অনুবাদ
15% OFF * FREE SHIPPING
অনুবাদ
প্রতীক কুমার মুখার্জি
হোরাস ড্যানবি সম্পর্কে সকলের ধারণা অত্যন্ত স্পষ্ট—সবাই জানে লোকটা আগাগোড়া সৎ ও প্রকৃত একজন ভালোমানুষ। বছর পঞ্চাশের এই অকৃতদার ভদ্রলোকটির দেখাশোনার সমস্ত ভার ছিল এক হাউসকিপারের উপর, যে আবার ড্যানবির শরীর-স্বাস্থ্য সম্বন্ধে ছিল নিদারুণভাবে সচেতন। এমনিতে সে রীতিমতো খোশমেজাজে ও ভালোভাবেই জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত ছিল, কিন্তু গ্রীষ্মকাল এলেই ‘হে ফিভার’-এর প্রকোপে সে কাহিল হয়ে পড়ত। তালাচাবির সুদক্ষ কারিগর ড্যানবির ব্যাবসাপত্র এতটাই সচ্ছলভাবে চলত, যে নিজের কারখানায় তাকে সর্বক্ষণের জন্য দুজন কর্মচারী রাখতে হয়েছিল।
পনেরো বছর আগে, তার জীবনে সে প্রথম ও শেষবারের জন্য জেল খেটেছিল। সেখানে তার অধিকাংশ সময় কাটত জেলের লাইব্রেরিতে। দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান বইপত্র ছিল তার একমাত্র নেশা। এই একটা কারণে সে প্রতিবছর কোনো না কোনো সিন্দুক ভাঙতে বাধ্য হত। প্রতিবছর অনেক ভাবনা-চিন্তা করে, ছক কষে এমনভাবে সে চুরি করত যাতে সারাবছর তার বইয়ের খরচ উঠে আসে। পরে গোপনে কোনও এক এজেন্টের মাধ্যমে তার পছন্দের বইগুলি সে কিনে ফেলত নিজের জন্যে।
সেদিন জুলাই মাসের কড়া রোদে হাঁটতে হাঁটতে সে উপলব্ধি করল, এই বছর সে যেভাবে চুরিটা করবে তা অন্যান্য বছরের মতোই মসৃণভাবে উতরে যাওয়া উচিত। কারণ গত দু-সপ্তাহ ধরে শটওভার গ্রাঞ্জের ওই বিশেষ বাড়িটার উপর সে এমনভাবে গবেষণা চালিয়েছে, যাতে সেটার প্রতিটা ঘর, প্রতিটি ইলেক্ট্রিক তারের নকশা, চৌহদ্দির ভিতরে পায়ে চলা পথের বিন্যাস, বাগানের প্রতিটি ইঞ্চির খবর এখন তার নখদর্পণে। গ্রাঞ্জে বসবাসকারী পরিবারটি লন্ডনে যাওয়ায়, বাড়ির দুই পরিচারক বাড়ি ফাঁকা রেখে সেদিন বিকেলে সিনেমা দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। হোরাসের চোখের সামনে দিয়ে তারা বেরিয়ে যেতে সে যারপরনাই খুশি হল, যদিও সেই মুহূর্তে নাকের ডগার সুড়সুড়ানি তাকে জানান দিচ্ছিল যে হে-ফিভার আবার আক্রমণ শানাতে প্রস্তুত। পিঠে নিজের যন্ত্রপাতি ঠাসা ব্যাগটা চাপিয়ে বাগানের পাঁচিলের পিছনের লুকোনো জায়গাটা থেকে নিশ্চিন্তে বেরিয়ে এল ড্যানবি।
তার হিসেব অনুযায়ী, গ্রাঞ্জের ওই বাড়ির সিন্দুকে প্রায় পনেরো হাজার পাউন্ড মূল্যের গয়নাগাটি থাকার কথা। একের পর এক সেগুলিকে বাজারে চালান করতে পারলে অনায়াসেই সে পাঁচ হাজার পাউন্ডের ব্যবস্থা করে ফেলবে, যা তাকে আগামী বছরের জন্য আনন্দে রাখার জন্য যথেষ্ট! কারণ, আগামী হেমন্তে তার অত্যন্ত পছন্দের তিনটি দুষ্প্রাপ্য বই বাজারে আসার কথা। এই কাজটা ভালোয় ভালোয় সারতে পারলে সেগুলো কিনে ফেলতে তার পয়সার অভাব হবে না কোনোভাবেই।
বাড়ি থেকে বেরোবার সময় পরিচারক যে রান্নাঘরের দরজার বাইরে একটি আংটায় বাড়ির চাবির গোছাটা ঝুলিয়ে রেখে গেছে, তা হোরাসের নজর এড়ায়নি। সে নিশ্চিন্ত মনে দু-হাতে দস্তানা পরে নিয়ে, গোছাটা নামিয়ে এনে দরজাটা খুলে ফেলল। কাজের সময় কোথাও যেন তার আঙুলের ছাপ না পড়ে, সে ব্যাপারে সে সবসময় সতর্ক।
রান্নাঘরের মেঝেয় একটা ছোট্ট লোমওয়ালা কুকুর ঘুমোচ্ছিল। হোরাসের সাড়া পেয়ে সেটা আড়মোড়া ভেঙে, মৃদু একটা আওয়াজ করে লেজ নাড়াতে নাড়াতে উঠে বসল।
সেটাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে হোরাস অত্যন্ত শান্ত স্বরে বলে উঠল, “কী খবর, শেরি?”
বাড়ির পোষা কুকুরগুলোকে সামলে রাখার জন্য ভালোবেসে তাদের নাম ধরে ডাকার চাইতে ভালো টোটকা আর হয় না।
সিন্দুকটা ছিল বাড়ির বৈঠকখানার দেওয়ালে এবং সেটা লুকিয়ে রাখা ছিল একটা সাদামাটা ফ্রেমে বাঁধানো ছবির পিছনে৷ একটা মুহূর্তের জন্যে হোরাসের মনে প্রশ্ন জাগল—তার কি বইয়ের জায়গায় ছবি সংগ্রহ করা উচিত? পরমুহূর্তেই সে চিন্তা করল, ছবি রাখার জন্য প্রয়োজন অনেক বড়ো জায়গার। তার বাড়িতে অত জায়গা নেই, তাই ছবির থেকে বই সংগ্রহ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ঘরের মধ্যে টেবিলের উপর একটা বিশাল ফুলদানিতে অনেক ফুলের একটা তোড়া সাজানো ছিল এবং সেটার জন্যেই হোরাসের নাকটা আবার সুড়সুড় করে উঠল। একটা ছোট্ট হাঁচি দিয়ে সে সন্তর্পণে নিজের ব্যাগটা মাটিতে নামিয়ে রেখে অত্যন্ত যত্ন সহকারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলো হাতের কাছে সাজিয়ে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পরিচারকরা বাড়িতে ফিরে আসতে এখনও অন্তত ঘণ্টা চারেক সময় বাকি আছে—কাজটা সেরে ফেলতে হোরাসের হাতে এই মুহূর্তে অনেক, অনেক সময় রয়েছে।
এই সিন্দুকটা খুলতে তাকে মোটেই বেগ পেতে হবে না। প্রায় সারাজীবনই হোরাস বিভিন্ন ধরনের তালা, চাবি, সিন্দুক নিয়ে কাজ করে চলেছে। তার উপর, বাড়িটার বার্গলার অ্যালার্মটি বড়োই দুর্বল প্রকৃতির। সে সরাসরি বাড়ির হলে পৌঁছে গেল অ্যালার্মের ইলেক্ট্রিক তারটি কেটে ফেলতে। কাজ সেরে সেই ঘরে ফিরে আসার সময় সে এবার সশব্দে হেঁচে উঠল। ফুলদানিতে রাখা ফুলের গোছার তীব্র গন্ধটা তার কাজে যথেষ্ট সমস্যা সৃষ্টি করছিল।
হোরাসের হঠাৎ মনে হল, বিত্তবান মানুষেরা কেন যে ভাবনা-চিন্তা না করেই কিছু বোকা বোকা কাজ করে ফেলে! একটা পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে এই বিশেষ বাড়িটার সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া ছিল। সেখানে সমগ্র বাড়ির ছকের সঙ্গে সঙ্গে এই বিশেষ ঘরটির একটি ছবিও ছেপে দেওয়া হয়েছিল। এ-ঘরের দেওয়ালে একটি ছবির পিছনে যে একটি সিন্দুক আছে, সে-কথাটাও প্রবন্ধকার পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু এই মুহূর্তে হোরাস হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করল যে ঘরে রাখা ফুলগুলো তাকে নিশ্চিন্তে কাজ করার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সে একটা রুমাল বার করে সেটাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেলতে বাধ্য হল।
তারপরেই ঘরের দরজার দিক থেকে কয়েকটা শব্দ ভেসে এল—“কী হয়েছে তোমার? এটা কি সাধারণ সর্দি-কাশি, নাকি হে-ফিভার বাধিয়েছ তুমি?”
চিন্তাভাবনা করার আগেই হোরাসের মুখ থেকে সঠিক উত্তরটা বেরিয়ে গেল, “হে-ফিভার।” বলতে না বলতেই হাঁচির দমক তাকে আবার ব্যতিব্যস্ত করে তুলল।
নবাগত কণ্ঠস্বরটি বলতে লাগল, “তুমি কি জানো এই রোগের একটি বিশেষ চিকিৎসা রয়েছে যা তোমাকে অনায়াসে সারিয়ে তুলতে পারে, একমাত্র যদি তুমি সেই সঠিক গাছটিকে খুঁজে বার করতে পারো, যেটার থেকে এই সমস্যাটা তৈরি হচ্ছে? যদি নিজের কাজের ক্ষেত্রে তুমি আরও নিখুঁত হতে চাও, আমার মনে হয় তোমার একজন ভালো ডাক্তার দেখানোর অতি অবশ্যই প্রয়োজন। বাড়ির উপরতলা থেকে তোমার আওয়াজ শুনতে পেয়ে আমি এইমাত্র নীচে নেমে এলাম।”
অত্যন্ত শান্ত ও মায়াময় ওই কণ্ঠস্বরের মধ্যে কোথায় যেন একটা দৃঢ়তার ছোঁয়া লুকিয়ে ছিল। দরজার গোড়ায় এক ভদ্রমহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল, যাঁর পায়ে রীতিমতো গা ঘেঁষে চলেছে ছোট্ট শেরি। আপাদমস্তক গাঢ় লাল রঙের দামি পোশাক পরে থাকা ভদ্রমহিলাটি পরমাসুন্দরী এক যুবতী। অত্যন্ত সাবলীলভাবে ঘরের ফায়ার-প্লেসের কাছে হেঁটে গিয়ে, সেটার উপরে রাখা গয়নাগুলি একমনে সাজিয়ে রাখতে শুরু করেছেন তিনি।
“চুপ করে বসো শেরি!” তিনি বললেন, “তুমি এমন বাড়াবাড়ি করছ, যে কেউ দেখলে ভাববে আমি অন্তত একমাস বাড়ির বাইরে ছিলাম।” তিনি হোরাসের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলেন। তারপর আবার বলতে শুরু করলেন, “যাক, আমি ঠিক সময়েই বাড়িতে ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি যে আমার সঙ্গে একজন চোরের দেখা হয়ে যাবে!”
হোরাসের মনে তখনও কিছুটা আশা ছিল, কারণ প্রথম সাক্ষাতে তার মনে হয়েছে, ভদ্রমহিলা তার উপস্থিতি রীতিমতো উপভোগ করার মেজাজে রয়েছেন। যদি সে তাঁর সঙ্গে ভালো ব্যবহার অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে, তাহলে এ-যাত্রায় সম্ভবত সে বেঁচে গেলেও বেঁচে যেতে পারে। সে কোনোমতে উত্তর দিল, “আসলে, পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গে যে আমার দেখা হয়ে যেতে পারে, এ আমি আশাই করিনি।”
তিনি সম্মতিতে মাথা নাড়ালেন।—“সত্যিই, দেখেছেন আমার সঙ্গে এভাবে দেখা হয়ে যাওয়াটা আপনার কাছে কত বড়ো একটা অসুবিধের কারণ হয়ে দাঁড়াল? এবার তাহলে আপনি কী করবেন বলে ভাবছেন?”
“আমার মাথায় যে প্রথম চিন্তাটা এসেছিল, তা ছিল এই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া।” হোরাস ঢোঁক গিলে বলল।
“অবশ্যই, আপনার পক্ষে সেটাই করা উচিত ছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমি সরাসরি পুলিশকে টেলিফোনে আজকের এই পুরো ঘটনাটা বলতাম ও আপনার সম্পূর্ণ বিবরণ দিয়ে দিতাম। তারা তৎক্ষণাৎ আপনাকে ধরে ফেলতে পারত।”
হোরাস সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, “সেক্ষেত্রে আমি আগে থেকেই টেলিফোনের তারটি কেটে রাখতাম এবং তারপর...” সে আচমকা থেমে গেল। তার মুখে ফুটে উঠল এক রহস্যময় হাসির রেশ।—“সেক্ষেত্রে আমি এমন ব্যবস্থা করতাম যাতে কিছু সময়ের জন্য আপনার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হয়ে উঠত না। কয়েক ঘণ্টা সময় পেলে আমি সবার নাগালের বাইরে চলে যেতাম অনায়াসেই।”
ভদ্রমহিলা অত্যন্ত গম্ভীর মুখে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি সত্যি করে আমাকে আঘাত করতেন?”
কয়েক মুহূর্ত দ্বিধাগ্রস্তভাবে থেমে থেকে হোরাস আমতা আমতা করল—“না, আসলে মনে হয় ওই কথা বলে আমি আপনাকে ভয় দেখাবার চেষ্টা করছিলাম।”
“কিন্তু আপনি আমাকে ভয় দেখাতে পারেননি!”
হোরাস মিনমিন করে ওঠে—“আপনার সঙ্গে যে আমার কখনও দেখা হয়েছিল, সে-কথা যদি আপনি বরাবরের মতো ভুলে যেতেন, আমার অত্যন্ত উপকার হত। দয়া করে আমাকে যেতে দিন।”
ভদ্রমহিলার কোমল কণ্ঠস্বর আচমকাই কয়েক পর্দা ধারালো শোনায়—“কী কারণে আপনাকে ছেড়ে দেব বলতে পারেন? আর একটু হলেই আপনি আমার সর্বস্ব চুরি করে নিয়ে যেতেন। আজ আপনাকে যেতে দিলে আপনি পরমুহূর্তেই অন্য কাউকে সর্বস্বান্ত করতে উদ্যত হবেন। আপনার মতো লোকের হাত থেকে সমাজকে বাঁচানো আমার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।”
হোরাস অদ্ভুতভাবে হাসল।—“আমি সে-অর্থে সমাজবিরোধী নই। আমি তাদের কাছ থেকেই চুরি করি যাদের কাছে অফুরন্ত অর্থ রয়েছে। আমার প্রতিটা চুরির পিছনে আছে একটি সঙ্গতিপূর্ণ কারণ এবং সবচেয়ে বড়ো কথা, জেল খাটার ব্যাপারটা আমার কাছে অত্যন্ত ঘৃণার ব্যাপার।”
ভদ্রমহিলা সশব্দে হেসে উঠতে হোরাস তাঁর মন জুগিয়ে অনুনয় বিনয় করতে শুরু করল। মনে মনে সে ভাবছিল যে মহিলাকে সে প্রায় বাগে এনে ফেলেছে।—“দেখুন, আপনার কাছ থেকে আমার কিছু চাইবার কোনও অধিকার নেই, কিন্তু আমাকে বাঁচার চেষ্টা করতেই হবে! আমাকে যেতে দিন, আমি প্রতিজ্ঞা করছি এরকম কাজ আমি ভবিষ্যতে আর কখনও করব না৷ আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি।”
ভদ্রমহিলা নীরবে তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি বলে উঠলেন, “জেল খাটার ব্যাপারটা আপনার অত্যন্ত অপছন্দের, তাই না মশাই?” মাথা নাড়তে নাড়তে তিনি এবার হোরাসের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন, “খারাপ মানুষরা বরাবরই আমার পছন্দের তালিকার উপরের দিকে থাকে।”
টেবিলের উপরে রাখা একটি রুপোর তৈরি বাক্স তুলে নিয়ে তার থেকে একটা সিগারেট বার করে নিলেন ভদ্রমহিলা। হোরাস তাঁকে খুশি করতে তার হাতের দস্তানাগুলো খুলে ফেলে নিজের সিগারেট লাইটারটি বার করে আনল। সে ভাবল, মহিলা যদি দয়াপরবশ হয়ে তাকে রেহাই দেন, সে এবারের মতো পালিয়ে বাঁচে।
“আপনি আমাকে যেতে দেবেন?” ভদ্রমহিলার দিকে লাইটারটা বাড়িয়ে ধরে সে জিজ্ঞেস করল মরিয়া হয়ে।
“দেবো, কিন্তু তার আগে যে আমার জন্য একটা কাজ করে দিতে হবে আপনাকে!”
“আপনার যে-কোনো আদেশ আমি মানতে রাজি।”
“লন্ডন যাওয়ার আগে আমার স্বামীকে কথা দিয়েছিলাম যে আমার সমস্ত গয়নাগাটি আমি ব্যাংকের ভল্টে জমা করে আসব, কিন্তু আজ পর্যন্ত সেগুলো এই সিন্দুকেই পড়ে আছে। আজকে রাতের একটা অনুষ্ঠানে আমি সেগুলো পরতে চাই, তাই আমি নীচে নেমে এসেছিলাম। কিন্তু...”
হোরাসের মুখে এক নিশ্চিন্ত হাসি খেলে গেল বহুক্ষণ পরে।—“কিন্তু এই সিন্দুক খোলার কম্বিনেশনের নম্বরগুলি আপনি ভুলে গেছেন। কী, তাই না?”
“একদম!” উত্তর এল ভদ্রমহিলার তরফ থেকে।
“পুরো ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আমাকে শুধু একটা ঘণ্টা সময় দিতে হবে। কিন্তু আপনাদের সাধের সিন্দুকটিকে আমায় ভেঙে ফেলতে হবে।”
“সেটা আপনার দুশ্চিন্তার কারণ নয়। একমাসের আগে আমার স্বামী এখানে ফিরে আসছেন না। তাই তিনি ফেরার অনেক আগেই আমি এই সিন্দুকটি সারিয়ে ফেলার প্রচুর সময় পাব।”
একঘণ্টার মধ্যে হোরাস সিন্দুকটি ভেঙে ফেলে ভদ্রমহিলার হাতে তাঁর যাবতীয় গয়নাগাটি তুলে দিয়ে, নিশ্চিন্ত মনে শিস দিতে দিতে গ্রাঞ্জ থেকে বেরিয়ে পড়ল।
সেই দয়ালু ভদ্রমহিলার কাছে করা প্রতিজ্ঞার সম্মান রাখতে আগামী দুই দিন সে কোনও নতুন কাজে হাত দিল না। কিন্তু তৃতীয় দিন সকালে তার মাথায় সেই নতুন দুষ্প্রাপ্য বইগুলির চিন্তা চাগাড় দিয়ে ওঠাতে হোরাস ঠিক করল তাকে আর একটা সিন্দুকের খোঁজ পেতে হবে। কিন্তু নতুন পরিকল্পনার ছক কষার সময়টুকু সে আর পেল না, কারণ সেদিন দুপুরের মধ্যেই সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ—শটওভার গ্রাঞ্জে গয়না ডাকাতি!
ঘরময় তার হাতের আঙুলের ছাপ ছড়িয়ে পড়েছিল, কারণ সিন্দুকটি ভাঙার সময় সে নিজের দস্তানা ব্যবহার করেনি। যখন সে প্রাণপণে চিৎকার করে বলতে চাইল, যে ওই বাড়ির মালিকের স্ত্রীর কথামতোই সে ওই সিন্দুকে হাত দিয়েছিল, স্বভাবতই কেউ তার কথা বিশ্বাস করেনি। বাড়ির মালিকের আসল স্ত্রী ষাট বছরের এক ঠোঁটকাটা, পাকা চুলের বৃদ্ধা সমস্ত ঘটনাটা এক অত্যন্ত আষাঢ়ে, মনগড়া কাহিনি হিসেবে তৎক্ষণাৎ নস্যাৎ করে দেন।
এখন হোরাস জেলের লাইব্রেরিতে সহকারী লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ করে। প্রায়ই তার ভাবনায় সেই সুন্দরী, বুদ্ধিমতী যুবতীটির স্মৃতি ভেসে আসে, যে নিজে একজন চোর হয়েও তাকে গোহারা হারিয়ে দিয়েছিল সেদিন। ও, আর একটা কথা—কেউ যদি কখনও ‘চোরদের পারস্পরিক সম্মান’ প্রসঙ্গে আলোচনা করে, হোরাস এক অজানা কারণে হঠাৎ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে; নিষ্ফল আক্রোশে মাথা ঠুকতে থাকে।
*কথাশিল্পী ভিক্টর ক্যানিং-এর অমর সৃষ্টিগুলির অন্যতম এই ছোটো গল্প ‘আ কোয়েশ্চন অফ ট্রাস্ট’-এর বাংলা রূপান্তর করার অক্ষম প্রয়াস রইল আমার তরফ থেকে। পাঠকরা এই অধমের দোষত্রুটি নিজগুণে মাফ করে দেবেন এই আশা রাখি। আপনাদের তরফ থেকে সমালোচনা একান্ত প্রার্থনীয়।
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য ▪️ অংশু পাণিগ্রাহী ▪️ রম্যাণী গোস্বামী ▪️ অরিন্দম দেবনাথ ▪️ সুব্রত দাস ▪️ বাণীব্রত গোস্বামী ▪️ এণাক্ষী কয়াল মণ্ডল ▪️ কিশোর ঘোষাল ▪️ মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ি ▪️ সায়ন্তনী পলমল ঘোষ ▪️ সংঘমিত্রা রায়
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ অমিত চট্টোপাধ্যায় ▪️ অর্ণব ভট্টাচার্য ▪️ বদ্রীনাথ পাল ▪️ স্বপনকুমার বিজলী ▪️ বসন্ত পরামাণিক ▪️ মলয় সরকার ▪️ মানস চক্রবর্তী ▪️ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস ▪️ নীলেশ নন্দী ▪️ পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ রানা জামান ▪️ রূপসা ব্যানার্জী ▪️ সজল বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ শক্তিপদ পণ্ডিত ▪️ সৌমেন দাস ▪️ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪️ সুমিত্রা পাল ▪️ তাপস বাগ ▪️ আলমগীর কবির ▪️ রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুমা ব্যানার্জী দাস ▪️ মেঘনা নাথ ▪️ শাশ্বত কর ▪️ সুমন সেন ▪️ রণিত ভৌমিক
অরিন্দম ঘোষ ▪️ অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ▪️ রাখি পুরকায়স্থ
কেয়া চ্যাটার্জী ▪️ দীপক দাস ▪️ ড. উৎপল অধিকারী ▪️ সুদীপ ঘোষাল
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ
বিশ্বদীপ পাল ▪️ অঙ্কিতা নন্দী ▪️ সুজাতা চ্যাটার্জী ▪️ বুমা ব্যানার্জী দাস ▪️ পুণ্ডরীক গুপ্ত ▪️ স্রবন্তী চট্টোপাধ্যায় ▪️ প্রবাহনীল দাস ▪️ সায়ন্তনী পলমল ঘোষ ▪️ সুমন দাস ▪️ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী