প্রবন্ধ
15% OFF * FREE SHIPPING
প্রবন্ধ
ড. উৎপল অধিকারী
সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা এই বসুন্ধরা জীব-বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। মানব সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিরও উন্নতি ঘটে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবেশের ওপর মানুষের নির্মমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, প্রযুক্তির উন্নতি জীব-বৈচিত্র্য হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তিকে জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রধান হাতিয়ার করা হয়েছে। অত্যন্ত উন্নত, সংবেদনশীল বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বনভূমির সংরক্ষণ, বিভিন্ন প্রাণী সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা ইত্যাদির কাজে। মোবাইল, ক্যামেরা, শব্দ রেকর্ডকারী যন্ত্র, ক্লাউড-ভিত্তিক প্রযুক্তি, ড্রোনে নজরদারি, রাডার টেকনোলজি, পিট ট্যাগ, জিপিএস ও রেডিও ট্র্যাকিং টেকনোলজি, স্যাটেলাইট ইত্যাদি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমগ্র বিশ্বে বিভিন্ন প্রাণী, বনস্পতি তথা বন্যপ্রাণকে রক্ষা করা হচ্ছে। এইসব প্রযুক্তি এক্স-সিটু সংরক্ষণ এবং ইন-সিটু সংরক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধুমাত্র তাই নয়, সমগ্র ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রের নজরদারিতেও এই সকল প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যবহার অনস্বীকার্য। থ্রি ডাইমেনশন আকৃতি তৈরিতে রিমোট সেন্সর এবং অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার সত্যিই কার্যকরী। পরিযায়ী পাখি এবং পরিযায়ী প্রাণীরা আজ বিপদগ্রস্ত। পরিযায়ী প্রাণী সম্পর্কে বিশদ তথ্য জানা যেতে পারে এই প্রযুক্তির ব্যবহারে। বর্তমানে আবার বায়ো-টেকনোলজির ব্যবহার জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। যদি কোনও স্থান থেকে সামান্য একটু উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহজ ডিএনএ পাওয়া যায়, তাদের সিকোয়েন্সিং করে সেই প্রাণীটি বা উদ্ভিদটি কী হতে পারে সেটা বলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বন্য পরিবেশে তারা আজও বর্তমান, না বর্তমান নয়—সে-সম্পর্কে তথ্য জানা সহজ হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে ডিজিটাল ক্যামেরার সঙ্গে ইনফ্রারেড সেন্সরকে যুক্ত করে ক্যামেরাকে করে তোলা হয়েছে আরও উন্নত। এই ধরনের ক্যামেরা কোনও উষ্ণ বস্তুকে সহজে অনুভব করে ক্যামেরাকে ‘অন’ করে। ওই প্রাণীর বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ছবি তুলতে পারে—স্টিল ছবি ও ভিডিও এবং সেগুলি স্মৃতিতে স্টোর করে। বেশ কিছুদিন অন্তর ওই মেমোরি কার্ডগুলিকে অ্যানালিসিস করে জীববিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদরা ওই নির্দিষ্ট স্থানে বা নির্দিষ্ট জঙ্গলে বিভিন্ন প্রাণীর উপস্থিতি, তাদের হাঁটাচলা, তাদের সংখ্যা সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করতে পারেন। ক্যামেরা যত শক্তিশালী হবে, তত ছবির সংখ্যা, কোয়ালিটি ইত্যাদিও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। তার ফলে এগুলি থেকে পশু পাচার বন্ধ করা যেতে পারে। কারণ, জঙ্গলের মধ্যে কোনও অপরাধী ঢুকছে কি না বা তাদের সন্দেহজনক মনে হলে বনদপ্তরের কর্মীরা এবং পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারে। মানুষের সঙ্গে প্রাণী এবং জঙ্গলের সম্পর্ক কী, তা নিয়েও নিবিড়ভাবে অনুশীলন করা যেতে পারে এই ধরনের ক্যামেরার ব্যবহার করে।
অ্যাকোস্টিক সেন্সর বা অ্যাকোস্টিক মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে জঙ্গলে বিভিন্ন পশুপাখি বা মানুষের গলার শব্দ, হাঁটাচলার শব্দ ইত্যাদি নিখুঁতভাবে রেকর্ড বা পরিমাপ করা হয়। এগুলিকেও মেমোরি কার্ডের মধ্যে সঞ্চয় করে রাখা যেতে পারে। এ থেকে কেবলমাত্র বিভিন্ন পশুপাখির ওপর আক্রমণের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় তা নয়, আমরা জানি বিভিন্ন প্রাণীর শব্দই হচ্ছে যোগাযোগ স্থাপনের একমাত্র মাধ্যম। এগুলি সম্বন্ধেও ধারণা করা যায়। ফলে বন্যপ্রাণীদের সেই মুহূর্তে তাদের মানসিক অবস্থা, প্রজনন-সংক্রান্ত তথ্য, সমগ্র জঙ্গলের মধ্যে তাদের ডিস্ট্রিবিউশন বা অবস্থান ইত্যাদি বিষয় জানা যায়।
বিভিন্ন মহাদেশ বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ইত্যাদিতে স্যাংচুয়ারি, ন্যাশনাল পার্ক, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ও বিভিন্ন বন বা জঙ্গলগুলিতে উপর থেকে ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে পশুপাখির ওপর নজরদারি চালানো হয়। এতে প্রত্যক্ষভাবে জঙ্গলে অবস্থিত পশুপাখির জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় না, কিন্তু সমগ্র জঙ্গলের উপর শ্যেনদৃষ্টিতে এরা তাকিয়ে থাকে। এর ফলে প্রাণীদের অবস্থান, বিভিন্ন গাছের সংখ্যা, জঙ্গলে কোনও প্রাণী পাচারকারী প্রবেশ করল কি না, এই সম্বন্ধে খুঁটিনাটি তথ্য জানা যায়। তাছাড়াও যারা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা চালায় তারাও এগুলি থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এই প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষ কার্যকর হয় যখন জঙ্গলটি হয় অত্যন্ত দুর্ভেদ্য এবং বিপদসংকুল।
ক্যামেরা, ড্রোন বা অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি থেকে যে বিপুল পরিমাণে তথ্য উঠে আসে, সেগুলিকে সঞ্চয় করে রাখা, মেমোরি কার্ডের উপযুক্ত সংরক্ষণ ইত্যাদি করা খুবই কঠিন। তাই এই যাবতীয় তথ্য ক্লাউডের মাধ্যমে সার্বজনীনভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যা কোনোদিনই নষ্ট হবে না, যাদের সংরক্ষণ খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। এই ক্লাউডের ব্যবহার জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রভূত সাহায্য করে।
রাডার টেকনোলজির সফল ব্যবহারের ফলে পরিযায়ী পাখিদের যাত্রাপথ, তাদের যাত্রার উৎসস্থল ও সমাপ্তিস্থল, তাদের বিশ্রামের স্থান ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ফিল্ড তথ্য পাওয়া যায়। এমনকি তারা কত স্পিডে উড়তে পারে, তাদের পাখার মুভমেন্ট কেমন হয়—এই সম্বন্ধেও জানা যায়।
বিভিন্ন প্রাণীদের সঙ্গে জিপিএস ট্যাগ বা ওয়ারলেস টেলিমেট্রি ট্যাগ করে দেওয়া হয়। এই ওয়ারলেস ট্যাগগুলি হয় ছোটো এবং এখান থেকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বের হয় যাকে রেডিও ডিটেক্টর দ্বারা সহজে সেন্স করা যায়। এগুলো কেবলমাত্র পরিযায়ী পাখি বা প্রাণী নয়, জলজ বিভিন্ন প্রাণী যারা জলের গভীরে থাকে তাদের থেকেও অনেক তথ্য জানা যায়। হাতি সহ বড়ো বড়ো প্রাণী যথা বাঘ, সিংহ, গন্ডার ইত্যাদির গলায় যে রেডিও কলার পরানো হয় তা থেকে ওই প্রাণীগুলির অবস্থানের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়।
জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম ব্যবহার করে বিভিন্ন জঙ্গল, উদ্ভিদ এবং বিভিন্ন প্রাণীর বিভিন্ন স্থানের অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ সম্বন্ধে তথ্য জানা যায়। এই তথ্য থেকে বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী, বনজ সম্পদ ইত্যাদির অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে। আইইউসিএন যে ‘রেড ডাটা বুক’ তৈরি করে তাতে বিপদগ্রস্ত প্রাণীর অবস্থান জানতে এই যন্ত্রটির ব্যবহার করে। তাই এই ছোটো বহনযোগ্য যন্ত্রটির গুরুত্ব ভীষণ।
বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট থেকে যে বিপুল তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলিকে বিশ্লেষণ করার জন্য কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ব্যবহার অনস্বীকার্য। কোনও প্রাণীর কঙ্কাল উদ্ধার হলে সেই প্রাণীটি কী হতে পারে তার গ্রাফিক্স ডিজাইন করা যেতে পারে। সমগ্র তথ্যকে সংরক্ষণ এবং প্রসেসিংয়ের জন্য এই যন্ত্র দুটির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।
সমগ্র বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এটি কেবলমাত্র কথার কথা নয়, টাইমস অফ ইন্ডিয়া থেকে প্রাপ্ত এক তথ্য অনুসারে জানতে পারি, এক বাজপাখির শরীরে আধুনিক ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছিল। সে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিনল্যান্ড যাচ্ছিল। পথটি ছিল দীর্ঘ। পথে সে আরবের মরুভূমি পার হয়েছিল। কোন কোন পথ দিয়ে সে গেছে, কোথায় বিশ্রাম নিয়েছে, কোথায় কেমন তার গতি ছিল, সে-সম্বন্ধে বিশদ তথ্য আমরা জানতে পারি এবং তার একটি ম্যাপ আমরা হাতে পাই। এছাড়াও বিভিন্ন দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া ওয়াইল্ড লাইফ ড্রোন ব্যবহার করে তার বনভূমি, প্রাণী ইত্যাদি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহের জন্য। কেনিয়া ইন্টারনেট এবং অন্যান্য আধুনিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে তাদের হাতি নিয়ে গবেষণা করে। স্পেনীয়রা পাখি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য, বিশেষ করে পরিযায়ী পাখির উপর কাজ করতে ‘জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস’ ব্যবহার করে। এটা শুধুমাত্র স্পেন নয়, সমগ্র বিশ্বের প্রায় সকল দেশই এই ডিভাইস ব্যবহার করে থাকে। ইতালি ‘ওন্ডার জিন’ নামক একটি বহনযোগ্য জেনেটিক্স গবেষণাগার ব্যবহার করে থাকে প্রকৃতির দেখভালের জন্য। বিভিন্ন প্রাণী, বিভিন্ন উদ্ভিদ ও এদের ডিএনএ বার করে তাদের সিকোয়েন্সিং করে এবং সেগুলি তাদের ল্যাবরেটরির মধ্যে সংরক্ষিত করে রাখে ভবিষ্যতের জন্য। সুতরাং বিজ্ঞান এবং পরিবেশের উন্নতি একে অপরের সঙ্গে বিরোধী নয় বরং এরা একে অপরের হাত ধরে চলে।
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪️ অংশু পাণিগ্রাহী ▪️ রম্যাণী গোস্বামী ▪️ অরিন্দম দেবনাথ ▪️ সুব্রত দাস ▪️ বাণীব্রত গোস্বামী ▪️ এণাক্ষী কয়াল মণ্ডল ▪️ কিশোর ঘোষাল ▪️ মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ি ▪️ সায়ন্তনী পলমল ঘোষ ▪️ সংঘমিত্রা রায়
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪️ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪️ বদ্রীনাথ পাল ▪️ স্বপনকুমার বিজলী ▪️ বসন্ত পরামাণিক ▪️ মলয় সরকার ▪️ মানস চক্রবর্তী ▪️ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪️ নীলেশ নন্দী ▪️ পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ রানা জামান ▪️ রূপসা ব্যানার্জী ▪️ সজল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪️ সৌমেন দাস ▪️ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪️ সুমিত্রা পাল ▪️ তাপস বাগ ▪️ আলমগীর কবির ▪️ রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুমা ব্যানার্জী দাস ▪️ মেঘনা নাথ ▪️ শাশ্বত কর ▪️ সুমন সেন ▪️ রণিত ভৌমিক
অরিন্দম ঘোষ ▪️ অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ রাখি পুরকায়স্থ
কেয়া চ্যাটার্জী ▪️ দীপক দাস ▪️ ড. উৎপল অধিকারী ▪️ সুদীপ ঘোষাল
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ
বিশ্বদীপ পাল ▪️ অঙ্কিতা নন্দী ▪️ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪️ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪️ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪️ স্রবন্তী চট্টোপাধ্যায় ▪️ প্রবাহনীল দাস ▪️ সায়ন্তনী পলমল ঘোষ ▪️ সুমন দাস ▪️ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী