লোককাহিনি
15% OFF * FREE SHIPPING
লোককাহিনি
রাখি পুরকায়স্থ
সে অনেককাল আগের কথা। লুসাই পাহাড়ের কোলে ছিল এক মেঘ-কুয়াশা মাখা নিরিবিলি গ্রাম। আঁকাবাঁকা পথ, ঢেউ খেলানো সবুজ বনানী, চঞ্চল ঝরনা, বুনো ফুলের ঝাড়—সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতি যেন তার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিল সেখানে।
ছবির মতো সুন্দর সেই গ্রামে বাস করতেন মাত্র কয়েক ঘর লোকজন। তবে অমন মনোরম প্রকৃতির মাঝে বাস করলে কী হবে, তাঁরা যে ওখানে খুব সুখে-শান্তিতে বসবাস করতেন তা বলা যায় না। হ্মুইচুকচুরুদুনি নামে এক ভয়ানক রাক্ষসীর অত্যাচারে তাঁদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। গ্রামবাসীরা গভীর বনে ফলমূলের খোঁজে কিংবা জন্তুজানোয়ার শিকার করতে গেলেই হ্মুইচুকচুরুদুনি আচমকা তাঁদের ওপর লাফিয়ে পড়ে ঘাড় মটকে দিত। আসলে মানুষের মাংস ছাড়া আর কোনও খাবারেই হ্মুইচুকচুরুদুনির রুচি ছিল না। তাই ঝোপে-জঙ্গলে আড়ালে-আবডালে রোজ মানুষের অপেক্ষায় ওত পেতে বসে থাকত সে।
তা, সেই গ্রামেরই একটা কুটিরে বাস করত ছোট্ট নুছিমি। সে দেখতে যেমন ফুটফুটে সুন্দর, তেমনি ছিল ওর বুদ্ধি-বিবেচনা। এতে গ্রামের আট থেকে আশি সকলেই নুছিমিকে খুব ভালোবাসত।
একদিন সকালে নুছিমির বাবা বনে গিয়ে শিকার করে নিয়ে এলেন এক বিশাল হরিণ। মাংসের নানান পদ রান্না করতে নুছিমির মা সিদ্ধহস্ত। খুশি হয়ে তিনি দুপুরের খাবার তৈরি করতে কোমর বেঁধে লেগে পড়লেন। হরিণের মাংস আগুনে ঝলসিয়ে, মশলা মাখিয়ে, তেলে কষিয়ে এমন একখানা খাবার তিনি প্রস্তুত করলেন, যার স্বাদু গন্ধে ম-ম করতে লাগল নুছিমিদের কুটিরের চারপাশ। শুধু কি তাই? সেই সঙ্গে মা বানালেন শুঁটকি মাছের ঝাল ঝাল চাটনি। সে-চাটনির স্বাদ কেমন তা যে খায়নি তাকে ভাষায় বোঝানো অসম্ভব।
এখন ঘটনা হল, নুছিমিদের পরিবারের একটা নিয়ম হচ্ছে বাড়িতে ভালোমন্দ কিছু রান্না হলেই শালপাতায় মুড়ে তা পাঠানো হয় মুছিমির ছোটো পিসির বাড়ি।
“আজ খাবার নিয়ে আমিই যাব ছোটো পিসির বাড়ি।” রান্না শেষ হতেই মহানন্দে ঘোষণা করল নুছিমি। আসলে অমন ছোট্টটি হলে কী হবে, নুছিমি বেশ খেয়াল করেছে, শিকার করে এসে তার বাবা বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। জানা কথা, নুছিমিকেই তবে হরিণের মাংস কষা আর শুঁটকি মাছের চাটনি নিয়ে যেতে হবে ছোটো পিসির বাড়ি, তাই না?
তবে সমস্যাটা অন্যখানে। মায়ের রান্না শেষ হতে হতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ঝুপ করে সন্ধে নেমে যায়। এদিকে নুছিমির ছোটো পিসির বাড়ি অন্য আর একটি গ্রামে। সে-গ্রামে যেতে হলে পেরোতে হয় একটা গভীর বন, আর সেই বনেই তো দাপিয়ে বেড়ায় ভয়ংকর রাক্ষসী হ্মুইচুকচুরুদুনি!
“দেখেছিস তো রে, বিকেল হয়ে এল বলে। সন্ধে হতে আর কতক্ষণ! এখন বনের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় যদি হ্মুইচুকচুরুদুনির পাল্লায় পড়িস?” চিন্তিত মুখে বললেন নুছিমির বাবা।
নুছিমির মা ঠান্ডা মাথার মানুষ, মনের জোরও বেশি। তিনি তাই অতটা চিন্তিত ছিলেন না। বললেন, “হ্মুইচুকচুরুদুনি কি আর ফাঁকা জায়গায় ঘুরে বেড়ায় নাকি? সে তো কেবল গভীর বনের ভেতরে মানুষের লোভে ওত পেতে বসে থাকে। হ্যাঁ, এ-কথা সত্যি, বনের ভেতর দিয়ে ও-গ্রামে গেলে সময় অনেকটাই কম লাগে। তবু নুছিমি ওই জঙ্গুলে পথে না গেলেই তো হয়। ও যদি বনের ধার ঘেঁষে চলে যাওয়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নপথটা ধরে যায়, তাহলে সময় খানিকটা বেশি লাগবে ঠিকই, কিন্তু হ্মুইচুকচুরুদুনির পাল্লায় পড়বার কোনও সম্ভাবনাই থাকবে না।”
অনেক আলাপ-আলোচনা তর্ক-বিতর্কের পরে ঠিক হল, হরিণের মাংস কষা আর শুঁটকি মাছের চাটনি পিসির বাড়ি নিয়ে যাবে নুছিমিই। আর যত ঘুরপথই হোক না কেন, বনের পাশ বরাবর ওই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পথটা ধরেই যাবে সে।
দুই
নুছিমিরা অবশ্য একটা কথা জানত না। হ্মুইচুকচুরুদুনির শ্রবণশক্তি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ। বহু যোজন দূর থেকে লোকজনের কথাবার্তা শুনতে পায় সে। তাই গভীর বনের ভেতর নিজের ডেরায় বসে-বসেই নুছিমিদের আলাপ-আলোচনা সবই সে দিব্যি কান পেতে শুনছিল। শুনে শুনে তার মনে-প্রাণে এমন আনন্দের বন্যা বইল যে, সে ধেই ধেই করে নাচতে লাগল। সে-নাচের চোটে বনের অনেকটা জায়গা জুড়ে ভেজা মাটি ধ্বসে গেল। কয়েকখানা গাছের ডাল মড়মড় করে ভেঙে পড়ল। বিরক্ত হয়ে এক ঝাঁক পাখি কিচিরমিচির করতে করতে উড়ে গেল আকাশে। অবশ্য সে-সব নিয়ে হ্মুইচুকচুরুদুনির মাথা ঘামাবার সময় ছিল না মোটেই। তার কান আর মন দুটোই তখন নুছিমির দিকে তাক করা।
তাই যেই না নুছিমি পিসির বাড়ি যাবে বলে নিজের কুটিরের বাইরে পা বাড়িয়েছে, অমনি হ্মুইচুকচুরুদুনি তড়িঘড়ি নাচানাচি থামিয়ে কাজে নেমে পড়ল। প্রথমেই সে বনের ধার ঘেঁষে চলে যাওয়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পথটাকে আকাশ-ঢাকা ঘন গাছপালা দিয়ে ছাতার মতো ঢেকে ফেলল। সেই সঙ্গে অজগরের মতো মোটা ঝুলন্ত লতাপাতা দিয়ে নিশ্ছিদ্র দেওয়াল তুলে দিল ওই পথের মাঝবরাবর। তারপর গ্রামের দিক থেকে আসা পথটাকে ঘুরিয়ে সোজা নিয়ে গেল বনের দিকে, আর বনের গভীরে নিজের ডেরা অবধি নতুন করে একটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পথ তৈরি করে সেটাকে জুড়েদিল ওই গ্রাম থেকে আসা পথটার সঙ্গে।
যথারীতি গ্রামের পথ দিয়ে এসে ছোট্ট নুছিমি নতুন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পথ ধরেই চলতে লাগল। চলতে চলতে সে ভাবল, বনের ধার ঘেঁষে চলে যাওয়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পথটা ধরেই হয়তো হাঁটছে। তাই সে নিশ্চিন্ত মনে একটা গানের কলি গুনগুন করছিল। নুছিমি বুঝতেই পারছিল না, আসলে সে ভুল পথে যাচ্ছে, আর ক্রমশ গভীর বনের দিকে এগিয়ে চলেছে।
অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না, ছোট্টো নুছিমি সোজা গিয়ে পড়ল হ্মুইচুকচুরুদুনির খপ্পরে। নুছিমিকে কবজা করতে পেরে মুখ বেঁকিয়ে বিচ্ছিরি হাসি হাসল হ্মুইচুকচুরুদুনি। হাসলেই ওর চোখা চোখা হলদে দাঁতগুলো মুখের বাইরে বেরিয়ে পড়ে। সে-হাসি দেখে চোখ উলটে মূর্ছা যাবে না, দুনিয়ায় এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। কিন্তু নুছিমি অত সহজে ভয় পাওয়ার পাত্রী নয় মোটেই।
এদিকে নুছিমি যে তেমন ভয় পায়নি, তা বোধহয় হ্মুইচুকচুরুদুনি খানিকটা আঁচ করতে পেরেছিল। তাই খ্যাঁকখ্যাঁক করে হেসে বলল, “প্রস্তুত থেকো, কাল তোমাকে দিয়েই প্রাতরাশ সারব। আমার আবার এই এক মুশকিল, সূর্য ডুবলেই প্রচণ্ড ঘুম পেয়ে যায়। তাই আপাতত তোমায় ঝুড়ির তলায় ঢাকা চাপা দিয়ে রাখছি। কেমন?”
এই বলে নুছিমিকে একটা ভীষণ ভারী বেতের ঝুড়ির নীচে চালান করে দিল সে। তার পর বিছানায় চিৎপাত হয়ে শুয়ে নিশ্চিন্ত মনে নাক ডাকিয়ে ঘুমোতে লাগল। সেই নাকের ডাক যে কেমন ভয়ানক, তা যে শুনেছে কেবল সে-ই জানে।
তিন
পরের দিন সকাল হতেই ডেরা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল হ্মুইচুকচুরুদুনি কিছু মশলাপাতি কুড়িয়ে-বাড়িয়ে আনতে। জম্পেশ প্রাতরাশ তৈরি করতে হলে ওসব জোগাড় করা খুবই জরুরি। কিন্তু যেই না হ্মুইচুকচুরুদুনি ওর ডেরা ছেড়ে বেরিয়েছে, অমনি কোত্থেকে একটা ইঁদুর এসে হাজির হল ওই বেতের ঝুড়িটার সামনে, যার নীচে চাপা পড়ে রয়েছে নুছিমি।
আসলে হ্মুইচুকচুরুদুনির ডেরার পাশেই একটা বিশাল গাছ আছে, আর বেশ কিছুদিন যাবৎ ইঁদুরটা সেই গাছের গোঁড়ায় মাটিতে গর্ত করে থাকে। এবার হয়েছে কী, আগের দিন বিকেল থেকে রাত অবধি গর্তের বাইরে গলা বাড়িয়ে হ্মুইচুকচুরুদুনির যাবতীয় কাণ্ডকারখানা সে চুপচাপ দেখেছে। দেখে দেখে ছোট্টো নুছিমির জন্যে খুব কষ্ট হয়েছে ওর। কিন্তু হ্মুইচুকচুরুদুনির ভয়ে এতক্ষণ এ-মুখো হতে পারেনি। তাই হ্মুইচুকচুরুদুনি বেরিয়ে যেতেই সে তৎক্ষণাৎ হাজির হল বেতের ঝুড়ির সামনে। আর একটুও দেরি না করে ধারাল দাঁত দিয়ে ঝুড়ির বেতগুলো কুটকুট করে কাটতে লাগল। এতে খানিক পরেই ঝুড়ি ফেটে গিয়ে নুছিমি বেরিয়ে এল ঝুড়ির ভেতর থেকে।
“ওহ্, কী বলে যে তোমায় ধন্যবাদ জানাব!” মুক্তির আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল নুছিমি। তারপর ইঁদুরকে দু-হাতের জোড়া তালুতে তুলে নিয়ে খুব করে আদর করে দিল।
আহ্লাদে গদগদ হয়ে ইঁদুর বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে, অনেক হয়েছে। এখন শিগগির পালাও দেখি। যে-কোনো মুহূর্তে হ্মুইচুকচুরুদুনি এসে পড়বে। তখন ঠ্যালা বুঝবে!”
নুছিমি কি আর দাঁড়ায় নাকি! এক ছুট্টে ঝোপ-জঙ্গল, খানাখন্দ, নদীনালা পেরিয়ে নিজের কুটিরের সামনে এসে তবেই সে দম নিল।
চার
নুছিমির কাছ থেকে হ্মুইচুকচুরুদুনির ভয়ংকর কীর্তিকলাপের কথা শুনে নুছিমির বাবা রাগে ফেটে পড়লেন।—“অনেক হয়েছে, আর নয়। ওই শয়তান রাক্ষসীর অত্যাচার আর কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। বড্ড বাড় বেড়েছে ওর। শেষমেশ কিনা আমার মেয়েটাকে পেটে পুরতে চাইছিল! ওকে নিকেশ না করতে পারলে আমি আর এ-জীবনে শান্তি পাব না।” অস্থিরভাবে পায়চারি করতে লাগলেন নুছিমির বাবা।
“আরে, দাঁড়াও দাঁড়াও! হুট করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেই হয়ে গেল নাকি!” নুছিমির মা শান্ত গলায় বললেন, “হ্মুইচুকচুরুদুনির মোকাবিলা করা কি অতই সহজ? তার চাইতে ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে একটা জুতসই উপায় বের করো।”
নুছিমির বাবার মাথায় তেমন কোনও বুদ্ধিই এল না। তিনি কেবল রাগে গজগজ করতে লাগলেন।
এমন সময় মায়ের কানে ফিসফিস করে নুছিমি কীসব যেন বলল। মাও মিটিমিটি হাসলেন। আসলে মেয়ের ওপর মায়ের যে অগাধ ভরসা। তিনি জানেন, ছোট্ট নুছিমি তাঁরই মতন সাহসী আর বুদ্ধিমতী। তাই তো হ্মুইচুকচুরুদুনিকে জব্দ করবার দারুণ একখানা ফন্দি এঁটেছে মেয়ে।
এদিকে মায়ের নীরব সম্মতি পেয়ে নুছিমিও খুশি মনে রওনা দিল বনের দিকে। সঙ্গে নিল একটা লম্বা দড়ি, একটা ডিম, একটা ভীমরুল, একটা বিষাক্ত সাপ আর খুঁজেপেতে এমন একটা খ্যাপা পাঁঠা নিল, যে পাঁঠাটার শিং দুটো বেজায় তীক্ষ্ণ—এক্কেবারে বর্শার ফলার মতো।
পাঁচ
নুছিমি যখন গভীর বনের ভেতর হ্মুইচুকচুরুদুনির ডেরায় পৌঁছল, সে-রাক্ষসী তখনও ওখানে ফিরে আসেনি। চারদিকে খানিকক্ষণ নজর রেখে হ্মুইচুকচুরুদুনির ঘুপচি ডেরায় পা টিপে টিপে ঢুকে পড়ল নুছিমি।
এককোণে খড়কুটো জুটিয়ে মাটির উনুনে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা। নুছিমি সেখানে ছাইয়ের গাদায় ডিমটা লুকিয়ে রেখে দিল। একপাশে পাতা রয়েছে হ্মুইচুকচুরুদুনির বিছানাপত্তর; নুছিমি একটা কাঁথার ভাঁজে সাবধানে গুঁজে দিল ভীমরুলটাকে। ধারে একটা বাঁশের পানপাত্র রাখা, তাতে সে ঢুকিয়ে রাখল বিষাক্ত সাপটাকে।
বাঁশ-কাঠ-খড়ে তৈরি হ্মুইচুকচুরুদুনির ঝুপড়িটা দাঁড়িয়ে আছে চারখানা বাঁশের খুঁটির ওপর। নুছিমি করল কী, একটা বাঁশের খুঁটিটা বাদে বাকি তিনখানা বাঁশের খুটিকে এক কোপে দু-টুকরো করে দিল। এমনভাবে করল যাতে দু-টুকরো হয়েও খুঁটিগুলো আগের মতোই খাড়া হয়ে রইল। সবশেষে অক্ষত খুঁটিটাতে নুছিমি ওই খ্যাপা পাঁঠাটাকে বেঁধে দিল সঙ্গে আনা লম্বা দড়িটা দিয়ে। তারপর লুকিয়ে পড়ল হ্মুইচুকচুরুদুনির ডেরা লাগোয়া ওই বড়ো গাছটার পেছনে।
খানিক পরেই হ্মুইচুকচুরুদুনি হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এল নিজের ডেরায়। সঙ্গে হরেকরকমের মশলাপাতি। নুছিমিকে কেমন জুত করে রান্না করবে, তখন কেবল সে-সবই ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাই ঢোকার সময় খেয়ালই করল না খুঁটিতে একটা বড়োসড়ো পাঁঠা বাঁধা রয়েছে।
নুছিমির কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে হ্মুইচুকচুরুদুনি ধরে নিয়েছিল, ঝুড়ির নীচে নুছিমি ঘুমিয়ে রয়েছে। তাই সে উনুনে আগুন জ্বালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিন্তু ছাইয়ের গাদায় নাড়া পড়তেই ডিমটা আচমকা সশব্দে ফেটে চৌচির। এমনটা যে হতে পারে হ্মুইচুকচুরুদুনি কল্পনাও করতে পারেনি। তাই চমকে চেঁচিয়ে উঠে সে ছিটকে পড়ল বিছানাপত্তরের ওপর। ভীমরুলটা সঙ্গে সঙ্গে ওর হাতে দিল কষে হুল ফুটিয়ে।
হুলের জ্বালায় কাতরাতে কাতরাতে হ্মুইচুকচুরুদুনি ছুটল হাতে জল ঢালতে। কিন্তু যেই না সে বাঁশের পানপাত্রটি হাতে নিয়েছে, অমনি সেখান থেকে ওই বিষাক্ত সাপটা বেরিয়ে এসে ওকে দিল জোরে কামড়ে। রক্তে বিষ ঢুকতেই হ্মুইচুকচুরুদুনি যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে ওর ডেরার বাইরে রুদ্ধশ্বাসে বেরিয়ে আসতে চাইল। কিন্তু বিধি বাম। বেরোবার সময় দরজার সামনের খুঁটিটাকে যেই না সে অভ্যাসবশে আঁকড়ে ধরেছে, অমনি সেটি সবকিছু নিয়ে ভেঙে পড়ল। আর পড়বি তো পড় এক্কেবারে হ্মুইচুকচুরুদুনির মাথায়। সোজা দাঁড়িয়ে থাকা একমাত্র খুঁটিটাতে বাঁধা ওই খ্যাপা পাঁঠা এমন সময় আচমকা শিং বাগিয়ে এসে ওকে গুঁতো মেরে ফেলে দিল মাটিতে। সে-গুঁতো এমনই গুঁতো ছি্ল যে, হ্মুইচুকচুরুদুনির আর উঠে দাঁড়াবার ক্ষমতা রইল না। আর এভাবেই নুছিমির প্রচণ্ড সাহস আর বুদ্ধির জোরে চিরদিনের মতো শেষ হল ভয়ংকর রাক্ষসী হ্মুইচুকচুরুদুনি।
(লুসাই জনজাতির লোককথা অবলম্বনে)
ছবি - অঙ্কিতা নন্দী
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪️ অংশু পাণিগ্রাহী ▪️ রম্যাণী গোস্বামী ▪️ অরিন্দম দেবনাথ ▪️ সুব্রত দাস ▪️ বাণীব্রত গোস্বামী ▪️ এণাক্ষী কয়াল মণ্ডল ▪️ কিশোর ঘোষাল ▪️ মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ি ▪️ সায়ন্তনী পলমল ঘোষ ▪️ সংঘমিত্রা রায়
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪️ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪️ বদ্রীনাথ পাল ▪️ স্বপনকুমার বিজলী ▪️ বসন্ত পরামাণিক ▪️ মলয় সরকার ▪️ মানস চক্রবর্তী ▪️ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪️ নীলেশ নন্দী ▪️ পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ রানা জামান ▪️ রূপসা ব্যানার্জী ▪️ সজল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪️ সৌমেন দাস ▪️ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪️ সুমিত্রা পাল ▪️ তাপস বাগ ▪️ আলমগীর কবির ▪️ রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুমা ব্যানার্জী দাস ▪️ মেঘনা নাথ ▪️ শাশ্বত কর ▪️ সুমন সেন ▪️ রণিত ভৌমিক
অরিন্দম ঘোষ ▪️ অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ রাখি পুরকায়স্থ
কেয়া চ্যাটার্জী ▪️ দীপক দাস ▪️ ড. উৎপল অধিকারী ▪️ সুদীপ ঘোষাল
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ
বিশ্বদীপ পাল ▪️ অঙ্কিতা নন্দী ▪️ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪️ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪️ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪️ স্রবন্তী চট্টোপাধ্যায় ▪️ প্রবাহনীল দাস ▪️ সায়ন্তনী পলমল ঘোষ ▪️ সুমন দাস ▪️ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী