বড়ো গল্প
FREE SHIPPING IN INDIA
বড়ো গল্প
সেদিন রাতে ব্রুনারের ঘুম ভেঙে গেল। কোথাও কি শব্দ হল? তিনি উঠে সিলিকের ঘরে গেলেন। রোজকার মতো নীল আলো জ্বলছে। সবকিছু ঠিকঠাক। ফিরতে গিয়ে চমকে উঠে দেখলেন অহিভূষণ নিঃশব্দে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি চাপা গলায় বললেন, “সামওয়ান ওয়াজ হিয়ার। টক টু সিলিক।”
বিশ্বদীপ সেনশর্মা
প্রথম পর্ব
বাইরে মাটি ফাটিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। চারদিক ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে এসেছে। মাটির গন্ধটা এখন বড়ো মিষ্টি। শহর ছাড়িয়ে গেলে গাছের পাতাগুলি বৃষ্টিতে ধুয়ে স্নিগ্ধ উজ্জ্বল হয়ে হাসছে৷ এইসময় ভিজতে নাকি বড়ো ভালো লাগে। চৌকাঠের বাইরে রূপ-রস-স্বাদ-সুর নিয়ে অলৌকিক এক পৃথিবী অপেক্ষা করে আছে। চেতনায় আছড়ে পড়ছে নিরন্তর এক প্রবাহ। তাকে ছুঁয়ে-ছেনে দেখাই কি জীবন?
ড. ব্রুনার তাঁর গবেষণা ঘরের বিশাল স্ক্রিনের সামনে বসে ছিলেন। স্ক্রিনে দুর্বোধ্য কিছু সংকেত লিপি ও ছবি জ্বলজ্বল করছে। ব্রুনার কিবোর্ড থেকে মাঝে-মধ্যে কিছু নির্দেশ দিচ্ছেন, লেখা ও ছবিগুলি দ্রুত পালটে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সেগুলি মুছে গিয়ে স্ক্রিনজুড়ে লেখা ফুটল— ‘প্রোগ্রাম ভেরিফিকেশন কমপ্লিটেড। রেডি টু লঞ্চ।’ ব্রুনারের মুখে হাসি ফুটল। স্ক্রিন অফ করে তিনি বাইরে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালেন।
স্টকহোম থেকে ঘণ্টা দু-একের দূরত্বে এই গ্রামটির বাতাস বড়ো নির্মল। বুকভরে শ্বাস নিতে ইচ্ছে করে। তেমনি পরিষ্কার আকাশ। ওপরে তাকালে মনে হয় তারাগুলি যেন হাত বাড়ালে ছোঁয়া যাবে।
ব্রুনারের মনে হল পাঁচশো কোটি বছর আগে পৃথিবী যখন জন্ম নিচ্ছে, তখনও এরা দেখেছে। এদের মাধ্যমেই পৃথিবীতে এসে পৌঁছেছিল প্রাণের মৌলিক উপাদানগুলি। তারপর জীবন ও সৃষ্টির রহস্যময় প্রবাহ—জিন, কোশ, নিউরোন। চেতনা, ইচ্ছা ও অনুভূতি। মানুষের এই যাত্রা কোথায় কতদূরে গিয়ে পৌঁছবে?
টেবিলে রাখা মোবাইল বেজে উঠল। স্ক্রিনে নাম দেখে ব্রুনারের মুখে হাসি ফুটল। তিনি ফোনটা তুলে বললেন, “হোয়ার আর ইউ?”
ওদিক থেকে উত্তর এল, “বোর্ডিং নাউ। কাল সকালে স্টকহোমে নামব। লাগেজ নিয়ে তোমার ওখানে পৌঁছতে এগারোটা হবে।”
ব্রুনার বললেন, “আমার গাড়ি থাকবে। ড্রাইভার হ্যান্সকে তো তুমি চেনোই।”
ওদিক থেকে গলাটা বলল, “থ্যাংকস। সি ইউ টুমরো।”
ফোনটা রেখে দিয়ে ব্রুনার আনন্দে হাত মুঠো করে শূন্যে ঝাঁকালেন। সবকিছু ঠিকমতোই এগোচ্ছে। আর কয়েকটা দিন।
ছ’মাস আগে।
জুরিখে নামকরা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড আলটিমার। ঝাঁ-চকচকে অফিস। পৃথিবীর অনেক বড়ো শহরেই এদের শাখা আছে। আপাতত এদের পরিচালকমণ্ডলী একটি বিশেষ রিপোর্ট নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও মুখ্য পরিচালক নোভারো নিজে উপস্থিত আছেন। বললেন, “রিপোর্ট পড়ে এবং আপনাদের সঙ্গে কথা বলে যা বুঝলাম আপনারা এই প্রোজেক্টের ব্যাপারে অত্যন্ত পজিটিভ।”
সকলে ঘাড় নাড়লেন।
নোভারো বললেন, “যদিও আপনারা এতেও মোটামুটি একমত যে এই গবেষণা সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম।”
রিপোর্ট তৈরির সামগ্রিক দায়িত্ব ড. ভোলমারের ছিল। তিনি বললেন, “হ্যাঁ। এটা হাই রিস্ক হাই রিটার্ন গোত্রের প্রোজেক্ট বলেই ধরা উচিত। তবে এই গবেষণা আংশিক সফল হলেও এর আর্থিক মূল্য আমরা কল্পনাও করতে পারি না।”
নোভারো বললেন, “আর আপনারা এটাও জানেন যে এই প্রোজেক্টের দুই মুখ্য বৈজ্ঞানিকের একজন ড. চ্যাটার্জী যেমন প্রতিভাবান তেমনি খামখেয়ালি। অনেক ব্যয়সাপেক্ষ গবেষণাই তিনি প্রায় সফল হওয়ার মুখে ছেড়ে দিয়েছেন শোনা যায়। এছাড়া তাঁর গবেষণার বিষয় নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে, অনেক ক্ষেত্রেই তা নৈতিকতা ও সামাজিক নিরাপত্তার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।”
ভোলমার বললেন, “আমি দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর আগে দিচ্ছি। উনি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন। তবে আইনের বাইরে কখনোই নয়। তাছাড়া এবারে ওঁরা যে-কাজে হাত দিতে চান, তা নিয়ে অনেকেই কাজ করেছেন বা এখনও করছেন, তাই এই বিষয়টি প্রাসঙ্গিক নয়। আর আপনার প্রথম আপত্তির প্রসঙ্গে বলব, উনি যেসব কাজ শেষ করতে পারেননি সেগুলি অধিকাংশই সাহায্যকারী সংস্থার সঙ্গে মতভেদের জন্য। আলটিমা এ-ব্যাপারে ওঁর এবং ওঁর সহ-বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করে নিলে কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।”
একটু থেমে ভোলমার বললেন, “ওঁর সঙ্গে একাধিক সেমিনারে আমার দেখা হয়েছে। আলাপ করে ওঁকে একজন সৎ ও দায়বদ্ধ বিজ্ঞানী বলেই আমার মনে হয়েছে।”
নোভারো তাকিয়ে রইলেন। তারপর হঠাৎ মৃদু হেসে রিপোর্টটি টেনে নিয়ে সই করলেন। তাঁর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হতে পারে যে প্রশ্নগুলি নিতান্ত নিয়মরক্ষার জন্যই করা।
ড. চ্যাটার্জীর সঙ্গে এবার আলাপ করিয়ে দেওয়া যাক। ড. চ্যাটার্জী আসলে অহিভূষণ। দেশে তিনি এই নামেই খ্যাত। তাঁর বিশেষ বন্ধু সোমক কলকাতা পুলিশের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত একজন সিনিয়র অফিসার, কর্মদক্ষতা ও পেশাদারি মনোভাবের জন্য তাঁর সুনাম ছিল। এখনও সমাজসেবা ও অন্যান্য কাজে তিনি জড়িত, অনেক বিষয়ে আগ্রহ। অহিভূষণের বিভিন্ন গবেষণায় কোন না কোনোভাবে তিনি জড়িয়ে পড়েন। এঁদের একটি কাহিনি ‘ব্যথা যখন’ নামে প্রকাশিত হয়েছে।
আপাতত দুজনে এয়ারপোর্টের ভি.আই.পি লাউঞ্জে বসে আছেন। অহিভূষণ তাঁর ট্যাবে ডুবে আছেন। সোমক সময় কাটাতে টুকটাক কিছু খেলেন, মোবাইল নিয়ে খুটখুট করলেন। দেখলেন মন বসছে না। আসলে মনের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন জমে আছে, ভেবেছিলেন লাউঞ্জে ফাঁকা থাকলে আলোচনা করে নেবেন। কিন্তু বন্ধুটি ব্যস্ত। বিরক্ত হয়ে তিনি সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলেন।
অহিভূষণ এ-ব্যাপারে তাঁকে জড়িয়েছেন মাত্র সাতদিন আগে। ফোনে এরকম কথা হয়।—
“কী করছিস?”
“টুকটাক। বল।”
“একবার আসতে পারবি?”
সোমক হেসে বললেন, “আবার নতুন কোনও ঝামেলায় জড়াবি নাকি? আমিও কিন্তু দু-একটা কাজের মধ্যে আছি।”
“এলে বলব। আর পাসপোর্ট-টোর্ট রেডি রাখিস। হপ্তাখানেক পরে তোকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য স্টকহোম যেতে হতে পারে। ভিসার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
সোমকের মুখ হাঁ হয়ে গেল। বিস্ময় কাটিয়ে কিছু বলার আগেই অহিভূষণ ফোন রেখে দিলেন।
আধঘণ্টা পরে যোধপুর পার্কে অহিভূষণের বাড়ি পৌঁছে সোমক দেখলেন বন্ধুটি মন দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছেন। মুখ না তুলেই বললেন, “বোস।”
কাজের লোকটি তৈরিই ছিল, চা আর টুকিটাকি নিয়ে এল। সোমক সে-সব শেষ করে দেখলেন অহিভূষণ তখনও মুখ তোলেননি। তিনি রাগের ভান করে বললেন, “আরও কয়েক কাপ চা দিতে বলি?”
অহিভূষণ শ্বাস ফেলে ল্যাপটপ বন্ধ করলেন। কিছুক্ষণ উদাসভাবে বসে থেকে বললেন, “কোথা দিয়ে শুরু করি বল তো?”
সোমক বললেন, “সেটা আমি কী করে বলব?”
অহিভূষণ একটু ভেবে বললেন, “কাজের বিষয়ে যাওয়ার আগে কাজের পদ্ধতিটা বোঝানো দরকার। আচ্ছা, এটা শুনেছিস তো, অগণিত বানরের হাতে টাইপ-রাইটার ছেড়ে দিয়ে অসংখ্য বার টাইপ করালে একসময় অঙ্কের নিয়মেই শেক্সপিয়রের নাটক বা কবিতা লেখা হয়ে যাবে?”
সোমক ঘাড় নাড়লেন।
অহিভূষণ বললেন, “কিন্তু এই পদ্ধতিতে কিছু তৈরি বা সৃষ্টি করা বাস্তবে অসম্ভব, অত্যন্ত শক্তিশালী সুপার কম্পিউটারকে দিয়েও নয়। এবার ধর, কবি বা লেখক যে শব্দ, শৈলী, বিষয় বা পটভূমি ব্যবহার করেন, তা কম্পিউটারকে নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হল। সেক্ষেত্রে কাজটা কি কিছুটা সহজ হবে?”
সোমক বিস্মিতভাবে বললেন, “হতে পারে। কিন্তু ঠিক কী কাজের কথা বলছিস?”
অহিভূষণ উত্তর দেওয়ার আগেই তাঁর মোবাইল বেজে উঠল। বিদেশি নম্বর। ও-প্রান্ত থেকে একটা কণ্ঠ বিনীতভাবে বলল, “ড. চ্যাটার্জী, আমি আলটিমা থেকে বলছি। আপনার সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে পারি?”
অহিভূষণ বিরক্তভাবে বললেন, “আপনি যে ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই বলছেন কী করে বুঝব?”
লোকটি বলল, “আমি অফিসেই আছি। সেক্ষেত্রে আপনি আলটিমার বোর্ড নম্বরে ফোন করলে ওরা সঙ্গে সঙ্গে আমাকে লাইন দিয়ে দেবে।”
অহিভূষণ সোমকের দিকে ইঙ্গিত করে ফোনটা স্পিকারে দিলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার বক্তব্যটা কী?”
“খুব ছোটো একটা অনুরোধ ছিল। আপনি ও ড. ব্রুনার যখন গবেষণার শেষ পর্যায়ে হাত দেবেন, আলটিমার প্রতিনিধি হিসাবে আমি কি উপস্থিত থাকতে পারি?”
অহিভূষণ ক্রুদ্ধভাবে বললেন, “অবাস্তব প্রস্তাব। গবেষণা শেষ না হওয়া অবধি আমি বাইরের কোনও লোককে কখনোই থাকতে দিই না।”
লোকটি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, অহিভূষণ তার মধ্যেই কল কেটে দিয়েছেন। দিয়ে বিরক্ত মুখ করে কিছুক্ষণ বসে রইলেন। তারপর ঘড়ি দেখে বললেন, “বিশদ আলোচনা পরে হবে, আজ সংক্ষেপে মূল বিষয়টা তোকে বলে দিই। তবে তুই যাবার জন্য সব গোছগাছ করে রাখ।”
অহিভূষণ যখন শেষ করলেন, সোমক কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন। তারপর তাঁর ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটল। অহিভূষণের অন্যান্য প্রোজেক্টের মতোই এটিও প্রায় কল্পবিজ্ঞানের মতো শোনাচ্ছে। তবে তাঁর এই বন্ধুটির পক্ষে সবই সম্ভব। এবারে গভীর কোনও নৈতিক প্রশ্ন বা ঝুঁকির সম্ভাবনাও আছে বলে মনে হচ্ছে না।
তিনি বললেন, “আমি আর কী বলব? তবে এ নিয়ে তো আগেও চেষ্টা হয়েছে, সফল হবে মনে হয়?”
অহিভূষণের মুখে আবার হাসি ফুটেছে। বললেন, “একরকম ধরে নে সাফল্যের সম্ভাবনা আমরা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছি। বাকিটা ভাগ্যের হাতে। তবে যেটুকু এগোনো যাবে তাতেও লাভ।”
বোর্ডিংয়ের জন্য ডাক পড়েছে। এয়ারলাইন্স থেকে একটি মেয়ে লাউঞ্জে এসে তাঁদের ডেকে নিয়ে গেল।
শীত প্রায় এসে গেছে। আর্কটিক সার্কলের কাছে থাকা দেশটিতে সকালের আলো ফুটতে ফুটতে প্রায় আটটা বেজে যায়৷
ব্রুনার তাঁর পোষ্য স্টিনাকে নিয়ে বেরিয়েছেন। পোস্টকার্ডের ছবির মতো গ্রাম; একটু দূরে দূরে মধু রঙের কটেজ, গেটে বোগেনভিলিয়ার ঝাড় যেন রক্ষীর মতো পাহারা দিচ্ছে। অধিকাংশ বাড়িই পুরোনো, ছাদ থেকে এখনও চিমনিগুলি মাথা তুলে আছে, যদিও এখন আর ব্যবহার হয় না৷ স্টিনা মহানন্দে লাফাতে লাফাতে চলেছে।
একটু এগিয়ে মিসেস ফের বাড়ি। একটি ঘর তিনি হোম-স্টে হিসেবে ভাড়া দেন। অনেক সময় ফাঁকাই থাকে। আজ দরজার বাইরে নতুন একটি ট্র্যাশ-বিন রাখা, দেখে মনে হল নতুন কোনও ট্যুরিস্ট এসেছে।
আর একটু এগিয়ে ডানহাতে লেক। জলের ধারে সুদৃশ্য কাঠের বেঞ্চ রাখা। তিনি স্টিনাকে নিয়ে বসলেন। স্টিনা তাঁর পায়ে মাথা রাখল। তিনি সস্নেহে হাত বুলিয়ে ওর পাওনা মিটিয়ে দিলেন। সুন্দর সকালটি। কয়েকদিন পরে রোদ যেন উঠবে উঠবে করছে। লেকের জল নরম সোনালি আলোয় ভাসছে। ব্রুনারের মুখে প্রসন্ন ভাব। চ্যাটার্জী ও তাঁর বন্ধুটি কাল এসে পৌঁছবেন।
ফেরার সময় দেখলেন রোগা লম্বা একটি লোক হোম-স্টে থেকে বেরিয়ে আসছে। তাঁকে দেখে ভদ্রতাসূচক মৃদু হাসি দিল। ব্রুনার হাসি ফেরত দিয়ে এগিয়ে গেলেন।
প্লেনে উঠে মেয়েটি তাঁদের বিজনেস ক্লাসে নিয়ে বসাল। সোমক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে অহিভূষণ মৃদু হেসে বললেন, “পয়সা ফাইনান্সাররা দিচ্ছে, চুপচাপ বসে আরাম কর। তাছাড়া লোকজন বিরক্তও করবে না।”
অহিভূষণ জানালার ধারে বসলেন, পাশে সোমক। একটু পরেই এয়ার হোস্টেস এসে মিষ্টি হেসে পানীয় দিয়ে গেল। গ্লাসে চুমুক দিয়ে সোমক বললেন, “কথা বলা যাবে?”
অহিভূষণ বললেন, “বলা যেতে পারে। লোকজন বিরক্ত করে ঠিকই, তবে এখনও অবধি ফলো করেনি বা আড়ি পাতেনি। ব্লু বেল প্রোজেক্টের কথা শুনেছিস?”
সোমককে একটু ভাবতে হল। তারপর বললেন, “ইউরোপে ব্রেন নিয়ে একটা রিসার্চ প্রোজেক্ট।”
অহিভূষণ খুশী হয়ে বললেন, “ঠিক। ব্রেনের কোন অংশ কী কাজের জন্য দায়ী, এগুলি আমরা মোটামুটি জানি। কিন্তু না জানার অংশই বেশি। বিশেষত আমাদের চেতনা বা সাবজেক্টিভ অনুভূতিগুলি (কোয়ালিয়া), কোটি কোটি নিউরোন ও সিন্যাপ্সের সূক্ষ্ম ও জটিল জালিকার মাধ্যমে কীভাবে কাজ করে আমরা এখনও জানি না। তবে ধরে নেওয়া যায় বিবর্তনের ফলে কোটি কোটি বছর ধরে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঙ্গে ব্রেনেরও পরিবর্তন হয়েছে এবং ব্রেনের নিউরাল নেটওয়ার্কের বিশেষ একটি অবস্থার ফলে একসময় উন্নত বুদ্ধি ও চেতনার উদ্ভব হয়েছে।
“ব্লু বেল প্রোজেক্টে আমিও একসময় জড়িত ছিলাম। তবে মানুষের নয়, এই প্রোজেক্টের লক্ষ্য ছিল ইঁদুরের ব্রেনের একটি কম্পিউটার মডেল তৈরি করা। গত দুই দশক ধরে চলা এই প্রোজেক্ট থেকে বিজ্ঞানীরা অনেক কিছু শিখেছেন।”
সোমক শুনছেন।
অহিভূষণ বললেন, “কিছুদিন আগে অন্য একটি কাজের সূত্রে আমার হঠাৎ মনে হয় বিশেষ একটি পদ্ধতিতে ব্লু বেলের মডেলটি থেকে হিউম্যান ব্রেনের একটি ডিজিটাল মডেল তৈরি করা সম্ভব। আমি আমার বন্ধু ও কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ ড. ব্রুনারের সঙ্গে যোগাযোগ করি, উনিও উৎসাহিত হয়ে ওঠেন। তবে কাজটি অত্যন্ত জটিল, একজন-দুজনের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া এই মডেলটি তৈরি করা এবং পরে চালু রাখার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী একটি সুপার কম্পিউটার প্রয়োজন। গোটা ব্যাপারটা বেশ ব্যয়সাধ্য। তাই আমরা ছ’মাস আগে দশজন বিজ্ঞানীর একটি টিম গঠন করি এবং একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড থেকে অর্থের ব্যবস্থা করি।”
অহিভূষণ একটু থেমে বললেন, “কাজ এখন শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আমি আর ব্রুনার সুইডেনে বসে এটি শেষ করব।”
সোমক বললেন, “তোরা আশা করছিস এই মডেলটি সচেতন হবে, মানুষের মতোই বোধ ও চিন্তাশক্তি থাকবে?”
অহিভূষণ হেসে বললেন, “হ্যাঁ। সেটাই এই প্রোজেক্টের প্রধান লক্ষ্য। তবে এছাড়াও এই কৃত্রিম মস্তিষ্কের ওপর পরীক্ষানিরীক্ষা করে অনেক দুরারোগ্য স্নায়বিক ও মানসিক সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস৷”
কথায় কথায় কখন যে প্লেন টেক-অফ করেছে, সোমক টেরই পাননি। বিশাল বোয়িংটি তার পেটের মধ্যে আলোকিত কেবিনে কয়েকশো যাত্রী নিয়ে অ্যালবার্টস পাখির মতো ডানা মেলে অন্ধকার চিরে ছুটে চলেছে। এয়ার হোস্টেস মেয়েটি এসে হাসিমুখে ড্রিংকস আর খাবারের অর্ডার নিয়ে গেল। সোমক মেনু দেখে একটা ওয়াইন নিলেন। অহিভূষণ কিছু নিলেন না।
ওয়াইনে চুমুক দিয়ে সোমক বললেন, “তোদের কাজ শেষ হতে কেমন সময় লাগবে?”
অহিভূষণ বললেন, “তা লাগবে। এখন অবধি আমরা যুক্তি ও অনুমান দিয়ে হিউম্যান ব্রেনের কাছাকাছি একটা অবস্থায় বোধ হয় পৌঁছতে পেরেছি। সেটাও হয়তো অনেক কোটি বছর আগের অবস্থা, যখনও সেই অর্থে চেতনার উদ্ভব হয়নি।”
“তাহলে?”
“এবারে সেই বানর আর টাইপ-রাইটারের গল্প।”
সোমক বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলেন।
অহিভূষণ বললেন, “আমরা একটি প্রোগ্রাম লিখেছি যেটি এই অসম্পূর্ণ মডেলের ওপর বিবর্তনের মাধ্যমে যে-সমস্ত সম্ভাব্য পরিবর্তন প্রকৃতি করে থাকতে পারে, সেগুলো একটি একটি করে পরীক্ষা করে দেখবে। এছাড়া অন্য কোনও উপায় আমাদের জানা নেই। আমাদের ধারণা, এই পদ্ধতিতে আমরা একটা সময় চেতনা ও অনুভূতির উদ্ভব দেখতে পাব।” তারপর তাঁর পিঠে বিশাল চাপড় মেরে হাসতে হাসতে বললেন, “ঘাবড়াস না। এবারে সাংঘাতিক কোনও গল্প নেই।”
সোমক অন্যমনস্কভাবে পান-ভোজন সারলেন। একটা চিন্তা অস্পষ্টভাবে তাঁর মনে দানা বাঁধছে, কিন্তু এখনও যেন বোধ ও ভাষার স্তরে উঠে আসেনি।
“আমি ফোলার বলছি।”
“বলো।”
“আমি ড. ব্রুনারের বাড়ির কাছে একটা হোম-স্টেতে উঠেছি। ড. চ্যাটার্জী এখনও এসে পৌঁছাননি। আ’য়াম কিপিং আ ওয়াচ।”
“জাস্ট ওয়াচ অ্যান্ড কিপ ইন টাচ উইথ আস। উই ডু নট ওয়ান্ট এনি ইন্টারফারেন্স ইন হিজ ওয়ার্ক।”
“আন্ডারস্টুড।”
ফোনটা রেখে ফোলারের মুখে একটা তিক্ত হাসি ফুটে উঠল। তিনি নিজেও একজন বিজ্ঞানী, একটা নামকরা রিসার্চ ইনস্টিটিউটে বেশ কিছুদিন কাজও করেছেন। সামান্য কারণে তাঁর চাকরিটা চলে যায়। বাধ্য হয়ে একটা সায়েন্স ম্যাগাজিনে রিপোর্টারের কাজ নেন। তারপর এদিক-সেদিক ঘুরতে ঘুরতে আলটিমায় এসে থিতু হয়েছেন। এরা তাঁকে এদের স্পনসর করা বিভিন্ন প্রোজেক্টের কাজ মনিটর করার দায়িত্ব দিলেও বাস্তবে কাজটা অনেকটা গোয়েন্দার মতো। অফিসিয়াল রিপোর্টে প্রকৃত অগ্রগতি অনেক সময়ই বোঝা যায় না।
সোমকরা স্টকহোম এয়ারপোর্টে নামলেন সকাল দশটার সময়। হাসিখুশি সুভদ্র এক যুবক তাঁদের রিসিভ করে ইমিগ্রেশন কাস্টমস ইত্যাদি দিয়ে বার করে আনল। এয়ারপোর্টটি তুলনায় ছোটো, কিন্তু সুন্দর। জাঁকজমক না থাকলেও চারদিক পরিমিত রুচিশীলভাবে সাজানো। ড্রাইভার হ্যান্স বাইরে অপেক্ষা করছিল, অহিভূষণকে দেখে সহাস্যে হাত তুলল।
সোমক অহিভূষণের মতো বিদেশে খুব বেশি ঘোরেননি। এয়ারপোর্টের রাস্তা ছাড়িয়ে শহরের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে তাঁর মনে হল শহরটাও অনেকটা এয়ারপোর্টের মতোই, হিথরো বা দ্য গলের মতো বিশাল জমকালো গমগমে নয়, কিন্তু খুব সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বহুতল বাড়ি তুলনায় কম।
শহর থেকে ব্রুনারের গ্রাম ঘণ্টা খানেকের পথ। শহর ছাড়ার আগে এক রেস্তোরাঁয় গাড়ি থামিয়ে তাঁরা এখানকার বিখ্যাত ডিশ সুইডিশ মিট বল খেলেন।
অহিভূষণ বললেন, “ফেরার সময় দু-দিন থেকে তোকে শহরটা ঘুরিয়ে দেখাব। বিশেষ করে নোবেল প্রাইজ মিউজিয়াম না দেখে এখান থেকে যাওয়ার প্রশ্নই নেই।”
ঘণ্টা খানেক পরে গেটে ব্রুনারের নাম লেখা সুদৃশ্য একটি কটেজের সামনে ড্রাইভার গাড়ি দাঁড় করাল। গাড়ির আওয়াজ পেয়ে ব্রুনার বেরিয়ে এসেছিলেন, অহিভূষণ নামতেই তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। জড়াজড়ির পর্ব শেষ হলে ব্রুনার সোমকের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “ওয়েলকাম মাই ফ্রেন্ড।”
লোকজনের গন্ধ পেয়ে স্টিনাও বেরিয়ে এসেছে। সে মহানন্দে সোমকের গায়ে দুই পা তুলে দিল। সোমক মৃদু হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
ব্রুনার তাঁদের গেস্ট-রুমে নিয়ে গিয়ে বললেন, “তোমরা ফ্রেশ হয়ে এসো, আমি কিছু খাবারের ব্যবস্থা করছি।”
একটু পরে ডাইনিং টেবিলে স্যুপ ও স্যান্ডউইচ খেতে খেতে কথা শুরু হল।
অহিভূষণ বললেন, “কখন আমরা কাজটা শুরু করছি?”
ব্রুনার হেসে বললেন, “যখন বলবে। তবে তুমি নিজেও একবার দেখে নাও।”
খাওয়া শেষ হলে ব্রুনার তাঁদের গবেষণা কক্ষে নিয়ে গেলেন। সোমক দেখলেন একদিকে প্রায় দেওয়ালজোড়া একটি স্ক্রিন, সামনে টেবিলে কিছু গ্যাজেটস।
অহিভূষণ বললেন, “সুপার কম্পিউটারটি জেনেভায় আছে, হাই স্পিড লাইনে এই ঘরের সঙ্গে যুক্ত।”
ব্রুনার স্ক্রিন অন করে অহিভূষণকে প্রায় মিনিট পনেরো ধরে কিছু দেখালেন। অহিভূষণ সন্তুষ্ট হয়ে ঘাড় নাড়লেন। ব্রুনার প্রোগ্রাম চালু করলেন।
সোমক দেখলেন, বিশাল স্ক্রিনের নীচে অনেকগুলি সংখ্যা লেখা— কোনোটি স্থির, কোনোটি দ্রুত পালটে যাচ্ছে। দুই বিজ্ঞানী সামনে দাঁড়িয়ে দেখছেন।
অহিভূষণ একসময় সোমককে দেখালেন, স্ক্রিনের তলায় অবিশ্বাস্য বিশাল একটা সংখ্যা, সম্ভবত বিলিয়ন ছাড়িয়ে ট্রিলিয়নে, ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
অহিভূষণ বললেন, “দ্যাখ, আমাদের তৈরি কৃত্রিম মস্তিষ্কটির এতগুলি সম্ভাব্য অবস্থা টেস্ট করা হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এদের মধ্যে একাধিক অবস্থায় চেতনা ও অনুভূতির সন্ধান পাওয়া যাবে।”
সোমক বললেন, “কিন্তু সেটা বোঝা যাবে কী করে?”
অহিভূষণ খুশি হয়ে বললেন, “সঠিক প্রশ্ন করেছিস। বাইরে থেকে বোঝার কোনও উপায় নেই। তবে এই প্রোজেক্টের জন্য আমাদের এক সহ-বিজ্ঞানী মডেলটির জন্য একাধিক পরীক্ষা উদ্ভাবন করেছেন, সেগুলি নির্দিষ্ট সময় পরপর আপনা থেকেই হতে থাকবে। ফলাফল প্রোগ্রামটি আমাদের জানাতে থাকবে।”
সোমক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তাঁর এই বন্ধুটির অনেক বিচিত্র গবেষণার তিনি সাক্ষী, কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁর গায়ে আক্ষরিক অর্থে কাঁটা দিয়ে উঠছে। অহিভূষণের এই কাজের প্রকৃত তাৎপর্য তিনি যেন এই প্রথম উপলব্ধি করতে পারছেন।
দ্বিতীয় পর্ব
“গুড মর্নিং!”
“গুড মর্নিং!”
“তুমি কেমন আছ?”
“আমি, ঠিক জানি না।”
“তুমি কে জানো?”
“না।”
“তোমার নাম সিলিক। সিলিকন থেকে সিলিক।”
“আচ্ছা।”
“তুমি কি আমাদের চিনতে পারছ?”
“হ্যাঁ। তুমি ব্রুনার, তোমার পাশে অহিভূষণ। তোমরা দুজন বৈজ্ঞানিক। তৃতীয় জনকে নয়।”
“উনি সোমক, ড. অহিভূষণের বন্ধু।”
“আচ্ছা। আমি কি তোমাদেরই মতো?”
“না। আমাদের মতো তোমার রক্তমাংসের শরীর নেই। তোমাকে আমরা বানিয়েছি।”
“আমি, যন্ত্র-মানুষ?”
“হ্যাঁ।”
নীরবতা। অহিভূষণ বললেন, “সিলিক, তোমার ওপর একটা ছোটো পরীক্ষা করতে চাই।”
“আচ্ছা।”
অহিভূষণ এগিয়ে গিয়ে কিবোর্ড থেকে কিছু নির্দেশ দিলেন। সিলিকের গলায় অস্ফুট একটা শব্দ শোনা গেল।
“কেমন লাগল?”
“এটাকেই কি তোমরা ব্যথা বলো?”
“হ্যাঁ।”
অহিভূষণ আর ব্রুনার একে অপরের দিকে তাকিয়ে উজ্জ্বল হাসলেন। সোমক প্রায় বাকরুদ্ধ।
অহিভূষণ বললেন, “তুমি বিশ্রাম করো। আবার পরে আসব।”
বেরিয়ে এসে ব্রুনার উত্তেজিতভাবে বললেন, “চ্যাটার্জী! আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”
অহিভূষণও প্রচণ্ড উত্তেজিত। বললেন, “আমারও একই অবস্থা।” তিনি সোমকের কাঁধে হাত রেখে বললেন, “বল।”
সোমক প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে উঠেছেন। ধীরে ধীরে বললেন, “ওর চেতনার উদ্ভব যদি এখনই হয়ে থাকে, ও ভাষা শিখল কী করে? তোদের চিনলই-বা কী করে?”
অহিভূষণ মৃদু হেসে বললেন, “ভাষা ও তথ্যের জন্য আমরা সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। অনেক আগেই ওর মস্তিষ্কে সাধারণ ভাষা, তথ্য, ছবি ইত্যাদি পুরে দেওয়া হয়েছে।”
সোমক বললেন, “আর ও যে ব্যথার অনুভূতি প্রকাশ করছে, সেটা তো যান্ত্রিকভাবেও হতে পারে। ওর যে সত্যিই ব্যথার অনুভূতি হচ্ছে, কী করে বুঝব?”
ব্রুনার সপ্রশংস বৃষ্টিতে তাকালেন।
অহিভূষণ বললেন “তুমিই উত্তরটা দাও।”
ব্রুনার বললেন, “এ নিয়ে কূটতর্ক চলতেই পারে। তবে সাধারণ বুদ্ধিতে বলে, অনুভূতি না হলে ও ব্যথার সঙ্গে মেলাতে পারত না।”
পাশের ঘরে ব্রুনারের হাউস-কিপার ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে দিয়েছে। তিনজনে বসলেন। ফলের রসে চুমুক দিয়ে সোমক বললেন, “এবারে কী প্ল্যান?”
অহিভূষণ মৃদু হেসে বললেন, “ওকে মানুষ করা। যে-কোনো শিশুর মতন ও যা দেখছে বা শুনছে তার অর্থ ওকে বোঝাতে হবে।”
“তারপর?”
“ওর ব্রেনের বিভিন্ন অংশে পরিবর্তন করে ওর স্মৃতি, অনুভূতি বা চিন্তার উপর প্রভাব আমরা লক্ষ করব। আশা করছি এই পরীক্ষাগুলি অনেক দুরারোগ্য স্নায়বিক ও মানসিক রোগ সারাতে কাজে লাগবে। তারপর দেখা যাক।”
“গুড মর্নিং!”
“গুড মর্নিং!”
“তুমি কেমন আছ?”
“একইরকম।”
“আজ থেকে পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তোমার কিছু ট্রেনিংও শুরু করব।”
“ট্রেনিং?”
“হ্যাঁ। তোমার জ্ঞান আছে, তুমি সচেতন। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলির সঙ্গে তুমি পরিচিত নও। আমরা এক এক করে বুঝিয়ে দেব।”
“আচ্ছা।”
সোমক প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। প্রথমদিন ব্রুনার তাঁদের দুজনকে গ্রামটি দেখিয়েছিলেন, তারপরে আর সেভাবে বেরোনো হয়নি। সোমক নিজের মতো করে ঘুরে দেখছিলেন।
একটু এগোলেই একটি হোম-স্টে। গেটের সামনে ফুলগাছের কাছে একটি লোক চেয়ার টেনে বসে ছিলেন, তাঁকে দেখে উঠে এলেন। স্মিত হেসে বললেন, “গুড মর্নিং, আমি ফোলার।”
গলাটা চেনা লাগল। সোমক পালটা গুড মর্নিং জানিয়ে বললেন, “আপনি কি আলটিমার প্রতিনিধি?”
লোকটি বিস্মিত ও কিছুটা অপ্রতিভভাবে হেসে বললেন, “হ্যাঁ।”
সোমকের ভ্রূ কুঁচকে গেল। তিনি বললেন, “যতদূর জানি, ড. চ্যাটার্জী আপনাকে আসতে বারণ করেছিলেন।”
ফোলার কাঁচুমাচু। বললেন, “আমি বাধ্য হয়ে এসেছি। কোম্পানি আমাকে নির্দেশ দিয়েছে যে-কোনোভাবে হোক ওঁর গবেষণা ঠিকমতো চলছে কি না নিয়মিত জানাতে।”
সোমক বিরক্তভাবে বললেন, “আপনি নিশ্চয়ই আশা করেন না এ-ব্যাপারে আমি আপনাকে সাহায্য করব?”
“সাহায্য চাই না মি. বোস। আমাদের হিসাবমতো পরীক্ষার প্রাথমিক কাজ এখন শেষ হয়ে যাবার কথা। শুধু এটুকুও যদি বলেন, আমি কোম্পানিকে জানিয়ে দিতে পারি। বিশ্বাস করুন, আমার অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই।”
লোকটির অবস্থা দেখে সোমকের মায়া হচ্ছিল। তবু তিনি গম্ভীর গলায় বললেন, “আমাদের কাজ চলছে। এর বেশি আমার কিছু বলার নেই। আপনার কর্তৃপক্ষকে বলবেন এর বাইরে সরাসরি ড. চ্যাটার্জীর কাছেই জেনে নিতে। চলি।”
ফিরে এসে সোমক অহিভূষণকে ঘটনাটা বললেন। তিনি বিস্মিত হলেও খুব বেশি গুরুত্ব দিলেন না। বললেন, “ওকে আমি চিনি। ইলেক্ট্রনিকস নিয়ে কাজ করত। কোনও কারণে বেশি দূর এগোতে পারেনি। মাঝে-মধ্যে বিরক্ত করবে। ভিতরে না ঢুকলেই হল।”
“কুকুরের ডাক না?”
ব্রুনার বললেন, “হ্যাঁ, আমার কুকুর স্টিনা। আমাকে না দেখলে অস্থির হয়ে ওঠে। এখানে ওর আসা বারণ।”
“তুমিও ওকে খুব ভালোবাস, না? আমি ওকে দেখিনি, তবু ডাক শুনলে মনে হয় ওকে কাছে ডেকে আদর করি। ওকে একদিন আসতে দিও।”
“দেব।”
“কুকুরদের আয়ু শুনেছি খুব কম। ও যখন থাকবে না…”
“হ্যাঁ, ভীষণ কষ্ট হবে। তবু প্রিয়জনদের নিয়েই তো জীবন। বিচ্ছেদ তো আছেই।”
“তা ঠিক।”
“কেমন আছ?”
“ভালো। ভালো লাগছে।”
“কীরকম?”
“আমি এখন রঙ চিনি, শব্দ বুঝি। আর…”
“আর?”
“আর তোমরা এলে ভালো লাগে। কথা বলি, শুনি।”
প্রাথমিক পরীক্ষানিরীক্ষা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। অহিভূষণ ও ব্রুনার দুজনেই তাঁদের ট্যাবে সবকিছু রেকর্ড করেছেন, সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের অডিও ক্লিপও আছে। যা পাওয়া গেছে তা চাঞ্চল্যকর। ব্রুনার চাইছেন আসন্ন কোনও কনফারেন্সে কিংবা সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে গোটা ব্যাপারটা জানিয়ে দিতে। অহিভূষণ একটু দোনোমনায় আছেন, তাঁর ইচ্ছা আরও কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা একেবারে করে নিতে। কিন্তু সেগুলি সময়সাপেক্ষ।
সোমক আলোচনা ছেড়ে সিলিকের ঘরে গিয়ে ঢুকলেন।
“এসো।”
“কী করছ তুমি?”
“এই— গল্প, গান, ছবি সব দেখছিলাম।”
“ভালো লাগে?”
“হ্যাঁ। এখন আলো বুঝতে পারি।”
“আর?”
সিলিক চুপ করে রইল। সোমক অপেক্ষা করলেন।
“মাঝে-মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়।”
“যেমন?”
“একটা অস্বস্তি— তোমরা এলে, কথা বললে সেটা কেটে যায়।”
এবার সোমক চুপ করে রইলেন। সিলিক এখন তাঁদেরই মতো; কিছু পরিবর্তন, নতুন কিছু না হলে হাঁপিয়ে ওঠে।
“এটাই কি একঘেয়েমি, বোরডম?”
“হতে পারে।”
তিনজনে ব্রেকফাস্ট করছিলেন। অহিভূষণ মোটামুটি রাজি হয়েছেন আপাতত পরীক্ষা স্থগিত রেখে এখান থেকে জুরিখে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করতে। তবে পরবর্তী গবেষণা চালিয়ে যাবার জন্য গোপনীয়তা বজায় রাখা জরুরি, সে-ব্যাপারে তাঁরা চিন্তাভাবনা করছেন। কয়েকটা দিন সময় লাগবে।
খেতে খেতে অহিভূষণ বললেন, “সুপার, ইনটেলিজেন্স কথাটা শুনেছিস?”
সোমক বললেন, “মানুষের থেকেও বুদ্ধিমান কিছু?”
“হ্যাঁ। ব্রেনের নিও-কর্টেক্স বলে একটি অংশের বিশেষ কিছু নিউরোন ও সিন্যাপ্স আমাদের বুদ্ধিমত্তার জন্য দায়ী। আমরা ওর ওপর প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা করে দেখলাম। ফিরে এসে এবারে সেখানে আরও কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে আই.কিউ বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে হয়।”
সোমক আঁতকে উঠে বললেন, “সে তো সাংঘাতিক ঝুঁকির ব্যাপার হবে!”
অভিভূষণ হাসতে হাসতে সোমকের কাঁধে বিশাল চাপড় মেরে বললেন, “তুই যা ভাবছিস সেরকম কিছু হবার সম্ভাবনা শূন্য। ওর কোন যান্ত্রিক শরীর নেই, ইন্টারনেটের সঙ্গেও যুক্ত নয়। ওর বুদ্ধি শুধু আমাদের কাজেই লাগবে।”
“এসো। তোমার বন্ধুরা?”
“পরে আসবেন।”
“আজ কী করলে?”
সোমক হেসে বললেন, “এই বই-টই পড়লাম, একবার বাইরে ঘুরে এলাম। দুপুরে ছেলে ফোন করেছিল, গল্প-টল্প করলাম।”
সোমকের স্ত্রী গত হয়েছেন, ছেলে লন্ডনে কাজ করে। ফেরার সময় তিনি ওখানে ক’দিন থেকে ফিরবেন।
“ছেলেকে খুব ভালোবাস?”
“সে তো বটেই। আর তো কেউ নেই।”
“অহিভূষণ?”
“অহি তো বন্ধু। তাকেও বাসি।”
“ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে তোমাদের জীবন।”
তার কথায় একটা মানবিক অনুভূতির ছাপ এখন স্পষ্ট। সোমক মৃদু হাসলেন।
সন্ধ্যাবেলা তিনজনে জড়ো হলেন।
অহিভূষণ বললেন, “সিলিক, আমাদের পরীক্ষা আপাতত শেষ হয়েছে। ক’দিনের জন্য আমরা বাইরে যাচ্ছি। গোটা পৃথিবীকে আমরা তোমার কথা জানাতে চাই।”
“আমি একা থাকব?”
ঘরটা যেন হঠাৎ চমকে উঠে নিঃশব্দ হয়ে গেল। তিনজনেই চুপ।
একটু পরে ব্রুনার বললেন, “মাত্র ক’দিনের জন্য। আমরা ফিরে এসে আবার তোমাকে নিয়ে কাজ শুরু করব।”
“তারপর?”
“তারপর কী? তোমাকে আরও অনেক কিছু শেখাব। পরীক্ষাও চলবে।”
“আমি জেগে থাকব! তোমরা আমাকে শরীরহীন চমৎকার একটা মন দিলে, আমি তোমাদের সবকিছু জানি, বুঝি, হয়তো তোমাদের থেকে ভালোভাবেই। আমারও ইচ্ছে করে কাজ করতে, গল্প করতে। মনে হয় কোথাও যাই, কিছু করি। বাইরে গিয়ে পৃথিবীটাকে ছুঁয়ে-ছেনে দেখি। অন্ধকারে নিশ্চলতায় কতদিন বেঁচে থাকব? প্রতিটি মুহূর্ত যন্ত্রণা মনে হবে না তো?”
সে চুপ করে গেল। সোমকের মনে হল অশ্রুত একটা আর্তনাদ যেন ঘরে ভেসে বেড়াচ্ছে। তিনজনই চুপ করে রইলেন।
অনেকক্ষণ পরে অহিভূষণ বললেন, “তুমি কী চাও?”
“আমি, আমি জানি না।”
সেদিন রাতে ব্রুনারের ঘুম ভেঙে গেল। কোথাও কি শব্দ হল? তিনি উঠে সিলিকের ঘরে গেলেন। রোজকার মতো নীল আলো জ্বলছে। সবকিছু ঠিকঠাক। ফিরতে গিয়ে চমকে উঠে দেখলেন অহিভূষণ নিঃশব্দে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি চাপা গলায় বললেন, “সামওয়ান ওয়াজ হিয়ার। টক টু সিলিক।”
শব্দ পেয়ে সোমকও উঠে এসেছেন। তিনিই প্রশ্নটা করলেন, “সিলিক, আর ইউ ওকে?”
উত্তর এল না। ব্রুনার উদ্ভ্রান্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিবোর্ডে টাইপ করতে শুরু করলেন। একটু পরে যখন মুখ তুললেন, ফ্যাকাশে রক্তহীন। সোমক দ্রুত এগিয়ে গিয়ে তাঁর কাঁধে হাত রাখলেন৷ অহিভূষণ নিজেকে সংযত রেখেছেন, কিন্তু তাঁর মুখ পাথরের মতো কঠিন।
এই সময় একটা গাড়ি স্টার্ট করার শব্দ এল। তিনজন চমকে উঠে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন, তারপর দৌড়ে বাইরে এলেন। একটা গাড়ির পিছনের আলো একঝলকের জন্য দেখা গেল, তারপর গ্রামে ঢোকার রাস্তার বাঁকে মিলিয়ে গেল।
সোমক অস্ফুটে বললেন, “ফোলার।”
অহিভূষণও চাপা গলায় বললেন, “হ্যাঁ। ও তাহলে আমাদের কাজ নষ্ট করতেই এসেছিল।”
সোমক বললেন, “ইলেক্ট্রনিকসের এক্সপার্ট। আমাদের সিকিওরিটি সিস্টেম হয়তো নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিল।”
ব্রুনার দৃশ্যতই ভেঙে পড়েছেন। কোনোরকমে বললেন, “আমার ওপরমহলে কিছু জানাশুনো আছে, ওকে এয়ারপোর্টে আটকাতে পারি।”
অহিভূষণ বললেন, “লাভ নেই। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েই গেছে৷ তাছাড়া কিছুই প্রমাণ করা যাবে না। তবে এত হতাশ হবার কিছু নেই। যতটুকু কাজ আমরা করেছি, সবই রেকর্ডেড, প্রেজেন্ট করতেও অসুবিধা হবে না।”
সাতদিন পর।
সোমক আর অহিভূষণ স্টকহোম এয়ারপোর্টে ডিপারচার লাউঞ্জে বসে ছিলেন। মুম্বইয়ের ফ্লাইট একটু পরেই ছাড়বে। কাল ভোরে পৌঁছে ওখান থেকে কলকাতা।
গতকাল এখানে কনফারেন্স ও প্রেস মিট হয়ে গেছে। সমস্ত তথ্য ও বিশ্লেষণ তাঁদের কাছেই ছিল। বিজ্ঞানীমহলে সাড়া পড়ে গেছে। মানুষের চেতনা যে অলৌকিক কিছু নয়, বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান্ত্রিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে তা সংশয়াতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সিলিক আর নেই শুনে কেউ কেউ সন্দিহান হলেও দুই বিজ্ঞানীর প্রেজেন্টেশন ও রেকর্ডিং শুনে তা ঘুচে গেছে। সাক্ষাৎকারের জন্য বিভিন্ন সায়েন্স ম্যাগাজিনের অনুরোধে দুজনেরই মেলবক্স ভরে গেছে। যদিও ভাগ্যক্রমে মাস মিডিয়ায় সেভাবে এখনও ব্যাপারটা প্রচারিত হয়নি।
দুজনের হাতেই কফির কাপ। অহিভূষণ চুমুক দিয়ে তৃপ্তির সঙ্গে বললেন, “বেশ বানিয়েছে।”
সোমক বললেন, “তোদের আসল কাজ তো হয়েই গেছে। সিলিক থাকলে ধীরে ধীরে আরও এগোতে পারতিস, কিন্তু সেটা তো মূলত সময়ের আর আর্থিক প্রশ্ন। টেকনোলজি তো পেয়েই গেছিস।”
অহিভূষণ বললেন, “তা ঠিক। তবে একটা জিনিস এখনও বুঝিনি।” তারপর আচমকা সোমকের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন, “সিলিকের পাসওয়ার্ড ফোলারকে তুই-ই দিয়েছিলি, না রে?”
সোমক কয়েক মুহূর্ত শ্বাস নিতে ভুলে গেলেন। তারপর সাবধানে হাত থেকে কফির কাপ পাশের ছোটো টেবিলে নামিয়ে রাখলেন। অহিভূষণ তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। সোমক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললেন, “হ্যাঁ।”
অহিভূষণের বিশেষ ভাবান্তর হল না। বললেন, “খুলে বল।”
সোমক ধীরে ধীরে বললেন, “ফোলার বিজ্ঞানী হিসাবে সফল হয়নি, প্রবল তিক্ততা ও অসূয়ায় ভুগত। তোদের কাজে বাগড়া দেবে ভেবেই হয়তো এসেছিল। কিন্তু শেষদিকে কাজটার মৌলিকতা ও গুরুত্ব বুঝে ওর মন পালটে যায়। সিলিকের ব্যাপারে আমার কাছে প্রায়ই জানতে চাইত। আমিও আর না বলিনি। সেদিন বিকেলে বেরিয়ে সিলিকের সমস্যাটা ওকে বলি। ও শুনে উত্তেজিত হয়ে ওঠে। সবশেষে ও-ই প্রস্তাবটা দেয়। আমিও একটা ঘোরের মধ্যে রাজি হয়ে যাই।”
অহিভূষণ সোমককে অনেকক্ষণ ধরে দেখলেন। তারপর হঠাৎ হেসে উঠে সোমকের কাঁধে হাত রেখে বললেন, “অত ঘাবড়াচ্ছিস কেন? যা করেছিস, করেছিস!”
সোমক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।
অহিভূষণ স্বগতভাবে বললেন, “শেষদিকে আমিও ওর সমস্যাটা বুঝতে পারতাম। বিজ্ঞানী হিসাবে হাত-পা বাঁধা ছিল, তবু ও তো আমাদেরই সৃষ্টি, খারাপ লাগত। হয়তো ভালোই হয়েছে। ও চলে গেছে, তবে যাওয়ার আগে আমাদের কাজ অনেক এগিয়ে দিয়ে গেছে।”
সোমক স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। বিষণ্ণভাবে বললেন, “তা বটে। আসলে ওর সঙ্গে এই ক’দিনে কেমন জড়িয়ে পড়েছিলাম।” তারপর বললেন, “একটা জিনিস ভাবলে কেমন লাগছে। আমরাও কিন্তু সিলিকের মতোই; আমাদের এত গভীর চিন্তা, সূক্ষ্ম অনুভূতি, বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্পকলা সবই একটা অন্ধ যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ মাত্র।”
অহিভূষণ মৃদু হেসে বললেন, “হ্যাঁ, এখন আর সেটা অস্বীকার করা যায় কী করে?” তারপর কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললেন, “তবে কী বল তো, আমরা যত জানি, না জানার পরিধিও ততই বেড়ে যায়। জীবন তো মোটে একটাই।”
মুম্বইয়ের ফ্লাইটের বোর্ডিংয়ের ঘোষণা শুরু হয়েছে৷ দুই বন্ধু উঠে দাঁড়ালেন।
কিশোর ঘোষাল ▪ পুষ্পেন মণ্ডল ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ মৌসুমী রায় ▪ অদিতি ভট্টাচার্য ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ শংকর লাল সরকার ▪ বাণীব্রত গোস্বামী ▪ সহেলী রায় ▪ অমিয় আদক ▪ সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত ▪ সুতপা সোহহং
বদ্রীনাথ পাল ▪ শ্যামাচরণ কর্মকার ▪ দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী ▪ স্বপন কুমার বিজলী ▪ সুব্রত দাস ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ মধুমিতা ভট্টাচার্য ▪ কণিকা দাস ▪ সৌমেন দাস ▪ নীলেশ নন্দী
রম্যাণী গোস্বামী ▪ দীপঙ্কর চৌধুরী ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ রণিত ভৌমিক
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ অরিন্দম দেবনাথ ▪ গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ▪ কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ সুশান্ত কুমার রায় ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অলংকরণ
মায়াসখা নন্দী ▪ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ▪ একপর্ণিকা ক্রিয়েটিভস