ছোটো গল্প
15% OFF * FREE SHIPPING
ছোটো গল্প
রম্যাণী গোস্বামী
স্কুল থেকে ফিরেই ওর দুন্নার ঘরে উঁকি দিল ক্লাস ফাইভের রূপকথা। দুন্না অর্থাৎ রূপকথার দিদা বিকেলের এই সময়টা নিজের ঘরেই থাকেন। লেখালেখি করেন স্টাডিতে অথবা গল্প-উপন্যাস পড়েন। আজও পড়ছেন বেশ মোটাসোটা প্রবন্ধের একটা বই। ছোট্ট রূপকথা সোজা গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল দুন্নার গায়ের উপর। গলা জড়িয়ে ধরে আবদারের সুরে বলল, “আজ আর আমাকে ফাঁকি দিতে পারবে না। একটা গল্প শোনাতেই হবে।”
“আরে আরে, করিস কী? দ্যাখো কাণ্ড মেয়ের!” দুন্না বই বন্ধ করে সরিয়ে রাখেন একপাশে। হেসে বলেন, “আগে হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নে। রাধার মা টিফিনে কী বানিয়েছে আজ? স্যান্ডউইচ? না আলুর পরোটা? যা, খেয়ে আয়। তারপর শুনিস। নয়তো সন্ধ্যায় মাম্মা-বাপি অফিস থেকে ফিরে জোর বকা দেবে দুজনকে।”
“না না, আমার এখনই খিদে পায়নি। ফেরার সময় বাসে পুরো টিফিন শেষ করেছি। তুমি শুরু করো তো! কুইক।”
চেয়ার ছেড়ে দুন্না অগত্যা খাটে এসে বসলেন। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মেঘলা আকাশ দেখতে দেখতে শাড়ির আঁচলটা টেনে গায়ে জড়িয়ে নিলেন ভালো করে। একটানা চারদিনের বৃষ্টিতে বিশ্রী গরমটা কমে ঝপ করে ঠান্ডা নেমে গেছে বেশ। তাঁর কোল ঘেঁষে গুটিসুটি মেরে বসেছে রূপকথা। গোলগাল মুখ। টানা ভুরু। বড়ো বড়ো চোখের পাতা। দু-চোখে অপার বিস্ময় যেন থমকে আছে। এই বয়সটাই তো তাই। অবাক হওয়ার বয়স। পৃথিবীটাকে চেনার, নিত্যনতুন চমকে দেওয়া সব জিনিসপত্র আবিষ্কারের বয়স। আর ওরাই কিনা ফ্ল্যাটবাড়ির চার দেওয়ালের ভিতরে বন্দি হয়ে থাকে!
খেলার মাঠ এখন আর একটাও বেঁচে নেই এই পাড়ায়। কোথাও বেরোনো বলতে স্কুল, অনুষ্ঠান-বাড়ি, বাবা-মায়ের সঙ্গে শপিং মল বা রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়াদাওয়া। সপ্তাহে দু-দিন গতে বাঁধা আঁকার ক্লাস, তাইকন্ডু। আহা রে! একটা শ্বাস ফেলে আবার জানালা দিয়ে বাইরে চোখ যেতেই তাঁর মনে পড়ে যায় অনেকদিন আগের এমনই এক তুমুল বৃষ্টির পরের কালো ছমছমে দুপুরবেলার কথা। বলে ওঠেন, “জানিস পুকপুকি? আমি যখন তোর মতো, না না, তোর চাইতেও ছোটো, তখন একবার বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছলাম।”
“কী দেশ?”
“নিরুদ্দেশ।”
“নিরুদ্দেশ মানে কী, দুন্না?”
“মানে হল হারিয়ে যাওয়া। একদম একা একা। তারপর শোন না!
“সেদিনটাও ছিল এরকম বর্ষার দিন। মর্নিং ইস্কুলে রেনি-ডের ছুটি হয়ে গেল। বাড়ি ফিরে এসে শান দেওয়া উঠোনে চকখড়ি দিয়ে ঘর কেটে এক্কা-দোক্কা খেলছি। নিঝুম পাড়া। বাবা-কাকুরা সবাই আপিস-কাছারিতে। মা-কাকিরা সবাই যে-যার মতো ব্যস্ত হেঁশেলে। মানে রান্নাবান্না নিয়ে। ছোটো দুই ভাই কখন চলে গেছে বিলের মাঠে এক হাঁটু কাদায় নেমে ফুটবল খেলতে। বৃষ্টিটা তখন ধরেছে। কিন্তু চারদিকে একটা থমথমে ভাব। কালো কালো একথোকা পুরুষ্টু আঙুরের মতো মেঘেরা ঝুলে রয়েছে আকাশের গায়ে। গ্যাঙর গ্যাং ব্যাঙ ডাকছে গুরুগম্ভীর স্বরে। এরকম দিনে মনটা দারুণ উদাস হয়ে যায় বুঝলি? মনের ভিতরে কেমন একটা দুঃখ দুঃখ ভাব হয়। সেই দুঃখটা গলার কাছে টোপলা হয়ে জমে থাকে আর থেকে থেকে খালি ব্যথা করে। মনে হয় চারপাশে সব রয়েছে, কিন্তু আসলে কিছুই নেই। হ্যাঁ রে, তোরও কি মাঝে মাঝে এমনটা হয়, পুক?”
“হুম।” রূপকথার সংক্ষিপ্ত গম্ভীর উত্তর।—“তারপর?”
“বলছি। জানিস, আমাদের ছোটবেলায় এখনকার মতো উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট ছিল না। বালুরঘাটে তো তুই কখনও যাসনি। সে-বাড়িও আর নেই। কবে ভেঙে দিয়ে বড়োসড়ো বিল্ডিং উঠে গেছে! গাছগুলো সব কেটে ফেলে...” মুহূর্তের জন্য যেন ছলছল করে উঠল দুন্নার চোখ। তারপরই সুর পালটে বললেন, “যাক সে-কথা। আমাদের বাড়িটা ছিল বেশ ছড়ানো ছেটানো। বিশাল উঠোনের একপাশে ধানের গোলা। অন্যদিকে গোয়ালঘর। হাঁস-মুরগির ঘর। পিছনে সুপুরি বাগান। আম-জাম-লিচুর গাছ। ওই লিচুগাছের একটা নীচু মোটামতো ডাল ভারি অদ্ভুত কায়দায় কেমন অর্ধবৃত্তের আকার নিয়েছিল। তার ঠিক নীচেই গুড়িতে ছিল একটা কোটর। গরমের ছুটির দুপুরবেলাগুলোতে ওই ডালটায় চড়ে বসে আমি বালিশে পিঠ দিয়ে আধশোয়া হয়ে বই পড়তাম। কোটরের ভিতরে বইপত্তর সব যত্ন করে গুছিয়ে রাখতাম। পড়তে পড়তে ইচ্ছেমতো হাত বাড়িয়ে তুলে নিতাম পছন্দের বইখানা। আমার মাথার উপরে ডালপালার ঝালর। মৃদু মৃদু হাওয়া দেয়, ডাল নড়ে। পাকা লিচুর গন্ধে ভরে থাকে জায়গাটা। পাখিরা শিস দেয়। গুবরে পোকা উড়ে বেড়ায়। ভ্রমর ভোঁ ভোঁ করে। বইয়ের পাতার অক্ষরগুলো খানিক বাদে ঝাপসা হয়ে আসে ঘুমে।”
“দুন্না, তুমি তখন অর্ধ না কী যেন একটা বললে?”
“উফ্, তোদের নিয়ে এই হয়েছে জ্বালা। হাফ সার্কেল। এবারে বুঝলি?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝেছি। বলো।”
“ওই লিচু গাছটাই ছিল আমার বন্ধু। বেস্ট ফ্রেন্ড। মনখারাপের সেই গলাব্যথাটা আরম্ভ হলেই আমি ওর কাছে পালিয়ে যেতাম। কিন্তু রাত থেকে নাগাড়ে বৃষ্টির জন্য সেদিন লিচুগাছটা ভিজে একেবারে চুপ্পুস হয়ে ছিল। শুধু তাই নয়, বাগানে যাওয়ার রাস্তাটাও হয়েছিল এমন পিছল যে শেষ পর্যন্ত আমার বন্ধুর কাছে যাওয়ার আশা ছাড়তে হল। কিন্তু এখন আমি কী করি? এক্কা-দোক্কা খেলতে ভালো লাগছে না। ঘরের ভিতরেও একটা দম বন্ধ করা ঘুপচি অন্ধকার। কারেন্ট আসেনি গতকাল থেকে। মনখারাপ থাকলে কারও সঙ্গে গল্পগাছা করেও সুখ নেই। এমনি সময় হঠাৎ শুনতে পেলাম রাস্তার দিক থেকে ভেসে আসছে ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ।”
“ও কীসের আওয়াজ, দুন্না?”
“মোষের গাড়ি রে! মোষের গাড়ি!” উৎসাহে দুন্না এবার সোজা হয়ে বসেন। খুশিতে জ্বলজ্বল করে ওঠে তাঁর চোখ।
“মোষের গাড়ি!” রূপকথা অবাক।
“হ্যাঁ রে। যেই না দেখেছি দূর থেকে একটা মোষের গাড়ি আসছে, অমনি আমাকে আর কে পায়। এক ছুটে উঠোন পেরিয়ে, সদর দরজার খিল খুলে রাস্তায় দৌড় দিলুম। তারপর লাফ দিয়ে সোজা সেই চলন্ত গাড়িতে উঠে পড়লুম। গাড়োয়ান ছিল গাট্টাগোট্টামতো একটা লোক। মিশমিশে কালো খালি গা। পরনে তার একটা চেককাটা লুঙ্গি আর গামছা। থুতনির কাছে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। সে শুধু একবার ঘাড় ঘুড়িয়ে আমার দিকে চাইলে। কিন্তু কিছু বললে না।”
“সে কি! তোমার ভয় করল না?”
“ভয়? না তো! ছোটবেলায় আমি খুব দস্যি ছিলাম তা জানিস না?” দুন্না হাসেন মিটিমিটি।
“কিন্তু তোমাকে যেতে দিল বাড়ির লোকে? কেউ টের পেল না?”
“বাড়িতে না জানিয়েই তো চুপিচুপি গিয়েছিলুম রে। ওটাই তো মজা। তোরা কথায় কথায় বলিস না—অ্যাডভেঞ্চার? সেইটে। আসলে আমি দেখলুম যে মোষের গাড়িটা সোজা চলেছে নদীর দিকে। আমাদের শহরে আত্রেয়ী নামে একটা নদী আছে। নাম শুনেছিস? এখন অনেক রোগাসোগা হয়ে গেলেও তখন কিন্তু ছিল দারুণ হৃষ্টপুষ্ট। তা মোষের গাড়িতে উঠে আমার তো মনে মনে ভারি উত্তেজনা। উত্তেজনার চোটে একটু আগের মনখারাপ-টারাপ এক ফুঁয়ে হাওয়া। ফ্রকটাকে বেশ গুছিয়ে নিয়ে গাড়ির খোলা পাটাতনের উপরে বাবু হয়ে বসেছি। বুকের ভিতরে তখন ছলছল আর কলকল। খালি ভাবছি, কখন আসবে নদী। নদী এলেই যেমন লাফ মেরে উঠেছিলাম, তেমনি এক লাফে গাড়ি থেকে নেমে পড়লেই হল। দেখব নদীতে কতটা জল বেড়েছে। তারপর এক দৌড়ে বাড়ি ফিরে আসব। নদী থেকে বাড়ির পথটা চেনাই ছিল। শুধু একটাই ভয়, বৃষ্টিটা যেন না আসে। ছাতা তো নিইনি সঙ্গে। ছাতা নিয়ে কি কেউ নিরুদ্দেশে যায়? বল?”
“তারপর? নদীতে জল দেখলে?” এবারে রূপকথাও সোজা হয়ে বসেছে।
“নদী অবধি পৌঁছনোর আগেই যে একটা ফ্যাসাদ হল। দাঁড়া বলছি, একটু পান খেয়ে নিই।” দুন্না বালিশের নীচ থেকে তাঁর পুঁচকে পানের ডিবে বের করলেন। স্টিলের তৈরি ঝকঝকে একটা ছোট্ট লিলিপুটদের স্যুটকেস যেন। তার ভিতরে আবার ছোটো ছোটো টিফিন বাটির মতো মুখবন্ধ বাক্স। তাদের কোনোটায় সুপুরি কুচো করে রাখা, কোনোটায় চুন, জর্দা অথবা সুগন্ধি মশলা। ডালাটা চাপ দিয়ে খুলতেই মিঠে পাতা আর জর্দার মিষ্টি গন্ধে মাথা ঝিমঝিম করে উঠল রূপকথার।
দুন্না যত্ন করে একটা পান বানিয়ে মুখে দিলেন। তারপর বললেন, “হ্যাঁ, যা বলছিলুম। দিব্যি গাড়িতে চড়ে হেলতে দুলতে যাচ্ছি, হঠাৎ রাস্তাটা বাঁক নিতেই কথা নেই বার্তা নেই কোথা থেকে অন্য আর একটা মোষের গাড়ি এসে ঠিক আমাদের গাড়িটার ঠিক পিছন পিছন চলতে লাগল। একেবারে গায়ে গায়ে লেগে, বুঝলি? দুটো গাড়ির মাঝে একচুল ফাঁকফোকর নেই। আমি বসেছিলাম গাড়ির পিছন দিকে মুখ দিয়ে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে আমার ঠিক সামনেই দুটো তাগড়াই মোষের মাথা। তাতে এই বড়ো বড়ো শিং। নামি কীভাবে গাড়ি থেকে? সেই উপায়ই তো রইল না।”
“আর নদীটা?” চোখ বড়ো বড়ো করে জিজ্ঞেস করল রূপকথা।
“নদী তখন আমার বাঁ-পাশে। সেও আমার সঙ্গে-সঙ্গেই চলেছে। কিন্তু ততক্ষণে আমার নদী দেখার আনন্দ মাথায় উঠেছে। আমি শুধু থেকে থেকে ঘাড় ঘুড়িয়ে কাতর স্বরে বলছি, ‘ও গাড়োয়ানভাই, এবার আমাকে নামিয়ে দাও। আমি বাড়ি যাব। ও গাড়োয়ানভাই!’
“কতবার বললুম। কিন্তু কে কার কথা শোনে। লোকটা খালি দাঁত বের করে হাসে আর বলে, ‘এইবার? কেমন মজা খুকুমণি? হুউ? খুউব সাহস, না? একা একা গাড়িতে ওঠার সময় মনে ছিল না? অ্যাঁ? চল আমার বাড়িতে। ওখানেই থাকবি। তোর আরও ভাইবোন আছে ওখানে। ওদের সঙ্গে খেলবি-ধুলবি। চল।’
“এই রে! বলে কী! সত্যিই লোকটা আমাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে নাকি ওর বাড়ি? সে কতদূরে কে জানে? মা, বাবা, ভাই দুটো আর আমার লিচুগাছ? আর কোনোদিন দেখা হবে না ওদের সঙ্গে? ভাবতেই আমি ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললুম। আমার কান্না দেখে লোকটার কী হাসি! দেখাদেখি পিছনের গাড়ির গাড়োয়ানও ফ্যাকফ্যাকিয়ে হাসতে লাগল। এমনকি একসময় মনে হল মুশকো মুশকো মোষ দুটোও আমার দিকে তাকিয়ে হাসি চাপছে আর একটুও না থেমে তড়বড়িয়ে শিং নাড়িয়ে আমাদের গাড়ির কাছে সেঁটে আসছে আরও।”
এই অবধি শুনে শুকনো মুখে দুন্নার দিকে তাকিয়ে রইল রূপকথা। মোটেই হাসি পেল না ওর। বরং ভয়ে বুকটা ঢিবঢিব করে উঠল। এইজন্যই তো মাম্মা-বাপি সবসময় বলে, অচেনা লোকের সঙ্গে কোথাও যেতে নেই। ইস, দুন্নাকে ছোটবেলায় কেউ শিখিয়ে দেয়নি এই বেসিক লেসনটা? মুখে কোনোমতে বলল, “উফ্, তারপর?”
“তারপর সে এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল। আমার কান্না তখনও হেঁচকি তুলে তুলে চলছে। এমন সময় পরপর দুটো গাড়িই দাঁড়িয়ে গেল। গাড়ি থামতেই গ্যাপটা বেড়ে গেল আর আমিও ফুরসত পেয়ে লাফ দিয়ে রাস্তায় নামলুম। নামতেই গাড়োয়ানটা খপ করে আমার হাতটা ধরে ফেলে বলল, ‘খবরদার। নদীর কাছে একদম যেও না খুকুমণি। কী স্রোত দেখতে পাও না?’
“ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে দেখি, পাশেই চওড়া আত্রেয়ী নদী বর্ষার জলে ফুঁসছে। জলের ধাক্কায় ধ্বসে পড়ছে পাড়ের মাটি। টের পেলাম, আমার বুকের ভিতরটাতেও ঠিক সেইরকমই ধ্বস নেমেছে ভয়ের। কিন্তু ভয়ের মাটিগুলো আলগা হয়ে খসে পড়ার সঙ্গে-সঙ্গেই জায়গাটা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কীসে বল তো? কলকলিয়ে ছুটে আসা একরাশ আনন্দের ঢেউয়ে। সামনে অমন উত্তাল নদী, মাথার উপরে অত বড়ো খোলা আকাশ, দুজন সরল মানুষের প্রাণখোলা হাসি—এই দৃশ্যগুলোই যেন সেই আনন্দের উৎস। বড়ো হ, তখন বুঝবি এসব।
“নদীর ধারেই বালুর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিল একটা অস্থায়ী চালাঘর। ওরা সেখানে তরতর করে নেমে গেল। দেখাদেখি আমিও গেলাম পিছু পিছু। কাছে গিয়ে দেখি একজন লোক ছাউনির ভিতরে বসেছে একটা পরিষ্কার এনামেলের হাঁড়ি নিয়ে। তার ভিতরে তৈরি হচ্ছে ছাতুর শরবত। ঢাকনা দেওয়া গ্লাসে তরলটা ঢেলে গন্ধরাজ লেবুর রস চিপে চিনি আর এক চিমটে বিট নুন মিশিয়ে ভালো করে ঢাকনা এঁটে ঘটঘট করে ঝাঁকানো হল। ঢাকনার মুখ খুলতেই অ্যাত্তো ফেনা আর কী সুন্দর গন্ধ! আহ্, ভাবলেই এখনও জিভে জল এসে যায়।”
“তুমি খেলে!” আঁতকে উঠল রূপকথা।
“ওমা!” বিরক্ত হলেন দুন্না।—“খাব না কেন? ওরাই তো খাওয়াল। নিজেরাও খেল দু-গ্লাস করে। ততক্ষণে আমার সঙ্গে ওদের বেশ ভাব হয়ে গেছে। একজন হল ইসমাইলচাচা। ওই যে গাট্টাগোট্টামতো। যার গাড়িতে আমি উঠেছিলাম। সে-ই তো আবার আমাকে বাড়ি অবধি পৌঁছে দিয়ে এল।”
“ইস্! কী মজা! এর পরেরবার আমাকেও নদী দেখাতে নিয়ে যাবে দুন্না? প্লিজ?” রূপকথা করুণ চোখে জানালার খুপরি দিয়ে একবার আকাশটা দেখে নিল।
“হ্যাঁ রে। খুব তাড়াতাড়ি এই কেজো দুনিয়াটাকে ফেলে রেখে বেরিয়ে পড়ব তুই আর আমি। দেখিস পুকপুকি, কেউ আমাদের আটকে রাখতে পারবে না।” এই বলে রূপকথাকে জাপটে ধরে চুমু খেলেন দুন্না। আর অনেক অনেকদিন পর বর্ষার ভরভরন্ত আত্রেয়ী নদীর বুক ছুঁয়ে আসা জোলো বাতাস কাঁপিয়ে দিল তাঁর শরীর। আদরের নাতনির শরীরে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে তিনি বহুদিন আগের হারিয়ে যাওয়া লিচুগাছের মাদকতা মাখা গন্ধটা পেলেন। একদম অবিকল!
ছবি - সুমন দাস
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪️ অংশু পাণিগ্রাহী ▪️ রম্যাণী গোস্বামী ▪️ অরিন্দম দেবনাথ ▪️ সুব্রত দাস ▪️ বাণীব্রত গোস্বামী ▪️ এণাক্ষী কয়াল মণ্ডল ▪️ কিশোর ঘোষাল ▪️ মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ি ▪️ সায়ন্তনী পলমল ঘোষ ▪️ সংঘমিত্রা রায়
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪️ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪️ বদ্রীনাথ পাল ▪️ স্বপনকুমার বিজলী ▪️ বসন্ত পরামাণিক ▪️ মলয় সরকার ▪️ মানস চক্রবর্তী ▪️ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪️ নীলেশ নন্দী ▪️ পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ রানা জামান ▪️ রূপসা ব্যানার্জী ▪️ সজল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪️ সৌমেন দাস ▪️ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪️ সুমিত্রা পাল ▪️ তাপস বাগ ▪️ আলমগীর কবির ▪️ রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুমা ব্যানার্জী দাস ▪️ মেঘনা নাথ ▪️ শাশ্বত কর ▪️ সুমন সেন ▪️ রণিত ভৌমিক
অরিন্দম ঘোষ ▪️ অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ রাখি পুরকায়স্থ
কেয়া চ্যাটার্জী ▪️ দীপক দাস ▪️ ড. উৎপল অধিকারী ▪️ সুদীপ ঘোষাল
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ
বিশ্বদীপ পাল ▪️ অঙ্কিতা নন্দী ▪️ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪️ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪️ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪️ স্রবন্তী চট্টোপাধ্যায় ▪️ প্রবাহনীল দাস ▪️ সায়ন্তনী পলমল ঘোষ ▪️ সুমন দাস ▪️ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী