপড়ভাজা খেতে খেতে শোনো। চা করি একটু? আমিও খাব।”
বাড়িতে আমি একফোঁটা চা খাই না। এখানে এলেই খালি খালি চা তেষ্টা পায়। চা-পাঁপড়ভাজা খেতে-খেতেই হরিকাকার কাছে শুনতে পেলাম এই অঞ্চলের প্রচলিত এক বিচিত্র গল্প। ঘটনাটা বিচিত্র তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এককালে এই গ্রামের জমিদার ছিলেন অসমঞ্জ লাহিড়ী। তিনি ছিলেন একজন সুরসাধকও। সুরের সাধনা করতে করতে ক্রমশ ডুবে যেতেন অন্য জগতে। এই বাড়ি তখন এক প্রাসাদোপম অট্টালিকা। ঠাকুর-চাকর মিলিয়ে তিপ্পান্ন জন সদস্য। হরিকাকার বাবার দাদু ছিল তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী ও সেবক। ওর কাছ থেকেই সবটা শুনেছে হরিকাকা। সেই অমায়িক মানুষটার পরিণতি কিন্তু ছিল খুব করুণ।
তখন এরকমই শীতের রাত। সেদিন পূর্ণিমা। আকাশের বুকে চাঁদটা আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে চারপাশে। গভীর রাত অবধি বেহালা বাজাতেন লাহিড়ীবাবু। সেদিনও তাই করেছেন। ঠাকুরকে কড়া এক কাপ কফি বানানোর কথা বলে এসে দোতলার খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়েছেন চাঁদের শোভা দেখবেন বলে। নদী তখন এত কাছে ছিল না। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ বাঁদিকের বাগানের দিক থেকে জমিদারকর্তা শুনলেন একটা শিস দেওয়ার মতো সেই আওয়াজ। তার সঙ্গে মিশে আছে একটা খসখস শব্দ। পায়ের আঘাতে শুকনো পাতার ভেঙে যাওয়ার মতো। কৌতূহলী হলেন উনি। কী ব্যাপার? ঘটছেটা কী ওখানে? সিঁড়ি ভেঙে নেমে এসে তিনি এগিয়ে চললেন সেই শব্দ লক্ষ করে। এত রাতে বেচারা চাকরবাকরগুলো ঘুমোয়। কাকে ডাকবেন? চোর-ডাকাত নয় তো? কী ভেবে দেওয়ালে ঝোলানো দোনলা বন্দুকটাও হাতে নিলেন।
অনতিদূরেই বাগান। আদতে আমের বাগান হলেও আমগাছ ছাড়াও লিচু, কাঁঠাল, নানা জাতের বিস্তর গাছ রয়েছে সেখানে। আর আছে শয়ে শয়ে বাদুড়ের বাস। স্থানীয় লোকেরা বলে বাদুড়বাগান। মাঠ পেরিয়ে একটা রাস্তা সোজা চলে গেছে ওদিকে। চাঁদের আলোয় রাস্তাটার অনেকখানি দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। উনি যেতে যেতে থমকে দাঁড়ালেন।
চাঁদের আলোর তলায় সেই বাদুড়বাগানের দিক থেকে একটা লোক ক্রমশ এগিয়ে আসছে। লোকটার গায়ের রং কুচকুচে কালো। তার মাথার ওপরে চক্রাকারে ঘুরপাক খাচ্ছে বাদুড়ের একটা ঝাঁক। চোখ কচলে নিয়ে ভালো করে দেখলেন উনি। নাহ্, এই শরীর কোনও মানুষের হতে পারে না। অসম্ভব। কারণ, মানুষ এতখানি লম্বা হতে পারে না। উনি নিশ্চয়ই চোখের ভুল দেখছেন।
লাহিড়ীবাবু ওদিকে না তাকানোর চেষ্টা করেন। মনে মনে ভাবতে থাকেন যে এটা একটা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু ওঁর সে ভাবনা স্থায়ী হয় না। কাছেই রাস্তাটা বেঁকে গিয়েছে দিঘির দিকে। পথের দু-পাশে বাঁশগাছ। তার গোড়ায় ঘন কাঁটাঝোপ। সেই কাঁটাঝোপ ঠেলে লোকটা এগিয়ে আসছে দু-হাতে কাদের টেনে নিয়ে চলেছে? ওর দু-হাতের মুঠিতে দুটি দড়ির প্রান্ত আঁট করে ধরা। সেই দড়ি বেঁধে একসারি হতভাগ্য মানুষকে মাটিতে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে আসছে সে। এক পলক দেখলেই বোঝা যায় মানুষগুলির দেহে আর প্রাণ নেই।
ওরা আরও একটু কাছাকাছি আসতেই ভয়ে আর আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলেন লাহিড়ীবাবু। ওঁর হাত থেকে খসে পড়ল বন্দুক। এবার চাঁদের আলোয় মাটিতে ঘষটে ঘষটে নিয়ে যাওয়া প্রথম মানুষটির মুখ দেখতে পেয়েছেন তিনি। সেই মুখ যে তিনি দিনের মধ্যে পাঁচবার আয়নায় দেখেন। মানুষটির পরনে ঘিয়ে রঙা সিল্কের কুর্তি পায়জামা। উনি নিজেও এখন অবিকল সেই পোশাকই পরে রয়েছেন।
পরপর আরও মৃতদেহের মুখগুলিও নজরে এল তাঁর। সকলেই পরিচিত। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশী। কিন্তু চেনা মুখগুলোয় যে চরম ত্রাসের আঁচড় বসিয়েছে, তাকে তিনি কল্পনাতেও কখনও দেখেননি। শিউরে উঠে মনে পড়ল ছোটবেলায় ঘুমের আগে তাঁর দাদুর মুখে শোনা কালাদেওয়ের ইতিবৃত্ত। কুচকুচে কালো যার গায়ের রঙ, যে মৃত্যুর খবর নিয়ে আসে।
কালাদেও কিন্তু একবারও ওঁর দিকে তাকাল না। সোজা চলে গেল গোলদিঘির দিকে। কুচকুচে কালো তার জল। সম্মোহিতের মতো লাহিড়ীবাবু তাকে অনুসরণ করলেন। তারপর সে গভীর মনযোগে শিস দিতে দিতে মৃত শরীরগুলো ধীরেসুস্থে একের পর এক ফেলে দিল দিঘির পাশের প্রাচীন অশ্বত্থ গাছের গোড়ায়। সেই কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল বাতাসে দুলে উঠল গোটা গাছটা। এইবার ঘাড় ঘুরিয়ে হাসল সে। চাঁদের আলোয় সেই শীর্ণ মুখের হাসি আমূল কাঁপিয়ে দিল অসমঞ্জ লাহিড়ীকে।
এই ঘটনার মাস দেড়েকের মধ্যেই এলাকায় দারুণ মড়ক লাগল। কলেরার মড়ক। আরম্ভ হল জমিদারবাড়ির এক চাকরকে দিয়ে। তারপর একে একে অন্য সবাই। জমিদারবাড়ির একজনও বাঁচল না। চলে গেলেন খোদ লাহিড়ীবাবুও। তাহলে সত্যিই পিশাচ এসেছিল জানান দিতে?
কালাদেও! মৃত্যুর দূত। ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চায়ে ছোট্ট চুমুক দিয়ে মনে মনে আরও একবার উচ্চারণ করলাম আমি। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।
(৩)
সেই রাতে আমার স্বপ্নের মধ্যে এল সে। অসমঞ্জবাবুর সেই পিশাচ। স্বপ্নে আমি দোতলার শোবার ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। এর মধ্যে পূর্ণিমা তিথি নেই, তবুও আকাশে গোল থালার মতো চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় রুপোলি হয়ে থাকা নদীর পাশে দাঁড়ানো লম্বা কালো শীর্ণ শরীরটা মৃদু মৃদু নড়ছে। ও কী! নদীর ধারেই বালুতে পরপর ওগুলো কী শুইয়ে রাখা? খেয়াল করলাম যে সেগুলো কিছু মানুষের শরীর। দু-হাতে সেগুলো টেনে টেনে সে তাদের নদীর জলে ফেলছে। ঝপাং ঝপাং শব্দটা যেন আমার কানে এসে বাজছে। এই দারুণ শীতেও আমি দরদর করে ঘামছি। আমাকে দেখেই পিশাচ তার দীর্ঘ বাঁকানো শরীরে ঝংকার তুলে হাসতে থাকল। আমি কাঁপা হাতে ঠকাস করে বন্ধ করে দিলাম পাল্লা দুটো। ওই শব্দেই যেন ঘুমটা ভেঙে গেল। গোটা রাত ঘুম এল না। ঠিক করলাম কালই বাবাকে টেলিফোন করব। আমি বাড়ি ফিরে যাব। আর এখানে নয়। হরিকাকা কষা চিকেনের লোভ দেখালেও নয়।
বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে করতে আর ঘুম এল না। খুব ভোরের দিকে দুত্তোর বলে উঠে পড়লাম। নীচে কলতলায় গিয়ে মুখে-চোখে জল দিয়ে ফিরে আসছি, হঠাৎ কাসুন্দি গাছের ঝোপের কাছটা নড়েচড়ে উঠল। ঝাপসা অন্ধকারে চমকে তাকিয়ে দেখি দুটো পাটকিলে রঙের খরগোশ। কী সুন্দর গোলাপি চোখ দুটো। চকচক করছে। ওরা ছোট্ট ছোট্ট লাফে জঙ্গলে মিলিয়ে গেলে চোখ সরাতে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার হৃৎপিণ্ডটা এক লাফে বুকের কোর্টের ভিতরে হাডুডু খেলতে আরম্ভ করল।
আরে! এ তো সেই কালাদেও! গতকাল দুপুরে যাকে কুয়োর গায়ের অন্ধকারে লেপটে বসে থাকতে দেখেছিলাম। কুচকুচে কালো গায়ের রঙ। ময়লা নেংটি মতো পরা। রোগাভোগা একটা লোক। কলতলার পিছনে জঙ্গলের ধারে যেখানে এঁটো খাবার-টাবার ফেলে হরিকাকা, একটা ঢিবিমতো হয়ে আছে জায়গাটা, সেখানেই ছিল সে। সরীসৃপের মতো গা লেপটে সেখান থেকে খাবার খুঁটে খাচ্ছিল। পাথরের মূর্তির মতো আমাকে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সরসর করে নেমে এল। হাতটা নেংটিতে মুছতে মুছতে জিভ চেটে বলল, “উফ্, ওই খরগোশ দুটাকে একটু আগে দেখলে না... কতদিন ঝলসানো মাংস খাইনি। এক চিমটি লবণ দিয়ে আর ক’টা শুকনা লংকা থেঁতে...”
“ইস্, কী খারাপ! ওই ফুটফুটে খরগোশ দুটোকে দেখে তোমার মাংস খাওয়ার ইচ্ছে করছে? তুমি কি রাক্ষস?”
আমার এত রাগ হল যে কালাদেওয়ের ভয় ভুলে আমি চোখ পাকিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললাম। আমার কথাও শেষ হল আর দূরের মাঠের দিক থেকে কোঁকর কোঁ করে মোরগ ডেকে উঠল। দেখলাম লোকটা কান উঁচিয়ে সেটা শুনছে। আবারও জিভ চেটে ও বলল, “আহা! নধর মোরগ। আমাকে রাক্ষস বললে খোকাবাবু? জানো কতদিন পেট ভরে কিছু খাইনি? তোমাদের বাড়ির কাজের লোকটার ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্টই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে গত দুই হপ্তা।”
এবার আমার লোকটার জন্য মায়া হল। স্বর নরম করে বললাম, “কে, তুমি? কোথায় থাকো?”
“যেদিন যেখানে ইচ্ছা হয় পড়ে থাকি। কেউ কিছু দিলে খাই, না দিলে খাই না। কাল রাতে ছিলাম তোমাদের বাড়ির পিছনের পুরাতন হাতিশালের ভাঙা বারান্দায়। সারারাত খিদের চোটে ঘুম এল না। গাছের ডাল ভেঙে পাথরের ফলা দিয়ে ঘষে ঘষে দুটা মূর্তি বানালাম। দেখবে?”
“হাতিশালায়! দেখব। চলো।” লাফিয়ে উঠে আমি বললাম। তারপর এগিয়ে গিয়ে ওর তালপাতার মতো হাতটা ধরলাম। লোকটাকে আমার খুব আপন লাগছে এখন। একটুও ভয় লাগছে না। রাক্ষস কি এত রোগা হয়?
ওর আস্তানায় পৌঁছে আমি তো অবাক! সামান্য গাছের ডাল, পড়ে থাকা মাটির ঢেলা, ইটের টুকরো থেকে এত সুন্দর সুন্দর জন্তুজানোয়ার, মানুষ, ঘরবাড়ি, গাছপালার রূপ ফুটিয়ে তোলা যায়! এ আমার ধারণাও ছিল না। ওটা কি ঈগলপাখি? ওটা? সাপ? ওই তো গরুড় আক্রমণ করেছে রাবণের রথ! বন্য কেশর ফুলিয়ে ছুটে আসছে উচ্চৈঃশ্রবাঃ! কালীয় নাগের ফণার ওপরে অপূর্ব ছন্দে নাচছে ছোট্ট শ্রীকৃষ্ণ। দেখে দেখে আমার আর পলক পড়ে না।
“এই নাও। এ হল বিরিক্ষদেবতা। যুগে যুগে মানুষেরা পূজা করেছে একে। গাছ না থাকলে পৃথিবী যে রসাতলে যাবে খোকাবাবু। নাও।” আমার হাতে খুব সূক্ষ্ম কারুকাজ করা একটা মূর্তি তুলে দিয়ে বলল সে, “এটা তোমার। এর বদলে কখনও একবেলা খেতে দিও।” এই বলে লোকটা করুণ মুখে হাসল।
তারপর দুপুরে আমাদের জমাটি এক ভোজ হল। হাট থেকে বুনো মুরগির মাংস নিয়ে এল হরিকাকা। শালপাতার থালায় সুগন্ধি বাসমতী চালের ধোঁয়াওঠা ভাত। রোগা লোকটা নিজেই এক গামলা ভাত লাল লাল মাংসের ঝোল দিয়ে চেটেপুটে খেল। তারপর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে একটা মনভোলানো হাসি হাসল আমাদের দিকে তাকিয়ে।
তারও কিছু আগে সকালের চায়ের টেবিলে জেঠুকে কাঠের সেই বৃক্ষদেবতার মূর্তি দেখাতে জেঠু তো অবাক! হাতের তালুতে জিনিসটা ধরে নাড়িয়ে চাড়িয়ে গলায় মুগ্ধতা মিশিয়ে বলল, “বাহ্! অনবদ্য! এগুলো হল কাটুম-কুটুম। যে বানিয়েছে, সে সামান্য কোনও মানুষ নয়। একজন জাত শিল্পী। আমার মোবাইলে ভালো রেজোলিউশনে এর কয়েকটা ছবি তুলে দে তো রে পলাশ। আর তারপর যা, এক দৌড়ে গিয়ে ধরে নিয়ে আয় লোকটাকে। দেখি, কীভাবে ওকে সাহায্য করা যায়। এখন দেশে-বিদেশে নানা স্কিম বেরিয়েছে জানিস তো, এইসব লোকশিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াসে। কয়েকটা জায়গায় অ্যাপ্লাই করলেই হয়ে যাবে।”
এই বলেই জেঠু মহাব্যস্ত হয়ে কোথায় কোথায় যেন চিঠি লিখতে বসে গেল। শেষমেশ হরিকাকা নিজে এসে ধরেবেঁধে খেতে নিয়ে গেল।
দেখতে দেখতে আমার ছুটিটাও হুস করে ফুরিয়ে গেল। জেঠুর বাড়িতে এখন একজন মেম্বার বেড়েছে। বাড়ির নতুন অংশের নীচতলায় একটা বড়ো ঘরে ওয়ার্কশপ মতো খোলা হয়েছে। কাচের আলমারিগুলো থরে থরে ভরে উঠছে চমকপ্রদ সব ভাস্কর্যে। বছরের নানা সময়ে সেখানে এখন জেঠুর বাড়িতে দেশ-বিদেশের মানুষেরা ভিড় করে আসেন। সেই রোগা মানুষটি এখন বিখ্যাত। খবরের কাগজে তার শিল্পকর্মের ছবি বেরোয় আকছার। আর আগের মতো খাওয়াদাওয়ার ভাবনা নেই।
শুধু হরিকাকারই গজগজানি নাকি আগের চাইতে অনেক বেড়ে গেছে।— “সবসময় এত লোকের আনাগোনা, চা করো রে, মিষ্টি আনো রে— শান্তিমতো একদণ্ড বসবার জো নেই, অথচ পঞ্চাশ টাকা মাইনে বাড়াতে বললেই তোমার কিপটে জেঠু...”
কিশোর ঘোষাল ▪ পুষ্পেন মণ্ডল ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ মৌসুমী রায় ▪ অদিতি ভট্টাচার্য ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ শংকর লাল সরকার ▪ বাণীব্রত গোস্বামী ▪ সহেলী রায় ▪ অমিয় আদক ▪ সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত ▪ সুতপা সোহহং
বদ্রীনাথ পাল ▪ শ্যামাচরণ কর্মকার ▪ দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী ▪ স্বপন কুমার বিজলী ▪ সুব্রত দাস ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ মধুমিতা ভট্টাচার্য ▪ কণিকা দাস ▪ সৌমেন দাস ▪ নীলেশ নন্দী
রম্যাণী গোস্বামী ▪ দীপঙ্কর চৌধুরী ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ রণিত ভৌমিক
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ অরিন্দম দেবনাথ ▪ গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ▪ কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ সুশান্ত কুমার রায় ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অলংকরণ
মায়াসখা নন্দী ▪ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ▪ একপর্ণিকা ক্রিয়েটিভস