ছোটো গল্প
15% OFF * FREE SHIPPING
ছোটো গল্প
বাণীব্রত গোস্বামী
সেদিন শিশিরবাবু নবম শ্রেণির ‘ক’ বিভাগের ক্লাসে খুব মন দিয়ে ইতিহাস পড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ ভজন তাঁর গভীর একাগ্ৰতায় দুম করে একটা ব্যাঘাত ঘটাল।—“স্যার, নেপাল আমার দিকে তাকিয়ে সমানে চোখটা লিড়িক পিচিক করছে।”
এক ধাক্কায় শিশির বাবুর ঐতিহাসিক রক্তটা একেবারে মুঘল যুগ থেকে মাথায় চড়ে গেল। গলাটা তিন ধাপ চড়িয়ে চিৎকার করে উঠলেন—“অ্যাই ন্যাপা, বেঞ্চের ওপর উঠে দাঁড়া। কান ধরে দাঁড়া বলছি।”
নেপাল থতমত খেয়ে কেষ্ট ঠাকুরের মতো বেঞ্চের ওপরে না উঠে বেঞ্চের গায়ে হেলে কাত হয়ে দাঁড়াল। শিশিরবাবু গনগনে রাগ মিশিয়ে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন নেপালের দিকে, “বল, পানিপথের যুদ্ধ সম্বন্ধে টীকা বল।”
নেপালের ঠোঁট শুকিয়ে যেতে লাগল। জিভ দিয়ে ঠোঁট দুটো চাটছে আর আশেপাশের বন্ধুদের দিকে করুণ চোখে তাকাচ্ছে। ফের একবার শিশিরবাবু একটা হুংকার ছাড়লেন। চমকে উঠল নেপাল। আমতা আমতা করে শুরু করল—“স্যার ইয়ে, মানে পানিপথের যুদ্ধ, মানে হল গিয়ে আপনার একটা খুব সাংঘাতিক মারাত্মক যুদ্ধ। সে যে কত বড়ো যুদ্ধ তা বলে বোঝানো যাবে না! ভীষণ ভয়ংকর রকমের যুদ্ধ! চারদিকে শুধু মারামারি আর কাটাকাটি। প্রচুর লোক এই যুদ্ধে মরেছিল। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল পথঘাট। প্রচুর জল দিয়ে সেই রক্ত ধোয়ানো হচ্ছিল। পুরো পথ জলে থৈ থৈ করছিল। তাই হিন্দিতে এই যুদ্ধকে পানিপথের যুদ্ধ বলা হয়। পরবর্তীকালে আরও একবার এরকম করা হয়েছিল। তাই ইতিহাসে দুটি মাত্র পানিপথের যুদ্ধের উল্লেখ আছে। পরবর্তীতে আর কোনোদিনই জল সংকটের জন্য এরকম করা হয়নি। ইহাতে জলের খুবই অপচয় হয়। তাই এরপর থেকে কোনও যুদ্ধের পরেই আর কোনও যুদ্ধক্ষেত্র এইভাবে জল দিয়ে ধোয়া হয়নি।” এই বলে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল নেপাল। সারা ক্লাসে প্রবল হাসির রোল উঠল।
শিশিরবাবু নেতাজির দিল্লি চলোর মতো হাত তুলে হুংকার দিলেন—“বেরিয়ে যা ক্লাস থেকে! যা, বাইরে গিয়ে নিল ডাউন হয়ে দাঁড়িয়ে থাক।”
নেপাল যখন রাগে গজগজ করতে করতে ক্লাস থেকে বেরোচ্ছে, ঠিক ভজনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভজা তখন ফ্যাচ করে একটা বিশ্রী হাসি দিল। নেপালের মাথাটা আরও গরম হয়ে গেল। এটা নতুন কিছু নয়। এটা চলছে ওদের ছোটবেলা মানে ক্লাস ওয়ান থেকেই। যত ভাব তত ঝগড়া। এই দেবীপুরের বিনয়বন্ধু বিদ্যা নিকেতনের সক্কলে তা জানে। ভজন পাল আর নেপাল মণ্ডল হল পরস্পরের হরিহর আত্মা। অথচ সর্বদা আদায় কাঁচকলায়। দেখতে দেখতে ক্লাস নাইন হয়ে গেল, আজ বাদে কাল মাধ্যমিক দেবে, তবু ওদের খুনসুটি করার স্বভাব আর গেল না। অথচ দুজনে এক মুহূর্তও চোখের আড়াল হলে হবে না। ঝগড়া শুধু ক্লাসে নয়, খেলার মাঠেও ওদের রোজ ফাটাফাটি। ভজা ব্রাজিল, আবার নেপাল হল আর্জেন্টিনা। হাট থেকে ভজা জিকো আর ন্যাপা মারাদোনার জার্সি কিনেছে। সেদিন যেমন এক কঠিন সমস্যা হল ওদের।
খেলা শুরু হওয়ার সময় হাঁটি হাঁটি পা পা করে পায়ের চেটো মেপে বারো পা গোল করা হল। বার পোস্টের নিশানা হল ক্ষয়ে যাওয়া হাওয়াই চটি দিয়ে। বেশ ভালো কথা। খেলা শুরু হল। হঠাৎ ন্যাপার কীরকম সন্দেহ হল। ভজাকে চ্যালেঞ্জ করে বলে যে, ওদের গোল নাকি মাপে ছোটো আছে। ভজা তো কিছুতেই মাপতে দেবে না। ন্যাপা নিজেই মেপে দেখায় এগারো পা। ভজাও কম যায় না। সে নিজের পায়ের মাপে মেপে দেখিয়ে দেয় বারো পা। ব্যস! কোনও চুরি হয়নি। অন্যদিকে ন্যাপার যুক্তি তোর পা আমার থেকে এক সাইজ ছোটো বলে কি তোর গোল ছোটো হবে নাকি? দুটো গোল তো একই মাপে থাকবে। এটাই তো নিয়ম। অবশেষে ন্যাপার যুক্তির কাছে ভজা হার মানে। রাজি হয় গোলের মাপ সমান করতে। কিন্তু ন্যাপার তো তখন আর তাতে পোষাবে না। ওর বক্তব্য হল, এই যে এতক্ষণ খেলা হয়ে গেল ছোটো গোলে, তার জন্য হয়তো অনেক গোল হতে পারেনি। তাই এখন শাস্তি বাবদ একটা পেনাল্টির মাশুল দিতে হবে। অদ্ভুত আবদার! হয়তো যুক্তিসঙ্গত। প্রথমে তর্কাতর্কি, তারপর প্রায় মারামারি লাগার উপক্রম।
অবশেষে সমাধান সূত্র দিল বটুকাকা। মাঠের ধারে বসে বিড়ি টানছিল। ফিফার রেফারিদের মতো হাতের দেশলাইটা তুলে ভজা আর ন্যাপার দিকে দেখাল। দেশলাইর ওপর একটা সাদা পায়রার ছবি। শান্তির দূত। গম্ভীরভাবে এসে বলল, “ক’টার সময় মাঠে এসেছিস?”
“চারটেতে কাকা।”
“ঠিক আছে। এখন পাঁচটা বাজে। এর পরের একঘণ্টা ন্যাপারা এগারো পা মাপের, মানে একটু ছোটো গোলে খেলবে। নে, শুরু কর।”
এই সমাধান সূত্র সারা বিশ্বে ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা ঘুরে কোত্থাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই জন্যই বাঙালি ঠিক একদিন জগৎ সভায় শ্রেষ্ট আসন করে নেবে।
তবে সেদিনের মতো সমস্যা কিছুটা মিটলেও ন্যাপা কিন্তু আগের দিনের ক্লাসের সেই অপমান কিছুতে ভুলতে পারছিল না। মাথায় শুধু প্ল্যান ভাঁজতে লাগল কীভাবে তার প্রতিশোধ তোলা যায়। এখন দেখা যাক গল্প কোন দিকে গড়ায়।
ন্যাপার বাপ গোপাল মণ্ডল পঞ্চায়েতের একজন হোমরা-চোমরা। ন্যাপা বাড়িতে সেই কারণেই একটা পুরোনো ভোটার লিস্ট খুঁজে পেয়ে গেল। গ্ৰামের সবারই নামধাম তাতে লেখা আছে। যেহেতু শিশির মাস্টারমশাইর বাড়িও এই দেবীপুর গ্ৰামে, লিস্টে দেখে স্যারের বাবার নাম মিহির সেন। ন্যাপা মনে মনে একটা প্ল্যান ভাঁজল, যে এই নামটাকেই তুরুপের তাস করতে হবে। এখন শুধু সময়ের আর সুযোগের অপেক্ষা। কপালটাও সঙ্গ দিল একদিন শিশিরবাবুর ক্লাসে। শিশিরবাবু একদিন ক্লাসে বাংলার সব রাজাদের নাম জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। এক-একজন করে উঠে দাঁড়াচ্ছে আর সব বাংলার রাজাদের নাম বলছে। পাল বংশ, সেন বংশের সব জানা নামগুলোই মোটামুটি শেষ হয়ে আসছে। ভজা সামনের ছেলের আড়ালে নিজের মুখটা লুকোতে চাইছে। কিন্তু এইসব খুচরো চালাকি করে কি আর বাঁচা যায়! ঠিক সবার মধ্যে থেকে ভজাকেই দাঁড় করালেন শিশিরবাবু। ধমকের সুরেই জিজ্ঞেস করলেন, “অ্যাই ভজা, বাংলার এক হিন্দু রাজার নাম বল।”
ভজার মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। চারদিক অন্ধকার। কিচ্ছু মনে পড়ছে না। ভজার ঠিক পিছনেই বসে ছিল ন্যাপা। যাত্রার প্রম্পটারের মতো ফিসফিস করে বলে উঠল, “মিহির সেন, সেন বংশের রাজা।”
ভজাও যথারীতি আমতা আমতা গলায় ‘মিহির সেন’ বলে উঠল। শুনেই শিশিরবাবু গর্জে উঠলেন—“মিহির সেন! কে ছিল এই মিহির সেন?”
ভজা এবার করুণ চোখে তাকাল ন্যাপার দিকে। মাথা কাজ করছে না ভজার। ন্যাপা আবার ফিসফিসিয়ে বলে উঠল, “বল্লাল সেনের বাবা।”
ভজা এমনিতেই থতমত খাচ্ছিল। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে যা শুনল, তাই উগরে দিল। এবার মোটামুটি শিশিরবাবু লাফাতে শুরু করলেন। এক লাফে নিজের চেয়ার ছেড়ে ভজার সামনে চলে এলেন। চুলের মুঠি ধরে চিৎকার করে বলে উঠলেন, “বল্লাল সেনের বাবা! দাঁড়া তোকে আমি গাল-লাল বানাচ্ছি।” বলেই কষে কয়েকটা থাপ্পড় ঝাড়লেন ভজার গালে। তারপর শুরু হল রাম ধোলাই। পিছনে ফিক ফিক করে হাসতে লাগল ন্যাপা। মধুর প্রতিশোধ। কোনও কথা হবে না।
এইসব দুষ্টুমির মধ্যে দিয়েই ওদের স্কুলজীবন কাটতে লাগল। কিন্তু যতই যে-যার পিছনে লাগুক, বন্ধুত্বের মধ্যে কোনও ফাটল ওদের ভালোবাসার গাঁথনিতে দেখা দিল না। কখন যে ওদের মাধ্যমিক পরীক্ষা এসে গেল, বোঝাই গেল না। তবে সে এক মারাত্মক ঘটনা ঘটল মাধ্যমিক পরীক্ষায়।
তখন প্রতি রবিবার দুপুরে খাওয়ার সময় বোবাদের খবর হত সাদা-কালো টিভিতে। প্রায় সব বাড়িতেই চলত। ভজা ন্যাপা, ওরাও দেখত। কিন্তু ওদের মাথা তো আর বাকি পাঁচজনের থেকে আলাদা। এক অদ্ভুত বুদ্ধি খেলে গেল ওদের মাথায়। খুব মন দিয়ে দুজনে দেখতে লাগল ওই খবর। মোটামুটি রপ্ত করার চেষ্টা করতে লাগল বোবাদের ভাষাটা। পড়ার বইয়ের সিলেবাসও ভজা আর ন্যাপার মধ্যে ভাগ হয়ে গেল। ভজা মালভূমির চ্যাপ্টার পড়লে ন্যাপা লড়বে কৃষিজমি নিয়ে। একজন ঐকিক নিয়ম তো অপরজন লাভ-ক্ষতি। এইভাবেই চলতে লাগল ওদের মাধ্যমিকের প্রস্তুতি।
পরীক্ষার হলে সে কী কাণ্ড! পরীক্ষার হলে ছিলেন দুজন পাহারাদার। টুকটাক ফিসফাস, উঁকিঝুঁকি, ঘাড় ঘোরাঘুরি সব পরীক্ষাতেই চলে। কিন্তু সে-বারে তাঁরা যা দেখলেন, তাতে তাঁদের চক্ষু ছানাবড়া! প্রথমে ভজা আর ন্যাপা পরীক্ষার হলের পরিবেশটা একটু মেপে নিল—যেভাবে খেলা শুরুর আগে ব্যাটসম্যান পিচ বুঝে নেয়। তারপরেই হঠাৎ দর্শক থেকে ওরা খেলোয়াড় হয়ে উঠল। স্যারেরা অবাক হয়ে দেখেন, দুটো ছেলে হাতে আর মুখে সমানে নানারকম ইশারা করে যাচ্ছে। আসলে ন্যাপা আর ভজা নিজেদের মধ্যে উত্তর চালাচালি করছে। তবুও তারা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। কারণ, কথা বললে তবে তো শাস্তি দেওয়া যাবে! শুধু দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে হাত আর মুখ নাড়লে তো আর দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। মহা ফাঁপরে পড়লেন দুই ইনভিজিলেটর। সেই ফাঁক গলে দুজনে যা পরীক্ষা দিল, তাতে ভালো ফল না হলেও মোটামুটি এ-যাত্রায় উতরে যাবে মনে হয়। তবে রেজাল্ট বেরোতে তো অনেক দেরি আছে। তার আগেই ঘটল আসল ঘটনাটা।
পরীক্ষার পর হুজুগ উঠল, সবাই মিলে একটা নাটক হবে। তাতে স্যারেরাও একটু ইন্ধন জোগাল। এখন প্রশ্ন হল, কী নাটক হবে। অনেক জল্পনার পর ঠিক হল, ‘চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য’ যাত্রাপালাটাই হবে। তাতে সুবিধে একটাই—এই নাটকে একগাদা চরিত্র। সব্বাইকে সুযোগ দেওয়া যাবে। চন্দ্রগুপ্ত, আলেকজান্ডার, পুরু, চাণক্য, সেলুকাস, মেগাস্থিনিস, মহারাজ নন্দ—কতসব চরিত্র!
যাই হোক, রণেনবাবুর তত্ত্বাবধানে শুরু হল রিহার্সাল। উনিই হলেন পরিচালক। ওঁর থিয়েটারের বেশ নেশা ছিল। খুব ভালোই চলছিল আয়োজন। ঠিক হল পঞ্চায়েত অফিসের পাশে রবীন্দ্র ভবন হলে নাটকটি মঞ্চস্থ করা হবে। চন্দ্রগুপ্ত করছে ভজা আর সেলুকাস চরিত্রে ন্যাপা। ওদের সব ব্যাপারেই কাটাকাটি, আবার বন্ধুত্বও গলায় গলায়। রিহার্সালে মাঝে-মধ্যেই ঝামেলা হত। তবে সেটা চূড়ান্ত রূপ নিল অনুষ্ঠানের দিন।
হল সেদিন কানায় কানায় পূর্ণ। নাটক বেশ ভালোই এগোচ্ছিল। বেশ কিছুক্ষণ পর চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সঙ্গে সেলুকাসের সন্ধি চুক্তি হল। রণেনবাবু ছিলেন কাঠবাঙাল। আর ন্যাপারা হল এ-দেশি, মানে একেবারে পাঁড় ঘটি। স্যারের সেই ঐতিহাসিক ডায়ালগ—‘সইত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দ্যাশ!’ ন্যাপারা যেহেতু পাঁড় ঘটি, ‘এলুম, খেলুম, গেলুম’ সংস্কৃতির লোক। সব মিলেমিশে এক খিচুড়ি পরিবেশিত হল মূল মঞ্চে। ন্যাপা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে মঞ্চে গিয়ে বলে উঠল, “মহারাজ, কী বিচিত্র এই দ্যাশে এলুম, বড়ো ভালো লেগে গ্যাচে, তাই থেকে গেলুম।”
এসব ডায়ালগে ছিল না। কিন্তু অতিরঞ্জিত অভিনয় করে হাততালি কুড়োনোর অপচেষ্টা। উলটে হাসির রোল উঠল দর্শকাসনে। তবে সবচেয়ে বেশি রেগে গেল স্বয়ং মহারাজ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, মানে ভজা। ভজার চোখ-মুখ ক্ষেপে লাল হয়ে গেল। এর ফল হল মারাত্মক। প্রকৃত নাটকের ডায়ালগ থেকে সরে গিয়ে ভজা সেলুকাসকে বলে উঠল, “তুমি এখনই পশ্চিম সীমান্তে চলে যাও, ওখানে এখন বহিঃশত্রু আক্রমণ করেছে।”
ন্যাপা হকচকিয়ে গেল। নাটকের এই অংশে ওর অনেক ডায়ালগ ছিল, তবু নাটকের স্বার্থে সেলুকাস মানে ন্যাপা, ভজাকে মানে মহারাজ চন্দ্রগুপ্তকে প্রণাম জানিয়ে স্টেজ থেকে তখনকার মতো বিদায় নিল।
আবার নাটক তার নিজের গতিতে এগিয়ে চলতে লাগল। খানিকক্ষণ পর আবার সেলুকাসের প্রবেশ। বেশ লম্বা ডায়ালগ আছে ওর এবার। স্টেজে এখন অনেকক্ষণ থাকার ব্যাপার আছে ন্যাপার। অথচ কী আশ্চর্য! রাজসভায় ঢোকার সঙ্গে-সঙ্গেই মহারাজ চন্দ্রগুপ্ত আবার ঝাঁঝিয়ে উঠল—“সেলুকাস, তুমি এখানে কী করছ? পূর্ব সীমান্তে খুব গোলমাল হয়েছে, যাও, ওখানে গিয়ে খবর নাও।”
এবার বেঁকে বসল সেলুকাস। ভজার দিকে কটমট করে তাকিয়ে ন্যাপা বলল, “মহারাজ, আমার কিছু দরকারি কথা আছে, সেটা আমাকে এখন বলতেই হবে। এখন আমি যাব না।”
ভজা চোখ রাঙিয়ে ধমক দিল, “সব দরকার পরে হবে, সে আমি বুঝে নেব। সব পরে শুনে নেব। এখন তুমি যাও।”
আর ধৈর্য রাখতে পারল না সেলুকাস। লাফিয়ে উঠে চন্দ্রগুপ্তের চিৎপুর থেকে আসা ছারপোকা-ভরা জরির জামার কলার চেপে ধরল। চিৎকারের মধ্যে যেটুকু শোনা গেল—“ব্যাটা, একমাস ধরে রিহার্সাল করে এখন সব মুখস্থ ডায়ালগ বলব না? চলে যাব মানে! ইয়ার্কি পেয়েছিস!”
পর্দা নেমে এল। আর বাকি কোনও কথা শোনা গেল না। হাততালিতে ফেটে পড়ল সারা হল।
হাসি, মজা আর দুষ্টুমির হিল্লোলে কেটে গেল কয়েক মাস। জীবনে সুখের দিন চলে যায় দৌড়ে, আর দুঃখের সময় পেরোয় খুঁড়িয়ে। অবশেষে বেরিয়ে গেল মাধ্যমিকের ফলাফল। জীবনের প্রথম গাঁট লাফিয়ে না হলেও গড়িয়ে টপকে গেল দুজন। তারপর পুকুরে ঢিল পড়ার মতো সরে যেতে লাগল দুজনের জীবনের বৃত্তাকার পথ। শুধু পিছনে পড়ে রইল টিফিন টাইমে বারান্দার গ্ৰিলের ফাঁক দিয়ে হাত গলিয়ে খাওয়া আলুকাবলি, কারেন্ট নুন, হজমি গুলি, ধেনুয়ার বরফ ঘষা সিরাপ-শরবত। গরাদ খুলে গেল বটে, জীবন হয়ে গেল স্বাধীন। হারিয়ে গেল কানমলা, নিল ডাউন, চক দিয়ে লেখা দুষ্টুমি, আদরের শিকলে বাঁধা জীবনের যাবতীয় আনন্দ। হাসিকান্নার সব ঢেউ মিশে গেল জীবনের অথৈ সমুদ্রে। তাই অশ্রুর স্বাদ বোধহয় এত লবণাক্ত। হয়তো কোন দিন আবার গিয়ে মেঘের হাত ধরে দেখা হবে কোনও হিমবাহের কোলে; সময় ঝরবে বৃষ্টির মতো। সেখানে চারদিকে শুধু বরফ আর বরফ, আর তার মাঝে মাঝে লেখা থাকবে কিছু স্মৃতিময় আত্মিক ভালোবাসার মধুমাখা হাসিখুশি এইসব স্বপ্নের হরফ।
ছবি - সুজাতা ব্যানার্জী
কচিপাতা
ছোটো গল্প
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪️ অংশু পাণিগ্রাহী ▪️ রম্যাণী গোস্বামী ▪️ অরিন্দম দেবনাথ ▪️ সুব্রত দাস ▪️ বাণীব্রত গোস্বামী ▪️ এণাক্ষী কয়াল মণ্ডল ▪️ কিশোর ঘোষাল ▪️ মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ি ▪️ সায়ন্তনী পলমল ঘোষ ▪️ সংঘমিত্রা রায়
ছড়া
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪️ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪️ বদ্রীনাথ পাল ▪️ স্বপনকুমার বিজলী ▪️ বসন্ত পরামাণিক ▪️ মলয় সরকার ▪️ মানস চক্রবর্তী ▪️ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪️ নীলেশ নন্দী ▪️ পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ রানা জামান ▪️ রূপসা ব্যানার্জী ▪️ সজল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪️ সৌমেন দাস ▪️ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪️ সুমিত্রা পাল ▪️ তাপস বাগ ▪️ আলমগীর কবির ▪️ রমিত চট্টোপাধ্যায়
বড়ো গল্প
বুমা ব্যানার্জী দাস ▪️ মেঘনা নাথ ▪️ শাশ্বত কর ▪️ সুমন সেন ▪️ রণিত ভৌমিক
লোককাহিনি
অরিন্দম ঘোষ ▪️ অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ রাখি পুরকায়স্থ
অনুবাদ
না-মানুষের পাঁচালি
প্রবন্ধ
কেয়া চ্যাটার্জী ▪️ দীপক দাস ▪️ ড. উৎপল অধিকারী ▪️ সুদীপ ঘোষাল
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ
বিশ্বদীপ পাল ▪️ অঙ্কিতা নন্দী ▪️ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪️ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪️ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪️ স্রবন্তী চট্টোপাধ্যায় ▪️ প্রবাহনীল দাস ▪️ সায়ন্তনী পলমল ঘোষ ▪️ সুমন দাস ▪️ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী