নিবন্ধ
FREE SHIPPING IN INDIA
নিবন্ধ
২০০২ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন যে আকাশগঙ্গার মাঝখানে রয়েছে একটি বিশাল কৃষ্ণগহ্বর। এটি এত বড়ো যে এর মধ্যে প্রায় দশ লক্ষ সূর্য অনায়াসে ঢুকে যেতে পারে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই অতি বিপুল ভরসম্পন্ন কৃষ্ণগহ্বর ছায়াপথের চাকতিটিকে তার চারদিকে পাক খাওয়াচ্ছে।
কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিগ ব্যাং-এর পর তৈরি হল মহাবিশ্ব। মহাকাশে জন্ম হল অসংখ্য কোটি নক্ষত্রের। এরা নিজেদের মিধ্যে জোট বাঁধল। তৈরি হল ‘গ্যালাক্সি’। মহাকাশে কতগুলি গ্যালাক্সি আছে? এর সঠিক উত্তর বিজ্ঞানীদেরও জানা নেই। কারণ, মহাবিশ্ব বা মহাকাশের খুব সামান্য অংশই আমরা দেখতে পাই, বেশিরভাগটাই আছে চোখের আড়ালে। এইরকমই একটি গ্যালাক্সির নাম ‘মিল্কিওয়ে’ বা ‘ছায়াপথ’। আমরা আদর করে আমাদের ছায়াপথকে অনেক সময় ‘আকাশগঙ্গা’ নামেও ডাকি।
‘গ্যালাক্সি’ শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ ‘গ্যালাক্সিয়াস কাকলস্’ থেকে। যে-গ্যালাক্সিতে আমরা আছি, তাতে আছে দশ হাজার থেকে পনেরো হাজার কোটির মতো নক্ষত্র বা তারা। সেই সঙ্গে আছে মহাজাগতিক ধুলো ও গ্যাস। ছায়াপথের সর্বত্র তারার সংখ্যা সমান নয়। মাঝখানে অর্থাৎ কেন্দ্র অঞ্চলে এদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই জায়গাটি এতই উজ্জ্বল যে দূরবীনের সাহায্যেও এখানকার তারাগুলিকে আলাদা করে চেনা খুব শক্ত। এরা প্রায় সবাই ঢাকা পড়ে আছে ধুলো ও গ্যাসের বিরাট বড়ো মেঘের আড়ালে। এই ধরনের মহাজাগতিক মেঘকে বলা হয় নীহারিকা, ইংরেজিতে বলে নেবুলা। একটি গ্যালাক্সিতে এরকম একাধিক নীহারিকা থাকতে পারে। এই মেঘের আড়ালে থাকা নক্ষত্রগুলির আলোর ছটায় নীহারিকাগুলি উজ্জ্বল দেখায়। আমাদের গ্যালাক্সি অর্থাৎ আকাশগঙ্গা দেখতে দন্ডাকার প্যাঁচানো আকৃতির বা কুণ্ডলিত, অনেকটা চরকি বাজির মতো। অর্থাৎ, মাঝখানটা একটু স্ফীত দন্ডাকার এবং সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে কতগুলি কুণ্ডলিত বা প্যাঁচানো বাহু। এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এরকম তিনটে বাহুর সন্ধান পেয়েছেন। এই বাহুগুলির নাম রাখা হয়েছে ধনুরাশি বাহু, কালপুরুষ বাহু এবং পার্সিয়াস বাহু। যে নক্ষত্রমণ্ডলে যে বাহুগুলি দেখতে পাওয়া যায়, সেই নক্ষত্রমণ্ডলের নামানুসারে এগুলির নাম রাখা হয়েছে। কালপুরুষ বাহুর একটা ধারে রয়েছে আমাদের সূর্য। তাই বলা যায়, আমরা হলাম আকাশগঙ্গার শহরতলির বাসিন্দা।
২০০২ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন যে আকাশগঙ্গার মাঝখানে রয়েছে একটি বিশাল কৃষ্ণগহ্বর। এটি এত বড়ো যে এর মধ্যে প্রায় দশ লক্ষ সূর্য অনায়াসে ঢুকে যেতে পারে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই অতি বিপুল ভরসম্পন্ন কৃষ্ণগহ্বর ছায়াপথের চাকতিটিকে তার চারদিকে পাক খাওয়াচ্ছে। ২০০৪ সালে ছায়াপথের কেন্দ্রে আরও একটি কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেটা অবশ্য আগেরটির তুলনায় অনেকটাই ছোটো। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা, অন্যান্য গ্যালাক্সিতেও এই ধরনের কৃষ্ণগহ্বর থাকতে পারে।
মহাকাশে কোনোকিছুই স্থির নয়। সবাই ঘুরছে। আকাশগঙ্গাও ঘুরছে। যেহেতু গ্যালাক্সি কোনও একক কঠিন বস্তু নয়, তাই এর বিভিন্ন অঞ্চলের ঘূর্ণনের গতিবেগ বিভিন্ন। আমাদের সূর্য এবং সৌরজগৎ-সহ কয়েকশো আলোকবর্ষ পরিমিত ক্ষেত্র জুড়ে ছড়িয়ে থাকা নক্ষত্রগুলি প্রতি সেকেন্ডে ২৫০ কিলোমিটার বেগে ছায়াপথের কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরে চলেছে। কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নক্ষত্রগুলির ঘূর্ণনের গতিবেগ অবশ্য অনেক কম। এক আলোকবর্ষ কথার অর্থ হল, এক বছরে আলো যতটা পথ যায় (আলোর বেগ সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার)।
গ্যালাক্সিগুলি একা একা থাকে না, দল বেঁধে থাকে। এইরকম এক-একটি দলকে বলা হয় এক-একটি আঞ্চলিক গোষ্ঠী। এই আঞ্চলিক গোষ্ঠী আবার একটি সুবৃহৎ গ্যালাক্সিগুচ্ছের অংশ। আকাশগঙ্গা যে আঞ্চলিক গোষ্ঠীতে আছে, সেটার সবচেয়ে বড়ো গ্যালাক্সির নাম ‘অ্যান্ড্রোমিডা’। এই গ্যালাক্সিটিতে কুড়ি হাজার কোটির চেয়েও বেশি নক্ষত্র রয়েছে। তবে এর ভর আকাশগঙ্গার ভরের তুলনায় কম। আকাশগঙ্গা এই আঞ্চলিক গোষ্ঠীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সদস্য। তৃতীয় বৃহত্তম সদস্যটির নাম ‘ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সি’। এর নক্ষত্রের সংখ্যা অ্যান্ড্রোমিডার নক্ষত্রের সংখ্যার দশ ভাগের এক ভাগ।
বিগ ব্যাং-এর কয়েকশো কোটি বছর পর থেকে গ্যালাক্সিগুলির সৃষ্টি শুরু হয়। কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দুটি মত ঘুরপাক খাচ্ছে। একটি হল ‘মনোলিথিক ফরমেশন’। এই মত অনুযায়ী, সেই আদিকালে মহাশূন্যে উপস্থিত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা প্রথমে সৃষ্টি হয় বিশাল বিশাল মেঘরাশি। তারপর তা ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে তৈরি করে প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড গ্যালাক্সি। কোন গ্যালাক্সির আকৃতি কেমন হবে তা নির্ভর করে ঘনীভূত হওয়ার সময় তাদের ঘূর্ণনের উপর। অপর মতটি হল, ‘হায়ারারকিকাল ফরমেশন’। এই তত্ত্বটিতে বলা হয়েছে যে, বর্তমানে আমরা যে বিশাল বিশাল গ্যালাক্সিগুলি দেখতে পাই, সেগুলি আদিতে কোনোটাই এত বড়ো ছিল না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্যালাক্সিগুলি যুক্ত হয়ে এবং তারপর অন্যান্য নানা গোষ্ঠীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আজকের আকৃতি ধারণ করেছে। বেশিরভাগ বিজ্ঞানী এই তত্ত্বটিকেই সমর্থন করেন।
লেখকের অন্যান্য লেখা
কিশোর ঘোষাল ▪ পুষ্পেন মণ্ডল ▪ রঞ্জন দাশগুপ্ত ▪ শাশ্বত কর
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য ▪ মৌসুমী রায় ▪ অদিতি ভট্টাচার্য ▪ অভিষেক ঘোষ ▪ সুস্মিতা কুণ্ডু ▪ সবিতা বিশ্বাস ▪ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪ শংকর লাল সরকার ▪ বাণীব্রত গোস্বামী ▪ সহেলী রায় ▪ অমিয় আদক ▪ সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত ▪ সুতপা সোহহং
বদ্রীনাথ পাল ▪ শ্যামাচরণ কর্মকার ▪ দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী ▪ স্বপন কুমার বিজলী ▪ সুব্রত দাস ▪ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪ মধুমিতা ভট্টাচার্য ▪ কণিকা দাস ▪ সৌমেন দাস ▪ নীলেশ নন্দী
রম্যাণী গোস্বামী ▪ দীপঙ্কর চৌধুরী ▪ বিশ্বদীপ সেনশর্মা ▪ রণিত ভৌমিক
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ অরিন্দম দেবনাথ ▪ গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ▪ কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪ সুশান্ত কুমার রায় ▪ ড. উৎপল অধিকারী
অলংকরণ
মায়াসখা নন্দী ▪ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ▪ একপর্ণিকা ক্রিয়েটিভস