FREE SHIPPING IN INDIA
গরিফা, উত্তর ২৪ পরগনা
১৩ই ডিসেম্বর ২০২১
একপর্ণিকা প্রকাশনী কতৃক প্রকাশিত ছোটোদের প্রাণপ্রিয় লেখক সঞ্জীবকুমার দে রচিত শিশুকিশোর উপযোগী গল্পগ্ৰন্থ 'বটুবাবুর বারোকাহন' পড়বার পর ভালো লাগায় মন কানায় কানায় ভরে উঠল।
বারোখানি চমৎকার গল্পে সাজানো এই সংকলনটি আজীবন সংগ্ৰহে রাখার মতো অমূল্য সম্পদ। শুধুমাত্র ছোটোরা নয়, বড়োদেরও তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করবার মতো গল্প সংকলন।
প্রকাশনীর পক্ষ থেকে যারপরনাই যত্ন নেওয়া হয়েছে সংকলনটি প্রকাশে। বইয়ের কাগজ, কালি, ঝকঝকে আধুনিক হরফ, অনিন্দ্যসুন্দর প্রচ্ছদ ও দৃষ্টিনন্দন অলংকরণ সবকিছু অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
এবার আসি লেখকের কথায়। দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো লেখকের গল্পের নায়ক বটুবাবু ওরফে বটেশ্বর দত্ত এক অসাধারণ চরিত্র। চোখ-কান খোলা রাখলেই এমন মানুষের দেখা মেলে বটে, কিন্তু তাদের প্রতিদিনের সংসার জীবনে পরিবার, অফিস-কাছারি, পাড়া-প্রতিবশী, বাজার-দোকান, শহর-মফস্সল ইত্যাদির সঙ্গে জড়িয়ে হেরে গিয়েও না হারার জেতায় আমাদের জিতিয়ে দেন বটুবাবু।
কেমন চরিত্র বটুবাবু?
'প্রতিবারই ভাবেন কিছু না কিছু কিনে বটুবাবু চমকে দেবেন বাড়ির সকলকে। কিন্তু আশ্চর্য, চমকাতে হয় তাঁকে নিজেকেই।' 'সরস তরমুজ' গল্পের এই আমাদের প্রিয় বটুবাবু। তিনি কোনোদিন কারও ক্ষতি করতে পারেন না। বরং কারও জন্য ভালো কিছু করতে গেলেই গোলমাল ঠেলাঠেলি করে ভিড় করে তাঁর জীবনে।
স্থান, কাল ও পাত্র তার সঙ্গে গল্পের চরিত্রের সঙ্গে মানানসই শব্দচয়ন, সহজ-সরল বাক্যগঠনের দক্ষতায় লেখক তাঁর মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন প্রতিটি গল্পে। যেমন, 'বটুবাবুর কুটুম্বিতা' গল্পে বটুবাবুর আপন কার্যসিদ্ধির জন্য তাঁর প্রশ্নবাণে অতিষ্ঠ ও সন্দিহান রিকশাওয়ালাকে যখন বলতে শুনি, "কিন্তু এসব খবরে আপনার কী পেয়জন?" মানে প্রয়োজন। অন্যান্য চরিত্রের নামকরণে যথেষ্ট রসবোধের পরিচয় দিয়েছেন লেখক। বটুবাবুর স্ত্রী বিন্দুবাসিনীদেবী, বড়ো ছেলে রকেট, মেজো ছেলে টর্পেডো, নাতি টর্নেডো গল্প - পড়ব কী, হাসতে হাসতে পেট ফাটার জোগাড়।
'বটুবাবুর দন্ত বেত্তান্ত' গল্পটি পড়তে গিয়ে অবাক হতে হল লেখকের গল্পচ্ছলে 'দন্ত' সম্পর্কিত এক তথ্যের পরিবেশনে। তাও আবার স্কুল পড়ুয়া টর্নেডোর মুখ দিয়ে - "ওটা কিন্তু ছেদক মা। দাঁত চার প্রকার। কৃন্তক, ছেদক, পুর-পেষক আর পেষক।" হঠাৎ মনে পড়ে গেল মহাশ্বেতা দেবীর 'ভাত' গল্পের একটি অনুচ্ছেদ। লেখিকা সেখানে 'চাল'-এর সুনিপুণ তথ্য পরিবেশন করেছেন। "ঝিঙেশাল চালের ভাত নিরামিষ ডাল-তরকারির সঙ্গে। রামশাল চালের ভাত মাছের সঙ্গে। বড়বাবু কনকপানি চাল ছাড়া খান না। মেজো আর ছোটর জন্য বারোমাস পদ্মজালি চাল রান্না হয়। বামুন চাকর-ঝিদের জন্য মোচা সাপটা চাল।" দুই সাহিত্যিককে জানাই আমার শ্রদ্ধাসুন্দর প্রণাম।
বটুবাবু ও সস্তার ফুলকপি, দুই সেয়ানের কোলাকুলি, জব্দ হলেন বটুবাবু, বটুবাবুর চাঁদা, বটুবাবুর রঙবিলাস, বটুবাবুর আমায়ণ, বটুবাবুর কুটুম্বিতা, বটুবাবুর দন্ত বেত্তান্ত, সরস তরমুজ, রহস্যভেদি বটুবাবু, বটুবাবুর লিচুকাণ্ড ও জুতসই জুতো - মোট বারোটি গল্প পড়ে শেষ করবার পর মনে হল আরও বারোটি হলে ভালো হত বা চব্বিশটা নতুবা আটচল্লিশ, নিদেনপক্ষে ছিয়ানব্বই...!