ছোটো গল্প
15% OFF * FREE SHIPPING
ছোটো গল্প
মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ি
ঘোষাল-কত্তার ঘুম ভাঙে সেই কাকভোরে। তখন কাকও ঘুম থেকে ওঠে না। গিন্নি বেজায় রাগ করেন।—‘পঁচাত্তর বছর বয়স হল তোমার, খেয়াল আছে? একটু সামলে চলো।’
ঘোষাল-কত্তা অবশ্য কারও কথা শোনার পাত্র নন। হাতে দুধের ক্যান, টর্চ আর বাজারের থলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেন ঘন অন্ধকার আমবাগানের মধ্যে দিয়ে প্রধান সড়কের দিকে। টর্চ লাগে তো, সুজ্জিমামা উঠতে ঢের দেরি তখনও।
ঘোষালের সাপখোপে ভয় নেই। এই ঠান্ডা পরিবেশে হাঁটতে ভালো লাগে। তবে কিনা কখনও কখনও মনে হয়, পাশে কেউ একজন থাকলে হাঁটাটা মজাদার হত বেশ। বাল্যবন্ধু জগদীশকে বলে বলে দু-একদিন সকালে হাঁটিয়েছিলেন। তিনদিনের দিন জগদীশ কাউকে কিছু না বলে ওঁর মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গোপালপুরে পালিয়ে গেলেন, ছ’মাস আসেননি। ওঁর গিন্নি এর জন্য ঘোষালকে দায়ী করেছেন ঘোষালগিন্নির কাছে। সে থেকে দিব্যি করেছেন গিন্নির কাছে, আর কাউকে ডাকবেন না।
আজ হাঁটতে হাঁটতে পুবের আকাশে যখন একটু লালচে রঙ ধরেছে, তখন পৌঁছে গেলেন ধনু গোয়ালার বাড়ি। গিয়ে দেখেন দুধ-টুধ কিস্যু দোয়া হয়নি; বারান্দায় বসে ধনু নানা প্রশ্ন করে চলেছে একটা হাড়জিরজিরে ছেলেকে। ছেলেটাও হাপুস নয়নে কেঁদে চলেছে, উত্তর নেই।
“কী হয়েছে রে ধনু?”
“আরে সেলেডা কাইল থিকা বইসা আছে ইস্টিশনে। আইন্যা খাইতে দিলাম। বুধহয় হারাইয়া গেসে। কিসু কইতেও পারে না।”
মায়া লাগে ঘোষাল-কত্তার। ছোড়দাটা হারিয়ে গিয়েছিল এমন, আর পাওয়া যায়নি।
“আচ্ছা, চটপট দুধ দুয়ে দাও দেখি। অ্যাই, আমার সঙ্গে যাবি?”
ছেলেটা অবাক হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ মুছে ঘোষাল-কত্তার পাঞ্জাবির ঝুল ধরে দাঁড়ায়।
“হইসে, ব্যাডা কম সিয়ানা না!”
দুধ নিয়ে, বাজার করে বাড়ি ফেরেন ঘোষাল। ছেলেটাকে দুটো রসগোল্লা কিনে দিয়েছিলেন, খেয়েছে।
গিন্নি বাজারের থলে নিতে এসে অবাক।—“কে ও?”
“যতীন। আমাদের বাড়িতে থাকবে। ভোরবেলা আমার সঙ্গে হাঁটবে।”
“মরণ!” মুখ বেঁকিয়ে হেঁসেলে ঢোকেন গিন্নি। তক্ষুনি বাইরে এসে আবার বলেন, “ওরে ও যতীন, কুয়োতলায় হাত-মুখ ধুয়ে বারান্দায় বোস, চা খাবি। তারপর রতনের সঙ্গে ছাতা ধরে যা, দুটো লেবু পেড়ে আন।”
হেসে ঘরে ঢুকে যান ঘোষাল।
সত্যি বাবা! ক’দিন পরে অবাক মানেন ঘোষালগিন্নি। সেই কাকভোরে উঠে যতীন কর্তার সঙ্গে চলে যায় এ-ধার ও-ধার। আম-জাম-কামরাঙা কুড়িয়ে পেড়ে ডালা বোঝাই করে। গিন্নির জন্য লেবু পেড়ে আনে। কথা বলে না বিশেষ। উঠোনের ওই নিমগাছটার তলায় বসে বসে ভাবে কী যেন। বাপ-মায়ের নাম জিজ্ঞেস করলে কইতে পারে না।
কর্তা ওকে রঙিন ছবির বই আর স্লেট-পেনসিল কিনে দিলেন। দিব্যি লিখতে পড়তে শিখে গেল ক’দিনেই। ঘোষাল-কত্তা মহাখুশি। ভরতি করে দিলেন বাড়ির কাছের প্রাইমারি স্কুলে, ইস্কুল বসে সাতটায়। তবে সে ঘোষাল-কত্তার আগে উঠে ওঁর বারান্দায় বসে থাকে। ওঁকে বাবা ডাকে—কেউ শেখায়নি, আপনা থেকেই ডাকে। তবে যতীনের স্বাস্থ্য আর ভালো হয় না। মাঝে মাঝে বেদম কাশে।
যতীন এখন ক্লাস ফাইভে পড়ে সূর্যনগর হাইস্কুলে। লেখাপড়া করে, বাগানের যত্ন করে, বাড়ির ছেলেপুলেগুলোকে দেখে রাখে। কত্তার ডানহাত। পুজোর সময় কত্তা ওকে নিয়ে গেলেন কত্তার বোনের বাড়ি, গৌরীপুরে। সেখানে ঠান্ডা লেগে গেল কেমন করে। জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্ট, ডাক্তার বললেন কঠিন যক্ষ্মা। যমে-মানুষে টানাটানি চলল গৌরীপুর হাসপাতালে। সুপার তন্ময় ঘোষ অসম্ভব ভালো মানুষ, খুব সাহায্য করলেন। কিন্তু শান্ত যতীন নীরবেই চলে গেল একদিন। গভীর বেদনা বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন ঘোষাল-কত্তা।
মাস খানেক পর খুব ভোরে দরজা খুলে বাইরে আসেন কত্তা। এখন তাঁর বয়স আশি পেরিয়েছে। পূর্বের অভ্যেসমতোই পথে বেরোলেন। আমবাগানের ছায়াঘন অন্ধকারের ভেতর হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল। এই সময় চোখ ফেটে জল এল যতীনের কথা ভেবে—এত লক্ষ্মী ছিল ছেলেটা! চোখ তুলে তাকাতেই দেখেন অন্ধকারের ভেতর একটা হালকা সাদা জামা তাঁর আগে আগে চলেছে, আগে যেমন থাকত। থমকে দাঁড়ান ঘোষাল। যতীন!
ছায়াও থমকে দাঁড়ায়। কী মনে করে ঘোষাল-কত্তা বলেন, “আচ্ছা, যাস নে। বুড়ো বয়সে কেউ সঙ্গে থাকলে সাহস হয়।”
ছবি - সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪️ অংশু পাণিগ্রাহী ▪️ রম্যাণী গোস্বামী ▪️ অরিন্দম দেবনাথ ▪️ সুব্রত দাস ▪️ বাণীব্রত গোস্বামী ▪️ এণাক্ষী কয়াল মণ্ডল ▪️ কিশোর ঘোষাল ▪️ মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ি ▪️ সায়ন্তনী পলমল ঘোষ ▪️ সংঘমিত্রা রায়
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪️ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪️ বদ্রীনাথ পাল ▪️ স্বপনকুমার বিজলী ▪️ বসন্ত পরামাণিক ▪️ মলয় সরকার ▪️ মানস চক্রবর্তী ▪️ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪️ নীলেশ নন্দী ▪️ পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ রানা জামান ▪️ রূপসা ব্যানার্জী ▪️ সজল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪️ সৌমেন দাস ▪️ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪️ সুমিত্রা পাল ▪️ তাপস বাগ ▪️ আলমগীর কবির ▪️ রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুমা ব্যানার্জী দাস ▪️ মেঘনা নাথ ▪️ শাশ্বত কর ▪️ সুমন সেন ▪️ রণিত ভৌমিক
অরিন্দম ঘোষ ▪️ অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ রাখি পুরকায়স্থ
কেয়া চ্যাটার্জী ▪️ দীপক দাস ▪️ ড. উৎপল অধিকারী ▪️ সুদীপ ঘোষাল
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ
বিশ্বদীপ পাল ▪️ অঙ্কিতা নন্দী ▪️ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪️ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪️ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪️ স্রবন্তী চট্টোপাধ্যায় ▪️ প্রবাহনীল দাস ▪️ সায়ন্তনী পলমল ঘোষ ▪️ সুমন দাস ▪️ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী